আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আই ডোন্ট হেট পলিটিক্স

দ্বন্দ্ব হোক আদর্শিক, সংঘাত হোক বুদ্ধিবৃত্তিক- বাকি সব যুদ্ধ হারিয়ে যাক দূর-বহুদুর, আলোকবর্ষ দূর নিজের মত করে একটা ছোট্ট জরিপ করলাম। আমার ২০ জন সহপাঠীর ফেসবুক প্রোফাইল ঘেঁটে দেখলাম, তাদের মধ্যে ১৩ জন লিখেছে- ‘I hate politics’ বা ‘Don’t like it’ ইত্যাদি। আমরা সব সময় বলি নতুন প্রজন্ম দেশকে পাল্টে দেবে, আমাদের রাজনীতিবিদেরা খারাপ, নতুন মুখ প্রয়োজন......... প্রশ্ন হচ্ছে – নতুন প্রজন্ম যদি রাজনীতি ঘৃণা করে তাহলে নতুন মুখ আসবে কোথা থেকে ? রাজনীতিবিদেরা যদি খারাপ হয় তাহলে ভালো পরিবর্তন কিভাবে নিয়ে আসা যায় ? আর যদি তা না হয় তাহলে কোন নেতৃত্ব আমাদের দেশকে পাল্টাবে ? আমাদের খারাপ (!) রাজনীতিবিদদের নিয়ে কিছু ভালো (!) কথা বলতে ইচ্ছা করছে। এখন যারা দেশের রাজনীতিতে শীর্ষস্থান দখল করে আছে তাদের অধিকাংশের জন্ম স্বাধীনতা পূর্ববর্তী সময়ে। এক পরাধীন দেশে অসুস্থ পরিবেশে তাদের বেড়ে ওঠা।

তাদের কাছ থেকে এর চেয়ে ভালো কিছু আশা করা কল্পনা বৈ আর কিছুই নয়। তার উপর মনে রাখতে হবে ’৭১ এর ১৪ ডিসেম্বর আমাদের জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের সুপরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। সুতরাং দেশ যাদের দ্বারা পরিচালিত হয়েছে এবং হচ্ছে তাদের প্রতি সম্মান রেখেই বলছি, আমরা তাদের ‘দ্বিতীয় শ্রেণী’ বলতে পারি। আবার এখন যারা রাজনীতিতে নতুন এসেছে তারাও কিন্তু সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত একটি দেশে অত্যন্ত অস্থির এক সময়ের ভেতর দিয়ে বেড়ে উঠেছে। খাদ্যাভাব, শিক্ষা উপকরণের অভাব, সঠিক দিক নির্দেশনার অভাব – এমন অনেক প্রতিকূলতার বেড়াজালে তারা ছিল বন্দী।

তবে তাদের থেকে আমরা অবশ্যই আগের চেয়ে ভালো কিছু পাবো। ভালো রাজনীতিবিদ উঠে আসার পেছনে আমি মনে করি আমাদের ভূমিকাই মুখ্য। আমাদের নেতা তো আমরাই নির্বাচন করছি। আমরা পূর্বে দেখেছি এবং এখনও দেখছি, রাজনীতির নামে অস্ত্রের খেলা, গুন্ডা, মাস্তান, গডফাদার। প্রয়োজন গুনগত পরিবর্তন।

একটা সহজ উদাহরণ দিই- একজন রাজনীতিবিদ সমাবেশ ডেকে অস্ত্র প্রদর্শন করছেন কিন্তু সব মানুষ যদি ফেসবুকে বসে থাকে তাহলে কিন্তু তার প্রদর্শনী ব্যর্থ। তখন তাকে পথ পাল্টাতে হবে, ফেসবুকে বসতে হবে। আর ফেসবুকে এসে তো আর অস্ত্র দেখিয়ে কাজ হবেনা। তখন তাকে সামাজিক যোগাযোগ করতে হবে, জবাবদিহি করতে হবে। এটা শুধুই বোঝানোর জন্য বললাম।

আরেকটু ভালভাবে বলতে গেলে- আমাদের আজকের ছেলেমেয়েরা গণিত অলিম্পিয়াড করছে, প্রোগ্রামিং করছে, ভাষা প্রতিযোগ করছে। শুধু করছে বললে ভুল, তারা রাজত্ব করছে বলা যায়। এখানেই কিন্তু গুনগত পরিবর্তন হচ্ছে। নেতাকে এই প্রজন্মের নেতৃত্ব দিতে হলে নিজেকে আরও গুছিয়ে নিতে হবে, নইলে তার জায়গায় যোগ্যতর নেতৃত্ব চলে আসবে। এই সুস্থ প্রতিযোগিতাই আমাদের সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

কোন সুপারম্যান এসে দেশ পাল্টে দিয়ে যাবেনা। আসবেনা কোন ভুতের রাজা, গুপিগাইন-বাঘাবাইন, আলাদিনের দৈত্য। পরিবর্তন আনার গুরু ভার আমাদের উপরেই। আর এই পথচলায় পথপ্রদর্শক তো লাগবেই। তাই রাজনীতিকে hate করে, don't like করে, পেটের সমস্যা হলেও দেশ ও রাজনীতিবিদদের গালি দিয়ে দিন পার করলেই দেশ পাল্টে যাবেনা।

আমরা অনেক সুযোগ পাচ্ছি। এগুলোর সাথে ফ্রি পাচ্ছি কিছু দায়িত্ব। সেগুলো পালন করতে হবে যথাযথভাবে। নইলে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের কাছে আমরা হবো সবচেয়ে বড় পাপী। কেউ যদি মনে করেন আমি সকলকে রাস্তায় নেমে রাজনীতি করতে বলছি, তাহলে বলবো আমি তাকে বোঝাতে অক্ষম।

আমি বলছি সকলকে রাজনীতি সচেতন হতে হবে। শুধু British Accent এ I hate politics বললে চলবে না। দেশের সমস্যা নিয়ে ভাবতে হবে, রাজনীতিবিদদের জায়গায় নিজে থাকলে কি সমাধান করা যেতো সেটা নিয়ে আলোচনা করতে হবে। রাজনীতিকে ঘৃণা করে আমরা এগিয়ে যেতে পারবোনা। তাই নতুন প্রজন্মকে এ ব্যাপারে নতুন করে ভাবতে হবে।

লেখাটি পরে তাদের অন্তত একজনও যদি বলে, “আই ডোন্ট হেট পলিটিক্স” তাহলে নিজেকে সার্থক মনে করবো। আমাদের নিজেদের পৃথিবী নিজেদেরকেই সাজাতে হবে............ “Be the change that you wish to see in the world.” – Gandhi ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।