আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

“আমরা চাষা-মজুর,অশিক্ষিতরা একটি স্বাধীন জনগোষ্ঠী”

মুক্তিযুদ্ধ আমাদের অহংকার, ধর্মান্ধতা ও দলান্ধতা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থী।

সুবীর ভৌমিক বাংলাদেশের নিউজ পোর্টাল বিডি নিউজ২৪-এর সিনিয়র সম্পাদক। টাইমস অব ইন্ডিয়ায় নভেম্বরের ১ তারিখে সুবীর ভৌমিক যে লেখা লিখেছেন তার শিরোনামে দুটি অংশ ছিল। প্রথমাংশে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ একটি সহিংস পর্বের মধ্যে রয়েছে’; দ্বিতীয়াংশ, “বাংলাদেশে যেন বন্ধু সরকার মতায় প্রত্যাবর্তন করতে পারে সেটা দেখার জন্য ভারতের অবশ্যই যা কিছু দরকার তার সবই করা উচিত” (Bangladesh is in a violent phase and India must do all it can to see a friendly regime return to power)। সুবীর ভৌমিক বলছেন, (১) বাংলাদেশের এখনকার পরিস্থিতি একাত্তরের আগের হানাহানি ও সংঘাতের পরিস্থিতির মতো, (২) বাংলাদেশে যে সরকার নির্বাচিত হয়ে আসার সম্ভাবনা তৈরী হয়েছে সে ভারতের দুশমন, এবং এই দুশমনদের কে একাত্তরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহায়তা করছে, অতএব একাত্তরের মত মার্কিন হস্তক্ষেপ সাহসের সঙ্গে মোকাবিলার জন্য বাংলাদেশে ভারতের সামরিক অভিযান চালানো উচিত।

বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ রাজনীতি নিয়ে সুবীর ভৌমিকের এ লেখা, মার্কিন, চীন, ভারত, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারকে কেন্দ্র করে নতুন যে ভূরাজনৈতিক বাস্তবতা দক্ষিন-এশিয়ার এই পূর্বাঞ্চলে গড়ে উঠেছে তা নানান দিক থেকে বিবেচনার দাবি রাখে। ভূরাজনৈতিক ভাবে বাংলাদেশের অবস্থান অত্যান্ত গুরুত্ত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের ভূরাজনৈতিক বাস্তবতার কারনে দক্ষিন-এশিয়ার পূর্বাঞ্চলের নিরাপত্তা, প্রতিক্ষা ও সামরিক দিকগুলোর সঙ্গে রয়েছে নিভিড় ব্যাবসায়ীক স্বার্থ। উদীয়মান পরাশক্তি হিসেবে চীনের আবির্ভাব এবং মায়ানমারের প্রাকৃতিক সম্পদের বাজার উন্মুক্ত হবার ফলে বাংলাদেশের অবস্থান ভূরাজনৈতিক ভাবে অত্যান্ত গুরুত্ত্বপূর্ণ করে তুলেছে। আধিপত্যবাদী দিল্লীর পদলেহী সুবীর বাবুরা সম্ভবত ভুলে গেছেন তাদের অবস্থানের কথা।

এক সময় কলকাতার বাবুরা পূর্ব বাংলার মানুষকে মনে করতো চাষা-মজুর,অশিক্ষিত। কলকাতার বাবুদের এই মনোভাবের থেকে রক্ষা পায়নি কমরেড মোজাফ্ফর আহমদের মত ব্যক্তিরাও। তাই দেশ স্বাধীন হবার পর বাবুদের লক্ষ করে গর্বের সাথে কমরেড মোজাফ্ফর আহমদ উক্তি করেছিলেন, “আমরা চাষা-মজুর,অশিক্ষিতরা একটি স্বাধীন জনগোষ্ঠী”। সুবীর বাবুরা সম্ভবত আজও কমরেড মোজাফ্ফর আহমদের উক্তিটির সারমর্ম বুঝতে সক্ষম হয়নি। বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ রাজনীতি নিয়ে সুবির বাবুদের মাথা ব্যাথা চোখে পড়ার মত।

কিন্তু লজ্জাজনক হলেও সত্য আধিপত্যবাদী ভারতেরই উত্তর পুর্বাঞ্চলের রাজ্য মণিপুরে ২০০০ সালের ২ নভেম্বর মণিপুর রাজ্যে ভারতীয় সেনাবাহিনীর একটি গনহত্যার পরে AFSPA নামের একটি কালো আইন প্রত্যাহারের দাবিতে অনশনে বসেন মণিপুরি তরুনী ইরম শর্মিলা চানু, টানা ১২ বছর অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন, মুখে একফোটা পানি না তুলে । AFSPA বা 'আর্মড ফোর্সেস স্পেশাল পাওয়ার্স অ্যাক্ট, ১৯৫৮' আইনটির জোরে মণিপুরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর হত্যা, অত্যাচার, অপহরণ, ধর্ষণ সবকিছুকেই জায়েজ করে রাষ্ট্র নামের আধিপত্যবাদী ভারত। ২১ নভেম্বর ২০০০ থেকে তার নাকে প্লাস্টিক নল ঢুকিয়ে তাকে জোর করে তরল খাদ্য খাওয়ানো চলছে, সেই সাথে চলছে তাঁর হাজতবাস। প্রতি বছর তাঁকে ছাড়া হয়, ফের একবার কয়েকদিনের মধ্যেই গ্রেপ্তার করার জন্য। এই দশ বছরে ভারতীয় চ্যানেল ও প্রিন্ট মিডিয়ায় সেনাবাহিনীর বর্বরতা, শর্মিলা বা তার আন্দোলনের কথা উচ্চারিত হয়নি বললেই চলে।

সুবির বাবুদেরও দেখা যায়নি এ বিষয়ে কোন কলাম লিখতে। ভারতীয় আর্মির হাতে মণিপুরি নারী ধর্ষনের বিরুদ্ধে মনিপুরের নারীরা বিবস্ত্র হয়ে "Indian Army Rape Us" ব্যানার নিয়ে যখন প্রতিবাদে ভেঙে পড়ে, তখনও নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে ভারতের মিডিয়া ও সুবির বাবুরা। আত্মহত্যার প্রচেষ্টার মিথ্যা অভিযোগে বারবার গ্রেফতার করা হয় শর্মিলাকে। বাংলাদেশের বিডিনিউজ ২৪-এ সিনিয়র সম্পাদক হিসেবে নিয়োজিত একজন ভারতীয় সাংবাদিক বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে দিল্লীকে ‘উস্কানি’ দিয়ে সামরিক আগ্রাসন পরিচালনা করার আহবান করে, অথচ বিডিনিউজ কিম্বা তার সম্পাদক ও তার মালিককে এর জন্য কোন জবাবদিহিতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে না। কি কারনে কেন?


সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১০ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।