আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ক্রিকেটের বিশ্বমঞ্চে ‘হিমালয় কন্যা’

কাগজে-কলমে মাত্র ১৭ বছরের পথচলা। এরই মধ্যে ‘হিমালয় কন্যা’ নেপাল স্থান করে নিয়েছে ক্রিকেটের বিশ্বমঞ্চে। হোক না তা ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ততম ক্ষেত্র, কিন্তু বিশ্বকাপ তো! মাত্র ১৭ বছরের মাথায় ক্রিকেটের বিশ্ব পরিসরে খেলার সুযোগ করে নেওয়া আর যাই হোক যেনতেন অর্জন নয়। নেপালিরা তা খুব ভালো করেই জানে। তাই তো এই অর্জনকে তারা অভিহিত করছে নিজেদের খেলাধুলার ইতিহাসের সেরা অর্জন হিসেবে।


এত দিন নেপালকে ফুটবলের মঞ্চেই দেখে এসেছেন ক্রীড়াপ্রেমীরা। বক্সিং, জুডো কিংবা তায়কোন্দোয় আঞ্চলিক পর্যায়ে দেশটির রয়েছে বেশ কিছু অর্জন। কিন্তু ক্রিকেটে বিশ্বকাপে স্থান করে নেওয়ার ব্যাপারটি ছাড়িয়ে গেছে অতীতের আর সব অর্জনকেই। অথচ নেপালি ক্রিকেটারদের এই অর্জন কিন্তু অনেক অভাবের হাহাকারকে সঙ্গী করেই। যে দেশে আন্তর্জাতিক মানের একটিও ক্রিকেট মাঠ নেই, যে দেশে ক্রীড়া বাজেটে ক্রিকেটকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয় না, সে দেশের বিশ্বকাপ যাত্রাকে ‘স্যালুট’ না জানিয়ে উপায় নেই।


নব্বইয়ের দশকের আগে নেপাল নামের এ দেশটি যে ক্রিকেট খেলে, সেটাই জানত না অনেকে। অন্তত বাংলাদেশের মানুষের কোনো ধারণাই ছিল না যে হিমালয়ের পাদদেশে এত গুরুত্বের সঙ্গে ক্রিকেটের চর্চা হয়। ১৯৯০ সালে এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের (এসিসি) সহযোগী সদস্যপদ পাওয়ার পর নেপালে ক্রিকেটের বিকাশ ঘটার ক্ষেত্র তৈরি হয়। ১৯৯৪ সালে এসিসির পূর্ণ সদস্যপদ পাওয়ার পর শুরু হয় নেপাল জাতীয় ক্রিকেট দল গড়ার কাজ। ১৯৯৬ সালে প্রথমবারের মতো নেপাল ক্রিকেট দল আন্তর্জাতিক ম্যাচে মাঠে নামে।


১৯৯৬ সালে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠিত এসিসি ট্রফিতে নেপালের ফল একেবারে খারাপ ছিল না। প্রথম পর্বে নিজেদের গ্রুপে ছয়টি দেশের মধ্যে তাদের অবস্থান ছিল চতুর্থ। নেপাল জয় পেয়েছিল ব্রুনেই আর জাপানের বিপক্ষে। যে প্রতিযোগিতার কথা বলা হচ্ছে, সেই প্রতিযোগিতার শিরোপা জিতেছিল বাংলাদেশ। আজ ক্রিকেটে বাংলাদেশের অনেক অর্জনের মাঝে ছিয়ানব্বই সালে মালয়েশিয়া থেকে এসিসি ট্রফি জিতে আসার সেই ইতিহাসটি হয়তো অনেকের কাছেই বিস্মৃতপ্রায়।

১৯৯৬ সালেই নেপাল আইসিসির সহযোগী সদস্যপদ অর্জন করে। তবে আইসিসির সহযোগী সদস্যদের নিয়ে আয়োজিত আইসিসি ট্রফিতে প্রথম অংশ নেয় ২০০১ সালে। এর আগে ২০০০ সালে এসিসি ট্রফির সেমিফাইনালে খেলাটাও নেপাল ক্রিকেটের এগিয়ে চলার জন্য ছিল এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। ২০০২ সালে এসিসি ট্রফির ফাইনালে উঠে নেপাল প্রমাণ করে ক্রিকেটে তারা ঠিকপথেই এগিয়ে চলেছে।

২০০৪ সালে আইসিসি ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপে নেপালের অভিষেক ঘটে প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে।

২০০৮ সালে নেপাল সুযোগ পায় আইসিসির সহযোগী সদস্য দেশগুলোকে নিয়ে প্রতিযোগিতা ওয়ার্ল্ড ক্রিকেট লিগের পঞ্চম বিভাগে। ২০১০ সালে নেপাল পঞ্চম ডিভিশনের শিরোপা জয় করে। এরপর ২০১২ সালে চতুর্থ বিভাগ আর ২০১৩ সালের মার্চ মাসে তৃতীয় বিভাগ পার করে নেপাল এখন স্বপ্ন দেখছে ২০১৫ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপে খেলার। ২০১৪ সালে নিউজিল্যান্ডে অনুষ্ঠিত হবে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে অনুষ্ঠেয় ওয়ানডে বিশ্বকাপের বাছাইপর্ব প্রতিযোগিতা।

আরব আমিরাতে অনুষ্ঠিত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে নেপালের অবস্থান তৃতীয়।

আয়ারল্যান্ড আর আফগানিস্তানের পেছনে থেকে আগামী বছর বাংলাদেশে অনুষ্ঠেয় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সুযোগ করে নেওয়ার পথে নেপাল হারিয়েছে ডেনমার্ক, কেনিয়া, পাপুয়া নিউগিনি, বারমুডা এবং হংকং ও আরব আমিরাতকে। নেপাল যখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে হাঁটি হাঁটি পা-পা, তখন কেনিয়া খেলেছিল বিশ্বকাপে। আরব আমিরাত, ডেনমার্ক, কেনিয়া, পাপুয়া নিউগিনি, বারমুডা—প্রতিটি দলই নেপালের চেয়ে অভিজ্ঞতায় অনেকটাই এগিয়ে। তাই এই অর্জনকে নেপাল ক্রিকেটের এগিয়ে যাওয়ার বলিষ্ঠ প্রমাণ হিসেবে ধরে নিলে খুব একটা বাড়াবাড়ি করা হয় না।

নেপালে ক্রিকেট নিয়ে উন্মাদনার কোনো কমতি নেই।

তবে জনপ্রিয়তায় খেলাটি এখনো ফুটবলের চেয়ে অনেকটাই পিছিয়ে। পুরো দেশে ৬৫৬টি ক্লাব ক্রিকেট চর্চা করে গেলেও সরকারি বাজেট প্রাপ্তির দিক দিয়ে ক্রিকেট বেশ পিছিয়ে। তবে বিশ্বকাপে স্থান করে নেওয়ার পর এই চিত্রে পরিবর্তন আসবে—এ কথা বলাই যায়।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।