আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অবশেষে The Blue Heaven অর্থাৎ সেন্ট- মার্টিন ভ্রমন ।

সাধারন ব্লগার

অনেক অনেক দিন পর লিখতে বসলাম । আসলে এখন আর সামু ভাল লাগে না । আমি সামুতে কোন পরিচিত মুখ না । তাও অনেক দিনই তো হল সামুর সাথে আছি । ওই টান থেকেই হয়ত ফিরে আসি ।

যাই হোক আসল কথায় আসি । কয়েক দিন আগে ঘুরে এলাম স্বপ্নের দ্বীপ সেন্ট- মার্টিন। এখানে যাওয়ার প্ল্যান অনেক আগে কিন্তু কেন জানি যাওয়া হচ্ছিল না । কিন্তু এবার যেতেই হত । কারন দেশে আর বেশি দিন নেই আমি ।

পড়ালেখার জন্য দেশের বাইরে চলে যাব ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে । এই বার না যাওয়া হলে আর যাওয়াই হত না । প্ল্যান অনুযায়ী টেকনাফের বাসের টিকেট কেটে ফেললাম (ঢাকা-টেকনাফ নন এসি ৯০০ টাকা। আগেই ডিসাইড করা ছিল কক্স বাজার যাব না । ডিরেক্ট ঢাকা-সেন্ট- মার্টিন- ঢাকা ।

বাস ছাড়ল রাত ৮ টায় । টেকনাফ (কেয়ারি সিনবাদ ঘাট) পৌছালাম পরের দিন সকাল সাড়ে ৮ টায় । তো আমরা গিয়েছি ৪ জন । আমি আর আমার ৩ বেষ্ট ফ্রেন্ড । যাওয়ার পথে : তারপর কেয়ারি ঘাটে নেমে নাস্তা করলাম , ফ্রেশ হলাম , টিকেট কিনলাম ।

টিকেটের দাম খুব ১টা বেশি না । যাওয়া- আসা জন প্রতি ৫৫০ টাকা । এর পর অপেক্ষা- Exciment , কখন শিপে উঠবো , কখন সেন্ট মার্টিন পৌছাবো । এই ফাকে অই জায়গাটির বর্ণনা নেই । কেয়ারি সিনবাদ ছাড়ে নাফ নদী থেকে ।

যা বাংলাদেশ ও মায়ানমারকে আলাদা করেছে । ওই পাশে মায়ানমারের পাহাড়ি সৌন্দর্য , পাহাড়ের মধ্যে মেঘ খেলা । আর এক পাশে আমাদের দেশের সৌন্দর্য । মাঝখানে নাফ নদীতে কেয়ারি চলছে । শুধু ১টা কথাই বলব , Out of the World . অবশেষে পৌছালাম সেন্ট- মার্টিন (খুশির কান্না) নেমেই হোটেল খোঁজা শুরু ।

আমাদের চাহিদা ১টাই বিচের সামনে হতে হবে । ভিতরের দিকের হোটেল গুলা অনেক কম দামে পাওয়া যায় । ১টা হোটেলে উঠলাম । ঠিক বিচের সামনেই । ডাবল বেড ৭০০ টাকা ।

এই হোটেল নেয়ার কারন ১টাই । এইটার সামনে ১টা খোলা ঘরের মত আছে । এখানে শুয়ে বসে সারা দিন - সারা রাত সমুদ্রের সৌন্দর্য উপভোগ করা যাবে । প্রথমে গিয়ে অবাক হয়েছি, মানুষ সাধারনত ৩ ঘণ্টার জন্য সেন্ট- মার্টিন যায় । সকালে শিপে উঠে ১২ টায় পৌছায় ।

আবার ৩ টায় ওই শিপে আবার ফেরত আসে । আর আমরা ওখানে ছিলাম ২ রাত তিন দিন । তাও মনে হচ্ছিল এখানে আরো ১ সপ্তাহ থাকা উচিত আমাদের । জায়গাটা আমার এত পছন্দ হয়েছে । এখানকার মানুষ জন অনেক বেশি ভাল ।

