আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

টেক্সটাইলের বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থী, যারা বিদেশে রিসার্চ বেজড মাস্টার্স এবং পিএইচডি করতে চাও (পর্ব ২)

মরে যাবার জন্যে বেঁচে আছি, সুন্দর কিছু স্বপ্ন নিয়ে...

আজকের পর্ব কিছু সমালোচনা দিয়ে শুরু করি। আমার এই সমালোচনার উদ্দেশ্য তোমাদেরকে হতাশ করা নয়, বরং চারিদিকের হতাশার মাঝেও স্বপ্ন-সাহস নিয়ে এগিয়ে চলার কথা বলা। ক্লোজ-আপ ওয়ানের থিম সং-টাইপ হয়ে গেলো!!! আমি যখন টেক্সটাইলে পড়েছি, তখন ওটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে একটা কলেজ ছিল। তখন ওখানে ছিলনা ক্যান্টিন, ছিলনা পর্যাপ্ত শিক্ষক, ছাত্র-শিক্ষক দূরত্ব ছিল অনেক, হলগুলোর অবস্থা ছিল যাচ্ছেতাই; এমনকি, এতোসব সীমাবদ্ধতার মাঝেও কিছু অথর্ব ছোট্ট এই ক্যাম্পাসটাতেই পাশে অবস্থিত ঢাকা পলিটেকনিকের মতো পাতি-রাজনীতির নোংরামি করতো। মোটকথা, আমার কাছে পরিবেশটা কোনভাবেই ভাললাগার মতো ছিল না।

তাই, পিছনের বেঞ্চে বসে কোনমতে দিনগুলো পার করেছি। আমার বিশ্বাস, টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় এখন যথেষ্ট আধুনিক এবং শিক্ষার্থীদের কাছে ভাললাগার একটি জায়গাতে পরিণত হয়েছে। শুনেছি, মাস্টার্স কোর্স চালু হয়েছে; হয়তো অচিরেই পিএইচডি গবেষণাও শুরু হয়ে যাবে। শিক্ষার্থীরা স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচী হাতে নিচ্ছে, পথশিশুদের মাঝে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিতে প্রচেষ্টার মতো সংগঠন করছে, শিক্ষার্থীদের কাছে নবীন শিক্ষকেরা বন্ধু-বড়ভাই এর মতোই হয়ে উঠছে। আমি খুবই আশাবাদী, এইসব চৌকশ শিক্ষার্থী আর শিক্ষকেরা বিশ্ববিদ্যালয়টিকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যাবে।

এবার মূল বিষয়ে আসি। গত পর্বে বলেছিলাম নূন্যতম সিজিপিএ ধরে রাখা এবং ইংরেজি শেখার কথা। আশা করি, সবাই এগুলোর গুরুত্ব বুঝতে পারছো। আজ বলবো থিসিস বিষয়ে। আমার মতো অনেকেই হয়তো নিজের আন্ডারগ্রেড থিসিসের কথা লজ্জায় কাউকে বলেনা।

এর পিছনে বেশ কয়েকটা বিষয় দায়ী, যেমন, নিজের উৎসাহ না থাকা, শিক্ষক বা সুপারভাইজরের কাছ থেকে কোন গাইডেন্স না পাওয়া, থিসিসের গুরুত্ব না বুঝতে পারা ইত্যাদি। আমার মনে হয়, আন্ডারগ্রেড থিসিসের কাজ শুরু করার আগে কিছু বিষয় জানা খুব জরুরী। এই জানানোর দায়িত্ব শিক্ষক বা সুপাভাইজরের। যদি তিনি না শেখান, অগত্যা নিজেকেই শিখে নিতে হবে। ১. থিসিস কি এবং কেন করা দরকার? কেন এই জিনিসটাকে শিক্ষাক্রমের অংশ করা হলো? উচ্চশিক্ষায় থিসিসের গুরুত্ব কি? ইন্টার্নশীপ করেই তো প্রাকটিক্যাল এক্সপেরিয়েন্স হয়, তাহলে থিসিস এর দরকার কি? ২. গবেষণাপত্র কি? গবেষণাপত্র পড়ার অভ্যাস কেন করা দরকার? প্লেজিয়ারিজম কি? আন্ডারগ্রেডে ভাল প্যারাফ্রেইজ করতে না পেরে রিসার্চ পেপার থেকে কেউ কেউ পুরা বাক্য কপি মেরে দেয়, এটাও মানা গেলো, কিন্তু সেখানে রেফারেন্স না দেয়া যে ভীষন ভয়াবহ অপরাধ(!), এই চুরি কোনভাবেই মানা যায়না, কেন? ৩. সুপারভাইজরের সাথে কথা বলে কাজ শুরুর আগেই একটা প্লান রেডি করা উচিত।

