আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কেন বারবার ইনজুরিতে পড়ছেন মেসি?

একটা সময় ছিল যখন সবার বিস্ময় ছিল লিওনেল মেসির ফিটনেস। সবাই অবাক হয়ে ভাবত, খেলোয়াড়দের চিরশত্রু ইনজুরিকে কীভাবে কাঁচকলা দেখিয়ে খেলে চলেছেন মেসি! এখন বিস্ময়টা ঠিক উল্টো। সবাই অবাক, কী এমন হলো যে এভাবে বারবার ইনজুরিতে পড়ছেন বার্সেলোনার আর্জেন্টাইন তারকা?
২০০৮-০৯ মৌসুম থেকে ২০১২-১৩ মৌসুমের শেষ পর্যন্ত খুব কম ম্যাচেই মাঠের বাইরে কাটিয়েছেন। বেশির ভাগ ম্যাচেই খেলেছেন পুরো ৯০ মিনিট। দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখিয়ে টানা চারবার ফিফা বর্ষসেরা ফুটবলারের পুরস্কার তো জিতেছেনই, আর্জেন্টাইন তারকাকে বিগত চার বছরের সবচেয়ে ফিট ফুটবলারও বলা যেতে পারে নির্দ্বিধায়।

কিন্তু সেই মেসিই কিনা গত আট মাসে চারবার পড়লেন ইনজুরির ফাঁড়ায়! কী হলো বার্সেলোনার সেই দাপুটে মেসির?
বার্সেলোনায় ফুটবল ক্যারিয়ারটা শুরুর সময়ও এ ধরনের ইনজুরি সমস্যায় ভুগতে হয়েছিল মেসিকে। তখন অনেকেরই আশঙ্কা ছিল যে, ইনজুরির সঙ্গে লড়াইটা মেসিকে পুরো ক্যারিয়ারজুড়েই চালাতে হবে। কিন্তু দলের অমূল্য রত্নটিকে রক্ষার জন্য বিশেষ পরিকল্পনাই করেছিলেন পেপ গার্দিওলা। সেই ফিটনেস নির্দেশাবলি অনুসরণ করে আর পেছনে তাকাতে হয়নি মেসিকে। ২০০৮ থেকে ২০১২ পর্যন্ত টানা চারটি বছর তিনি ছিলেন সবার ওপরে।

মাঠের পারফরম্যান্স দিয়ে তো বটেই, ফিটনেসের দিক দিয়েও। এ সময় শুধু সবচেয়ে বেশি গোলই মেসি করেননি, গত পাঁচ মৌসুমে ক্লাবের হয়ে খেলেছেন ২৬৯টি ম্যাচ। প্রতি মৌসুমে গড়ে প্রায় ৫৪টি করে ম্যাচ খেলেছিলেন।
এ বছর মেসির ইনজুরি সমস্যাটা শুরু হয়েছিল গত এপ্রিলে। চোট পেয়েছিলেন প্যারিস সেইন্ট জার্মেইনের বিপক্ষে চ্যাম্পিয়নস লিগের ম্যাচে।

কিন্তু সে সময় পুরোপুরি সুস্থ না হয়েও আবার নেমে পড়তে হয়েছিল বার্সার চ্যাম্পিয়নস লিগ ভাগ্য বাঁচাতে। প্রথম লেগের খেলা ২-২ গোলে ড্র হওয়ার পর দলের প্রয়োজনে দ্বিতীয় লেগেও খেলেছিলেন এই আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড। তাঁর পাস থেকে করা গোল দিয়েই কোনোমতে হার এড়িয়েছিল বার্সা। টিকিট পেয়েছিল সেমিফাইনালের। কিন্তু পুরোপুরি ফিট না হওয়ায় বায়ার্ন মিউনিখের বিপক্ষে সেমিফাইনালে সেটারই খেসারত দিতে হয়।

প্রথম লেগে ৪-০ গোলের হারের পর দ্বিতীয় লেগের ম্যাচটাতে তাঁকে আর মাঠেই নামাননি তখনকার কোচ টিটো ভিলানোভা।

এবারের মৌসুম শুরুর পরে এখন পর্যন্ত মেসি ইনজুরি আক্রান্ত হয়েছেন তিনবার। প্রথমে গত আগস্টে স্প্যানিশ সুপারকোপার ম্যাচে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে। এক মাস পরে ২৮ সেপ্টেম্বর একই রকম কারণে ইনজুরিতে পড়েছিলেন আলমেরিয়ার বিপক্ষে। দুবারই খুব দ্রুতই মাঠে ফিরেছিলেন বার্সেলোনার প্রাণভোমরা।

কিন্তু সর্বশেষ ইনজুরি বড়সড় ধাক্কাই দিয়েছে মেসিকে। হ্যামস্ট্রিং ইনজুরির কারণে এবার প্রায় দুই মাস থাকতে হবে দর্শক হয়ে। প্রতিবারই যখনই ধারণা করা হয়েছে মেসি তার ফিটনেস ফিরে পেতে যাচ্ছেন, তখনই নতুন করে ইনজুরি আক্রান্ত হচ্ছেন।

কেন হচ্ছে এমনটা? সতীর্থ সেস ফেব্রিগাস এর জন্য দায়ী করেছেন পুরোপুরি সুস্থ না হয়েই তাড়াতাড়ি মাঠে ফিরতে চাওয়ার তাড়নাকে, ‘লিওকে থামতে হবে, যতক্ষণ দরকার ততক্ষণই সময় নিয়ে বিশ্রাম নিতে হবে। আর্সেনালে থাকার সময় আমারও একই রকম সমস্যা ছিল।

