আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক চালিকা শক্তি সচল রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকের স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো অপরিহার্য

অন্তর মম বিকশিত করো অন্তরতর হে । নির্মল করো উজ্জ্বল করো , সুন্দর করো হে । জাগ্রত করো , উদ্যত করো , নির্ভয় করো হে । মঙ্গল করো , নিরলস নিঃসংশয় করো হে ।

২০০৭ সালে কোম্পানীতে রূপান্তরিত করা হলেও সেখানে স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো বাস্তবায়ন করা হয়নি বরং পেনশন সুবিধা প্রত্যাহার করে বাধ্যতামূলকভাবে চাপিয়ে দেওয়া হয় সিপিএফ-গ্র্যাচুইটি স্কীম।

ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয় দেশের ৬১০০০ ব্যাংকার ও তাদের পরিবার। খোদ বেসিক ব্যাংক সোনালী, অগ্রণী ও জনতা ব্যাংকের আইনগত ভিত্তি অভিন্ন হলেও বেসিক ব্যাংকের কর্মকর্তাগণ তাদের তিনগুন বেতন ভাতাদি প্রাপ্ত হচ্ছেন। যারা সরকারি ব্যাংকে ২০০৭ এর পরে নিয়োগ পায় তারা যোগদানের পরে এসে শুনতে পায় তাদের কোন পেনশন নাই। অর্থাৎ তারা সরকারি ব্যাংকে বেসরকারি কর্মকর্তা। এটা সত্যিই বড় কষ্টের।

অথচ যেসব রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে ভেঙে কোম্পানী করা হয়েছে তার প্রত্যেক কর্মকর্তা-কর্মাচারী জিপিএফ ধারী। তার মধ্যে ডিপিডিসি, বিমান, ডেসকো উল্লেখযোগ্য। উল্লেখ্য, বিমান বাংলাদেশ এয়ার লাইন্স একটি লোকসানী প্রতিষ্ঠান হওয়া সত্বেও সেখানে স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো বাস্তবায়ন করা হয়। বিটিসিএলকে কোম্পানীতে রুপান্তরিত করা হলেও সেখানে স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো বাস্তবায়ন করা হয়নি কিন্তু জিপিএফ-পেনশন স্কীম বহাল রয়েছে। যত বালাই ব্যাংকিং খাত জুড়ে।

বিচারবিভাগকে দেওয়া হয়েছে স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো। সরকার রেজিস্ট্রার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোকে সরকারিকরণ করেছে। তাছাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের দেয়া হচ্ছে দ্বিতীয় শ্রেণীর মর্যাদা। কিন্তু সরকার, সরকারি-বেসরকারি, দলীয়সহ সকল প্রয়োজনে ব্যাংকারদের ব্যবহার করে যাচ্ছে। অনেক সময় উচ্চ চাপ প্রয়োগ করে প্রতিষ্ঠান প্রতিকূল কার্যাদিও করিয়ে নিচ্ছে।

বিভিন্ন জাতীয় ইস্যুতে ব্যাংকগুলো নিরলস সেবা দিয়ে যাচ্ছে। ঈদের আগে, হরতালের ক্ষতি পোষাতে, সকল ফরেন এক্সচেঞ্জ শাখাসহ পোর্ট এলাকার শাখাগুলো বন্ধের দিনও খোলা রাখা হয়। অথচ সবক্ষেত্রে অবহেলিত হচ্ছে সরকারি ব্যাংকিং সেক্টর। সরকারি ব্যাংকগুলো একদম প্রত্যন্ত অঞ্চলে সরকারি সেবা দিয়ে যাচ্ছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য বয়স্ক ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, শ্রমিকদের মাটি কাটার টাকা, আর্মি পেনশন ইত্যাদি।

এসব প্রত্যন্ত অঞ্চলে কোথাও নেই বিদ্যুৎ, কোথাও দূর্গম এলাকা, কোথাওবা নেই ভালো যোগাযোগ মাধ্যম। এত প্রতিকূলতার মধ্যেও অনেক কষ্ট স্বীকার করে ব্যাংকাররা সরকারের সেবাসমূহ সাধারণ জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিচ্ছে। প্রাইভটে ব্যাংকগুলো ভালো বেতনের প্রলোভন দেখিয়ে সরকারি ব্যাংকরে প্রশিক্ষিত জনবল নিয়ে গেলেও সরকারের কিছুই করণীয় থাকছে না। ধরে রাখতে পারছে না সুদক্ষ জনবল। ব্যাংককে প্রতিযোগিতা করতে হয় অন্য ব্যাংকের করে সাথে (কোন সরকারি অফিসের সাথে নয়)।

যেখানে প্রাইভেট ব্যাংকগুলো ৩০/৩৫ হাজার টাকা বেতন দিয়ে কর্মী নিয়োগে দেয় তখন পাবলিক ব্যাংকগুলোতে দেয়া হয় সরকারি স্কেলে বেতন ( ১৬/১৮ হাজার টাকা)। এটা সত্যিই মর্মান্তিক। রাষ্ট্রমালিকানাধীন এসব ব্যাংকের চাকুরি প্রবিধানমালায় স্পষ্ট উল্লেখ থাকলেও ২০০৮ এর পরে নিয়োগ পাওয়া এসব কর্মকর্তারা বঞ্চিত হচ্ছে স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো থেকে। অথচ তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব, ছুটিসহ অন্যান্য দিকগুলোর চুল পরিমাণ লঙ্ঙনের ক্ষেত্রে বলা হয় চাকুরির রুলস আপনাকে মেনে চলতে হবে। সোনালী ব্যাংকের কর্মচারী প্রবিধানমালা-২০০৮ এর ১.২.২ নং প্রবিধানে, অগ্রণী ব্যাংকের কর্মচারী প্রবিধানমালা-২০০৮ এর ১২ নং প্রবিধানে, জনতা ব্যাংকের কর্মচারী প্রবিধানমালা-২০০৮ এর ১৪ নং প্রবিধানে এবং রূপালী ব্যাংকের প্রবিধানমালায়ও স্বতন্ত্র বেতন কাঠামোর কথা উল্লেখ আছে।

এ অবস্থায় বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর জন্য পৃথক বেতন কাঠামো গঠনের উদ্যোগ নেয় সরকার। কিন্তু সরকার বারবার স্বতন্ত্র বেতন কাঠামোর কথা বলে ব্যাংকারদের একরকম দোলাচলে রেখেছেন। আর এভাবে চলতে থাকলে একটা সময় মুখ থুবড়ে পড়বে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এসব ব্যাংকগুলো। আর এর কুপ্রভাব পড়বে অর্থনীতিতে। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় হরহামেশা প্রকাশিত হচ্ছে ব্যাংকারদের স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো বিষয়ক বিভিন্ন নিউজ।

অর্থমন্ত্রী স্বাক্ষর করার পর প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত স্বাক্ষর করেছেন। কিন্তু আইনের ফাঁক খুঁজে খুঁজে বের করা হচ্ছে যেন কোনভাবেই ব্যাংকাররা স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো না পায়। মাননীয় অর্থমন্ত্রী খুবই আন্তরিক ব্যাংকারদের স্বতন্ত্র বেতন কাঠামোর ব্যাপারে। ব্যাংকাররা যেন দ্রুত বেতন কাঠামো পান সেজন্য অর্থমন্ত্রী নিজে প্রধানমন্ত্রীর এবং প্রয়োজনে রাষ্ট্রপতির হস্তক্ষেপও কামনা করেন।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.