আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ : মুসলিম দেশগুলোর ভূমিকা

বাংলা আমার দেশ ১. বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে কেন্দ্র করে প্রায় সারা পৃথিবীতেই জটিল মেরুকরণ ঘটেছিল। প্রাচ্যে-মধ্যপ্রাচ্যে-পাশ্চাত্যে এমনকী আফ্রিকাতেও বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে-বিপক্ষে বিভাজন দেখা দেয়। বাংলাদেশে যখন গণহত্যা চলছে,গণহত্যার বিপরীতে একটি জাতির মুক্তিসংগ্রাম চলছে পাকিস্তান সরকার তখন এই মুক্তিযুদ্ধকে ইসলাম ধ্বংসের চক্রান্ত,ইসলামী রাষ্ট্র পাকিস্তান ভাঙার ষড়যন্ত্র হিসেবে প্রচার করেছে। দুঃখজনক হলেও সত্য,ধর্মকে ব্যবহার করে তৈরি করা এই প্রোপাগান্ডা-আফিম গিলেছে বিশ্বের বেশিরভাগ ইসলামী বা মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্র। এর সাথে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক হিসেবে ছিল যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক স্ট্র্যাটেজি।

যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের ঘনিষ্ট মিত্র,অন্যদিকে আমাদের আলোচ্যমান রাষ্ট্রগুলোর সাথেও পাকিস্তানের চমৎকার বোঝাপড়া ছিল। এর পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের কম্যুনিজম বিরোধী অবস্থানের সঙ্গী থাকার কারণে এসব রাষ্ট্র পাকিস্তানের মিত্র হিসেবেই কাজ করেছে যা প্রকারান্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা হিসেবেই চিহ্নিত হবে। এইসব রাষ্ট্রকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রতিপক্ষ হিসেবেই দেখতে হবে। এদের মধ্যে সৌদি আরব,জর্ডান,ইরান,লিবিয়া এবং তুরস্ক সরাসরি সামরিক সাহায্য দিয়েছে পাকিস্তানকে। সৌদি আরব ও লিবিয়া এর সাথে অর্থনৈতিক এবং কূটনৈতিকভাবেও সমর্থন দিয়েছে।

মালয়েশিয়া এবং ইন্দোনেশিয়া 'পাকিস্তানের অখণ্ডতা রক্ষার জন্য' ইয়াহিয়া খানের গৃহিত পদক্ষেপকে ( পড়ুন গণহত্যা ) সমর্থন দিয়েছে। নাইজেরিয়ার গণমাধ্যমে বাংলাদেশ বিরোধী প্রোপাগান্ডা চলেছে। একমাত্র ব্যতিক্রম দেখতে পাই মিশরকে। এছাড়া অন্যান্য আরব দেশগুলো এসময় চুপ থাকার নীতি অবলম্বন করে। ২. সামরিক এবং কূটনৈতিক বিরোধিতা আরব বিশ্বে মুক্তিযুদ্ধের প্রধান শত্রুর নাম হিসেবে নির্দ্বিধায় সৌদি আরবের কথা বলা যায়।

মুক্তিযুদ্ধের শুরু থেকেই সৌদি আরব প্রকাশ্যে এর বিপক্ষে অবস্থান নেয়। পাকিস্তানকে প্রায় সবধরণের সহযোগিতাই দিয়েছে সৌদি আরব। পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতা রক্ষার অজুহাতে তারা গণহত্যাকে সমর্থন করে এবং মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করে। জুনের শেষ সপ্তাহে জেদ্দায় অনুষ্ঠিত বাইশ জাতি মুসলিম সংস্থার সম্মেলনে পাকিস্তানি আগ্রাসনের সমর্থনে একটি প্রস্তাব পাশ করা হয়। এতে উল্লেখ করা হয় - পাকিস্তানের জাতীয় ঐক্য ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় বাইশ জাতি মুসলিম সংস্থা পাকিস্তানের কার্যক্রম সমর্থন করে।