সে তাড়াতাড়ি ফিরে আসতে চাইবেই, আর সেটাই হবে একটা ভুল। সেটা জন্ম দেবে নতুন আরেকটি ইনজুরির। ’

দীর্ঘ সময় নিয়ে বিশ্রাম নেওয়া তো দূরের কথা, মেসি করেছেন ঠিক উল্টাটা। গত মৌসুমটা ইনজুরি নিয়ে শেষ করলেও এবারের মৌসুম শুরুর আগে প্রাক-প্রস্তুতি ম্যাচ খেলা ও বিভিন্ন বিজ্ঞাপন ও দাতব্যের কাজে মেসি গিয়েছেন পোল্যান্ড, ইসরায়েল, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, কলম্বিয়া, পেরু, গুয়ানতেমালা ও সেনেগালে। এমন বিশ্বভ্রমণ! এটাকে নিশ্চয়ই ইনজুরি থেকে পুরোপুরি সুস্থ হওয়ার ভালো উপায় বলা যায় না।

ক্লাব এবং জাতীয় দল—দুই জায়গা থেকে বারবার বলা সত্ত্বেও মেসি থামতে রাজি হন না। ২৬ বছরের এই তারকা ফরোয়ার্ড যে সত্যিই খেলে যেতে চান আর পুরো সময় খেলতে না পারলে কিছুটা অসন্তুষ্টই হন সেটা স্পষ্টই বোঝা গিয়েছিল এবারের মৌসুমের শুরুতে। যখন নতুন কোচ টাটা মার্টিনো তাকে বদলি হিসেবে তুলে নিয়েছিলেন। মাঠে খেলার জন্য মেসির এই মরিয়া ভাবটার সঙ্গে মিল আছে ম্যারাডোনারও। আর্জেন্টিনার সাবেক ফিটনেস কোচ ফার্নান্দো সিগনোরিনি বলছেন, ‘লিও কিছুটা বিশ্রাম নিতে পারে।

এটাকেও যদি সে তার দায়বদ্ধতা হিসেবে নেয়, কিছু মিনিট কম খেলে তাহলে সেটা তার জন্য ভালো হবে। কারণ দীর্ঘদিন ধরেই সে অত্যধিক পরিশ্রম করেছে। কিন্তু লিও শুনবে না। সে যেন ডিয়েগোর মতো। এ ধরনের খেলোয়াড়েরা সব সময়ই খেলতে চায় আর সেরা হতে চায়।

নিজেদের কাছ থেকে তারা সব সময়ই সর্বোচ্চটাই চায়। ’

অনেকেই মেসির এই ইনজুরি সমস্যার জন্য দায়ী করেন নতুন কোচ মার্টিনোকেও। কিন্তু আর্জেন্টাইন এই কোচ মেসির ফিটনেস কর্মসূচির কিছুই বদলাননি। তবে বার্সেলোনায় কিছুটা বদল সত্যিই এসেছে। ফিজিও জুয়ানহো ব্রাউ বেশ কয়েক বছর ধরে হয়ে ছিলেন মেসির ছায়া।

বার্সেলোনার সব ম্যাচ তো বটেই, আর্জেন্টিনার ম্যাচগুলোর সময়ও মেসির সার্বক্ষণিক সঙ্গী ছিলেন ব্রাউ। কখন কী খেতে হবে, কখন ঘুমাতে হবে, কতক্ষণের জন্য বিশ্রাম, কতক্ষণ অনুশীলন—সবই মেসি করতেন এই ফিজিওর নির্দেশে। কিন্তু ব্রাউ ন্যু ক্যাম্পের অন্য একটা পদের দায়িত্ব নেওয়ায় মেসি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছেন এই বন্ধু, অভিভাবকের কাছ থেকে। গার্দিওলা সময়ের ফিটনেস প্রশিক্ষক লরেঞ্জো বুয়েনাভেনচুরাও পাড়ি জমিয়েছেন বায়ার্ন মিউনিখে। ফলে ফিটনেস-সংক্রান্ত পরিকল্পনা সব আগের মতো থাকলেও অভ্যন্তরীণ কিছু বদলের প্রভাব হয়তো সত্যিই পড়েছে মেসির ওপর।

কিন্তু বিরামহীনভাবে খেলে যাওয়ার মানসিকতাই যে সমস্যাগুলোর পেছনে মূল কারণ সেটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। সেকারণেই এবার সুস্থ হওয়ার সময়টা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আগামী বছরের ফুটবল বিশ্বকাপটার কথাও যে ভাবতে হচ্ছে এখন থেকেই। ফুটবলের সবচেয়ে বড় আসরের শিরোপাটি জিতে নিজেকে কিংবদন্তিদের কাতারে বসানোর সুবর্ণ সুযোগ আর্জেন্টাইন তারকার সামনে।

মেসি যে বিশ্বকাপের আগেই নিজের ফর্ম ফিরে পাবেন সে ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী তাঁর বার্সেলোনা ও আর্জেন্টিনা সতীর্থ হাভিয়ের মাচেরানোর।

মাচেরানোর প্রত্যাশা নিশ্চয়ই প্রতিধ্বনিত হয় মেসি-ভক্তদের হূদয়ে, প্রার্থনাতেও।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।