গাড়ি ভাড়া নেওয়ার চাহিদাপত্র নিয়ে ভিড়ের মধ্যে দরদাম করছেন শীতল ট্রান্সপোর্ট এজেন্সির মালিক সুফিউর রহমান। দরাদরি শেষে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ঢাকার কোনাপাড়ায় একটি কারখানার কাঁচামাল পরিবহনের জন্য বড় ধরনের কাভার্ড ভ্যানের ভাড়া ঠিক করলেন ৫০ হাজার টাকা। গতকাল বুধবার সকালে শহরের কদমতলীর ট্রাকবাজারে দাঁড়িয়ে সুফিউর রহমান জানান, স্বাভাবিক সময়ে এই ভাড়া ছিল ২৬ থেকে ২৭ হাজার টাকা। কিন্তু বন্দর থেকে কাঁচামাল খালাস করে কারখানায় না নিলে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাবে। এ কারণে আমদানিকারকের পক্ষে পণ্য খালাসকারী সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরা বেশি ভাড়া দিয়ে হলেও পণ্য পরিবহনে রাজি হচ্ছেন।
টানা ৮৪ ঘণ্টার হরতালের শেষ দিনে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ঢাকাসহ সারা দেশে পণ্য পরিবহনের ভাড়া প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। পণ্যভর্তি কনটেইনার পরিবহনের ট্রেইলর, পণ্য পরিবহনের কাভার্ড ভ্যান, খোলা ট্রাকসহ সব ধরনের গাড়ি ভাড়ায় এ চিত্র দেখা গেছে।
পণ্য পরিবহন ব্যবসায়ীদের হিসাবে, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সড়কপথে ঢাকা অঞ্চলে গড়ে প্রতি কেজি পণ্য পরিবহনে স্বাভাবিক সময়ে খরচ হতো এক টাকা বা তারও কম। এখন তা হাঁকানো হচ্ছে দুই টাকা। অর্থাৎ প্রতি কেজিতে পরিবহন ভাড়া বাড়ল এক টাকা।
গাড়িভেদে বেড়েছে ন্যূনতম ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা। চট্টগ্রাম চেম্বারের পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘গাড়ি কম ও চাহিদা বেশি থাকায় যে যার মতো ভাড়া হাঁকছে। এখন শিল্পকারখানার উৎপাদন চালু রাখতে দ্বিগুণ ভাড়ায়ও পণ্য পরিবহন করতে বাধ্য হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। এতে খরচ বেড়ে যাচ্ছে। এর মাশুল গুনছে ভোক্তারা।
’
জানা গেছে, প্রতিদিন চট্টগ্রাম বন্দর ও বেসরকারি কনটেইনার ডিপো থেকে চার হাজার থেকে পাঁচ হাজার গাড়ি ঢাকাসহ সারা দেশে পণ্য পরিবহন করে। গড়ে এক হাজার ৫০০ থেকে এক হাজার ৮০০ কনটেইনারের পণ্য নেওয়া হয় এসব গাড়িতে। কিন্তু ৮৪ ঘণ্টার হরতালে বন্দর ও ডিপোতে জমে গেছে প্রায় পাঁচ হাজার কনটেইনার বা ১২ থেকে ১৪ হাজার গাড়ির পণ্য। এসব পণ্য খালাসের জন্য হরতাল শেষ হওয়ার আগেই গাড়ি ভাড়া নিতে শুরু করেছেন ব্যবসায়ীরা। কারণ, বাড়তি এক দিনের জন্য বন্দরে পণ্য রাখার মাশুল গুনতে হবে ব্যবসায়ীদের।
তবে গাড়ির তথা ট্রাকের চাহিদা বাড়লেও পর্যাপ্ত গাড়ি নেই চট্টগ্রামে। কারণ, হরতালের আগে দেশের নানা স্থানে আটকা পড়েছে অনেক গাড়ি। এ কারণে ভাড়া বাড়ছে হু হু করে।
আন্তজেলা পরিবহন সংস্থা ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির সভাপতি মনির আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, এখন বড়জোর চট্টগ্রামে গাড়ি আছে তিন হাজার। আর চাহিদা প্রায় ১২ হাজারের।
তাই ভাড়া বাড়ছে। বন্দর থেকে পণ্য খালাসের জন্য পর্যাপ্ত গাড়িও পাওয়া যাচ্ছে না। প্রতিনিয়ত সড়কে গাড়ি ভাঙচুরের শিকার হওয়ায় বাড়তি ভাড়ায় ক্ষতি পুষিয়ে নিতে চাইছেন অনেকে।
কদমতলী ট্রাকের বাজারে আমদানিকারকের প্রতিনিধির পক্ষ হয়ে গাড়ি ভাড়া নেওয়ার মধ্যস্থতাকারী নাহিদ মুরাদ বলেন, ‘২০টি গাড়ির চাহিদাপত্র নিয়ে ঘুরছি। স্বাভাবিক ভাড়ায় গাড়ি পাওয়া যাচ্ছে না।
মাত্র ১২ টন পণ্য পরিবহনের ভাড়া ১৬ হাজার টাকা থাকলেও এখন ৩০ হাজার টাকা চাইছে। ’
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।