আমরা ছিলাম ২-৩ দিন । কিন্তু আসার দিন মনে হয়েছে আমরা ওখানকার ই কেউ । হোটেল , বাজারের সবাইকে বিদায় জানাতে জানাতে অবস্থা খারাপ । প্রথম দিন গিয়ে সমুদ্রে লাফালাফি । তারপর ঘাটে গেলাম এমনি ।

ওখানে সন্ধ্যার সময় এমন সুন্দর দৃশ্য আমি আমার জীবনেও দেখিনি । শান্ত সমুদ্র , সব কিছু নীল হয়ে আছে । ভাষায় বোঝানোর মত না । এবার ছিল রাতের সারপ্রাইজ । রাত ১ টার দিকে শুরু হল ঝড় ।

সবাই নেমে পড়লাম সমুদ্রে । বাতাস আমাদের উড়ায়ে নিয়ে যাচ্ছিল । ওই রাতের experience মনে থাকবে অনেক দিন । পরের দিন সকালে উঠেই যাব ছেড়া দ্বীপ । তো স্পীড বোট ভাড়া করলাম ।

যাওয়া - আসা ১২০০ টাকা । ওই জায়গাটা ও বেশ আমরা ছেড়া দ্বীপে গিয়েছিলাম কিছু সময়ের জন্য । ওখানে মাত্র ১টি পরিবার থাকে । ওরা এক রাত ওদের ছোট কুড়ে ঘরে থেকে যেতে বলল । ওদের এখানে রাতে থাকলে , থাকার টাকা দিতে হয় না ।

শুধু খাবারের টাকা লাগে । তাও নিজেরা মাছ ধরলে খরচ কমে যায় । আমরা এই ছোট দ্বীপে রাতে থাকার ও মাছ ধরার লোভ সামলাতে পারলাম না । থেকেই গেলাম । ওরা বলল কেউ কেউ ওদের ঘরে রাতে থাকতে চায় না ।

ভয় পায় সবাই । খুব কম মানুষই ছেড়া দ্বীপে রাতে ছিল । আমরা সেই কয়েক জন ভাগ্যবানদের এক জন । ওই রাতের এক্সপেরিএন্স আমি বলে বোঝাতেও পারবো না , শেষ ও করতে পারব না । বিদ্যুৎ নেই ছবিও তুলতে পারিনি ।

রাতে জোয়ারের সময় পানি বেড়ে চারিদিকের সব জায়গা পানিতে তলিয়ে যায় । মাঝখানে ১টি ছোট ঘরে আমরা। আসল দ্বীপ বলতে জা বোঝায় । শুধু এই টুকুই বলব , আপনি যদি সমুদ্রকে চিনতে ও জানতে চান , আপনাকে এক রাত ছেড়া দ্বীপে থাকতেই হবে । এ ছাড়া ও ওদের জীবন যাপন সম্পর্কে ১টা ধারনা হয়েছে আমাদের ।

সকাল হল । আজকে চলে যাব । মন খারাপ । কিন্তু সকাল থেকেই অনেক বৃষ্টি । অনেক সুন্দর লাগছিল ।

কিন্তু হঠাত শুনলাম আজকে বৃষ্টির জন্য কেয়ারি আসবে না । মাথায় হাত । টাকা পয়সা শেষ আরো এক দিন থাকব কিভাবে । এই সব ভুলে ঠিক করলাম পুরো সেন্ট- মার্টিন হেঁটে শেষ করব । অবশ্য পুরোটা শেষ করতে পারিনি ।

তবে অনেক খানিই দেখেছি । হুমায়ূন আহমেদ এর সেই স্বপ্নের বাড়ি ' সমুদ্র বিলাস " হোটেলে ফিরলাম দুপুর ১টায় । তখনো বৃষ্টি পড়ছে । এসে শুনলাম কেয়ারি এসেছে । এর পর হোটেল ছেড়ে ভেজা জামা কাপড় পরেই দৌড় ।

এর পর আর কি । শিপ ছাড়ল , টেকনাফ পৌছালাম । ঢাকার বাসে উঠলাম ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।