আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভ্যালি অফ দ্য কিংস

আমি আঁধারে তামাসায় ঘেরা জীবন দেখেছি, আমার বুকের ভেতর শূন্যতা থেকে শূন্যরা এসে বাসা বেঁধেছে, আমি খুঁজেছি তোমাকে সেই আঁধারে আমার মনের যত রঙলীলা; আজ সাঙ্গ হতেছে এই ভবের বাজারে। ভ্যালি অফ দ্য কিংস হচ্ছে মিশরে অবস্থি একটি উপত্যকা। খ্রিস্টপূর্ব ১৬ শতক থেকে খ্রিষ্টপূর্ব ১১ শতক পর্যন্ত এখানে মিশরের নিউ কিংডমের ফারাওদের জন্য মন্দির নির্মাণ করা হতো। উপত্যকাটি নীল নদের পশ্চিম তীরে, তেহবাস শহরের বিপরীতে, তেহবান নেক্রোপলিসের কেন্দ্রে অবস্থিত। এই উপত্যকার দুইটি অংশ, একটি হচ্ছে পূর্ব উপত্যকা, যেখানে বেশিরভাগ রাজকীয় মন্দিরগুলো অবস্থিত, এবং অপরটি হচ্ছে পশ্চিম উপত্যকা।

২০০৬ সালে একটি নতুন প্রকোষ্ঠ, এবং ২০০৮ সালে আরো নতুন দুটি মন্দিরের প্রবেশমুখ আবিস্কারের পর, জানা যায় যে, এই উপত্যকায় মোট ৬৩টি মন্দির রয়েছে। এগুলো মধ্যে কিছু সাধারণ গর্তের মতো প্রকোষ্ঠের সাথে ১২০ প্রকোষ্ঠ বিশিষ্ট মন্দিরও রয়েছে। এটি ছিলো প্রাচীন মিশরের নিউ কিংডমের রাজন্যবর্গের সদস্যদের জন্য সংরক্ষিত প্রধান কবরস্থান। এই মন্দিরগুলোর নকশায় তৎকালীন মিশরীয় পুরাণের বিভিন্ন চরিত্রের ছবি আঁকা রয়েছে যার থেকে সেই সময়কার বিশ্বাস ও মৃত্যু পরবর্তী বিভিন্ন সৎকার কর্ম ও সংস্কৃতির সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। সবগুলো মন্দিরেই মূল্যবান দ্রব্যাদি থাকার কারণে লুট হওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায়।

কিন্তু এখনো যা আছে তা তৎকালীন শাসকদের ক্ষমতা সম্পর্কে একটি ধারণা লাভে সহায়তা করে। ১৮ শতক থেকেই এই স্থানটি প্রত্নতাত্ত্বিক ও ইজিপ্টোলজির একটি আগ্রহের কেন্দ্র হয়ে ওঠে। এর মন্দিরগুলো মানুষের আকর্ষণ ও প্রত্নতাত্ত্বিকদের গবেষণার বিষয় হয়ে ওঠে। বর্তমান সময়ে এই উপত্যকাটি ফারাও তুতাংখামুনের মমি আবিস্কার ও তাঁর সমাধিস্থ মন্দিরকেভি৬২-এর আবিস্কারের জন্য বিখ্যাত। কারণ তুতাংখামুনের মমির মাধ্যমেই ফারাওদের অভিশাপের গুঁজব বিস্তৃতি লাভ করে।

এটি বিশ্বের অন্যতম আকর্ষণীয় একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান। ১৯৭৯ সালে এটি বাদবাকি তেহবান নেক্রোপলিস অংশের সাথে একত্রে ইউনেস্কোরবিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হওয়ার মর্যাদা লাভ করে। কেভি৯ হল একটি কবর যা রাজাদের ভ্যালিতে অবস্থিত। এটি ফারাও রামসেস V দ্বারা নির্মান করা হয়েছিল। রামসেস V কে এখানে কবর দেওয়া হয়, কিন্তু পরে এখানে তার আঙ্কেল রামসেস VI জন্য এটি পূনরায় ব্যবহার করা হয়।

