আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিটি বেগুন- বাংলাদেশে অনুমোদিত প্রথম জিএম উদ্ভিদ: অপপ্রচারণা, সমালোচনা এবং কিছু জবাব।

গত ২৮ অক্টোবর বাংলাদেশের কৃষির জন্য একটা বিশেষ দিন। ২৯তম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ সরকার দেশে জিএমও বা জিনেটিকালি মডিফাইড অর্গানিজম হিসেবে একধরনের বেগুন (বিটি বেগুন) কে বাংলাদেশে চাষের অনুমতি দিল। কিন্তু এর আগে এবং পরে কিছু মহল থেকে চরম বিরোধিতা এবং প্রতিবাদ আসতে শুরু করল। বিশেষ করে প্রাকৃতিক কৃষি ব্যবস্থার সমর্থনের যেসব এনজিও বাংলাদেশে আছে তাদের কাছ থেকে। নতুন জিনিস গ্রহণ করতে দ্বিধা মানুষের সবসময়েই থাকে।

আবার নতুন জিনিস যাচাইও করে নেয়া উচিত। কিন্তু জিএমও কি বা বিটি বেগুন কি সেটা না জেনে বা বুঝে বা নিজেদের লাভের জন্য কোন এনজিও'র প্রোপাগান্ডা প্রচারে কিছু মানুষ ভুলভাবে সমালোচনা করছেন, মিথ্যা বলছেন। পুরো জিএমও পদ্ধতিটিরই সমালোচনা করছেন এবং মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন। আমি এখানে চেষ্টা করছি কিছু প্রশ্নের উত্তর আমার মত করে দিতে যাতে ব্যাপারগুলো পরিষ্কার হয়। এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়।


সরকার কর্তৃক বিটি বেগুনের অনুমোদন লাভ নিয়ে একেকটি পত্রিকার খবর একেকভাবে এসেছে। দুই ধরনের উদাহরণ একটু দেখে নিতে পারেন নিচের লিংক থেকে:
১। স্বাগত জানানো http://www.thedailystar.net/beta2/news/modified-brinjal-finally-sees-light/ ২। বিরোধিতা করা http://www.banglanews24.com/detailsnews.php?nssl=ddcceb06c4e35a59ba48e8249a059254&nttl=28102013234575 http://newspage24.com/2013/article/6625#.Um8H8JTwLaT
প্রশ্নোত্তরে যাওয়ার আগে আমি একটু বিটি বেগুন কি সেটা ছোট করে বলে নেই। নামটি এসেছে একধরনের ব্যাকটেরিয়া থেকে- Bacillus thuringiensis (BT)।

এই ব্যাকটেরিয়ার একটা গুরুত্বপূর্ণ গুণ আছে। ব্যাকটেরিয়াগুলি একধরনের বিষ (Cry প্রোটিন) তৈরি করে যা প্রায় ৪ টি বর্গের পোকাকে মেরে ফেলতে পারে। মানে পোকারা এই ব্যাকটেরিয়া খেলে মারা যাবে। এই জিনটিকে নিয়ে উদ্ভিদের ডিএনএ'র সঙ্গে যুক্ত করে দিলে উদ্ভিদটিও এই প্রোটিন বা বিষটি তৈরি করবে। ফলে উদ্ভিদের কোন অংশ যদি পোকা খেতে আসে তবে সেটা মারা যাবে।

কয়েকধরনের Cry প্রোটিন তৈরি করতে পারে B. thuringiensis । তারমধ্যে Cry1A.105, CryIAb, CryIF, Cry2Ab, Cry3Bb1, Cry34Ab1, Cry35Ab1, mCry3A, and VIP ইত্যাদি জিন তুলা এবং ভূট্টার জিনেটিক উঞ্জিনিয়ারিং ব্যবহৃত হয়েছে এবং এখনও এসব শস্য পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে উৎপাদিত হয়।
বিটি বেগুনের কিছু বৈজ্ঞানিক দিক নিয়ে জানতে চাইলে রায়হান মাহবুব এর এই লেখাটা পড়তে পারেন।
জিনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর ব্যাপারটা এই ছবিটা থেকে দেখে নিন। আমি বিস্তারিত বর্ণনা করছিনা।


