আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এবার 'রিপ্লিস বিলিভ ইট অর নট'-এ ম্যাক ইউরি

পৃথিবীর আনাচে-কানাচে লুকিয়ে আছে নানা বিষ্ময়কর প্রতিভা। আর তাদের নিয়েই অবিশ্বাস্য ও বিস্ময়কর খবরগুলো প্রকাশ করে 'রিপ্লিস বিলিভ ইট অর নট'। সম্প্রতি 'রিপ্লিস বিলিভ ইট অর নটের' কমিক বিভাগে জায়গা করে নিয়েছেন বিশ্বে 'সুপার হিউম্যান' হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশি সন্তান ড. ম্যাক ইউরি।

গত ২৬ নভেম্বর ‘রিপ্লিস বিলিভ ইট অর নট’র কমিক ভার্সনে তুলে ধরা হয় তার কথা। সেখানে কার্টুনের মাধ্যমে তার ছবি উল্লেখ করে লেখা হয়, "বাংলাদেশি মার্শাল আর্টস মাস্টার ম্যাক ইউরি; এক কিকে এক সাথে তিনটি স্টার্ন্ডাড সাইজের বেসবল ব্যাট ভেঙে ফেলতে পারেন।

"

মার্শাল আর্টে বাংলাদেশের একমাত্র গ্র্যান্ডমাস্টার ড. ম্যাক ইউরি। ‘শিন-কিকে’ তিনটি বেসবল ব্যাটের একটি বান্ডিল ভেঙে বিশ্বরেকর্ড গড়েন তিনি। সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে তিনিই প্রথম মার্শাল আর্টে কোনো বিশ্বরেকর্ড গড়েন। এ ছাড়া ডিসকভারি চ্যানেলের এক গবেষণা ও জরিপের পর তাকে ভূষিত করা হয়েছে  এই গ্রহের সুপার হিউম্যান হিসেবে।

এছাড়া মিলিটারি আন আর্মড কমব্যাট, ল-এনফোর্সমেন্ট, কাউন্টার-টেরোরিস্ট অ্যান্ড সিকিউরিটি বিশেষজ্ঞ ও ট্রেইনার হিসেবেও বিশ্বব্যাপী তার পরিচিতি রয়েছে।

তিনি তার অতিমানবীয় শিনবোন কিকের জন্য ‘থান্ডার শিনম্যান’ হিসেবে জগত্ব্যাপী পরিচিত ও প্রশংসা অর্জন করেন। গড়েছেন বিশ্বরেকর্ড। সম্প্রতি প্রচারিত ইত্যাদিতে অসাধারণ নৈপুণ্য প্রদর্শনের পর ফের আলোচনায় আসেন ম্যাক ইউরি। নতুন করে তার প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়তে থাকে। প্রায় ২০ বছর আগে ১৯৯২ সালে এই ইত্যাদির মাধ্যমেই প্রথম টেলিভিশনের পর্দায় অসাধারণ শারীরিক নৈপুণ্য প্রকাশ করেছিলেন তিনি।

আর ২০ বছর পর সেই ইত্যাদিতেই বিশ্বরেকর্ডধারী হিসেবে তাকে ফের উপস্থাপন করেন হানিফ সংকেত।

শুধু বিশ্বরেকর্ড নয়, ডিসকভারি চ্যানেলের জরিপের পর তাকে ভূষিত করা হয়েছে সুপার হিউম্যান হিসেবে। ২০১১ সালের ৭ মে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশিদের মাথা উঁচু করেন তিনি। পায়ের আঘাতে তিনটি বেসবল ব্যাট ভেঙে বিশ্বরেকর্ড গড়েন বাংলাদেশের এই মার্শাল আর্ট গ্র্যান্ডমাস্টার। বিশেষ ধরনের কাঠ থেকে তৈরি করা এক কেজি ওজনের প্রত্যেকটি বেসবল ব্যাটের মোটা অংশের পুরুত্ব ছিল ৮ ইঞ্চি ও হাতল ছিল ২ দশমিক ৭৫ ইঞ্চি।