কবরের কক্ষে "বুক অফ ক্যাভানস", "এমডেট" এবং "সৌর নৌকার" কিছু পরিচ্ছেদ রয়েছে। এছাড়া দেয়ালে অঙ্কিত রয়েছে সূর্যের যাত্রা এবং প্রতি প্রভাতে উদয়ণের জন্য তাকে রাত্রিতে যে সব বিপদের সম্মুখীন হতে হবে তার। যখন কেভি৯ খনন করা হয়েছিল, তখন উপত্যকাটিতে অনেক গুলো কবর থাকায় উপত্যকাটি পাহাড়ের পাশ থেকে যথেষ্ট ভালভাবে দৃশ্যমান ছিল। কবরটি "রামসেস V" নাম দিয়ে শুরু হয়েছিল, কবরটির কহ্মের কাজ শেষ না হওয়ার আগেই সেটি "রামসেস VI" জন্য ঠিক করা হয়। ফলে কবরটির কহ্মের কাজ অসম্পূর্ণ থেকে যায়।

"রামসেস VI" জন্য কবরের কক্ষের দেয়ালের উপরে উল্লেখকৃত ধর্মীয় লেখা দিয়ে নতুন করে সম্পূর্ণভাবে সাজানো হয়। এছাড়া দেয়ালে রোমান এবং গ্রিক যুগের অনেক "লেখা" এবং "পর্যটক" দেখা যায়। এই কবরের কারণে চোরদের লুট করা থেকে রহ্মা পেয়েছিল তুতাংখামুনের কবর কেভি৬২। যে সব লোকেরা "রামসেস VI" এর কবরেতে কাজ করেছিল, তারা তাদের ঘর-বাড়ি তুতাংখামুনের কবরে ঢুকার পথের উপর করেছিল ফলে কবরে ঢুকার রাস্তাটি বন্ধ হয়ে যায়। ঠিক এই স্থান্টিতে হোওয়ারড কাটারেরনেতৃত্ব এবং সহায়তাকারী জোজ হেরব্যটের মধ্যেমে ১৯২২ সালের ৪ঠা নভেম্বর মাসে আবিষ্কার করেছিল তুতাংখামুন অস্পৃষ্ট কবরটি।

কবর কক্ষের ছাদের জ্যোতির্বিজ্ঞানসংক্রান্ত কিছু দিনের বই এবং রাত্রির বইয়ের দৃশ্য দেখায় যায়। এটি নুটের ভিতরে সূর্যের যাত্রা বর্ণনা করে, স্বর্গ এবংতারার লেডি হিসেবেও পরিচিত, সূর্যের মা। প্রত্যেক সন্ধ্যা, সূর্যের দেবতা তার শরীর অতিক্রম করে পুনর্জন্মের জন্য। একটি গতিশীল প্রতিনিধিত্ব, যেখানে সূর্য নাটের পেটে লাল গোলমের মত আবির্ভূত হয়, তারপর একটি সাদা ডানাযুক্ত যখন এটি তার লিঙ্গ থেকে উদ্ভূত হয়। চরিত্র গুলোকে অঙ্কিত করা হয়েছিল নীল রঙের রাত্রিতে তারামণ্ডলীসহ, কিন্তু মমি গুলোকেও সূর্যের প্রত্যেক প্রস্থানে পুনরুজ্জীবিত করে।

