আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জাপার ছয় মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী থেকেও নেই, কাজে স্থবিরতা

‘ভাই, অচলাস্থার মধ্যে আছি। কাজকর্ম এগোচ্ছে না। এভাবে চলতে পারে না। কিছু লেখেন। ’ কথাগুলো বলছিলেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা।

যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক এক সপ্তাহ ধরে মন্ত্রণালয়ে আসছেন না। কাজকর্মে স্থবিরতা দেখা দেওয়ায় ওই কর্মকর্তা গতকাল বুধবার প্রথম আলো ডটকমের কাছে এ প্রতিক্রিয়া জানান।

শুধু যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় নয়, জাতীয় পার্টি থেকে নির্বাচনকালীন সরকারে যোগ দেওয়া ছয় মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়েই স্থবিরতা চলছে। কারণ এসব মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা কেউ সচিবালয়ের দপ্তরে যাচ্ছেন না। এতে এসব মন্ত্রণালয়ে কাজকর্ম ঠিকমতো চলছে না।

বিশেষ করে মন্ত্রী পর্যায়ের কোনো কাজ হচ্ছে না। এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে অধীনস্ত দপ্তরগুলোতে।
গত ১৮ নভেম্বর জাতীয় পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য রওশন এরশাদ, আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার মন্ত্রী এবং মুজিবুল হক ও সালমা ইসলাম প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জিয়াউদ্দিন আহমেদকে মন্ত্রীর পদমর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা করা হয়েছে।
জাতীয় পার্টি থেকে যোগ দেওয়া ওই ছয় মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর ‘পদত্যাগ নাটক’ শেষ না হওয়ায় রুলস অব বিজনেস অনুযায়ী মন্ত্রীদের অনুপস্থিতিতে এসব মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রীর হাতেও যাচ্ছে না।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সূত্র জানায়, রুলস অব বিজনেস ১৯৯৬ অনুযায়ী কোনো মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী না থাকলে সেই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রীর হাতে যায়। কিন্তু ওই ছয় মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা থেকেও না থাকায় তা সম্ভব হচ্ছে না। এতে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা মন্ত্রীর পর্যায়ের কোনো কাজই করতে পারছেন না।

তবে ওই ছয় মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী না এলেও তাঁদের একান্ত সচিব, সহকারী একান্ত সচিবসহ অন্যান্য কর্মকর্তা অফিস করছেন। মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের নামফলকও রয়েছে আগের মতো।

মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের সুযোগ-সুবিধাও বহাল আছে। গতকাল ওই সব মন্ত্রণালয়ে গিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা প্রথম আলোকে বলেন, ‘পদত্যাগের বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো নির্দেশনা আসেনি। আর প্রজ্ঞাপন না হওয়া পর্যন্ত আমরা ধরে নেব তাঁরা মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী হিসেবেই আছেন। এসব মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা যদি কোনো সমস্যা মনে করে আমাদের জানান, তাহলে প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ নেওয়া হবে।

তবে এখনো কেউ কোনো সমস্যার কথা বলেননি। ’

৫ ডিসেম্বর থেকে জাতীয় পার্টির মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা সচিবালয়ের দপ্তরে আসছেন না। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের পরদিন ৩ ডিসেম্বর নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। পরদিন তাঁর দলের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা পদত্যাগ করবেন বলেও ঘোষণা দেন। এরপর থেকেই কার্যত সচিবালয়ে যাচ্ছেন না মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা।

তবে এরপর একের পর এক নাটকের পর এরশাদ জানান, মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের পদত্যাগপত্র ডাকযোগে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে।

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী হলেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার। তাঁর অনুপস্থিতিতে গতকাল তাঁর দপ্তরের একজন কর্মকর্তা প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, মন্ত্রী না এলে কাজকর্ম কম হবে—এটাই স্বাভাবিক।

ওই দপ্তরে গিয়ে দেখা যায়, কর্মকর্তা-কর্মচারী আলাপ-আলোচনা করে সময় পার করছেন। মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রী পর্যায়ের সব কাজকর্ম বন্ধ।

শুধু সচিব পর্যায়ের কাজকর্ম হচ্ছে বলে জানা গেছে।

এরশাদের ভাই বাণিজ্যমন্ত্রী জি এম কাদেরের দপ্তরের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা বলেন, মন্ত্রী অফিসেও আসছেন না, বাসায় থেকেও ফাইলপত্রে সই করছেন না। তবে আরেকজন কর্মকর্তা জানান, তিনি এখনো মন্ত্রী আছেন, মন্ত্রী পর্যায়ের কাজকর্মের প্রয়োজন পড়লে ফাইল প্রয়োজনে বাসায় পাঠানো হবে।

গতকাল ওই মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রী পর্যায়ের একটি কাজ নিয়ে আসেন দুই ব্যক্তি। তখন ওই দুই ব্যক্তি মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তার কাছে অনুরোধ করে বলেন, ওই কাজটি যেন সচিব পর্যায়ে সুরাহা করে দেওয়া হয়।

কিন্তু ওই কর্মকর্তা বলেন, জি এম কাদের এখনো মন্ত্রী, তাই ওই কাজ করতে হলে তাঁর অনুমোদন লাগবে।

পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদও দপ্তরে আসছেন না।

মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী সালমা ইসলামের দপ্তরে গিয়ে দেখা যায়, তাঁর দপ্তরের অন্য কর্মকর্তারা ঠিকই আছেন, কেবল নেই তিনি। এ নিয়ে তাঁর  দপ্তরের কর্মকর্তারা হতাশার মধ্যেও আছেন।

একই চিত্র স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়েও।

ওই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হলেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের স্ত্রী রওশন এরশাদ। তিনিও অফিসে যাচ্ছেন না।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com     দেখা হয়েছে ১১ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.