আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সিজোফ্রেনিয়া

মন নামের ডাকবাক্সে বদ্ধতালা ঝুলিয়ে, একা পথে হেঁটে চলা মরুভূমির খোঁজে

অরিনের আজকাল ঘুম হয়না ঠিক মত। ঘুম হলেও মাঝ রাতে ঘুম ভেঙ্গে যায়। দিনে ঘুম আসে , মাঝে মাঝে আবার সন্ধ্যেয়। পড়ালেখা সব লাটে উঠেছে। কেমন জেন গুঁটিয়ে রাখে নিজেকে।

কারো সাথে মিশতে চাই না। নিজেকে খুব আলাদা মনে হয় সবার থেকে। শেষ রাতে বুক চেপে কান্না পায়। খুব কষ্ট। সব দুমড়ে মুচড়ে ফেলে দেবে জেন।

দিবার সাথে ওর সম্পর্ক আজকাল ভালো যাচ্ছে না। আমি জানি এর কারণ কি। দিবা মেয়েটা ওকে পাগলের মত ভালোবাসে। দু;মাস আগে অরিনও নাকি ওকে এক মিনিট কাছে পাওয়ার জন্য পাগলের মত চিৎকার করত! এখন দিবা ফিরে এসেছে, সব সম্পর্ক জোড়া লাগান হল সুপারগ্লুর মত আবেগগুলো দিয়ে। কিন্তু এর মাঝে বাঁধা হয়ে দাড়ান কাঁটাটা আমি।

অরিন যখন আমাকে বলে " নীলা আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচব না" তখন মাথার ভেতরটা চক্কর দেই, পড়ে যাব মনে হয়। কেননা, এটা তো অসম্ভব! দিবা অরিন কে পাগলের মত ভালোবাসে। আমি অরিনের হাত থেকে প্রতিবারই আমার হাতটা ছুটিয়ে নিয়ে দূরে দৌড়ে পালায়। তবু বারবার ফিরে আসি ওর কাছে। অরিনের উপর দিবার খুব রাগ, দিবাকে আজকাল অ্যাভোয়েড করে চলছে ।

অরিন ওর সামনে বসেও পাগলের মত একা একা কি যেন আঁকাআঁকি করে। পার্ক বেঞ্চে, রেস্টুরেন্টের মেনু কার্ডে! কি অদ্ভুত! দিবার ধারণা, অরিনকে ছেড়ে চলে গিয়েছিল বলে এখন ফিরে আসার পর ওর সাথে এমন করে! দিবাটা কি বোকা! কিচ্ছুই জানলনা এখনো! অরিনের চুল উস্কো খুস্কো, গায়ে আজকাল মরীচা মত পড়ে গেছে। ব্রোকেন ফ্যামিলির ছেলের বাড়িতে বকার মত কেউ নেই ব্যাপারটা অস্বাভাবিক কিছু না! বাবাও কিছু বলে না, আর অরিনও তার কোন কিছুই বাবাকে বলে না। আলো সহ্য করতে পারে না অরিন। চোখে লাগে নাকি! অন্ধকারকে খুব ভালোবাসে আজকাল।

নিঝুম আজকাল বেশ ফেডাফ তার বেস্ট ফ্রেন্ডটার উপর। গায়ে হাত দিতে দেই না। মাঝে মাঝে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। "অরিন , এই অরিন" বললেও ডাক শোনে না! একটু পর আবার একা একা ঠিক হয়ে যাই! অরিন সপ্তাহে একদিন আমার সাথে দেখা করতে আসে, সেদিন ঝুম বৃষ্টি হয়। আমাকে প্রতিবারই নীল শাড়িতে আসতে হয়।

সাজগোজ অরিনের খুব পছন্দ। আমার চোখে হালকা কাজলের দিকে অপলক চেয়ে থাকে অরিন। মাঝে মাঝে চুমু খায় আমার পাতলা ঠোঁটে! প্রতি রাতে ফোনালাপের সময়, গল্পের ঝুলি খুলে বসে। ২। ইদানিং অরিন আমার দেখা পায় না খুব একটা।