শৃগলগুলো রয়েছে ঐতিহ্য অনুসারে, সাহায্যকারী রা যেটি তারা নৌকা অঙ্কন করেছে। কবর কক্ষের পশ্চিমদিক দেয়ালে অঙ্কিত চিত্রে দেখা যায় যে মানুষের মস্তক ছিন্ন করা হয়েছে। তারা অভিশপ্ত, তাদেরকে বিধ্বংসী শক্তিসমূহের প্রতীক রূপে দান করা হয়েছে। তাদেরকে লাল রক্তের রং দ্বারা অঙ্কিত করা হয়েছে, তাদেরকে অনন্তকালের ধ্বংস অনিবার্য। কেভি২০ হল একটি কবর যা রাজাদের ভ্যালিতে অবস্থিত।

সম্ভবত এইটি উপত্যকাতে নির্মত প্রথম রাজকীয় কবর ছিল। কেভি২০ হচ্ছে থুতমোসে Iআসল কবরের স্থান পরে তাকে নতুন করে কেভি৩৮ তে কবর দেওয়া হয়েছিল এবং পরবর্তী কালে এখানে তার মেয়ে হাতশেপসুতকে কবর দেওয়া হয়। কেভি২০ কবরটি ১৮২৪ সালে ফ্রান্সের একটি অভিযানে জোভান্নি বাতিস্তা বেলজনী এবং জেমস বুরটনের মাধ্যমে খুঁজে পাওয়া হয়েছিল। পরে ১৯৭৮ সালে আরো একটি অভিযান হয় যা নেপলেওনের তৎপরতা নামে পরিচিত। হাজার বছর পরে এটি ১৯০৩ সালে হাওয়ার্ড কার্টারের মাধ্যমে সর্বপ্রথম মাটি খুড়ে বের করে আনা হয়।

কেভি৬০ হল একটি কবর যা রাজাদের ভ্যালিতে অবস্থিত। এটি মিশরের নীল নদের বিপরীতে পাশে লাক্সরের পশ্চিমদিক, হতবুদ্ধি কর থেবাননেক্রোপলিসের একটি। কেভি৬০ কবরটিতে যে মহিলা মমি খুজে পাওয়া যায় তার পরিচয় নিয়ে অনেক প্রত্নতত্ত্ববিদের দিধা থাকায়। তাদের কিছু ধারণা করেছিল যে, কবরটি হবে ১৮তম রাজবংশের হাতশেপসুতের। যারা এটি ধারণা করেছিল তাদের একজন হলেন প্রত্নতত্ত্ববিদ এলিজাবেথ টমাস।

এই পরিচয়টি প্রত্নতত্ত্ববিদ জাহি হাওয়াসের মধ্যে সাম্প্রতিক কালে অধিবক্তা করা হয়েছে। ১৯০৩ সালে হাওয়ার্ড কার্টারের মধ্যে যখন কবরটি খুঁজে বার করা হয়েছিল, তখন সে দেখেছে যে কবরটি থেকে সব সম্পদ চুরি এবং প্রাচীন নিদর্শনে কলুষিত করা হয়েছে। কিন্তু তখনও দু'টি মমি ছিল এবং তার সাথে কিছু কবর সামগ্রী ছিল যা খারাপভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। ১৯০৬ সালে এডওয়ার্ড রাসেল এয়টোনের দ্বারা একে পুনরায় খোলা হয় এবং কফিন থেকে একটি মমি, কেভি৬০বি, সরিয়ে নেওয়া হয় মিশরীয় জাদুঘরে। কেভি৬২ হল তুতাংখামুনের কবর যা রাজাদের ভ্যালিতে অবস্থিত।

XVIII রাজবংশের যুবক শাসক, যে ৯ বছরের বয়সে সিংহাসনে বসে ছিল এবং সম্ভবত ১৮-২০ বছরের বয়সে মরা গিয়ে ছিল। কেভি৬২ যে ধন-সম্পদ ধারণ করেছিল, তার জন্য এটি বিখ্যাত হয়েছিল। ১৯২২ সালে হাওয়ার্ড কার্টারের মাধ্যমে কেভি৬২ কবরটি খুঁজে পাওয়া হয়েছিল। শুধু ২০০৯ সালের কবর থেকে ডিএনএ বিশ্লেষণে নয়, বছরের পর বছর বিশ্লেষণ করে তারা আবিষ্কার করেছে যে, তুতাংখামুন বিভিন্ন রোগ ভুগেছিল এবং এর মধ্যে কিছু ছিল বংশগত রোগ। কিন্তু এটি ধারণা করা হয় যে, কেউকে তার মৃত্যূর জন্য দোষ আরোপ করা হয়েছিল।