পাকিস্তানের সাথে একটি অর্থনৈতিক এবং বাণিজ্যিক চুক্তিতেও আবদ্ধ হয় সৌদি আরব। যুদ্ধের নয়টি মাস তারা সব ধরণের আর্থিক সুবিধা দিয়েছে পাকিস্তানকে[১*]। সাহায্য করেছে সামরিকভাবেও। সৌদি আরব পাকিস্তানকে বেশ কয়েকটি এফ-৮৬ যুদ্ধবিমান দেয়[২]। যুদ্ধাকালীন সময়ে পাকিস্তানের গুরুত্বপূর্ণ মিত্রজোট হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে ইরান-জর্ডান-লিবিয়া।

যুদ্ধের একেবারে শেষের দিকে তিনদেশই পাকিস্তানকে যুদ্ধবিমান দিয়ে সহায়তা করে এবং আরো সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দেয়। এদের সাথে যোগ দেয় তুরস্ক। ইরান থেকে লিবিয়ার যুদ্ধবিমান পাকিস্তানে যাওয়ার জন্য তুরস্কের আকাশসীমা ব্যবহার করেছিল। এই সময় বেশ কিছু কূটনৈতিক মারপ্যাঁচ দেখা যায়। ডিসেম্বরের ৫ তারিখ,একজন মার্কিন কর্মকর্তা ( নাম জানা যায়নি ) ইরানের শাহ মুহম্মদ রেজা পহ্লভীর সাথে দেখা করে পাকিস্তানকে সামরিক সহায়তা দিতে অনুরোধ করেন।

পহ্লভী রাজি হন[৩*]। ৮ তারিখে তেহরানের ইউএস এমব্যাসির একজন কর্মকর্তা পহ্লভীর সাথে দেখা করে এই সহায়তা প্রদানের সম্ভাব্য উপায় নিয়ে আলোচনা করেন। এসময় পহ্লভী আবারো সহায়তার ব্যাপারে তার সম্মতি জানান। তবে এবার আরো কিছু বিষয় যোগ করা হয়। ভারত সোভিয়েত মৈত্রী চুক্তির প্রেক্ষাপটে ইরান সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে কোন ধরণের সংঘর্ষে যেতে রাজি ছিল না,পহ্লভীর ভাষায় সেই প্রস্তুতি তাদের ছিল না।

অন্যদিকে পাকিস্তানকে সহায়তা দিতেও তারা আন্তরিকভাবে রাজি। এই অবস্থায় পহ্লভী জর্ডানের মাধ্যমে এই সহায়তা দেয়ার প্রস্তাব দেন। প্রস্তাবটি ছিল এরকম,জর্ডানকে যেহেতু পাকিস্তান এবং যুক্তরাষ্ট্র সহায়তা দেয়ার অনুরোধ করেছে সেজন্য জর্ডান পাকিস্তানকে যুদ্ধবিমান ( এফ-১০৪ ) দেবে। অন্যদিকে এর রিপ্লেসমেন্ট হিসেবে ইরান জর্ডানকে যুদ্ধবিমান দিয়ে তাদের অভ্যন্তরীন সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সাহায্য করবে[৩**]। পহ্লভী জর্ডানকে দুই স্কোয়াড্রন এফ-১০৪ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন[৪]।

এর আগেই পাকিস্তান জর্ডানের কাছে সাহায্য চেয়েছে। ৫ তারিখেই মার্কিন এম্বাসাডর ডীন ব্রাউন জর্ডানের বাদশাহ হোসেনের সাথে দেখা করতে গেলে হোসেন তাকে ইয়াহিয়া খানের পাঠানো একটি চিঠি দেখান। চিঠিতে এফ-১০ এবং এফ-১০৪ যুদ্ধবিমান চাওয়া হয়েছে[৩*]। ৭ ডিসেম্বর,আম্মানের ইউ এস এমব্যাসিতে বাদশাহ হোসেন একটি বার্তা পাঠান । বার্তায় পাকিস্তানের ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করে হোসেন যুদ্ধবিমান সরবরাহের ব্যাপারে প্রস্তুত থাকার কথা জানান।

