আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাংলার তরু-লতা-গুল্ম-২০ : ডুমুর

চেয়ে দেখি ছাতার মতন বড়ো পাতাটির নিচে ব’সে আছে ভোরের দোয়েল পাখি—চারিদিকে চেয়ে দেখি পল্লবের স্তূপ --জীবনানন্দ দাশ
খুব ছোটবেলায় প্রায়ই দাদির মুখে একটা কথা শুনতাম পেটের ভূকে ডুমুর পাকে। কথাটার মানে তখন বুঝিনি। বুঝেছি অনেক বড় হয়ে। যাই হোক, গ্রাম্য প্রবাদ নিয়ে আলোচনা করা উদ্দেশ্য নয়। তবে একটা মজার গল্প বলি।

কেউ কি কখনও কুকুরকে ঘাস খেতে দেখেছেন। জানি অনেকেই চোখ কপালে উঠিয়ে ফেলেছেন। সত্যি বলতে কি আমি দেখেছি। ঠিক ঘাস নয় ডুমুর পাতা! হ্যাঁ, ডুমুর পাতা কুকুরের বদহজমে এক অব্যর্থ ঔষধ। গাঁয়ের নেড়ি কুকুরগুলো মাঠ থেকে যখন মড়া খেয়ে আসে তারপর তাদের বদহজম হয়।

হবেই বা না কেন। খাওয়ার বজজাৎ কুকুরগুলো একটুও মেপে খায় না, বরং শিয়াল-শকুনের সাথে পাল্লা দিয়ে কে কতটুকু মড়া গিলতে পারে সেই তালে থাকে। যাই হোক বদহজমে কাতর কুকুরটা তখন ইচ্ছে মত ডুমুরের পাতা খায়। যাই হোক, আসি আসল কথায়। ডুমুর বাংলাদেশের অতি পরিচিত এক বুনো উদ্ভিদ।

বাংলাদেশের এমন কোনো গ্রাম বা শহর নেই যেখানে ডুমুর গাছের দেখা মেলে না। খোদ এই ঢাকা শহরের অলিতে-গলিতে ডুমুর গাছ চোখে পড়ে।
গত শীতকালে যে সুঁড়িপথটা কেটে করেছিল, তারি নিচে বাবলা, যজ্ঞিডুমুর, পিটুলি ও নটকান গাছের তলায় ভবানী ও তিলু নিজেদের জন্য একটা ঘাট করে নিয়েছে...বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়। ডুমুর সাইকাস জাতীয় বৃক্ষ। বাংলাদেশের সব মাটিতে সর্বোত্র তারা জন্মাতে পারে।

তবে ছায়াযুক্ত ও স্যাঁতস্যাঁতে জায়গায়ই এদের বেশি পছন্দ। এদের খুব কাছের জ্ঞাতিভাই হলো বট আর অশ্বথ। তবে বট-অশ্বথের মত এমন বিশাল আকৃতি এদের কাপলে জোটে না।
ডুমুর বহুবর্ষজীবি বৃক্ষ। গাছের কোটরে, দালান কোঠার ফাটলে, টয়লেট কিংবা পানির পাইপের গোড়ায়--মোটকথা যেখানে একটু অনুকূল পরিবেশ পায় সেখানেই মাথা উঁচু দাঁড়াবার চেষ্টা করে ডুমুর গাছ।

ডুমুর গাছ ছোটবেলায় খুব দ্রুত বাড়ে। কিন্তু ১-২ বছর বয়স হবার পর বৃদ্ধির হারটা অনেক কমে যায়।
ডুমুর গাছের কাণ্ড ধূসর। কাণ্ডের গোড়া থেকেই ডালপালা জন্মায়। তাই চারা ডুমুর গাছের ঝোপালো একটা ভাব থাকে।