কেভি৬৩ কবরটি খনন করার পরে অনুমান করা হয়েছে যে, তুতাংখামুনের কেভি৬২ কবরটি নৈকট্যের দরুন আঙ্খেসেনামুনের জন্য এই কবরটি পরিকল্পনা করা হয়েছে। কবরের কফিনেতে পাওয়া গিয়েছিল নারীর পোশাক, স্বর্ণ-অলংকার । সিরামিকের ভাঙ্গা অংশে এবং কবরেও পাতেন নামটি ছিল। কেবল রাজকীয় এই নামটি শুধু একজন ব্যক্তিই বহন করতে সে ছিল আঙ্খেসেনামুন, যার আসল নাম ছিল আঙ্খেসেনপাতেন। যাইহোক, কেভি৬৩ তে কোন মমি খুঁজে পাওয়া যায়নি, সুতরাং এইটি একটি ধারণা মাত্র।

আবু সিম্‌বেল মিশরের দক্ষিণাংশে অবস্থিত একটি পুরাতাত্ত্বিক স্থাপনা, যা দুইটি বিশাল পাথর-নির্মিত মন্দির নিয়ে গঠিত। এটি আসওয়ান এর ২৯০ কিমি দক্ষিণ-পশ্চিমে লেক নাসের এর পাড়ে অবস্থিত। মন্দিরদুটি শুরুতে তৈরি করা হয়েছিলো পাহাড়ের গা খোদাই করে। খ্রিস্টপূর্ব ১৩শ শতকে ফারাও ২য় রামসেসের আমলে তাঁর ও রাণী নেফারতারির সম্মানে ও কাদেশের যুদ্ধ এর স্মৃতির উদ্দেশ্যে মন্দিরদুটি নির্মিত হয়। আরেকটি উদ্দেশ্য ছিলো প্রতিবেশি নুবিয়দের মিশরের জাঁকজমক দেখানো।

বিংশ শতকে ১৯৬০ এর দশকে মন্দির দুটিকে সম্পূর্ণভাবে স্থানান্তর করা হয়, কেননা ঐ সময় নীল নদের উপরে আসওয়ান বাঁধ তৈরীতে সৃষ্ট লেক নাসের মন্দিরদুটির পূর্বের এলাকাকে গ্রাস করে নেয়া শুরু করে। মন্দির স্থাপনার নির্মান শুরু হয় আনুমানিক ১২৪৪ খ্রিস্টপূর্বাব্দে, এবং পরের ২০ বছর ধরে তা অব্যাহত থাকে। ২য় রামসেসের আমলে নুবিয়াতে যে ছয়টি পাথরের মন্দির তৈরি করা হয়, এটি ছিলো তার অন্যতম। এই মন্দির স্থাপনাটির অন্য নাম ছিলো "আমুনএর প্রিয় রামসেসের মন্দির"। মন্দির নির্মানের মূল উদ্দেশ্য ছিলো মিশরের দক্ষিণী প্রতিবেশিদেরকে মিশর ও তার ধর্মের জাঁকজমক দেখিয়ে বিমোহিত করে দেয়া, এবং ঐ অঞ্চলে মিশরীয় ধর্মের প্রভাব বৃদ্ধি করা।