বিটি জিন ঢুকানোর আগে এবং পরে বাদাম গাছের পোকা আক্রমণের পার্থক্য দেখে নিন এই ছবি থেকে।
বিটি-উদ্ভিদকে পৃথিবীর অনেকগুলি দেশে ইতিমধ্যেই সফলভাবে চাষ করা হয়। প্রথম তামাক উদ্ভিদকে পরিবর্তিত করা হয়েছিল Cry প্রোটিন দিয়ে ১৯৮৫ সালে। কিন্তু সেটা বাজারজাতের জন্য নয়, পরীক্ষার জন্য। দশ বছর পরে ১৯৮৫ সালে প্রথম আলুকে এভাবে পরিবর্তিত করা হয় যা বাজারজাতও করা হয়, কিন্তু ২০০১ সালে চাষ বন্ধ করে দেয়া হয় পর্যাপ্ত চাহিদা না থাকার জন্য।

স্বাস্থ্যগত কোন ক্ষতির কোন রিপোর্ট পাওয়া যায়নি। তারপরে তুলা এবং ভূট্টায় বেশ কয়েকটি জিন ঢুকিয়ে পরীক্ষা করা হয়েছে যার মধ্যে কয়েকটি এখন চাষ করা হচ্ছে পৃথিবীজুড়ে। বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশগুলিতেও (ভারত, পাকিস্তান, মায়ানমার) এসব জিনেটিকালি পরিবর্তিত উদ্ভিদ চাষ করা হচ্ছে আগে থেকেই। বাংলাদেশে প্রাকৃতিক বেগুন জাতগুলির ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ শস্য উৎপাদন কম হয় শুধুমাত্র পোকার জন্য। তাই বিটি বেগুনের গুরুত্বটা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন।


কিন্তু যেহেতু নতুন বিষয় এবং আমাদের খাবারের বিষয় তাই এই কৃত্রিমভাবে পরিবর্তিত উদ্ভিদ নিয়ে সংশয় থেকে অনেক মানুষই বাংলাদেশে প্রতিবাদের মতই প্রতিবাদ করছিলেন। কিছু প্রকাশিত বৈজ্ঞানিক তথ্য এসব জিএম-বিরোধী মানুষকে সাহায্যও করেছে। উপরে ২ নম্বরে দেয়া দুইটি খবর দেখলেই কয়েকটা পরীক্ষার খবর পেয়ে যাবেন।
এবার আসি প্রশ্নোত্তরে।
১।


সমালোচনা: জিএম খাবার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। বিটি-বেগুন খুবই মারাত্মক ক্ষতি করে (বাংলানিউজ২৪ এর রিপোর্ট অনুযায়ী)
উত্তর: ভুল। এখন পর্যন্ত যতগুলি অনুমোদিত জিএম খাদ্যশস্যের স্বাস্থ্যহাণীর রিপোর্ট এসেছে তার কোনটাই পরিষ্কারভাবে প্রমাণিত হয়নাই।
একটি ফরাসী পরীক্ষা নিয়ে বারবার উদাহরণ হিসেবে দিচ্ছেন জিএম-বিরোধী লোকজন বাংলাদেশে। পরীক্ষাটা নিয়ে একটু বলি।

প্রথমেই, পরীক্ষাটিতে Cry প্রোটিন দিয়ে পরিবর্তিত ভূট্টা (মানে বিটি ভূট্টা) নিয়ে গবেষণা করেনি সেরালিনি ল্যাব। করেছে আগাছানাশক প্রতিরোধী একধরনের জিনেটিকালি মডিফাইড ভূট্টা দিয়ে। এই ভূট্টাগুলি আগাছানাশক ব্যবহার করলেও বেঁচে থাকে, আগাছা মারা যায়। তাদের রিপোর্ট অনুযায়ী সেরালিনির দল একধরনের ইঁদুরকে এই ভূট্টা খাইয়েছেন ২ বছর ধরে এবং দেখেছেন ইঁদুরগুলিতে প্রায় ৭০% এর টিউমার হচ্ছে।
কিন্তু ঝামেলা হল সেরালিনি যেই পরীক্ষাটা করেছেন তাতে অনেকগুলি ফাঁক ছিল।

যেমন যেই ইঁদুরে (স্ট্রেইনে) পরীক্ষা করেছেন সেই ইঁদুরে নাকি এমনি খাবারের কোন পরিবর্তন হলেই টিউমার হয়। ভাত অনেকদিন খাওয়ালেও হয়তো দেখা যাবে তার কয়েকদিন পরে টিউমার হয়েছে। তখন আমরা যদি ভাত খাওয়া খারাপ বলে ধরে নেই তবে তো হয়েছিলই। আবার সেরালিনি বিখ্যাত এন্টি-জিএম ব্যক্তি। তার সঙ্গীসাথীও আছেন কিছু।

