আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ব্লগ ডে উপলক্ষে আমার ছোট্র আয়োজন...কেন ব্লগিং করি????



আজ থেকে ২ বছর আগের কথা। এক বন্ধুর সাথে আড্ডা দিচ্ছিলাম। একথা সেকথা বলার মাঝে বন্ধুটি আচমকা বলে বসল, ‘কিরে দোস্ত, ব্লগ পড়িস নাকি?’ আমি না-সূচক উত্তর দিলে ও বলল, “পড়িস, মজা লাগবে’। ইতিমধ্যে বিভিন্ন আলোচনায় ব্লগের ব্যাপারে শুনেছিলাম। কিন্তু পড়া হয়ে উঠেনি বা তখন অবধি পড়ার জন্য নিজের ভেতর থেকে কোন তাড়া অনুভব করিনি।

আসলে ব্লগিং সম্মন্ধে পরিস্কার ধারণা ছিল না বিধায় এটা নিয়ে খুব একটা ভাবিনি। তো, ওর কথায় হালকা উত্সাহ অনুভব করলাম। একদিন সামু-তে ঢু মারলাম। (আমার বন্ধুটি সামু-র কথাই বলেছিল। ) ঢুকেই আমার মাথা পুরা আউলা হয়ে গেল।

প্রথমদিন Visit করেই বুঝে ফেললাম, ‘শুরু হলো আমাদের যুগল চলন...’। সেই যে শুরু... আর এখন? ব্লগ এখন আমার প্রতিদিনের সংগী। ব্লগ একদিন না পড়লে মনে হয় সারাদিন কিছুই হলো না! একদিন হুট করে রেজিস্টেশনও করে ফেললাম। এরপরই বুঝলাম ‘ভালবাসার মূল্য কত...’। গুণে গুণে ৮ মাস আমাকে ‘লটকে’ রাখা হলো।

অবশেষ মুডুদের অশেষ কৃপায় একদিন পাখা মেললাম নীল দিগন্তে। যাই হোক, শুরু হলো আমার সামুগিরি। যেদিন থেকে ব্লগ পড়ি সেদিন থেকেই আমি এর ভাল-মন্দ নিয়ে ভাবতাম। ব্লগ নিয়ে সাধারণ মানুষের অনুভূতি মিশ্র। কেউ কেউ আছেন যারা ব্লগের নাম শুনলেই নাক সিটকান, সন্দেহজনকভাবে তাকান।

তবে তারা এটা করেন কোন কিছু না জেনেই। তাদের কাছে ব্লগ মানেই খারাপ, কেউ ব্লগারদের নাস্তিক বলেও ডেকে থাকেন! তবে যারা আসলে জানেন ব্লগিং কি তাদের কাছে এটা অনেক কিছু। আমার মতে ব্লগিং হলো নিজেকে মেলে ধরার অবারিত এক সুযোগের নাম। পারস্পরিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক এবং বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা ও গণতান্ত্রিক মানসিকতা তৈরিতে ব্লগ রাখছে বিশেষ ভূমিকা। ব্লগের মাধ্যমে একজন সচেতন মানুষ যেমন সমাজের অসঙ্গতিগুলি জনসম্মুখে তুলে ধরতে পারে তেমনি এর বিরুদ্ধে জনমত গঠন করে তা দূর করে একটি উন্নত সমাজ গঠনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকাও রাখতে পারে।

তার চেয়ে চলুন সবাই মিলে বিস্লেষণ করি ব্লগের ভাল-মন্দগুলো। ব্লগের যে বিষয়গুলো আমার ভাললাগেঃ রোজনামচা লেখাঃ এটি আসলে অনেকটা ডায়েরি লেখার মতো। ডায়েরিতে যেমন আমরা নিজের কথা, পরিবারের কথা, পারিপার্শ্বিক অবস্থার বিবরণ, দেশের কথা, দশের কথা ইত্যাদি লিখি ঠিক তেমনি দৈনন্দিন জীবনে আমরা যা দেখি তাই লিখি আমাদের ব্লগে। লিখি নিজের কথা, সমাজের কথা, দেশের কথা এমনকি আমাদের পৃথিবীর কথা। সবচেয়ে আনন্দদায়ক ব্যাপার হলো, আপনার লেখাগুলো টিকে থাকবে বহুদিন, খুব সুরক্ষিত অবস্থায়।

