আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিশ্বনবী (সা.) ইমাম হুসাইন (আ.)'র জন্য কেঁদেছিলেন

আমি মানি, জানি, মানুষকে ভাল বাস, মানুসের সেবা করো, আল্লাহ খুশি হবে, আল্লাহকে পাবে।

ইমাম হুসাইন (আ.) তেসরা মহররম কারবালায় তাঁবু স্থাপন করেন। আর ইয়াজিদ বাহিনীর সেনাপতি ওমর ইবনে সাদ তার সেনাদের নিয়ে কারবালায় পৌঁছে। আগে নানা জায়গায় ইমামের কাফেলার তাঁবুগুলো কিছুটা উঁচু বা টিলার মত স্থানে বসানো হয়েছিল। কিন্তু এবার ইমাম (আ.) সমতল বা কিছুটা গর্তময় স্থানে তাঁবু বসানোর নির্দেশ দেন।

সম্ভবত এর কারণ ছিল শিশু ও নারীরা যাতে যুদ্ধের দৃশ্য দেখে ভয় না পান। হোর ইবনে ইয়াজিদ (রা.) নামের একজন সেনা কর্মকর্তা সর্ব প্রথম কারবালায় ইমাম শিবিরের বিপরীতে তাঁবু গাড়েন। তিনিই ওবায়দুল্লাহ ইবনে জিয়াদকে প্রথম খবর দেন যে ইমাম হুসাইন (আ.) কারবালায় এসেছেন। ইমাম জানতেন কারবালায় কি ঘটতে যাচ্ছে। তিনি তেসরা মহররমই কারবালার জমি স্থানীয় নেইনাভাবাসীদের কাছ থেকে কিনে নেন।

তিনি তাদের এ শর্ত দেন যে ভবিষ্যতে যারা এখানে নবী (সা.) পরিবারের সদস্যদের কবর জিয়ারত করতে আসবেন নেইনাভাবাসী তাদের আপ্যায়ন করবে ও পথ দেখিয়ে দেবে। এর আগে ইবনে জিয়াদ দোসরা মহররম ইমামের (আ.) কাছে একটি চিঠি পাঠান। ওই চিঠিতে সে জানায়, তাঁকে ও তাঁর সঙ্গীদেরকে ইয়াজিদের প্রতি বায়আত বা আনুগত্যের অঙ্গীকার করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে, এর অন্যথা হলে তাঁদেরকে হত্যা করতে বলেছেন ইয়াজিদ। ইমাম এ চিঠির জবাব না দিয়ে বললেন, ওবায়দুল্লাহ ইবনে জিয়াদের জন্য কঠিন (খোদায়ী) শাস্তি অপেক্ষা করছে। ইবনে জিয়াদ ইমামের (আ.) বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে ওমর বিন সাদকে পাঠান।

তাকে ইরানের রেই শহরের শাসনভার দেয়ার লোভ দেখানো হয়। (এই শহরটি বর্তমান বা আধুনিক তেহরানের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত)। সাদ ইমামের (আ.) বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে ভয় পাচ্ছিলেন। কিন্তু একদল সঙ্গীর নিষেধ সত্ত্বেও সে শেষ পর্যন্ত ইমামের (আ.) বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে অগ্রসর হয়। তেসরা মহররম কুফার চার হাজার সেনা নিয়ে ওমর বিন সাদ কারবালায় প্রবেশ করে।

