আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পাকিস্তানের তালেবান নিয়ে ঘোর আশঙ্কা

পাকিস্তানের তালেবান বাহিনীর প্রধান হেকিমুল্লাহ মেহসুদ যুক্তরাষ্ট্রের ড্রোন হামলায় নিহত হওয়ার পর বাহিনীটিকে নিয়ে ভীষণ অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। পাকিস্তান সরকারের সঙ্গে শান্তি আলোচনা ভেস্তে গেছে, কেবল তা-ই নয়, বরং দলটির নতুন করে আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠার আশঙ্কা গ্রাস করছে পাকিস্তানবাসীকে। আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের ওপর অদৃশ্য কর্তৃত্বকারী রাষ্ট্রগুলোও ভবিষ্যত্ নিয়ে উত্কণ্ঠিত হয়ে পড়ছে।

রয়টার্স বলছে, এ মাসের শুরুতে হেকিমুল্লাহর মৃত্যুতে তালিবান বাহিনীর অন্তর্দ্বন্দ্ব আবার চাগিয়ে উঠছে। দলটির মধ্যকার শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

আফগানিস্তান থেকে মার্কিন-নেতৃত্বাধীন ন্যাটো বাহিনীর দেশে ফিরে যাওয়ার সময় যত ঘনিয়ে আসছে, তালেবান বাহিনীকে নিয়ে উদ্বেগ ততই বাড়ছে।

পাকিস্তানের একটি পাহাড়ি পরিষদ গত সপ্তাহে মোল্লা ফজলুল্লাকে পাকিস্তানের তালেবান বাহিনীর প্রধান নির্বাচিত করেছে। এ সিদ্ধান্তে অনেক জ্যেষ্ঠ নেতা অসন্তুষ্ট হয়ে দলত্যাগ করেছেন বলে জানা গেছে।

নতুন নেতা নির্বাচন নিয়ে তালেবানের শীর্ষ পরিষদ ‘শুরার’ বৈঠক বসেছিল ৭ নভেম্বর দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তানে। পাহাড়ি এলাকাটিতে অনুষ্ঠিত বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এমন এক নেতা রয়টার্সকে বলেন, ‘যখন ফজলুল্লার (নেতা হিসেবে) নাম ঘোষণা করা হলো, তাঁরা (কয়েকজন বিদ্রোহী নেতা) “এ আদেশ মানি না” বলে সভাস্থল থেকে বেরিয়ে যান।

’ তবে বাকি নেতারা ফজলুল্লাকে মেনে নেন এবং তাঁর নেতৃত্বে হেকিমুল্লাহকে হত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার শপথ গ্রহণ করেন।

ওই তালেবান নেতা বলেন, ‘এখন থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পুতুল এই পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চলবে। ... যারা আফগানিস্তান থেকে সোভিয়েত বাহিনীকে তাড়াতে পেরেছে, তারা পাকিস্তানকে ভাঙতেও সক্ষম। ’

১৯৮০-র দশকে মাদ্রাসা ছাত্রদের বিরাট বাহিনী সোভিয়েত দখলদার বাহিনীকে দেশটি থেকে হটিয়ে দেয়।

 

মতবিরোধ

রয়টার্স বলছে, বিভিন্ন সশস্ত্র দলের সমন্বয়ে গঠিত পাকিস্তানের তালেবান বাহিনীতে সব সময়ই বিভিন্ন উপদল ছিল।

দলটির একাংশ ছিল জিহাদের কর্মসূচিতে বিশ্বাসী, বাকিদের কেউ কেউ সরকারবিরোধী আবার কেউ পশ্চিমাবিরোধী। আফগানিস্তানের তালেবান বাহিনীর থেকে স্বতন্ত্রভাবে কাজ করে পাকিস্তানের তালেবান। তবে দল দুটির মধ্যে যোগাযোগ আছে।

হেকিমুল্লাহ ছিলেন মেহসুদ নামের এক পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর মানুষ। ফজলুল্লার বাড়ি সোয়াত উপত্যকায় বলে ওয়াজিরিস্তানের পাহাড়িদের কাছে তিনি ‘বহিরাগত’।

হেকিমুল্লাহ পাকিস্তান সরকারের সঙ্গে খোলাখুলি আলোচনায় বসার জন্য প্রস্তুত ছিলেন। যদিও তাতে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি।