মনের ভাব প্রকাশ করতেঃ ব্লগিং হলো মনের ভাবের প্রকাশের এক অনন্য প্লাটফরম। অন্যান্য ভাবেও মনের ভাব প্রকাশ করা যায়। তবে ব্লগিং করে সবচেয়ে বেশী প্রাণের ছোঁয়া পাওয়া যায়। নিজের মনের অভিব্যক্তিগুলোকে তাৎক্ষণিকভাবে শেয়ার করা যায় সবার সাথে। এখানে এমন কিছু লিখা হয় যা অন্যের একটু হলেও উপকারে আসে ....আবার অন্যের কথা ও পড়ার জন্য ব্লগে আসে অনেকেই।

ব্লগটা কারও কারও কাছে বন্ধুর মতো। সেখানে তারা মনের খেয়ালে লিখে চলেন তাদের ভালো লাগা, জমানো কথা গুলো। পারস্পারিক বন্ধুত্ব তৈরী: পারস্পারিক বন্ধুত্ব স্থাপনের অসাধারণ একটা প্লাটফরম হলো ব্লগ। আপনার কোন লেখায় এমন একজন কমেন্টস করছে যাকে ইহজীবনে আপনি কোনদিন দেখেননি। দিনের শেষে দেখা গেল সেই ব্লগারই হয়ত হয়ে যাবে আপনার প্রিয় বন্ধু।

ব্লগ নতুন নতুন বন্ধু তৈরীর একটা আদর্শ জায়গা। ব্লগে বন্ধুত্বের ভুরিভুরি নজির বিদ্যমান। জ্ঞান বিনিময়ঃ ব্লগ জ্ঞান বিনিময়ের বা আহরণের একটা অন্যতম জায়গা। হরেক রকম বিষয়াদি নিয়ে নানা কিসিমের ব্লগারগণ তাদের জ্ঞানগর্ভ আলোচনা করেন যা পড়ে সবাই নিজেকে জ্ঞানে-গুণে সমৃদ্ধ করতে পারেন। নিজের লেখার মান উন্নত করা কিংবা লেখক তৈরী করাঃ নিজের লেখাকে Justify করার অন্যতম প্লাটফরম হলো ব্লগিং।

ব্লগারদের মধ্যে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ থাকেন। কোন একটা লেখার ব্যাপারে তাদের সম্মিলিত মন্তব্যের মাধ্যমে লেখার মান যাচাই হয়ে যায়। কোন কোন বিদগ্ধ পাঠক লেখার উপর গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ বা কমেন্টস দিয়ে থাকেন যাতে করে লেখার মান উন্নত করা সম্ভব হয়। তা ছাড়া অনেক ব্লগই ব্লগারদের লেখা নিয়ে প্রায় প্রতি বছরই বই প্রকাশ করছে যা নতুন লেখক তৈরিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। অসাধারণ কিছু মুহুর্তঃ ব্লগ একটা সুন্দর জগত।

ব্লগারদের মধ্যে এমন কিছু চমত্কার লেখা আসে যা পড়ে মন আনন্দে উদ্বেল হয়ে ওঠে। মন ভাল হয়ে যায়। সময়টা বড়ই আনন্দে কেটে যায়। নিজেকে আপডেট রাখা যায়ঃ ব্লগিং তথ্য বিনিময়ের সাম্প্রতিকতম ও আধুনিকতম সংযোজনের একটি। ব্লগে বেশীরভাগ সময়েই সমসাময়িক বিষয়াদি নিয়ে লেখালেখি বা আলাপ আলোচনা হয়।

এর ফলে ব্লগাররা নিজেকে অন্যান্যদের চেয়ে সবসময় একধাপ এগিয়ে রাখতে পারেন। আমার মতে সমাজের সবচেয়ে অগ্রগামী শ্রেণিই ব্লগিং এর মত বিষয়াদি নিয়ে মাথা ঘামায়। আমাদের এই ১৬ কোটি মানুষের দেশে মাত্র কয়েক লক্ষ মানুষ ব্লগিং করেন। এটাও প্রমাণ করে যে, ব্লগারগণ অবশ্যই খুব আধুনিক চিন্তা-চেতনার অধিকারী (নারী-পুরুষ সকলেই); অন্তত প্রযুক্তিগত সুবিধা ব্যবহারের দিক থেকে এবং তারা সবাই অন্যান্যদের থেকে আপডেট থাকেন। নিজেকে পরিশুদ্ধ করাঃ ব্লগিং হলো নিজেকে পরিশুদ্ধ করার অন্যতম জায়গা।