ডাক্তার আঙ্কেলের ওষুধ গুলো, বাবা আর দিবার যত্ন অরিনের কাছ থেকে আমাকে দূরে নিয়ে যাচ্ছে বলে ওর ধারণা! ডাক্তার আঙ্কেল যে কি সব বুঝায় না! ধুর। অরিন সেলফোনে আজকাল আমার নাম্বারখানাও খুঁজে পায় না! কি অদ্ভুত! তাই না? আমি এখন দূরে সরে যাচ্ছি অরিনের অস্তিত্ব থেকে। আমি কে? আমি নীলা। অরিনের ডিলিউশন। ভ্রান্ত ধারণা! আমার অস্তিত্ব একটা হ্যালুশিনেশন ! ওর অবচেতন মনের তৈরী প্রেমিকা! ব্রোকেন ফ্যামিলির ছেলে অরিনের ছোটবেলা ওর উপর বাজে ভাবে ইফেক্ট করে।

কৈশরের প্রেমিকা দিবার চলে যাওয়া কোন ভাবে মানতে পারেনি অরিন। দিবা ফিরে আসতে দেরী করে ফেলেছে। ওর ফেরার আগে থেকেই অরিনের মাঝে বীজ বুনতে থাকে "সিজোফ্রেনিয়া" , জার বদৌলতে অরিন আবিস্কার করে আমাকে! আমার ফোন নাম্বার, ঝুলি খানেক কথা, প্রতিটা বর্ষা, উষ্ণ চুম্বন সবকিছু ডিলিউশন! সব সব সব! দিবা অরিনের ব্যাপারটা নিয়ে টেনশড না হলে আমি ওকে ছাড়তাম না। নিঝুম আর দিবার চেষ্টায় বাবা ওকে সাইকোলজিস্ট আঙ্কেলের কাছে নিয়ে যাই। ওর সীমটোম দেখে উনি বুঝে যাই যে অরিন ছেলেটা "সিজোফ্রেনিয়াক" ! অরিনের ট্রিটমেন্ট চলছে।

আস্তে আস্তে বিলীন হয়ে যাচ্ছি আমি! আমার কোন অস্তিত্ব থাকবেনা আর। অরিন মুক্ত হতে চলেছে... (পরিশেষেঃ সিজোফ্রেনিয়া এমন একটা রোগ যা মানুষের চিন্তা শক্তি , আবেগ সবকিছুর সাথে বাস্তবতার একটা বিশাল ফারাক তৈরি করে। এটাকে নিরব ঘাতক বলা যেতে পারে। প্রথম অংশে, আমি আমার জানা কিছু সিমটোম আর কিছু কারন এর বর্ণনা দিয়েছি গল্পাকারে। রোগটার ফলাফল ভয়াবহ হতে পারে।

রোগীর এসময় হ্যালুসিনেশন হয়, ডিলিউশনে বিশ্বাস করে। সিজোফ্রেনিয়ার চিকিৎসা কিছুটা দীর্ঘ মেয়াদী, তবে, ওষুধ , দেখাশোনা, চিকিৎসাই পারে একজন সিজোফ্রেনিক রোগীকে সুস্থ করে তুলতে। এ ব্যাপারে লেখিকা ন্যান্সি অ্যানড্রেমন এর " দি ব্রোকেন ব্রেণ" বইটিতে বেশ ভালো তথ্য পাবেন। আমার জানা খুব কম, তবে এর কিছু সিমটোম নিজের মধ্যে আবিস্কার করেছি বলে ব্যাপারটা শেয়ার করলাম। আই উইশ, নেট এবং বিভিন্ন বই থেকে বেশ কিছু ভালো ও উন্নত তথ্য পাবেন।

)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।