আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বোমালাপ- যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম

এরা যত বেশী পড়ে, তত বেশী জানে, তত কম মানে। -_-

বর্তমানে "অবরোধ" মানে যদি যাত্রীবাহী যানবাহনে বোমা মারা হয় তবে মনে হয় না শব্দটার অর্থ রাজনীতিবিদরা জানেন। সেক্ষেত্রে একটা কাজ করার অনুরোধ করবো, এটাকে "অবরোধ" না ডেকে “জাতীয় বোমা দিবস” হিসেবে ঘোষণা করুন। সেক্ষেত্রে, আমরা যেইসব জনগণ নাশকতার শিকার হচ্ছি তারা নিজেরাও ৩০০টাকায় ককটেল কিনে আপনাদের বাসায় ফুটিয়ে পরিবার শুদ্ধো জ্বালিয়ে দিতে পারবো। কেননা এটা গণতান্ত্রিক দেশ তো, নাকি? সবার বোমা মারার অধিকার সমান হওয়া উচিত।

বোমা মারা এখন মনের ভাব প্রকাশের একমাত্র উপায়। ব্যাপারটা এমন যে আমি কথা বলতেছি, আরেকজন কিছু একটা মাঝে বলে আটকায়ে দিল... দে বোমা মাইরা উড়ায়া! বাসের ভাড়া কম দিতে পারতেছি না, মার বোমা; স্টার জলসায় সিরিয়াল দেখতে পারতেছি না, মার বোমা; বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি কথা শুনে না, মার বোমা। এখন এটা এতটাই কমন আর সহজলভ্য হয়ে যাচ্ছে যে কিছুদিন পর উচ্চবিত্তরা বিলিয়ার্ড খেলবে বোমা দিয়ে। কে জানে? মধ্যবিত্তের চুলা জ্বালানোর ম্যাচটিও বোধহয় ককটেল দিয়ে রিপ্লেসড হবে। সাংবাদিকরাও বড় অদ্ভুত।

আমি অসম্মান করতে চাই না, উনাদের পেশা সম্পর্কে আমি ব্যক্তিগতভাবে ভালো জানি, অনেক সাহসিকতার কাজ কিন্তু কিছু বিষয় আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারি না। In fact, আপনাদেরকেও জবাবদিহিতা করতে হবে যে আপনারা এই দেশের নাগরিক কতখানি আর নিজের চ্যানেলের সাংবাদিক কতখানি? এই যে হেন-তেন-ভাতের ফেন যেই হোক একটা সংবাদ সম্মেলন করে কর্মসূচী ঘোষণা করে তা প্রচার করার কি আছে? কার অবরোধ, কার হরতাল এগুলা কেউ জানতে চায়? টিভি খুললেই মোটা অক্ষরে ব্রেকিং নিউজে আসে যত আজাইরা প্রলাপ, এদের চেয়ে পাবনার পাগলে কি বলে ওগুলা ব্রেকিং নিউজে দিলেও সেই খবরের কাটতি হত বেশী। বার্ন ইউনিটের কাতর রোগীদের ইন্টারভিউ নেওয়া হয়, তাদের দেখানোর সময় ব্যাকগ্রাউন্ডে যখন দুঃখের টিউন বাজে- তখন টিভি ভেঙ্গে কয় টুকরা করতে ইচ্ছে করে জানেন তো, নাকি? অদ্ভুত লাগে... একটা সময় ছিলো ভালো ভালো বংশের পরিবার থেকে মানুষ রাজনীতিতে আসতো, নিজেদের দলের জন্য নিজের জমি বিক্রি করে রাজনীতি করতো। আর এখন? রোজগার ও স্বার্থসিদ্ধির প্রধান উপায় রাজনীতি, এবং তা অবশ্যই অসাধু উপায়ে। টাকার ধান্ধায় যারা রাজনীতি করে, তাদের দ্বারা দেশের কি কল্যাণটা হচ্ছে তাতো দেখাই যাচ্ছে।