ধরা যাক, কোন চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটে গেল। এই ব্যাপারে নিজস্ব চিন্তা-ভাবনা অন্যের ভাবনাগুলোর সাথে মিলিয়ে দেখা যায়। এতে করে ওই নির্দিষ্ট বিষয় সম্মন্ধে খুব অনায়াসে সঠিক ধারণা লাভ করা যায়। যেমনঃ কোন ব্লগার একটি বিষয় সম্মন্ধে লিখলে এর প্রমাণস্বরুপ নানা রেফারেন্স দিতে হয়। অন্যথায় এটা গ্রহণযোগ্যতা পায় না।

সাধারণ পত্রিকা পড়ে কিন্তু এটা সম্ভব না। সামু একটা নামকরা কনসাল্টিং ফার্মঃ এখানে সবাই অনেকটা পরিবারের সদস্যদের মত। একজনের সাহায্যে অন্যজন এগিয়ে আসে। কেউ একজন বিপদে পড়লে, কোন পরামর্শ দরকার পড়লে বা যেকোন ব্যাপারে সাহায্য চেয়ে একটা পোস্ট দিলেই কেল্লা ফতে। যার যতটুকু সাধ্য সেটুকু সহযোগীতা করবে।

সত্যিই এটা অসাধারণ একটা ব্যাপার। ব্লগকে অনেক সময় কনসাল্টিং ফার্ম বলে মনে হয়। জনসচেতনতা বৃদ্ধিঃ ব্লগের মাধ্যমে অতিদ্রুত কার্যকরভাবে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা যায়। মাত্র দু’টি উদাহরণ এক্ষেত্রে দেয়া যেতে পারে। ১।

শাহবাগের ঘটনা। যতদুর জানা যায় মাত্র ৫/৬ জন ব্লগার তাদের ব্যক্তিগত প্রতিবাদস্বরুপ শাহবাগ চত্তরে জড়ো হয়েছিলেন। ...বাকীটা ইতিহাস। ২. বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের পাকিস্তান সফর। এখানেও গুটিকয়েক ব্যক্তি প্রথম ক্রিকেটারদের নিরাপত্তার বিষয়টি তুলে আনে।

শেষপর্যন্ত সরকার বাধ্য হয় সফর বাতিল করতে। এছাড়া অন্যান্য সকল জনহিতকর বিষয় নিয়ে ব্লগাররা শক্ত অবস্থানে থেকে সমাজ গঠনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। বর্তমানে এই ধারা এমন এক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যে, একে এড়িয়ে চলা কোনভাবেই সম্ভব নয়। ব্লগ হলো অনেকটা মঞ্চনাটকের মতোঃ ব্লগের অন্যতম বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো এর তাত্ক্ষণিক পাঠক প্রতিক্রিয়া। আমরা যখন কোন একজন অভিনেতা-অভিনেত্রীগণকে টিভিতে, সিনেমাতে অভিনয় করতে দেখি তখন সরাসরি তার অভিনয় দক্ষতার ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানাতে পারিনা।

এটার কোন সুযোগও নেই। যার ফলে অভিনেতা-অভিনেত্রীগণ জানতেই পারেন না দর্শকেরা তাদের অভিনয় কেমনভাবে গ্রহণ করল। অন্যদিকে মঞ্চ নাটকে যেমন অভিনেতা-অভিনেত্রীগণ তাদের অভিনয় কুশলতার পুরস্কার বা তিরস্কার সরাসরি পান। ব্লগিংও ঠিক তেমনি। পত্রিকায় লিখলে শত জনে পড়লেও তাৎক্ষণিক কোন প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায় না।

