আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কৃষ্ণাঙ্গদের খ্রিষ্ট: দীর্ঘ কারাভোগের পর প্রেজিডেন্ট হয়েও ক্ষমতার লোভে পড়েন নি ম্যান্ডেলা

Consistency is the last refuge of the unimaginative. –Oscar Wilde (ইহা হইল আমার কনসিসটিন্সি না থাকিবার একটি গ্রহণযোগ্য অজুহাত)
১৯৯৯ সালে যখন প্রেজিডেন্ট হিসেবে তার মেয়াদ শেষ হয়, তখন তিনি দ্বিতীয়বার আর ক্ষমতা নিতে রাজি হন নি। থাবো এমবেকি’র হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিয়েছিলেন। প্রতিজ্ঞা ছিলো, তিনি একবারই প্রেজিডেন্ট হবেন দক্ষিণ আফ্রিকার। প্রতিজ্ঞা রেখেছিলেন। ক্ষমতায় এসে পূর্বে-দেওয়া কোন প্রতিশ্রুতির কথা কে কবে মনে রেখেছে? প্রেজিডেন্ট পদ থেকে অবসর নেবার পর তিনি সক্রিয় রাজনীতি থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন।

তবু সাধারণ মানুষের নয়নের মণি হয়ে রইলেন ‘মাদিবা’ ম্যান্ডেলা। মানবাধিকার, বিশ্ব শান্তি এবং এইডস প্রতিরোধের পক্ষে কাজ করে যাবার নতুন প্রতিজ্ঞা নিলেন তিনি। নতুন প্রতিজ্ঞার পেছনে রয়েছে একটি ব্যক্তিগত বেদনার কথা। তার এক পুত্র মাদিবা থেমবেকি ঊনষাট সালেই গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যান। অবশেষে ২০০৫ সালে তার একমাত্র জীবিত সন্তানটি মরণব্যাধি এইডস-এর মারা যান ৫৫ বছর বয়সে।

রাজনৈতিক এবং ব্যক্তিগত উভয় জীবনেই ম্যান্ডেলা অনেক হারিয়েছেন এবং নিজেও হেরেছেন। তার বিখ্যাত উক্তিটির মতো প্রতিবারই তিনি ওঠে দাঁড়িয়েছেন। এখনও দাঁড়িয়ে আছেন আমাদের সামনে এক নিশ্চয়তার পর্বত হয়ে! ২০০৪ সালে তিনি আরেকবার অবসর নেন তারই বাইরের জীবন থেকে। এই অবসর হলো, নিজের পরিবারের মানুষগুলোকে সময় দেবার জন্য। তিনি তখন তার ভক্তদেরকে বলেছিলেন, “আর আমাকে ডেকো না – আমি এবার তোমাদেরকে ডাকবো।

” তবু তার অবসর নেওয়া হয় নি। অবশেষে তিনি এমন অবসর নিলেন, যখন আর কেউ কাউকে আর ডেকে পাবে না। শ্রদ্ধাঞ্জলি! কৃষ্ণাঙ্গদের খ্রিষ্ট ম্যান্ডেলা যখন মৃত্যুর দরজা থেকে ফিরে আসলেন, তখন শব্দনীড়ে একটি পোস্ট দিয়েছিলাম ‘শকুনের অপেক্ষায় আছে’ শিরোনামে । আজ বসে ভাবছিলাম, কী দরকার লিখে, কী হবে তাকে নিয়ে লেখলে? গান্ধি, মার্টিন, তেরিজা, বঙ্গবন্ধু, আতাতুর্ক, আরাফাত – তাদের নিঃস্বার্থ অবদানকে আমরা কতটুকু কাজ লাগিয়েছিলাম আমরা? শতাব্দির প্রতিনিধি, জীবনের চেয়েও মহান আদিবা ম্যান্ডেলাকে নিয়ে লেখলে কী হবে আমাদের? লেখা তো কম হয় নি, বলা তো কম হয় নি! শুধুই জেনারেল এর পর জেনারেল: কূটকৌশলী রাজনীতিবিদ পেয়েছি। এরপর তো আর নেতা পেলাম না প্রিয় বাংলাদেশে? এদেশে ম্যান্ডেলার দৃষ্টান্ত বুঝার বা তার মতো গণমানুষের নেতা বা বিশ্বনেতার হবার মতো ত্যাগী রাজনীতিক কি এদেশে এখন আছে? যদি থাকতো, তবে কেন অসহায় মানুষগুলো আজ রাস্তায় বের হতে ভয় পায়? কেন দিনমুজুরেরা তাদের মেহনত করার অধিকারটুকু আজ পাচ্ছে না? তবে কি বাংলাদেশ নেতাশূন্য হয়ে আচে? ম্যান্ডেলার মতো আকাশ-সমান নেতাদের আলোচনা আসলেই, নিজ দেশের রাজনীতির প্রতি ধিক্কার আসে।

‘শকুনেরা কেন অপেক্ষা করছিলো গতবছর?’ তারা চেয়েছিলো কত তাড়াতাড়ি এবার অসুস্থ ম্যান্ডেলা মারা যাবেন, আর কত তাড়াতাড়ি তারা নিউজ ব্রেইক করবে! ম্যান্ডেলা মৃত্যুর আগে থেকেই পৃথিবীকে প্রস্তুত করছিলেন গত দু’বছর ধরে। হয়তো তিনি জানতেন হঠাৎ মৃত্যু তা যতই স্বাভাবিক হোক, পৃথিবীর মানুষগুলো তা মেনে নিতে পারবে না। তবুও মাত্র একজন মানুষের মৃত্যু সমগ্র বিশ্বকে একসাথে স্তম্ভিত করে দিলো। সারা পৃথিবী শোকাগ্রস্ত। মৃত্যু তার হবেই, কিন্তু তবুও যেন মানুষগুলো আজ নিঃস্ব।

অহিংস আন্দোলনের প্রবক্তা হিসেবে কিংবা বর্ণবাদ বিরোধী বৈশ্বিক প্রতিবাদের আইকন হয়ে কিংবা কালো মানুষের যীশু হিসেবে মাদিবার নাম কি কেউ মুছে দিতে পারবে? //কালো কালো মানুষের দেশে ওই কালো মাটিতে রক্তের স্রোতের শামিল নেলসন ম্যান্ডেলা তুমি অমর কবিতার অন্ত্যমিল // এদেশে ম্যান্ডেলাকে নিয়ে গান হয়... মিছিল সমাবেশ হয়... শুধু প্রয়োগ হয় না। তাকে নিয়ে লেখলেই কী না লেখলেই কী। জানে তো সবাই, মানে তো না! ------------------------------------------------------------------------ *ছবি ও তথ্য ইন্টারনেট থেকে। **টাইমলাইন: নেলসন রুহিহ্লাহ্লাহ ম্যান্ডেলা । *** ম্যান্ডেলার খেতাবের শেষ নেই।

‘কালো মানুষের যীশু’ না বলে আমি বললাম ‘কৃষ্ণাঙ্গদের খ্রিষ্ট’।
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।