সে প্রথমে ইমামের (আ.) উদ্দেশ্য সম্পর্কে একজন দূতের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করে জানতে পারে যে, ইমাম (আ.) বলেছেন, কুফার জনগণই তাঁকে দাওয়াত করেছে ও প্রতিনিধিও পাঠিয়েছিল তাঁর কাছে যাতে তিনি এই শহরে আসেন। তারা (কুফাবাসী) যদি তাঁর আগমনে অসন্তুষ্ট হয়ে থাকে তাহলে তিনি ফিরে যাবেন বলে জানান। ওমর বিন সাদ এই তথ্য ইবনে জিয়াদের কাছে পাঠালে ইবনে জিয়াদ ধারণা করে যে ইমাম (আ.) যুদ্ধের ফাঁদে পড়েও মুক্তির আশা করছেন, কিন্তু সে সুযোগ আর নেই। তিনি সাদকে এক চিঠিতে জানান, তোমার চিঠি পেয়ে সব কিছু জেনেছি। হুসাইন (আ.) ও তাঁর সঙ্গীদের বল ইয়াজিদের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা করতে।

যদি তারা তা করে তাহলে আমরা আমাদের সিদ্ধান্ত জানাব। সাদ বুঝতে পারে যে জিয়াদের উদ্দেশ্য ভাল নয়। তাই সে জিয়াদের চিঠি ইমামের (আ.) কাছে পাঠায়নি। কারণ, সে জানত ইমাম হুসাইন (আ.) কখনও ইয়াজিদের প্রতি আনুগত্য করবেন না। উল্লেখ্য, কুফার উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার পর ইমাম হুসাইন (আ.) দোসরা মহররম কারবালায় পৌঁছেছিলেন।

তিনি সেখানে পৌঁছেই জানতে পারেন ওই এলাকার নাম কারবালা। তখনই তিনি জানান যে, সেখানে তাঁর ও সঙ্গীদের শাহাদত ঘটবে এবং তাঁদের নারী ও শিশুদের বন্দী করবে ইয়াজিদ বাহিনী। এ দিনেই তিনি কাইস বিন মাসহারকে দূত হিসেবে কুফায় পাঠান। ইমাম হুসাইন (আ.) তার কাছে একটি চিঠি দিয়েছিলেন কুফায় তাঁর সমর্থক নেতৃবৃন্দের উদ্দেশ্যে। কিন্তু ইয়াজিদের সেনারা কাইসকে পথে গ্রেফতার করে।

কাইস ইয়াজিদের বিরুদ্ধে কথা বলায় তাকে শহীদ করা হয়। বিশ্বনবী (সা.) ইমাম হুসাইন (আ.)'র জন্য কেঁদেছিলেন নির্ভরযোগ্য বা সহি হাদিসে এসেছে: "হারিসের কন্যা উম্মুল ফাজল বর্ণনা করেন যে, তিনি মহানবী (সা.)'র কাছে গেলেন ও বললেন: হে আল্লাহর রাসূল (সা.) আমি গত রাতে দুঃখজনক স্বপ্ন দেখেছি। রাসূল (সা.) বললেন: কি দেখেছ? ফাজল বললেন: খুব কঠিন! রাসূল (সা.) বললেন: কী? ফাজল বললেন: আমি দেখলাম আপনার শরীরের এক টুকরো আপনার কাছ থেকে আলাদা হয়ে গিয়ে আমার আঁচলে এসে পড়লো! আল্লাহর রাসূল (সা.) বললেন : তুমি খুব ভাল স্বপ্ন দেখেছ ; আল্লাহর ইচ্ছায় ফাতিমার এক পুত্র সন্তান জন্ম নিবে এবং তোমার আঁচলে জায়গা নিবে। এরপর ফাতিমা ( যেরূপ মহানবী (সা.) বলেছেন) হুসাইনকে (আ.) জন্ম দিলেন এবং তিনি আমার আঁচলে স্থান নিলেন। একদিন মহানবীর (সা.) কাছে গেলাম এবং হুসাইনকে (আ.) তাঁর কোলে রাখলাম, এর কিছুক্ষণ পর আমার থেকে তাঁর (সা.) দৃষ্টি অন্যত্র গেল।