তবে এখানে দেখুন সেরালিনির পরীক্ষাটি সম্বন্ধে তাবৎ বিজ্ঞানসমাজ কি বলছেন।
পরীক্ষার ভুলগুলির এই লেখাটিও পড়ে নিতে পারেন।
এমনকি খোদ France এর পাবলিক গবেষণাকেন্দ্র Institut National de la Recherche Agronomique (INRA) এর প্রেসিডেন্ট Francois Houllier সমালোচনা করেছেন এই পরীক্ষার।
আবার জিএম মাত্রেই খারাপ এটা কোন কথা হতে পারেনা। যখন পৃথিবীতে প্রথম টিকাদান শুরু হয়েছিল তখন কিছু মানুষ বিরোধীতা করেছিলেন।

এখনও আমেরিকায় কেউ কেউ এটা প্রচার করে যে টিকা দিলে অটিজম হয়। এসব মানুষের কথা শুনে টিকা উদ্ভাবন এবং ব্যবহার না করলে কোটিখানেক শিশু এতদিনে মারা যেত। গণহারে জিএম খাবারের বিরোধীতা একেবারেই এই ঘটনার সমতূল্য।
২।
সমালোচনা: অন্য জীবের জিনিস আমাদের দেহে কৃত্রিমভাবে ঢুকিয়ে দিলে মারাত্মক ক্ষতি করে আমাদের।


উত্তর: না করেনা সবক্ষেত্রে। আপনি যেই টিকা দিচ্ছেন নিজের শিশুকে তাদের মধ্যে প্রায় সবগুলিই পরিবর্তিত জীবাণু বা জীবাণুর অংশ। এই টিকা আপনার শিশুকে বাঁচিয়ে রাখছে বিভিন্ন রোগ হওয়া থেকে।
আবার মানুষ কৃত্রিমভাবে অনেককিছু তৈরি করে এবং খায়। যেমন, পৃথিবীর বেশিরভাগ ঔষধই কৃত্রিমভাবে তৈরি করা।

এরা আমাদের ভয়াবহ রোগ থেকে বাঁচায়। এসব ঔষধ তৈরির সময় এতগুলা প্যারামিটার পরীক্ষা করে আসতে হয়যে কোন ধরনের ভুল থাকার অবকাশ যেন না থাকে তার ব্যবস্থা করেন বিজ্ঞানীরা। জিএম খাবার যখন বাজারজাত করা হয় তখনও একই কাজ করা হয়। বরং বলা যায়, আপনি প্রাকৃতিকভাবে প্রাপ্ত কোন বিশেষ খাবার বহুদিন ধরে খেলেও স্বাস্থ্য ঝুঁকি থাকতে পারে।
৩।


সমালোচনা: বিটি বেগুন যকৃত নষ্ট করে ফেলে।
উত্তর: ভুল। যেই প্রোটিনটা সম্বন্ধে যকৃতে প্রভাব ফেলার কথা জানা গেছে অল্প কিছু রিপোর্টে সেটা হল Cry1Ab। তাও যকৃতের ক্ষতি হয় যখন মাত্র কীটনাশক সহকারে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু আমাদের দেশের Bangladesh Agricultural Research Institute (Bari) বা বারি'র বিজ্ঞানীরা Cry1Ac প্রোটিন ব্যবহার করছেন।

পৃথিবীজুড়ে Cry1Ab ব্যবহার করা হয়না। The National Committee on Biosafety (NCB) সেটা নিশ্চিত করেছেন।
এভাবে মিথ্যা খবর প্রচার করা দেশের একমাত্র সরকারি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রকে ক্ষতির সম্মুখীন করারই সামিল।
৪।
সমালোচনা: জিএম উদ্ভিদ বীজের নিরাপত্তা হুমকি সম্মুখীন করে।


উত্তর: না, করেনা যদি আমাদের নিজেদের দেশের সরকারি প্রতিষ্ঠান এটা উদ্ভাবন করে থাকে।
৩ নম্বর পয়েন্টে বললাম যে এই বিটি বেগুন তৈরির কৃতিত্ব সম্পূর্ণ বারি'র। বিশ্বজুড়ে বিটি-উদ্ভিদের চালানকারী প্রতিষ্ঠান মনোসান্টো এটা করেনি। যারা সমালোচনা করছেন তাদের কয়েকজনকে জিজ্ঞেস করেছিলাম যে আপনারা কিভাবে জানেন যে এটা মনোসান্টোর পেটেন্ট। কোন উত্তর এখনও পাইনি।

'জিনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং' জিনিসটার যে পেটেন্ট করা যায়না সেটা এরা জানেনা। বারি করেছে আমাদের দেশের বেগুনের উপর পরীক্ষা। মনসান্টো'র ভারতীয় বেগুনের উপর পরীক্ষা নয়।
৫।
সমালোচনা: বিটি বেগুন খেয়ে ভাল সব পোকামাকড় মরে যাবে।


উত্তর: সব পোকা মরবে না। ৪ টি বর্গের পোকা মরবে, তবে শুধুমাত্র বেগুন গাছের কোন অংশ খেলে। না খেলে মরবেনা।
ব্যাপারটা একটু অন্য দিক থেকে চিন্তা করার অনুরোধ করছি। শস্যক্ষেতে পোকা মারতে যখন আপনি কীটনাশক ব্যবহার করেন তখন নির্বিশেষে প্রায় সব পোকা মারা যায়।

সেই তুলনায় বিটি বেগুনতো বরঞ্চ ভাল। এই উদ্ভিদ যেসব পোকা খাবেনা তাদের কোনই ক্ষতি হবেনা। বেগুনের প্রচুর উৎপাদনের এর চেয়ে ভাল উপায় আর কি হতে পারে? প্রাকৃতিকভাবে আমাদের দেশে এমন বেগুন এখনও উৎপাদন সম্ভব নয় যা বিটি বেগুনের চেয়ে বেশি ফলনক্ষম (পোকাহীন অর্থে)। আগেই বলেছি, বাংলাদেশে প্রাকৃতিক বেগুন জাতগুলির ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ শস্য উৎপাদন কম হয় শুধুমাত্র পোকার জন্য। আবার এই পদ্ধতি যেকোন ধরনের বেগুনেই করা যায়।

বারি ৪ ধরনের বাংলাদেশি বেগুনকে পোকাবিহীন উৎপাদনক্ষম হিসেবে তৈরি করেছে।
৬।
সমালোচনা: বাংলাদেশকে পশ্চিমারা এবং বহুজাগতিক কোম্পানি তাদের ব্যবসার পরীক্ষাগার হিসেবে ব্যবহার করছে।
উত্তর: ভুয়া কথা। এমন কথা বাংলাদেশের বহু বাম ঘরানার সংগঠন বলে থাকে।

(ভন্ড ঘরানার এনজিও, যেমন ফরহাদ মাজহার এবং তার সঙ্গীর এনজিও এদিক দিয়ে সবচেয়ে সোচ্চার) একে আমার ফাঁকা বুলি ছাড়া কিছুই মনে হয়না। কেন বলছি।
এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত পৃথিবীর সবচেয়ে কার্যকর ঔষধগুলির প্রায় সবগুলিই পশ্চিমা ঔষধ কোম্পানিরাই উদ্ভাবন করেছেন। এদের পরীক্ষা প্রায় সবগুলিই পশ্চিমা দেশেই করেছেন, পশ্চিমা মানুষদের উপরেই করেছেন। দুয়েকটা ঘটনা আফ্রিকায় বা এমনকি আমাদের দেশেও শোনা যায় যে 'ঔষধ কোম্পানিগুলি গোপনে এসব অনুন্নত দেশের মানুষদেরকে ব্যবহার করছে।

' কিন্তু একটি ঔষধ উদ্ভাবন থেকে শুরু করে মানুষে পরীক্ষিত হয়ে বাজারে আসতে এতগুলি স্বচ্ছতার মানদন্ড পাশ করে আসতে হয় যে এমনসব গোপন পরীক্ষার জন্য অর্থ খরচ ঔষধ কোম্পানিগুলি না করারই কথা। আর বাংলাদেশের বিটি বেগুন বারি'র তৈরি, বহুজাগতিক কোম্পানির নয়। পরীক্ষা করলে আমাদের দেশের সরকারি প্রতিষ্ঠানই করবে। এতেও যদি সমস্যা থাকে কারও তবে বলার কিছুই নাই। তবে হ্যা, এতে বাইরের কোম্পানির সুবিধা হতে পারে এই দিক দিয়ে যে তারা এই ফলাফল কে ব্যবহার করতে পারেন।