তবে এখানে অন্য একটি সমস্যা এসে পড়ে। জর্ডান যে এফ-১০৪ যুদ্ধবিমান দিতে চেয়েছে পাকিস্তানকে সেগুলো যুক্তরাষ্ট্র জর্ডানকে দিয়েছিল,এ অবস্থায় কোন তৃতীয় পক্ষকে এই বিমান দিতে গেলে যুক্তরাষ্ট্রের অনুমতি নিতে হবে। ঠিক ওই সময়ে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি অনুমতি দিতে পারছিল না কারণ পাকিস্তানে আর কোন সামরিক সহযোগিতা না দেয়ার ব্যাপারে একটি নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে তারা। এই অবস্থায় হোসেনকে যুক্তরাষ্ট্র জানায় যে তার প্রস্তাবটি বিবেচনাধীন রয়েছে। বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথেই নেয় যুক্তরাষ্ট্র।

শেষ পর্যন্ত এই বিমান পাকিস্তান পেয়েছিল। ১৪ ডিসেম্বর তারিখে ইস্যু হওয়া যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের সিচুয়েশন রিপোর্ট জানাচ্ছে ১২ এবং ১৩ ডিসেম্বর জর্ডানিয়ান এফ-১০৪ পাকিস্তানের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে। অন্যদিকে আগেই উল্লেখ করা সমস্যা থাকার পরেও ইরানের কাছ থেকে পাকিস্তান এফ-৮৬ এবং সি-১০৩ বিমান পেয়েছে বলে জানা যায়[২] এদিকে এই মিত্রজোটে লিবিয়াও যুক্ত হয়ে গেছে। ২৯ ডিসেম্বর তেহরানের ইউএস এমব্যাসি থেকে পাঠানো তারবার্তায় উল্লেখ করা হয় যে পাকিস্তান তিনটি লিবিয়ান এফ-৫ বিমান পেয়েছে। বিমানগুলি ছেড়ে গেছে তেহরান বিমান ঘাটি থেকে,চালকেরা ছিল পাকিস্তানি।

এর জন্য তুরস্কের আকাশসীমা ব্যবহার করা হয়েছে বলে উল্লেখ রয়েছে এই বার্তায়। তিনটি ভিন্ন অনুচ্ছেদে একজন মার্কিন ব্যবসায়ী,একজন ইরানের বিমানবাহিনীর একজন অফিসার এবং এবং অন্য একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রের বরাত দিয়ে এই খবরের সত্যতা নিশ্চিত করা হয়। তবে এই বিমানগুলো পাকিস্তানের হাতে আসে সম্ভবত ২৭ ডিসেম্বর,একই তারবার্তায় ২৬ তারিখে এই বিমানের তুরস্কে অবস্থান করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এসময় দুটি ফ্রন্টেই যুদ্ধ শেষ হয়েছে,পাকিস্তান আত্মসমর্পন করেছে। এই অবস্থায় যুদ্ধ বিমান দিয়ে পাকিস্তান কী করেছিল সেটা একটা প্রশ্ন।

তবে যুদ্ধের সময়েই পাকিস্তান কমপক্ষে ২৪ টি লিবিয়ান মিরাজ বিমান পেয়েছে যেগুলো,ধারণা করা হয়,লিবিয়া থেকেই এসেছে। আরো ধারণা করা হয়,যুদ্ধের সময়ে পাকিস্তান লিবিয়া থেকেই এফ-৫ বিমান পেয়েছে যেগুলো প্রশিক্ষণের কাজে ব্যবহৃত হয়েছে সারাগোদা নামক স্থানে। ভারতীয় বিমান বাহিনীর একটি প্রতিবেদনে এর উল্লেখ পাওয়া যায়[২]। এর পাশাপাশি জর্ডানের বাদশাহ হোসেন এবং ইরানের শাহ পহ্লভী বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ প্রশ্নে পাকিস্তানকেই সমর্থন দিয়েছেন,সমর্থন দিয়েছে তুরস্কও। লিবিয়ার অবস্থান কট্টরভাবে পাকিস্তানের পক্ষে ছিল ( পরের অংশে আলোচিত )।