ক্ষমতা গ্রহণ করেই ফজলুল্লাহ ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসতে যাচ্ছেন না বরং উল্টো সরকারের ওপরে হামলা চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তাঁদের প্রধান লক্ষ্যস্থল পাঞ্জাব।

পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকাগুলো নিয়ে গবেষণা করে এমন একটি বেসরকারি সংস্থা হলো ফেডারেলি অ্যাডমিনিস্ট্রার্ড ট্রাইবাল এরিয়াস রিসার্চ সেন্টার বা ফাতা রিসার্চ সেন্টার।

এর পরিচালক সাইফুল্লা মেহসুদ বলেন, ‘এতে (ফজলুল্লার নিয়োগে) মেহসুদরা যে কেবল অসন্তুষ্ট তা-ই নয়, বরং এমন সাংঘাতিক মতবিরোধের খোঁজ মিলেছে যাতে ভবিষ্যতে বড় ধরনের ঝামেলা হতে পারে। ’

সাইফুল্লা বলেন, ‘মনে হয় ফজলুল্লার নিয়োগের পর দলটিতে সমঝোতাবিরোধীদের দাপট বেড়েছে। ’ পাহাড়ি পশতু এলাকাগুলোতে বাসকারী সূত্রদের দেওয়া তথ্যের সমন্বয় করে গবেষণা করে থাকে ফাতা রিসার্চ সেন্টার।

 

আফগান দাপট

পাকিস্তান তালেবান বাহিনীর ওপর আফগান তালেবানের প্রভাব ক্রমে প্রকট হয়ে উঠছে। ফজলুল্লা পাঞ্জাবে আক্রমণ করার ঘোষণা দিয়েছেন।

অথচ এতকাল পাকিস্তানের বাণিজ্যকেন্দ্রটিতে এ ধরনের হামলার ঘটনা ঘটেছে খুবই কম।

রয়টার্স বলছে, এতদিন পাকিস্তানের গোয়েন্দা ও সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় গড়ে ওঠা সিপাহে সাহবা, লস্করে জগনভি ও জয়সে মোহাম্মদের মতো দলগুলো কাশ্মীরের স্বাধীনতাকামীদের হয়ে ভারতের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ব্যস্ত ছিল। কিন্তু তালেবান বাহিনী ও আল-কায়েদার নীতিগত লড়াইয়ের জের ধরে প্রভাব পড়েছে এসব দলের ওপর। ফলে তারা এখন পাকিস্তানের সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করেছে।

জয়সে মোহাম্মদের সদস্য আব্দুররাখমান বলেন, ‘আমরা চাই আফগানিস্তানে মোল্লা ওমরের নেতৃত্বে শান্তি আসুক।

’ এ থেকে পাকিস্তানের ইসলামপন্থীদের ওপরে আফগানিস্তানের তালেবান বাহিনীর প্রধান মোল্লা ওমরের প্রভাব স্পষ্ট বোঝা যায়।

আব্দুররাখমান বলেন, ‘যখন আমেরিকানরা চলে যাবে, তখন মুরুব্বিরা মোল্লা ওমরের সঙ্গে আলোচনা করে সব ঠিক করবেন। যদি তখন সেখানে আমাদের যুদ্ধ করার প্রয়োজন হয়, আমরা দলবল নিয়ে যাব। ’

পাকিস্তানের তালেবানের নেতা ফজলুল্লা এর আগে মোল্লা ওমর পাশে থেকে আফগানিস্তানে লড়েছিলেন। তাই এবার শুরা যখন ফজলুল্লাকে নেতা নির্বাচিত করতে দ্বিধান্বিত ছিল, তখন স্বয়ং ওমর তাতে হস্তক্ষেপ করেন।

 

ফজলুল্লার শক্তি

ফজলুল্লা এখনো আফগান সীমান্তবর্তী গভীর বনে লুকিয়ে আছেন। মার্কিন ড্রোন হামলা থেকে বাঁচতে দলের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে তিনি সম্ভবত সেই বনের নুরিস্তান ঘাঁটিতে অবস্থান করছেন। দলটির ভেতরের মতবিরোধ যত দ্রুত দূর করা যাবে, তালেবান বাহিনী তাদের অভিযান তত তাড়াতাড়ি শুরু করবে।

পাকিস্তানের এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, ‘তিনি (ফজলুল্লা) সেখানকার বাসিন্দা নন, সব সময় শারীরিকভাবে উপস্থিতও থাকেন না। তবে তার দুটো সুবিধা আছে: প্রচুর অর্থ আর একটা আফগান পাসপোর্ট।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.