[ইদানিং অনলাইন পত্রিকার মাধ্যমে কিছুটা পাওয়া যায় হয়ত; তবে তা ব্যাপক নয়] কিন্তু ব্লগে প্রতিক্রিয়া হয় খুবই তাত্ক্ষণিক। লেখা ভাল হলে পাঠককুলের অভিনন্দনের সাগরে লেখক সাহেব ভেসে যান। আর লেখা আজেবাজে হলে তিরস্কারের ব্যবস্থাও আছে। কমেন্টস ভাল-মন্দ যাই হোক, এটি একজন ব্লগারকে উৎসাহিত বা সতর্ক করে। নিজেকে মেলে ধরার উপযুক্ত জায়গাঃ অনেকেই নিজেকে লুকিয়ে রাখতে পছন্দ করেন।

বা অনেকেই লাজুক প্রকৃতির হয়ে থাকেন। অনেক লোকের সামনে নিজেদের মেলে ধরতে পারেন না। নিজের মেধা, মনন, যোগ্যতা থাকার পরেও লোক-লজ্জার ভয়ে নিজেকে গুটিয়ে রাখেন। তাদের মেধার স্ফুরণ ঘটানোর জন্য উপযুক্ত স্থান হলো ব্লগ। এখানে কেউ আপনাকে দেখছে না।

মনের মাধুরী মিশিয়ে প্রকাশ করুন আপনার অনুভূতিগুলোকে। সাথে বোনাস হিসেবে পাচ্ছেন নিজের প্রতি অন্যের প্রতিক্রিয়া। নিজের আনন্দের জন্য লেখাঃ এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের কোন এক সাহিত্যিকের (সৈয়দ শামসুল হক মনে হচ্ছে) কথা ধার করা যায়। ‘কেন লেখেন’ এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছিলেন, ‘প্রথম প্রথম লিখতাম কোন অষ্টাদশী'র হৃদয় হরণ করতে! তারপর একদা লিখা শুরু করলাম নিছক অভাবে।

তারপর একসময় লিখতাম সম্মানের জন্য। আর এখন এখন লিখি মনে হয় এখনো লেখার কিছু আছে বাকী। তাই লিখি নিছক অবসরে অবহেলায় নিঃস্বার্থ, মানুষের মনে একটু আনন্দ দেবার চেষ্টা করি। কিন্তু আমার মনে হয় দিয়েছি কম আর পেয়েছি বেশি। জীবনের শেষ দিনটা পর্যন্ত লিখে যাব এভাবেই।

’ কাজেই আমার ভাল লাগে তাই ব্লগিং করি। এছাড়া আর কিছু না। অনেকের যেমন হবি থাকে খেলাধুলা করা, কারও থাকে গেম খেলা তেমন আমার হবিগুলোর মধ্যে একটা হল ব্লগিং। মাঝে মাঝে মনে হয় আমার লেখা পড়ে কেউ বিরক্ত হয় না তো !!!! কুছ পরোয়া নেহি। ব্লগিং চলবে।

ভাষা বৈচিত্রঃ ব্লগের সবচেয়ে মজা হলো সবাই ইচ্ছে করলে তাদের নিজস্ব আঞ্চলিক ভাষায় লেখালেখি করতে পারেন। এটা মাঝে মাঝে এত আনন্দময় হয়ে ওঠে যে ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। অন্য কোন প্রথাগত মিডিয়াতে যেটা কোনভাবেই সম্ভবপর নয়। ‘পুস্ট কুপাকুপি হইছে!’ ‘চ্রম হৈছে’ ‘মারাত্তক জোস হইসে’ ‘পুত্তুম পেলাচটা কইলাম আমি দিচি’ ‘মাইরালা আমারে কেউ মাইরালা’ ‘তেব্র নেন্দা জানালাম’ ‘কস্কি মোমিন’ ‘কেউ আমারে ধর’ ‘হাসতে হাসতে লুঙ্গির গিট্টু খুইল্যা গেল’ ‘অতিমাত্রায় বালপুষ্ট’, ‘আঠা লাগিয়ে টাঙ্গানো হোক’ ইত্যাদি হরেক রকমের ভাষা ব্যবহার শুধুমাত্র ব্লগেই দেখা যায়। ব্লগ সকল পত্রিকার পত্রিকাঃ টাটকা সংবাদ পাবার অন্যতম মাধ্যম হলো ব্লগ।