যেহেতু সেই নেতা নেই, সেই দেশপ্রেম নেই তাই আরেকটা নতুন আইন হওয়া দরকার এখন, “জয় বাংলা” স্লোগান দিলেই মামলা হবে রাজনীতিবিদদের উপর, এটা জনগণের স্লোগান- কোন দল উত্তরাধিকার সূত্রে পায়নি। এটি কেবল দুটি শব্দ নয়, একটি জাতির যুগ যুগ নিষ্পেষিত হওয়ার পরে আসা উপলব্ধি। জানি না দেশ কেউ চালাচ্ছে কিনা, যদি সরকার থেকে থাকে তবে বলতে চাই যে দেশ চালানো কোন ফাজলামোর বিষয় নয়। যেহেতু জনৈক মন্ত্রী একদা বলেছিলেন যে বেডরুমে নিরাপত্তা দেয়ার কাজ সরকারের নয় ( জ্ঞাতার্থে বলে রাখি, গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থায় সরকার বাথরুমেও নিরাপত্তা দিতে বাধ্য), বিরোধীদলীয় নেত্রীর বাসভবন ছাড়া এমন একটা জায়গা বলেন যেখানে আমার পরিজন নিরাপদে নির্বিঘ্নে কাজ করতে পারবে, বাস করতে পারবে। সরকার ব্যবস্থা ও নির্বাচন কেমন হবে তা নিয়ে সাধারণ কয়টা মানুষের সাথে আলোচনা হয়েছে শুনি? সরকার বা বিরোধীদলের একটা লোক এসে জানতে চেয়েছে আমরা কি চাই? আমাদেরকে কেন তাহলে আপনাদের চুলোচুলিতে ঘরে অবরুদ্ধ থাকতে হয়, রাস্তায় মরতে হয়? সরকার আমাকে জিজ্ঞেস করে গদীতে বসে থাকছে না, নাহি বিরোধীদলকে বলেছি আপনাদেরকে ক্ষমতায় আনতে চাই সরকার পতন ঘটান, ভাড়াটে গুন্ডা দিয়ে কেবল আগুন-ভাংচুরই চালানো যায়, ভোট তো আর পাওয়া যায় না।

এখন তো আরেক বিপদ আছে, প্রধান রাজনীতিদিরা মারাত্নক কল্পনা প্রবণ, সেই সাথে গায়েবী শক্তি আছে যা দিয়ে উনারা সনাক্ত করেন মানুষের অন্তরের কথন, তবে বোধ করি তাদের এন্টেনাতে সমস্যা আছে। কারণ “জনগণ সাথে আছে” “জনগণ আন্দোলন সফল করছে” “জনতা আন্দোলন বর্জন করেছে ” এই টাইপ কথা উঁচু মাপের সপ্নদোষ না থাকলে বলার কথা না। তাতে বর্তমানে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলোতে অন্যান্য রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ ও যাচ্ছে তাই উক্তি আমাদের সার্বভৌমত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলোর লেজুরবৃত্তি করা আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর অন্যতম বৈশিষ্ট্য, রাজনীতির ডিকশনারীতে নৈতিকতা নামের কোন শব্দ এখন আর বাকি নেই। ক্ষমতাশীল রাষ্ট্রের সন্তুষ্টির উপর গদীর সুরক্ষা অনেকটাই নির্ভরশীল।

অর্থাৎ জনগণের ভোটই সবকিছু নয়। আমরা জনগণ অনেকটা ফুটবল খেলার অংশ হয়ে গিয়েছি। দলগুলো ২ পক্ষ, আমরা হলাম উনাদের ফুটবল, গোল একটাই- কিভাবে ক্ষমতা আর টাকা নিয়ে আয়েশ করা যায়। আওয়ামীলীগ হোক বিএনপি হোক, ক্ষমতায় এসে তারা ভুলেই যায় যে ক্ষমতা চিরকালের নয়, নানা অপকর্ম দ্বারা জনতা নিপীড়িত হয় ফলে অন্য দল ক্ষমতায় আসে। অন্যদলও একই কাহানী করে, আমরা আবার কিক খেয়ে আগের দলকে ভোট দেই।

এভাবেই চলছে স্বাধীনতার পরবর্তি বাংলাদেশ, ১৯৭১ সালে সবচাইতে বড় ক্ষতি করে দিয়েছে রাজাকারেরা, দেশের হাল ধরার মত বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে। আজো সেই ক্ষয় কিছুমাত্র পূরণ হয়নি যার মাশুল স্বাধীনতার এতটা বছর পরেও আমরা দিয়ে চলেছি। দুর্ভাগ্য আমাদের, সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা অনর্থক যখন-তখন ক্লাস বর্জনে যতটা নিয়মতান্ত্রিকভাবে একত্রিত হন- ততটা উনারা আমাদেরকে সঠিক নেতৃত্ব দিতে বা প্রতিবাদ করতে আগ্রহী থাকেন না। কারণ শিক্ষকদের সেই সত্যযুগ আজ নেই এবং উনারা নিজেদের ক্ষমতার সঠিক প্রয়োগ সম্পর্কে যথেষ্ট অবগত নন, এই দেশের অতীতে শিক্ষক ও ছাত্রের যেই স্বর্ণলিখিত ইতিহাস আছে, তা আজো আমাদের ভিতরে নাড়া দেয়। আমাদের মধ্যে প্রতিবাদী চেতনা আছে, আমরা সবাই অনুধাবন করতে পারি-কিন্তু একটা কেন্দ্র পাচ্ছিনা যাকে কেন্দ্র করে আবর্তন করা যায়।

আমাদের এখন নেতৃত্ব দরকার, সবাই মঞ্চে উঠে কাড়াকাড়ি করার মন-মানসিকতা ত্যাগ না করলে দেশ কিভাবে এগুবে?

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.