আহামরি কিছু করতে হবে এমন কোন কথা নাই। তবে, থিসিসের ট্রেইনিংটা যেন সুন্দর হয়। শুরু করা যেতে পারে কিছু সাম্প্রতিক রিভিউ পেপার পড়ে। রিভিউ পেপারগুলোতে কিছু ডিরেকশন দেয়া থাকে, যে ডিরেকশন মনে ধরবে, সেই বিষয়ে বেশকতক রিসার্চ পেপার পড়ো। পেপার খোঁজার সবচেয়ে সোজা উপায় গুগল-স্কলারে কী-ওয়ার্ড লিখে সার্চ দেয়া।

বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পেপারগুলো ডাউনলোড করতে পারলে ভাল, না পারলে বিনয়ের সাথে বিদেশে পড়ছেন এমন বড়ভাইদের বলো। এতে কোন বড়ভাই যদি তোমাকে হাইকোর্ট দেখায়, দ্বিতীয়বার তাকে বিরক্ত করার মানে হয়না। ৪. থিসিসের টপিক কেমন হবে? সহজ উপায় বলি। ব্লেন্ডিং মেশিনে কেউ তোমার সামনে তরমুজের জুস বানালো। তুমি বাসায় এসে কমলালেবু কচলে অরেঞ্জ জুস বানাও, আন্ডারগ্রেড লেভেলে এই রকম ইনোভেশনও চলতে পারে।

উদ্দেশ্য তো একটা জুস বানানো দেখে আরেকটা শেখা। সুন্দর করে এটাকে থিসিসের ফরম্যাটে লিখে ফেলো। ৫. যারা অহেতুক বেশি কষ্ট করতে চাও, তাদের কাজ হলো রিসার্চ গ্যাপ খুঁজে বের করা। রিসার্চ গ্যাপকে মাথায় রেখে অবজেকটিভস ঠিক করতে হবে। রিসার্চ গ্যাপকে সহজে বলা যায় যে বিষয়ে রিসার্চ হয় নাই।

কেউ যদি চিন্তা করে যেহেতু অমুক বিষয়ে রিসার্চ হয় নাই, তাই আমি এটা করতে চাই; শুধু এটা চিন্তা করা ঠিক হবে না, বরং বিষয়টা কেন ক্রিটিক্যাল তার ব্যাখ্যা পাওয়াও দরকার। এখন কথা হলো, ওই বিষয়ে রিসার্চ না হবার দুটো কারন হতে পারে; এক. বিষয়টা একেবারেই অপ্রয়োজনীয় এবং গুরুত্বহীন, দুই. বিষয়টা প্রয়োজনীয় কিন্তু দূর্ভাগ্যজনকভাবে গবেষকদের চোখ এড়িয়ে গেছে। দ্বিতীয় কারনটাকে যুক্তিসঙ্গতভাবে উপস্থাপন ও ব্যাখ্যা করা মানেই সত্যি রিসার্চ গ্যাপ খুঁজে পাওয়া গেল। আগামী পর্বে আবার কথা হবে।


সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৫ বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।