এখানে প্রায় দেড় লক্ষাধিক ব্লগার আছেন। প্রতিদিন আনুমানিক ৯০০-১০০০ পোস্ট আসে, কমেন্টস আসে প্রায় ১০০০০ হাজারের মত। দেশ-বিদেশের নানা প্রান্তে তাদের বসবাস। যে যেভাবে পারছেন স্ব স্ব জায়গার গুরুত্বপূর্ণ খবরাখবর লিখে জানাচ্ছেন। ফলে আমরা অতিদ্রুত বিভিন্ন সংবাদ পেয়ে যাচ্ছি।

অনেক সময় দেখা যায় বিশেষ কিছু সংবাদ পত্রিকার মাধ্যমে জানার সুযোগ থাকে না সরকারি বাধ্যবাধকতার কারণে। সেইসব স্পর্শকাতর সংবাদ আমাদের ব্লগারগণ জানিয়ে দিচ্ছেন অবলীলায়। এতে মাঝে মাঝে বিপত্তির সৃষ্টি হলেও পরিশেষে পাঠকের লাভই হয়। এভাবে ব্লগ ক্রমেই জনগণের নিজস্ব প্রকাশনায় রুপান্তরিত হয়ে উঠছে। আমাদের দেশে প্রায় ৫২টির অধিক বাংলা ও ইংরেজী জাতীয় দৈনিক পত্রিকা, ১৮টির মত অনলাইন পত্রিকা এবং পাশাপাশি ১৮টির মত টিভি চ্যানেল আছে।

সকল পত্রিকা/টিভি তাদের নিজস্ব সম্পাদকীয় রীতিমাফিক সংবাদ পরিবেশন করেন। এদিকে পাঠকগণও তাদের রুচিমাফিক পত্রিকা পড়েন। এর বাইরে ব্যতিক্রম কমই পাওয়া যায়। তাছাড়া একের অধিক পত্রিকা পড়ার সুযোগ অধিকাংশ মানুষেরই নেই। একটি পত্রিকার পক্ষে সকল পাঠকের চাহিদা মেটানো অসম্ভব।

সকল দৈনিক পত্রিকার চোখে সব চমকপ্রদ বা জনহিতকর সংবাদ পরিবেশন করা সম্ভবপর নয়। ঠিক এই জায়গাতেই ব্লগের ভূমিকা লক্ষনীয়। অসংখ্য ব্লগার এখানে। এরা একেকজন একেক পত্রিকা বা সংবাদ সাইট ভিজিট করেন। যেই সংবাদকেই তারা গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন সেগুলো সকল ব্লগারদের উদ্দেশ্যে লিঙ্কসহ পরিবেশন করছেন।

এতে করে কোন গুরুত্বপূর্ণ সংবাদই পাঠকের দৃষ্টির বাইরে থাকছে না বা সুযোগ নেই। এদিক চিন্তা করলেও ব্লগকে সত্যই সকল পত্রিকার পত্রিকা বলা যায়। রকমারি বিষয়াদি সম্মন্ধে জানার সুযোগঃ জগতের সকল বিষয় নিয়ে ব্লগে লেখালেখি হয়। কত রকমের পোস্ট- রাজনীতি, সমাজনীতি, অর্থনীতি, মুক্তিযুদ্ধ, ডায়েরি, রম্য-স্যাটেয়ার, কবিতা, গল্প, খেলা, ভ্রমন, ফিচার, ছবি ব্লগ, মুভি, ধর্ম, দৈনন্দিন চালচিত্র, ইতিহাস, ঐতিহ্য, পরিবেশ, শিক্ষা, কৃষি, ব্যবসা-বাণিজ্য, পেশা ইত্যাদি প্রয়োজনীয়-অপ্রয়োজনীয় পোস্ট অর্থাৎ হেন কোন বিষয় নেই যা নিয়ে ব্লগারগণ লেখেন না। হাজার হাজার ব্লগার এখানে প্রতিদিন আসেন।

তাই এক ব্লগেই সকল বিষয়ের খবর প্রতিদিন পাওয়া যায়। সামু যেন এক মিনি বাংলাদেশ। আলোকিত মানুষ তৈরীর প্লাটফরমঃ সামুতে দেড় প্রায় লক্ষাধিক ব্লগার আছেন। সবাই হয়ত নিয়মিত ব্লগিং করেন না। তবে সপ্তাহে একদিনও ব্লগ পড়েন না এমন মানুষ হয়ত পাওয়া দুস্কর হবে।