সময়ের সাথে সাথে মন্দিরটি পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে। ধীরে ধীরে এটি বালুর তলায় চাপা পড়ে যায়। ৬ষ্ট খ্রিস্টপূর্বাব্দ নাগাদ মূল মন্দিরটির মূর্তিগুলির হাঁটু পর্যন্ত বালুর তলায় চলে যায়। মন্দিরটির কথা আস্তে আস্তে সবাই ভুলে যায়। ১৮১৩ সালে সুইস প্রাচ্যবিশেষজ্ঞ ইয়োহান লুডভিগ বার্কহার্ড মন্দিরের উপরের অংশ খুঁজে পান।

এই আবিস্কারের কথা তিনি ইতালীয় পরিব্রাজক জিওভান্নি বাতিস্তা বেলজোনিকে জানান। বেলজোনি মন্দির এলাকায় যান, কিন্তু মন্দিরে ঢোকার পথটি খুঁজে পাননি। ১৮১৭ সালে বেলজোনি ফিরে আসেন, এবং এই বার মন্দির এলাকায় প্রবেশের পথ বের করেন। তিনি মন্দির এলাকায় মূল্যবান সব ধনসম্পদ লুটে নেন। মন্দির এলাকার নামকরণ "আবু সিম্বেল" হওয়ার পিছনের কাহিনীটি হলো - আবু সিম্বেল ছিলো ঐ এলাকার এক বালকের নাম, যে ঊনবিংশ শতকের অভিযাত্রীদের পথ প্রদর্শক হিসাবে কাজ করতো।

বালুর নিচে হারিয়ে যাওয়া মন্দিরটির অবস্থান এই বালক সবচেয়ে ভালো করে জানতো। তাই এক সময় অভিযাত্রীরা মন্দির এলাকাটিকে এই বালকের নামানুসারে "আবু সিম্বেল" নামকরণ করে। ১৯৫৯ সালে নুবিয়ার পুরাকীর্তিসমূহকে রক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা শুরু হয়। আসওয়ান বাঁধ নির্মানের ফলে সৃষ্ট লেক নাসের এর পানির তলায় এই পুরাকীর্তিগুলো তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছিলো। আবু সিম্বেলের মন্দিরগুলো রক্ষার কাজ শুরু হয় ১৯৬৪ সালে।

প্রায় ৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচে ১৯৬৪ হতে ১৯৬৮ সালের মধ্যে এই মন্দিরগুলোকে উঁচু স্থানে সরিয়ে নেয়া হয়। এজন্য পুরো মন্দির এলাকার সব স্থাপনাকে বড় বড় টুকরা করে কেটে আলাদা করে নীল নদের বর্ধমান তীর হতে ২০০ মিটার দূরে ও প্রায় ৬৫ মিটার উচ্চস্থানে সরিয়ে নেয়া হয়। সফলভাবে মন্দির স্থাপনাকে স্থানান্তর করার এই প্রকল্পকে পুরাতাত্ত্বিক প্রকৌশলের সেরা সাফল্যগুলোর মধ্যে গণ্য করা হয়। বর্তমানে প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটক এই মন্দিরগুলো দেখতে আসে। দিনে দুই বার নিকটতম শহর আসওয়ান থেকে বাস ও গাড়িতে করে পর্যটকেরা আসে।

এছাড়া বিমান পথেও অনেক পর্যটক এখানে এসে থাকে। মন্দির স্থাপনাতে দুইটি মন্দির রয়েছে। এদের মধ্যে বড়টি মিশরের তদানিন্তন প্রধান তিন উপাস্য দেবতা রা হারখতি, প্‌তাহ, এবং আমুন এর উদ্দেশ্যে নিবেদিত। এই মন্দিরটিতে রামসেসের চারটি বড় মূর্তি রয়েছে। ছোট মন্দিরটি দেবী হাথর এর উদ্দেশ্যে নিবেদিত।