কিন্তু বয়স বাড়ার সাথে সাথে ঝোপ থেকে বৃক্ষে রূপান্তর ঘটতে থাকে।
ডুমুর গাছ ঠিক কত বড় হয় কত মেটা হয়, কত দিন বাঁচে নিশ্চয়ই করে বলতে পারব না। তবে আমি ৪০-৫০ বছরের একটা ডুমুর দেখেছি। সেটার কাণ্ডের বেড় বড়জোর ২ ফুট হবে। উচ্চতা ৪০-৫০ ফুট।

কাণ্ড বেশ শক্ত হয়।
ডুমুর গাছের পাতার রং গাঢ় সবুজ। তবে কঁচি পাতার রং বেশ হালকা, মরা পাতার রং লালচে হলুদ। পাতা এক পক্ষল প্রতিটা বোঁটায় একটা করে পাতা থাকে। বোঁটার দৈর্ঘ্য এক ইঞ্চি।

পাতা উপবৃত্তাকার। পাতার গড় দৈর্ঘ্য ৫-৬ ইঞ্চি। তবে চারাগাছের পাতা সাইজে বেশ বড় হয়। পাতার প্রস্থ ৩-৪ ইঞ্চি।
সাইকাস জাতীয় উদ্ভিদ হলেও অন্য ফাইকাস যেমন বট বা অশ্বথ পাতার সাথে ডুমুরের পাতার বিস্তর ফারাক।

ডুমুরের পাতা খসখসে। আসলে পাতার গায়ে ক্ষুদ্র-ক্ষুদ্র অসংখ্য হুল আছে। অনেকটা শিরিষ কাগজের মত। পাতা গায়ে ঘসলে জ্বলুনী হতে পারে এমনকী ছাল ছড়ে পর্যন্ত যেতে পারে।
ডুমুরের ফুল নিয়ে যেমন প্রবাদ বাক্য আছে তেমনি প্রচলিত আছে নানান গালগল্প।

ছোটবেলায় শুনতামস ডুমুরের ফুল নাকি ফোটে গভীর রাতে। মানুষের অলক্ষে। কেউ যদি সেই ফুল দৈবৎ দেখতে পায় তাহলে সে কোটিপতি হয়ে যাবে। কোটিপতি হবার লোভে কত রাতে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে উঠে টর্চ জ্বালিয়ে ডুমুরের ফুল খুঁজেছি--সেসব কথা মনে হলে এখন হাসি পায়। যাই হোক, সত্যিকার অর্থে ডুমুরের ফুল ফোটে ডালের ভেতর।

তাই দেখা যায় না।
গোল গোল ছোট্ট ছোট্ট ফল হয় ডুমুর গাছে। ফল দেখতে হুবহু লটকনের মত। লটকনের মত ডুমুর গাছে ফল হয় কাণ্ড কিংবা ডালের গায়ে। ফল হয় থ্কোায় থোকায়।

তবে প্রতিটা ফলের বোঁটা আলাদা আলাদা। ফলের ব্যাস ১-১.৫ ইঞ্চি। ফলের বোঁটায় ০.৫ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হয়।
কাঁচা ফল সবুজ রংয়ের। পাকা ফলের রং হলুদ।

ফলের ভেতর সরিষা দানার মত অসংখ্য বীজ থাকে। তবে বীজ শুকনো অবস্থায় থাকে না। ফলের ভেতরে জেলির মত এক ধরনের পেস্ট থাকে। সেই পেস্টের সাথেই লেগে থাকে বীজগুলো। পাকা ফলের বীজ কাঠবিড়ালী আর পাখিদের ভীষণ পছন্দের খাবার।

তাই এইসব প্রাণীদের মাধ্যমেই ডুমুরে বংশ বিস্তার ঘটে দূর-দূরান্তে। এ কারণেই গাছের কোটর কিংবা দালানের ফাটলে ডুমুর চারার এত আধিপাত্য। বৈজ্ঞানিক নাম--Ficus hispida.

সোর্স: http://www.sachalayatan.com/

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.