আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নেই উত্তাপ নেই উত্তেজনা

দেশের ফুটবলে ফাইনাল মানেই মোহামেডান-আবাহনীর লড়াই। তা না হলে যে কোনো একটি দলকে দেখা যেতই। সত্যি বলতে কি ফাইনালে মোহামেডান-আবাহনী কেউ থাকবে না তা আগে ভাবাই যেত না। কিন্তু সে অবস্থা এখন আর নেই। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামীকাল বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে ওয়ালটন ফেডারেশন কাপের ফাইনাল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে।

ট্রফি ঘরে তুলতে শেখ জামাল ধানমন্ডি ও মুক্তিযোদ্ধা ক্রীড়াচক্র মুখোমুখি হবে। অর্থাৎ দেশের জনপ্রিয় দুই দল ছাড়া আরেকটি শিরোপা লড়াই দেখা যাবে। শুধু কি এবার, টানা তিন ফেডারেশন কাপে মোহামেডান-আবাহনী ফাইনালের বাইরে। ১৯৮০ সালে এ আসর শুরু হওয়ার পর এক সঙ্গে ফাইনালের সুযোগ না পেলেও টানা তিন আসরে কখনো বাইরে থাকেনি। দুই দলের শেষ ফাইনাল হয়েছিল ২০০৯-১০ মৌসুমে।

এরপর আবাহনী একবার ফাইনাল খেললেও মোহামেডানের দেখাই মিলছে না। এখনতো দুই দলেরই পাত্তা নেই। শক্তিশালী দলে রূপান্তরিত হওয়ার পর ধানমন্ডি টানা চারবার ফাইনালে উঠলেও সেখানে চির প্রতিদ্বন্দ্বী দুই দলের দেখা মিলছে না। এমন ব্যর্থতায় দেশের ফুটবলে মোহামেডান-আবাহনী দুই প্রধানের সুনামটা ম্লান হতে চলেছে।

ফুটবলে জনপ্রিয়তা ও মানের যে ধস নেমেছে তাতে অনেকেই মনে করেন ফাইনালে দুই প্রধানের অনুপস্থিতিটাই বড় ভূমিকা রাখছে।

আগে যে কোনো আসরে শিরোপা ভাগাভাগি করাতে অনেকের কাছে বিরক্তি ঠেকতো ঠিকই কিন্তু এতে ফুটবলে একটা প্রাণ বা উন্মাদনা থাকত। শক্তিশালী দল গড়ার পর শেখ জামাল ও শেখ রাসেল সাফল্য পাচ্ছে ঠিকই। কিন্তু তাতে কোনো উৎসব বা উত্তেজনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। গত মৌসুমে শেখ রাসেল ফেডারেশন কাপ, লিগ ও স্বাধীনতা কাপ জিতলেও ফুটবলে তেমন উন্মাদনা লক্ষ্য করা যায়নি। অথচ এক সুপার কাপ জিতেই মোহামেডান ক্রীড়াঙ্গনে রীতিমতো হৈ-চৈ ফেলে দেয়।

কারণ একটাই সাদাকালোদের যে সমর্থন রয়েছে তার ছিটেফোঁটাও শেখ রাসেলের নেই। আগামীকাল ফাইনালে যারাই জিতুক না কেন দেখা যাবে ট্রফি নিয়ে ততটা উল্লাস হবে না। এটাই স্বাভাবিক, কারণ ফুটবলে দর্শক বা সমর্থক বড় একটা ফ্যাক্টর। নতুন নতুন দল শিরোপা জেতাতে ফুটবলে নতুনত্ব আসছে ঠিকই কিন্তু এতে কোনো উত্তাপ ছড়াচ্ছে না।

ফুটবল নিয়ে যারা দেশে গবেষণা করেন তাদের অনেকে এক সময় বলতেন, জনপ্রিয় এ খেলার জৌলুস বৃদ্ধি করতে হলে মোহামেডান-আবাহনীর পাশাপাশি অন্যদেরও শিরোপা জিততে হবে।

এতে ফুটবলের আকর্ষণ আরও বাড়বে। এখন আবার তারাই বলছেন, এ ধারণা আমাদের ভুল ছিল। কারণ মোহামেডান-আবাহনী সাফল্য না পেলে ফুটবল জমে না। এটা ঠিক পেশাদার লিগ শুরুর পর হ্যাটট্রিকের কৃতিত্বের পাশাপাশি চারবার শিরোপা জেতার কৃতিত্ব পেয়েছে আবাহনী। অন্যদিকে মোহামেডান পুরোপুরি ব্যর্থ বলে হৈ চৈটা তেমন হয়নি।

আগে একবার মোহামেডান আরেকবার আবাহনী চ্যাম্পিয়ন হওয়াতে দর্শকদের মধ্যে উত্তেজনা থাকত অন্যরকম। এখনতো দুই দলেরই সব অসরে করুণ হাল। তাই ফুটবলের জনপ্রিয়তা শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে। বাফুফের নাম প্রকাশে এক কর্মকর্তা বলেছেন, দেশের ফুটবল জাগাতে মানের খুব একটা প্রয়োজন নেই। কেননা যতই চেষ্টা করি না কেন বাংলাদেশ কখনো এশিয়া অঞ্চলেও শক্তিশালী রূপে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে না।

বড় জোর সাফে সাফল্য আসতে পারে। কিন্তু মোহামেডান-আবাহনী যদি আগের মতো টানা ক'বছর লিগ বা অন্য আসরে শিরোপা ভাগাভাগি করতে পারে তাহলে ফুটবলে দুর্দশা কেটে যেতে পারে। লোকাল এ ফুটবলে জনপ্রিয়তা বাড়াতে হলে অবশ্যই দলগুলোর সমর্থক থাকতে হবে। কারণ মোহামেডান-আবাহনীকে দর্শকরা ভালোবেসেছে অন্যভাবে। যা শেখ জামাল, শেখ রাসেল বা মুক্তিযোদ্ধার পক্ষে কোনোদিন সম্ভব হবে বলে মনে হয় না।

অর্থাৎ ফুটবলকে জাগাতে হলে অবশ্যই মোহামেডান-আবাহনীর ঘুরে দাঁড়ানোটা জরুরি হয়ে পড়েছে।

 

 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।