হাথরের প্রতিমূর্তি হিসাবে রামসেসের প্রিয় স্ত্রী নেফেরতারির মূর্তি এই মন্দিরে শোভা পাচ্ছে। আবু সিম্বেলের বৃহত্তর মন্দিরটি তৈরি করতে সময় লেগেছিলো ২০ বছর। ফারাও মহান রামসেসের রাজত্বের ২৪তম বছরে ১২৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দে এর নির্মান কাজ শেষ হয়। আমুন রা, রা-হোরাখতি, এবং পতাহ দেবতা, এবং রামসেসের উদ্দেশ্যে এই মন্দিরটি উৎসর্গ করা হয়। রামসেসের রাজত্বকালে নির্মিত মন্দিরসমূহের মধ্যে এটিকেই সবচেয়ে সুন্দর ও রাজকীয় বলে গণ্য করা হয়।

উচ্চ ও নিম্ন মিশরের দ্বৈত মুকুট খচিত ফারাও রামসেসের ২০ মিটার উঁচু চারটি মূর্তি মন্দির এলাকায় অবস্থিত। মন্দির এলাকাটি ৩৫ মিটার প্রশস্ত। সবার উপরে সূর্যের উপাসক ২২টি বেবুনের মূর্তি প্রবেশপথকে ঘিরে রেখেছে। ফারাওয়ের এই বিশালাকার মূর্তিগুলো যে পাহাড় কেটে মন্দির তৈরি হয়েছিলো, সেই পাহাড়ের পাথর কেটেই নির্মান করা হয়েছে। সবগুলো মূর্তি সিংহাসনে বসে থাকা রামসেসের প্রতিনিধিত্ব করছে।

প্রবেশপথের বাম দিকের মূর্তিটি একটি ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, বর্তমানে কেবল মূর্তিটির নিচের অংশ অক্ষত রয়েছে। এর সামনেই ভেঙে পড়া মূর্তির মাথা ও দেহ পড়ে রয়েছে। ফারাওয়ের বড় মূর্তিগুলোর পাশেই রয়েছে ছোট ছোত কিছু মূর্তি, যাদের উচ্চতা ফারাওয়ের হাঁটুর চেয়ে কম। এগুলো রামসেসের প্রধান স্ত্রী নেফারতারি, এবং রাজমাতা রাণী মুত-তুই, রামসেসের প্রথম দুই পুত্র আমুন-হের-খেপেশেফ ও রামসেস বি, এবং ফারাওয়ের প্রথম ছয় কন্যা বিন্তানাথ, বেকেতমুত, নেফেরতারি, মেরিতামেন, নেবেত্তাউই, এবং ইসেত্নোফ্রেত এর মূর্তি। প্রবেশদ্বারটিতে রয়েছে বাজপাখির মতো মাথাবিশিষ্ট দেবতা রা হারাখতিকে উপাসনারত ফারাও রামসেসের ছবি ।

মন্দিরের ভিতরে প্রাচীন মিশরের অন্যান্য মন্দিরের মতোই ত্রিকোণাকার কাঠামো ব্যবহার করা হয়েছে, যাতে কক্ষগুলোর আকার প্রবেশ পথ থেকে মূল শবকক্ষ পর্যন্ত আস্তে আস্তে কমতে থাকে। মন্দির অঙ্গনের গঠন বেশ জটিল ও বহু পার্শ্বকক্ষবিশিষ্ট। প্রোনাস বা হাইপোস্টাইল হল হলো ১৮ মিটার দীর্ঘ ও ১৬.৭ মিটার প্রশস্ত, এবং আটটি প্রকাণ্ড মূর্তিসদৃশ স্তম্ভ বিশিষ্ট। এই স্তম্ভগুলোতে পরজগতের দেবতা অসিরিস এর চেহারা খোদাই করা, যা ফারাও এর অমরত্বের প্রতীক। বাম দিকের দেয়ালের কাছের বড় মূর্তিগুলো ঊর্ধ্ব মিশরের সাদা মুকুটখচিত, আর ডান দিকের মূর্তিগুলো নিম্ন মিশরের দ্বৈত মুকুট পরে আছে।