এর সাথে যুক্ত হয় মালয়েশিয়া এবং ইন্দোনেশিয়া। বাংলাদেশে গণহত্যা শুরু হওয়ার পরে ২৮ মার্চ ১৯৭১ ইন্দোনেশিয়া এবং ইরান পাকিস্তানকে সমর্থন করে বিবৃতি দেয়। মালয়েশিয়া এবং তুরস্ক তাদের সমর্থন জানায় ৪ এপ্রিল[১]। প্রোপাগান্ডা : ধর্মীয় সুড়সুড়ি এবং নির্লজ্জ মিথ্যাচার ইসলামের নাম ভাঙ্গিয়ে এসব মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে বাংলাদেশ বিরোধী প্রচারণা চলেছে পুরোদমে। পুরো ব্যাপারটিকে ইসলামী দেশ পাকিস্তান ধ্বংসের জন্য ভারতের ষড়যন্ত্র বলে প্রচার করা হয়েছে।

আওয়ামীলীগ এবং শেখ মুজিবকে মূল কালপ্রিট সাজানোর চেষ্টা করা হয়েছে। এক কোটি ঘরহারা শরণার্থীর বিষয়টিকে সাজানো বলে উড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। প্রথমেই সৌদি আরবের একটি পত্রিকার খবর। পাকিস্তানে যে একটি যুদ্ধ চলছে সেটাই অস্বীকার করা হয়েছে জেদ্দা থেকে প্রকাশিত দৈনিক আল মদিনার ৩০ সেপ্টেম্বর ১৯৭১ সংখ্যার সম্পাদকীয়তে। সম্পাদকীয়র শিরোনাম Where Is War ।

লিখেছিলেন সম্পাদক আদনান কামেল সালাহ। একেবারে প্রথম অনুচ্ছেদেই বলা হয়েছে বাংলাদেশ থেকে যে বিপুল সংখ্যক শরণার্থী ভারতে পাড়ি জমিয়েছে তারা ভারতীয় 'স্যবোটাজ' থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্যই পালিয়েছে। It is certain that a large number of of refugee crossed into India but not 9 million as the Indian propaganda puts it,The refugees went to to India in order to escape the saboteurs coming from Indian territories. এর পরের অনুচ্ছেদেই পাকিস্তানের ভূয়সী প্রশংসা করা হয়েছে,পরিস্থিতি মোকাবেলায় পাকিস্তনা সরকারের সক্ষমতার কথা বলা হয়েছে এবং সিদ্ধান্ত টানা হয়েছে - যেহেতু সব ধরণের স্যাবোটাজ মোকাবেলার ক্ষমতা পাকিস্তান সরকার রাখে কাজেই যুদ্ধের ব্যাপারটি পুরোপুরিই অপপ্রচারণা। এবং যেহেতু যুদ্ধ হয়নি কাজেই গণহত্যা জাতীয় কিছুর প্রশ্নই আসেনা। And, in spite of the sabotage activities from India, The Pakistan Government could control all parts of East Pakistan and ensure security there,and the saboteurs could only move in some border of Pakistan with INdia,and that too often under protection of the Indian army.So,wgile talking about the danger of war what pusses Russia to pretend that it will ensure that no war arises in the area? এর পরে আরো দুটি অনুচ্ছেদে এরকম মিথ্যাচার চালানো হয়েছে।

ভারতকে স্যাবোটাজ না করতে নসিহত করা হয়েছে। তারিখটি খেয়াল করুন,সেপ্টেম্বরের ৩০ তারিখে তারা দাবি করছে কোন যুদ্ধই হয়নি ! এবার লিবিয়ার ত্রিপোলি থেকে প্রকাশিত দৈনিক আল থাউরা পত্রিকার Situation In Pakistan শিরোনামের সম্পাদকীয়টি দেখা যাক। এটি প্রকাশিত হয়েছে ২২ সেপ্টেম্বর। আল থাউরা লিবিয়ার সরকার নিয়ন্ত্রিত পত্রিকা। প্রথম অনুচ্ছেদেই পাকিস্তানের কার্যক্রমের প্রতি সমর্থন জানানো হয়েছে।

