দীর্ঘ এক মাস দৌড়ঝাঁপ করেও শারীরিক প্রতিবন্ধী সাবরিনা সুলতানা ভোটার হিসেবে নাম নিবন্ধন করতে পারলেন না। জাতীয় পরিচয়পত্রটিও হাতে পাওয়া হলো না তাঁর। গ্রামের ইউপি চেয়ারম্যানের কাছ থেকে সত্যায়িত করা জাতীয়তার সনদ আনা হয়েছে। কিন্তু ততদিনে ভোটার তালিকায় নাম নিবন্ধনের সুযোগ বলতে গেলে আর নেই। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হয়ে গেলে তো কথাই নেই।
সাবরিনা আক্ষেপ করেই বললেন, ‘আমার আর ভোটার হিসেবে নাম নিবন্ধন করা হলো না। ’
চট্টগ্রামের হালিশহর থানাধীন শান্তিবাগে বসবাস করেন সাবরিনা। বর্তমানে তাঁর বয়স ৩০। এর আগে ভোটার হওয়া বা জাতীয় পরিচয়পত্র হাতে পাওয়ার জন্য পরিবার থেকেই ততটা উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। তেমন একটা প্রয়োজনও হয়নি।
কিন্তু চার বছর ধরে সাবরিনা বিভিন্ন কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছেন। তাই এখন একটি জাতীয় পরিচয়পত্রের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছেন তিনি।
সাবরিনা বর্তমানে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বাংলাদেশি সিস্টেমস চেঞ্জ অ্যাডভোকেসি নেটওয়ার্ক বা সংক্ষেপে বি-স্ক্যানের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁর এ সংগঠন সমাজের বিভিন্ন সিস্টেমে পরিবর্তন আনার চেষ্টা চালাচ্ছে। তবে সেই সিস্টেমের কারণেই নিজে এক মাস ঘুরেও ভোটার হিসেবে নাম নিবন্ধন করতে পারলেন না।
এ হতাশার কথা জানিয়ে সাবরিনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও তাঁর অভিজ্ঞতার কথা লিখেছেন।
টেলিফোনে সাবরিনা প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, ‘হুইল চেয়ার ছাড়া এবং একলা চলাফেরা করতে পারি না। বের হতে হলে অন্ততপক্ষে দুই জন লোক প্রয়োজন হয়। যখন ঠিক করলাম ভোটার হিসেবে নাম নিবন্ধন করব, তখন আমার শারীরিক অবস্থার কথা জানিয়ে জেলা নির্বাচন অফিসের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে ফোন দিলাম। তিনি জানালেন, কাউকে পাঠিয়ে দিলেই হবে।
শুধু ছবি তোলার সময় আমি গেলেই হবে। তবে সেই কেউ একজনটা পড়ল গিয়ে বাঘের সামনে। নির্বাচন অফিসের দায়িত্বরত কর্মকর্তাগণ কথাই বলবেন না। যিনি ভোটার তাঁকেই আসতে হবে। অন্য কেউ এলে হবে না, ইত্যাদি ইত্যাদি।
’
সাবরিনা বলেন, ‘তারপর থেকে শুরু হয় সংগ্রাম। আমার পক্ষ হয়ে যিনি গেলেন তাঁকে জানানো হলো, জন্ম নিবন্ধন সনদ, বাবা মায়ের জাতীয় পরিচয়পত্র, বাড়ির দলিল, ওয়াসার বিলের ফটোকপি সঙ্গে আনতে হবে। পরে এসব নিয়ে আমি নিজে জামালখানে জেলা নির্বাচন অফিসে যাই। সেখানে গিয়ে দেখি অফিসে ঢুকতে হলে কমপক্ষে আট থেকে দশটি সিঁড়ি দিয়ে উঠতে হবে। সেখানে আমাকে কয়েকজন মিলেও তুলতে পারবে না।
তখন সে অফিস থেকেই আমাকে গাড়ি থেকে নামতে বারণ করা হলো। কাগজপত্র দেখে জানানো হলো, জাতীয়তা সনদপত্র সঙ্গে আনতে হবে। ’
সাবরিনা বলেন, ‘এখানেই শেষ নয়। পরে গত রোববার ওয়ার্ড কমিশনারের কাছ থেকে জাতীয়তা সনদ নিয়ে ফরম জমা দিতে গেলে তখন আবার জানানো হলো, ওয়ার্ড কমিশনারের সনদে হবে না, স্থায়ী ঠিকানা অর্থাত্ গ্রামের চেয়ারম্যানের কাছ থেকে সনদ আনতে হবে। তারপর সে সনদ সংগ্রহ করে আনা হলেও তফসিল ঘোষণারই সময় চলে এল।
’
সাবরিনা বলেন, ‘দফায় দফায় হরতাল। হরতালে বের হওয়া সম্ভব না। হরতাল না থাকলে আমাকে নিয়ে যাওয়ার কেউ নেই। শারীরিক অসুস্থতা তো আছেই। এভাবে সব সামলে নির্বাচন অফিসে যাওয়ার পর একেকবার একেক তথ্য চাইল।
এসব তথ্য লাগবে তা একসঙ্গে জানিয়ে দিলেই হতো। এ ছাড়া আমার নাম ভোটার হিসেবে নিবন্ধনের জন্য বাসায়ও কেউ আসেনি। ’
তবে একেকবার একেক তথ্য চাওয়ার বিষয়টি মানতে নারাজ চট্টগ্রামের জেলা নির্বাচন অফিসার খুরশেদ আলম। তিনি প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, ‘ভোটার হিসেবে নাম নিবন্ধনের জন্য কী কী প্রয়োজন, তা নোটিশ বোর্ডে টাঙানো থাকে। গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার হিসেবে নাম নিবন্ধন করানো হয়েছে।
এর বাইরে সবাইকে অফিসে এসেই নাম নিবন্ধন করাতে হচ্ছে। প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ কোনো ব্যবস্থা নেই। তফসিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে ভোটার হিসেবে নাম নিবন্ধনের সুযোগ শেষ হয়ে যাবে। ’
তবে সাবরিনা বলেন, তথ্যগুলো নোটিশ বোর্ডে আছে, তা সাধারণ জনগণের জানার কথা না। তাঁদের জানানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদেরই দায়িত্ব এ কাজে সহায়তা করা।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।