একবার লগ ইন করলেই অনেক পরিচিত বন্ধু-বান্ধবদের সাথে কথা হয়, মত-বিনিময় হয়। এভাবে সামু হয়ে উঠেছে বন্ধুদের সাথে আড্ডার মিলনমেলা। পাশাপাশি ব্লগকে বলা যায় আলোকিত মানুষ তৈরির একটি প্লাটফর্ম। একটি ভাল ব্লগ সাইটে নিয়মিত ব্লগিং আমূল বদলে দিতে পারে একজনের দৃস্টিভঙ্গী। ভাল কিছু মানুষের সংস্পর্শে থাকার এটা একটি সুবর্ণ সুযোগ।

সেইসাথে একজন অন্তর্মুখী মানুষকে ব্লগ করে তুলতে পারে সরব এবং প্রতিবাদী। একটি আত্মনির্ভরশীল জাতি গঠনে ব্লগ রাখতে পারে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা। সেবামূলক কর্মকাণ্ডঃ এই ব্যাপারে সামু-র ভূমিকা অসীম। ব্লগাররা সমষ্টিগতভাবে সম্পৃক্ত হচ্ছে বিভিন্ন সেবামুলক কর্মকাণ্ডে। বেশ কয়েকটি ব্লগে ব্লগাররা স্ব-উদ্যোগে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে দুঃস্থ শিশুর চিকিৎসার সাহায্যে, শীতার্ত মানুষের সহযোগিতা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগে।

যা ব্লগের একটি ভাল দিককেই নির্দেশ করে। নতুন পাঠক তৈরীঃ ইতিমধ্যে বেশ কিছু বাংলা ব্লগ আত্মপ্রকাশ করায় এরই মধ্যে তৈরি হয়েছে বিভিন্ন শ্রেণীর ব্লগার যারা প্রায় প্রতিদিনই সামনে নিয়ে আসছেন বিভিন্ন বিষয়। তৈরি হয়েছে বাংলা লেখার নতুন পাঠক। আরও অনেক মজার এবং ভাললাগার বিষয় হয়ত আছে। তবে আমার একদম মনে পড়ছে না।

আপনারা যোগ করবেন। শেষ কথাঃ সামু-র গুণের কথা বলে শেষ করা যাবে না। তবে এর কিছু সমস্যাও পরিলক্ষিত হয়। যেমন, অনেক সময় এটা প্রাইভেসি নস্ট করে, কারো কারো লেখাপড়ার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, সময় অপচয় হয়, অদক্ষ লেখালেখি বেশী, ধারাবাহিকতার অভাব, শুরু করা সহজ ধরে রাখা কঠিন, অশ্লিলতা মাঝে মাঝেই ব্লগের পরিবেশ দুঃসহ করে তোলে, বাংলাদেশের রাজনীতির কদর্য ছোঁয়া এখানেও লেগেছে; যেটা অনেক সময় সহ্যের সীমা অতিক্রম করে, কিছু কুলাঙ্গার মাঝে মাঝেই চুলকানিযুক্ত পোস্ট দিয়ে ব্লগের সুন্দর পরিবেশ বিনস্ট করা চেস্টা চালায়, সামাজিক জীবনের হানি ঘটে, স্বাস্থ্যহানি, চোখের ক্ষতি, অসহিষ্ণুতা, মাঝে ব্যান খেতে হয়, ব্যবহার করতে কম্পিউটার বা উন্নতমানের মোবাইল ফোন সাথে ইন্টারনেট সংযোগ লাগে ইত্যাদি। শুধু তাই নয়, গবেষণায় দেখা গেছে, নেটে অতিরিক্ত দেওয়ার ফলে দেখা দিতে পারে একরাশ দুঃখ আর হতাশা।

যাইহোক, লেখা শেষ করব ‘The Social Network’ সিনেমার ট্যাগলাইন দিয়ে, ‘YOU DON’T GET TO 500 MILLION FRIENDS WITHOUT MAKING A FEW ENEMIES’. সবাইকে ধন্যবাদ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.