কারণ শুধু মুসলিম ব্রাদারহুডই নয়,বরং একটি right and just cause কে সমর্থন দেয়ার জন্যই তাদের অবস্থান বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এর পরে শেখ মুজিব সম্পর্কে কিছু মিথ্যাচার। শেখ মুজিবকে সাতচল্লিশের দাঙ্গায় মুসলিম হত্যাকারী হিসেবেও উল্লেখ করা হয়েছে। তাদের দেয়া ডাটা অনুসারে সত্তরের নির্বাচনে শেখ মুজিব সাতচল্লিশ শতাংশ ভোট পেয়েছেন তার মধ্যে মুসলিম ভোট মাত্র বিশ শতাংশ। এইভাবে প্রমাণ করার চেষ্টা করা হয়েছে যে বিচ্ছিন্নতাবাদী আওয়ামীলীগ মোটেই মুসলিম বান্ধব কোন দল নয়।

পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি পশ্চিম পাকিস্তানের বৈষম্য সম্পর্কে যেসব উপাত্ত পাওয়া যায় সেগুলো পাশ্চাত্য জায়নিস্ট মিডিয়ার প্রচারণা বলে উল্লেখ করা হয়েছে। মার্চের আলোচনার সময়ে পর্দার আড়ালে পাকিস্তানি সৈন্যদের পূরব পাকিস্তানে নিয়ে আসার ঘটনাটিও একইরকম প্রোপাগান্ডা। গণহত্যা,শরণার্থী সংক্রান্ত যেসব খবর বিবিসি সহ অন্যান্য মাধ্যমে পাওয়া গেছে তা সবই জায়নিস্ট এবং ভারতীয় অপপ্রচারণা। Sitting in Calcutta,relying on Indian interpreters for their conversation with refugees and competing with each other for dramatic news stories to boost their papers' readership,can one honestly expect these journalists to give a fair picture?...The figure has been been believed by some friends of Pakistan despite the fact that Pakistan has published the result of a through enquiry of the number of refugees which shows the exact figure is two million.But the volume of propaganda from BBS,Voice of America, and the western and zionist sources is louder and more impressive. আগেই বলা হয়েছে নাইজেরিয়াতেও বাংলাদেশ বিরোধী প্রোপাগান্ডা চলেছে। এবার নাইজেরিয়ার পত্রিকা ডেইলি মর্নিং পোস্টের সম্পাদকীয় দেখা যাক।

এটি প্রকাশিত হয়েছিল ১০ সেপ্টেম্বর,১৯৭১। লিখেছলেন তুনজি এডিওসান, Secession Attempt In Pakistan শিরোনামে। এখানে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে সাধুপুরুষ হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণহত্যার ঘটনা সাজানো। বুদ্ধিজীবী নিধনের ঘটনা মিথ্যা।

The picture of trigger-happy Pakistan Army is completely false one.In an attempt to refute most of these false reports,the Pakistani Government has taken around foreign correspondents to see the Dacca University falsely reported to have been razed to the ground.Many scholars alleged to have been killed along with their families have appealed on Dacca television and contradicted the false reports. শেখ মুজিব সব ধরণের আলোচনা-সমঝোতার চেষ্টা নস্যাৎ করেছেন। পাকিস্তানের গণ্যমান্য নেতারা এমনকী প্রেসিডেন্ট পর্যন্ত তার কাছে পাত্তা পায়নি। ঐক্যবদ্ধ পাকিস্তানের প্রতি চূড়ান্ত অসম্মান দেখিয়ে দখলদারী মানসিকতার শেখ মুজিব বলেছেন - 'Take it over'। এর পরে মর্নিং পোস্ট পাকিস্তান পরিস্থিতি সম্পর্কে 'সত্য' জানিয়েছে। বিচ্ছিন্নতাবাদীদের প্রতিরোধ করতেই যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু সামরিক ব্যবস্থাই নেয়া হয়েছে মাত্র,তাতে সংখ্যাগরিষ্ঠ পূর্ব পাকিস্তানবাসীর সমর্থনও আছে এবং সেটা 'যুদ্ধ' নয় - The truth is that a military action supported by a majority of East Pakistanis was ordered against the secessionists,and not a war between East Pakistan.Neither it be right to describe the Government of Pakistan as "West Pakistan Government". এখানে সবগুলো পত্রিকাতেই মূল সুরটি লক্ষণীয়।