হঠাত দেখলাম মহানবীর (সা.) দু'চোখ বেয়ে বন্যার মত পানি ঝরছে ! তিনি বলেন, আমি বললাম : হে আল্লাহর নবী (সা.) ! আমার পিতামাতা আপনার জন্য উৎসর্গ হোক, আপনার কী হয়েছে ? তিনি (সা.) বললেন: 'জিব্রাইল (আ.) আমার সাক্ষাতে এলেন এবং আমাকে খবর দিলেন যে, আমার উম্মত খুব শীঘ্রই আমার এ বংশধরকে হত্যা করবে। " বললাম: 'একে ?! রাসূল (সা.) বললেন: হ্যাঁ, সে (জিব্রাইল) আমার জন্য রক্তিম কিছু মাটিও এনেছে। " ( প্রখ্যাত সহি হাদিস গ্রন্থ মুসতাদরাকে সহীহাইন, তারিখে ইবনে আসাকির, মাকতালে খাওয়ারেযমী এবং তারিখে ইবনে আসির, লহুফ ও ইবনে তাউস সহ অন্য অনেক বই-পুস্তক সূত্রে বর্ণিত হয়েছে এই হাদিস। যেমন, ইবনে আসির খঃ ৬ পৃঃ২৩০ খঃ৮ পৃঃ ১৯৯) অন্য হাদিসে এসেছে: আনাস ইবনে মালিক বলেন: " 'ক্বাতর' নামক এক ফেরেশতা আল্লাহর কাছে মহানবীর (সা.) সাথে দেখা করার অনুমতি চাইলেন । মহান আল্লাহ তাঁকে অনুমতি দিলেন এবং সেই ফেরেশতা 'উম্মে সালমার' দিবসে (অর্থাত যে দিবসে রাসূল-সা. উম্মে সালমাকে সঙ্গ দিতেন) আসলেন।

মহানবী (সা.) উম্মে সালমাকে বললেন : সাবধান থেক, কেউ যেন আমাদের মজলিশে প্রবেশ না করে। এমন সময় তিনি যখন কক্ষে অবস্থান করাছিলেন তখন হুসাইন ইবনে আলী (আ.) দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করলেন। রাসূল (সা.)ও তাঁকে তুলে নিয়ে চুম্বন করলেন। ঐ ফেরেশতা বলল: তাঁকে (আ.)ভালোবাসেন ? রাসূল(সা.)বললেন: হ্যাঁ। ওই ফেরেশতা বললো : আপনার উম্মত খুব শীঘ্রই তাঁকে হত্যা করবে।

যদি আপনি চান তবে যে স্থানে তিনি শহীদ হবেন তা আপনাকে দেখাতে পারি। তিনি বললেন: হ্যাঁ দেখতে চাই। ঐ ফেরেশতা ( ইমাম হুসাইনের আ. শাহাদাত স্থল থেকে এক মুষ্ঠি মাটি এনে হযরত (সা.) কে দেখালেন। কিছুক্ষণ পর কিছু বালি বা রক্তিম মাটি আনলেন। উম্মে সালমা তা গ্রহণ করলেন এবং নিজের কপড়ে রাখলেন।

হাদীসের বর্ণনা কারী সাবিত বলেন: আমরা (ঐ সময়) বলতাম : এ হল কারবালা! " [মুসনাদে আহমাদে ইবনে হাম্বল, খঃ৩ পৃঃ২৪২ ও ২৬৫। ] প্রায় একই ধরনের বর্ণনা বা হাদিস বর্ণিত হয়েছে রাসূল (সা.)'র স্ত্রী হযরত আয়শা, হযরত উম্মে সালমা (সালামুল্লাহি আলাইহা) ও যয়নব বিনতে জাহশ নামের বর্ণনাকারী হতে। আর এইসব হাদিস থেকে প্রমাণিত হয় যে বিশ্বনবী (সা.) বিভিন্ন সময়ে তাঁর নাতি ইমাম হুসাইন (আ.)'র শাহাদতের জন্য ক্রন্দন করেছেন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.