পরবর্তীতে ওয়েন ইউনিভার্সিটি আমেরিকা গবেষণা করে তথ্য বের করে যে, প্রতিটি স্ট্যান্ডার্ড বেসবল ব্যাট ভাঙতে ৭৪০ পাউন্ডস শক্তি লাগে।   ব্রিটেনের নটিংহ্যামের লর্ড মেয়রের উপস্থিতিতে ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস রেজিস্ট্রি অ্যাডজুডিকেটর জন ইভান্স আনুষ্ঠানিকভাবে এই কৃতী মার্শাল আর্ট গ্র্যান্ডমাস্টারের হাতে বিশ্বরেকর্ডের সনদ হস্তান্তর করেন। এরপরই মার্শাল আর্ট দুনিয়ায় তাকে নিয়ে হৈচৈ পড়ে যায়। অন্যদিকে নড়েচড়ে ওঠে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া। বিশ্বের নামিদামী ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে জায়গা করে নেন ড. ইউরি।

তার এই খবর শুনে এগিয়ে আসে ডিসকভারি চ্যানেল। তাকে নিয়ে শুরু নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা। কিভাবে সম্ভব একজন মানুষের পক্ষে অতি দানবীয় কাজ। শুধু পায়ের আঘাতে তিনটি বেসবল ব্যাট ভেঙে ফেলা! এই ধরনের বিশ্বরেকর্ডধারীদের নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছে ডিসকভরি চ্যানেল। শরীরের পাঁচটি অংশকে কেন্দ্র করে সুপার হিউম্যান বাছাই করেছে তারা।

মুখ-হাত-বুক-পেট-পা এই পাঁচটি বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে এই গ্রহের পাঁচজন সুপার হিউম্যানকে বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরেছে তারা। এর মধ্যে একজন ছিল যিনি  মুখের শব্দ দিয়ে গ্লাস ভেঙে ফেলতে পারেন। দ্বিতীয় ব্যক্তি দুই হাত দিয়ে একটি গাড়িকে উল্টে ফেলতে পারেন। তৃতীয় ব্যক্তি ফুসফুসের বাতাস দিয়ে ফাটিয়ে ফেলতে পারেন একটি হট ওয়াটার ব্যাগকে। চতুর্থ ব্যক্তি পেটের ওপর দিয়ে একটি ল্যান্ড রোভার গাড়িকে পার হতে দেন।

আর পঞ্চম ব্যক্তি ড. ইউরি যিনি পা দিয়ে লাথি মেরে তিনটি বেসবল ব্যাট ভেঙে ফেলেন।

ডিসকভারির পক্ষ থেকে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বলা হয়, তার পায়ের ৯৬ শতাংশ মাংসপেশী এক সঙ্গে কাজ করতে সক্ষম। এর আগে কোনো ব্যক্তির ক্ষেত্রে এ ঘটনা ঘটেনি। এই গ্রহে তিনিই প্রথম ব্যক্তি যার ৯৬ শতাংশ পেশী কাজ করে। এ কারণে তাকে এই গ্রহের সুপার হিউম্যানের খেতাব দেওয়া হয়।

এমনকি তার ওপর একটি বিশেষ প্রামাণ্যচিত্র তৈরি করেছে ডিসকভারি চ্যানেল। যা পর্যায়ক্রমে বিশ্বের ২১০টি দেশে ৬৪টি ভাষায় প্রদর্শিত হচ্ছে। এত অর্জন সত্ত্বেও সবসময় প্রচারবিমুখ এ মানুষটি। বিশেষ করে বাংলাদেশের মিডিয়ায় তাকে খুব একটা দেখা যায়নি। ঢাকার আজিমপুরে জন্মগ্রহণকারী ড. ইউরি ছোটবেলা থেকেই চঞ্চল ছিলেন।

বাবা ছিলেন ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। তার চাকরির সুবাদে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিচরণ ছিল ড. ইউরির।