সবগুলোতেই শেখ মুজিব-আওয়ামীলীগ-ভারতকে কালপ্রিট সাজিয়ে পাকিস্তানের দোষ আড়াল করার চেষ্টা চোখে পড়ে,এর সাথে ধর্মীয় অনুভূতি ব্যবহার করে জনসমর্থন তৈরির চেষ্টা যোগ হয়েছে। ৩. মিশরের ভূমিকা : মুসলিম এবং আরব রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে মিশর বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামকে সমর্থন করেছে। বাংলাদেশের পক্ষে জোট নিরপেক্ষ সম্মেলনের শরিক ভারতের অবস্থানকেই সমর্থন করেছে তারা,সেই সূত্রেই গণহত্যার বিপরীতেই অবস্থান ছিল মিশরের। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশকে স্বীকৃতিদানকারী প্রথম দিকের রাষ্ট্রগুলোর একটি মিশর। মিশরের মিডিয়াতেও বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের সমর্থনে লিখেছেন অনেকেই।

সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে কায়রোর আধাসরকারি সংবাদ পত্র আল আহরামে সম্পাদক ড. ক্লোভিস মাসুদ ভারত থেকে শরণার্থীদের নিরাপদে এবং নিঃশঙ্কভাবে দেশে ফেরার একটি ব্যবস্থা করতে আনত্ররজাতিক সম্প্রদায়কে তাগিদ দেন। এর পাশাপাশি একটি গ্রহণযোগ্য রাজনৈতিক সমাধানের কথাও বলেন। রাজনৈতিক সমাধানের সংজ্ঞাও পরিস্কার করেছিলেন তিনি - শেখ মুজিবের নিঃশর্ত মুক্তি এবং সত্তরের নির্বাচন অনুসারে ক্ষমতা হস্তান্তর। ড. মাসুদ অখণ্ড পাকিস্তানেরই পক্ষপাতী তবে তিনি এও উল্লেখ করেছে,পরিস্থিতি এরকম চলতে থাকলে অখণ্ড পাকিস্তানের বিনিময়ে এই নৃশংস গণহত্যা মেনে নেয়াও সম্ভব না। বাংলাদেশ ইস্যুতে আরবদের আরো কার্যকরী ভূমিকা রাখতেও অনুরোধ করেছেন মাসুদ[৫]।

৪. একথা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই পাকিস্তান তার ইসলামী রাষ্ট্র পরিচয়টি ব্যবহার করে আরব এবং মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর কাছ থেকে পক্ষপাতিত্ব আদায় করে নিতে পেরেছিল। ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে এসব দেশে পাকিস্তানের পক্ষে প্রচারণা চলেছে যা বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে কাজ করেছে। তবে সামরিক এবং কূটনৈতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে মূল চালগুলো যুক্তরাষ্ট্রই চেলেছে। তাদের আগ্রাসী কূটনীতির সাথে জড়িতে থাকা এসব দেশের পাকিস্তানকে সহায়তা করার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ কারণ। একই সাথে পারস্পরিক স্বার্থরক্ষার সমীকরণগুলোও কাজ করেছে পাকিস্তানের পক্ষেই।

তার সাথে ধর্মীয় সুড়সুড়ির সংযোগ ঘটেছে চমৎকারভাবে। 'মুসলিম' রাষ্ট্রগুলো তাই সমষ্টিগতভাবে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শত্রু হিসেবেই চিহ্নিত হবে ইতিহাসে। তথ্যসূত্র : ১) বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বহির্বিশ্বে শত্রুমিত্র - সিরু বাঙালি ( পৃ - ২ ) ২) IAF COMBAT KILLS - 1971 INDO-PAK AIR WAR - B. Harry ৩) Foreign Relations of the United States, 1969–1976,Volume XI,South Asia Crisis, 1971 - Louis J. Smith,Edward C. Keefer ( *pg - 610,**pg - 700 ) ৪) Revisiting 1971 War and IAF’s Role:India’s Interests and Compulsions - Air Vice Marshal Kapil Kak ৫) গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ,দশম খণ্ড - হাসিনা আহমেদ,পৃ - ১২০ ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.