৭।
সমালোচনা: বিটি বেগুন আমাদের নিজেদের দেশের বেগুনের জাতকে কলুষিত করবে।
উত্তর: সবগুলি অভিযোগের মধ্যে আমি এটাকে সবচেয়ে বেশি আমলে আনি। পরাগায়নের মাধ্যমে বিটি বেগুনের সাথে দেশী জাত মিশে যেতে পারে। ২০০১ সালে আমেরিকার একটি পরীক্ষা দেখিয়েছিল যে নেটিভ বা নিজস্ব জাতের যব গাছে বিটি জিন ঢুকে গেছে।

তবে পরে ২০০৫ সালে অবশ্য এই পরীক্ষা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু এটা হওয়া সম্ভব।
এখানে আমার মন্তব্য হচ্ছে আপনি কতটুকু ছাড় দিতে চান পরিবেশের বিষয়গুলি নিয়ে সেটাই বিবেচনার বিষয়। যেমন, কেউ চীন ঘুরে এল এবং সেখানকার একটি বেগুন গাছ নিয়ে এসে বাড়ির কোণায় লাগিয়ে দিল। চীনের গাছটি প্রাকৃতিক।

কিন্তু সেতো দেশী বেগুনকে কলুষিত করা শুরু করবে। বাংলাদেশের বহু শস্যের ক্ষেত্রে এটা হয়েছে বলে ধারনা করা যায়। এই কলুষিত হওয়াটা হয়েছে আমাদের অজান্তেই, কোন পরীক্ষা নীরিক্ষা ছাড়াই। কিন্তু আমরা বিটি বেগুনের গুণাগুণ পরীক্ষা করা। এই বেগুণগুলি বাংলাদেশি জাত থেকেই নেয়া।

শুধু একটা জিনে পার্থক্য প্রাকৃতিক উদ্ভিদ থেকে। যেই পার্থক্যটা প্রাকৃতিকভাবে অন্য বেগুন জাতের আরও বেশিও হতে পারে। আর কলুষিত যেটা করবে সেটা হল অন্য প্রাকৃতিক জাতেও নিজের বিটি জিনটা পাঠিয়ে দেবে। এটা ভাবতেই হবে যে দেশী বেগুনের বিশুদ্ধতা আপনি জেনেশুনেই পোকায় খাওয়া রাখতে চান, না জিনেটিকালি মডিফাইড পোকায় না খাওয়া গুণ দিয়ে কলুষিত করতে চান।
পরিশেষ:
অনুমোদন পাওয়ার পরও অভিযোগের কারনে বাংলাদেশে বিচার বিভাগ ৩ মাসের মধ্যে একটি স্বাস্থ্য রিপোর্ট জমা দিতে বলেছে কোন একটি স্বাধীন বৈজ্ঞানিক প্রতিষ্ঠানের দ্বারা।

স্বাধীন প্রতিষ্ঠানটি বিদেশী। যাদের অভিযোগ তারা পশ্চিমা ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছেন, এনজিও'র জন্য পশ্চিমা অর্থ সাহায্য আনছেন আর নিজের দেশে কৃষি গবেষণা কেন্দ্রকে বিশ্বাস না করে পশ্চিমা প্রতিষ্ঠান দিয়ে পরীক্ষার আবদার জানাচ্ছেন। তবে, রিপোর্টটা করাটা ভাল হবে। নিশ্চিন্ত হওয়া যাবে যে আসলেই কোন ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকির সম্ভাবনা নাই। বারি'র দ্বারা পরীক্ষাটা করা হলে সবচেয়ে খুশি হতাম।


তবে আমার লেখার মূল কারণ হল, যদি আগে থেকেই না জেনে বা ইচ্ছাকৃত ভাবে একটি দেশীয় প্রতিষ্ঠানের শুভ উদ্যোগকে এভাবে আক্রমণ করে বলেন যে 'আপনার যকৃত খারাপ হয়ে যাবে', 'স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর', 'সব পোকামাকড় মেরে ফেলবে' তবে যখন আপনাদের অভিযোগের ভিত্তিতে সকল পরীক্ষা পাশ করে বেগুনটি বাজারে আসার জন্য প্রস্তুত হবে (যদি করে) তখনও মানুষে এইসব মিথ্যা রিপোর্টের জন্য ভয় পাবে এই বেগুন চাষ করতে বা খেতে। ক্ষতিটা কার করছেন সেটা বুঝে করুন অনুগ্রহ করে।
সূত্র: http://en.wikipedia.org/wiki/Bt_brinjal http://en.wikipedia.org/wiki/Bacillus_thuringiensis

সোর্স: http://www.sachalayatan.com/     দেখা হয়েছে ১৫ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.