খুলনায় ইংলিশ মিশনারি স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনের পর, মিলিটারি বোর্ডিং স্কুলের কঠোর অনুশাসন ও নিয়মানুবর্তিতার মধ্য দিয়ে শুরু হয় তরুণ ক্যাডেট জীবন। ভর্তি হন ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজে।   অসাধারণ প্রতিভার ক্যাডেট হিসেবে তিনি বরাবরই কৃতিত্বপূর্ণ সাফল্যের পরিচয় দিয়ে এসেছেন।

মিলিটারি সাইন্স, ফিজিক্যাল ট্রেনিং, অবস্টাকল কোর্স, আন আর্মড কমব্যাট, মিলিটারি ড্রিলস প্যারেডের মতো বিষয়সমূহে কৃতিত্ব অর্জন করেছেন। এছাড়া ড. ইউরি ভারতের কাঞ্চিপুরম ও চীনের শাওলিন টেম্পল সম্পর্কিত অনুসন্ধানী গবেষণার মাধ্যমে ভারতীয় মার্শাল আর্টের লুপ্তপ্রায় ইতিহাস ও ঐতিহ্য পুনরুদ্ধার করেন।  

ড. ইউরি বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় মার্শাল আর্ট গ্র্যান্ডমাস্টারদের আন্তর্জাতিক সংস্থা ওয়ার্ল্ড গ্র্যান্ডমাস্টারস কাউন্সিল, আমেরিকার সর্বোচ্চ পুরস্কার ‘গ্রান্ডমাস্টার পিনাকেল অ্যাওয়ার্ড-২০০৯’ লাভ করেন। তিনি ‘ন্যাশনাল সিকিউরিটি একাডেমী’ আমেরিকা থেকে কমিশন অফিসার্স কোর্স সমাপ্ত করেন। অর্জন করেন ব্রিটিশ হোম অফিস অধীনস্থ সিকিউরিটি ইন্ডাস্ট্রিজ অথরিটি ভিআইপি প্রটেকশনের ওপর সর্বোচ্চ প্রফেশনাল ডিগ্রি।

  এছাড়া ফায়ার ট্রেনিং একাডেমী ইংল্যান্ড থেকে ফায়ার মার্শাল কোর্সও সম্পন্ন করেন। ব্যুত্থান মার্শাল সম্পর্কে জানতে চাইলে ড. ইউরি বলেন, প্রাচীন দক্ষিণ এশিয়ার আত্মরক্ষামূলক যুদ্ধকলার ঐতিহ্যের ধারায় বিজ্ঞানভিত্তিক এক বাস্তবধর্মী আত্মরক্ষার পদ্ধতি এই ব্যুত্থান মার্শাল। নিরাপদ ক্রীড়া ও সার্বিকভাবে জীবনকে কল্যাণময়ী করার মহান কলা এটি।

এই মার্শাল আধুনিক মনস্তত্ত্ব ও বৈজ্ঞানিক সূত্রনির্ভর জ্ঞান এবং ঐতিহ্যের ধারা থেকে নির্বাচিত হাতে-কলমে কার্যকর আত্মরক্ষামূলক কলাকৌশলের এক সফল সমন্বয় যাকে বলা হয়— ‘সংঘাত রহিতকরণ ও জীবন ক্ষমতায়নের পথ’। তিনি আরও বলেন, ভারতউপমহাদেশেই মার্শাল আর্টের আদি পীঠস্থান।

কালক্রমে ভারতীয় উপমহাদেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে ‘আত্মরক্ষা কৌশল’ চর্চা ব্যাপক প্রসার ও পূর্ণতা পায় চীনের হুনান প্রদেশে শাওলিন টেম্পল এবং পরবর্তীতে বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়লেও ভারত উপমহাদেশ তার মার্শাল আর্টের ঐতিহ্য ক্রমশ হারিয়ে ফেলে। এ কারণে এই মার্শাল আর্টকে তুলে ধরাই তার লক্ষ্য। তার ইচ্ছা বিশ্বব্যাপী এই ব্যুত্থান মার্শালকে পরিচিত করা ও ছড়িয়ে দেওয়া।  

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.