প্রোনাস হলের দেয়ালচিত্রগুলো ফারাওয়ের বিভিন্ন সামরিক অভিযানের উপরে অঙ্কিত। অধিকাংশ ছবিতেই প্রকাশ পেয়েছে কাদেশের যুদ্ধের কথা, সিরিয়ার ওরন্তেস নদীর পারে যেখানে মিশরের ফারাও হিট্টীয় বাহিনীড় সাথে যুদ্ধ করেছিলেন। সবচেয়ে বিখ্যাত চিত্রটিতে দেখানো হয়েছে, ফারাও তাঁর রথে বসে পলায়নোদ্যত শত্রুদের দিকে তীর নিক্ষেপ করছেন। আবু সিম্বেল মন্দির এলাকায় অবস্থিত হাথর ও নেফারতারির মন্দিরটি যা ক্ষুদ্রতর মন্দির নামে পরিচিত মূল রামসেসের বৃহত্তর মন্দির হতে প্রায় ১০০ মিটার উত্তর-পূর্বে অবস্থিত। এটি দেবী হাথর, এবং ২য় রামসেসের প্রধান স্ত্রী নেফারতারির উদ্দেশ্যে নিবেদিত।

রাণীর উদ্দেশ্যে মন্দির উৎসর্গ করার এই ঘটনাটি মিশরের ইতিহাসে দ্বিতীয় - এর আগে আখনাতেন তাঁর স্ত্রী নেফারতিতির উদ্দেশ্যে মন্দির নির্মাণ করেছিলেন। মন্দিরটির সম্মুখভাগের দেয়াল পাথর খোদাই করে নির্মিত। দুই পাশে রয়েছে দুই গুচ্ছ মূর্তি, আর তাদের মাঝে রয়েছে বৃহৎ প্রবেশদ্বার। মূর্তিগুলো প্রায় ১০ মিটার উচু। এগুলো ফারাও ও রাণীর মূর্তি।

প্রবেশ দ্বারের অন্য পাশে রয়েছে ফারাওয়ের দুইটি মূর্তি। রাণী ও রাজার আরো কয়েকটি মূর্তি দিয়ে পরিবেষ্টিত এই দুইটি মূর্তিতে ফারাওয়ের মাথায় ঊর্ধ্ব মিশরের সাদা মুকুট, এবং নিম্ন মিশরের দ্বিমুকুট রয়েছে। এই মন্দিরেই মিশরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো রাজা ও রাণীর মূর্তি সমান আকারে নির্মিত হয়েছে। অন্যান্য মন্দিরে রাণীর মূর্তি থাকলেও সেগুলো কখনোই ফারাওয়ের হাঁটুর চেয়ে উচু আকারে নির্মিত হয়নি। ব্যতিক্রমধর্মী এই মূর্তিগুলো রাণী নেফারতারির প্রতি ফারাও রামসেসের বিশেষ সম্মান ও গুরুত্ব প্রদানের পরিচায়ক।

শাসনকালের ২৪ তম বছরে ফারাও রামসেস রাণী নেফারতারিকে নিয়ে আবু সিম্বেলের মন্দিরে গিয়েছিলেন। ফারাও ও রাণীর মূর্তিগুলোর পাশেই রয়েছে রাজপুত্র ও রাজকণ্যাদের ক্ষুদ্রতর মূর্তি। দক্ষিণ পাশে রয়েছে বাম থেকে ডানে রাজপুত্র মেরিয়াতুম, ও মেরাইরি, রাজকণ্যা মেরিতামেন ও হেনুত্তাউই, এবং রাজপুত্র হাহিরুয়েনেমেফ ও আমুন-হার-খেপেশেফের মূর্তি। উত্তর পাশে একই মূর্তিগুলো রয়েছে বিপরীতক্রমে রয়েছে। ক্ষুদ্রতর মন্দিরটির স্থাপত্য কাঠামো বৃহত্তর মন্দিরটিরই ছোট সংস্করণ।

 ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।