আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

“নারীঅস্তিত্ব” বিলীন “পারিবারিক নির্যাতনের” তরে !! নারী নির্যাতনের সবচাইতে ঘৃণ্য ও মারাত্মক উপায় হল পারিবারিক নির্যাতন!!!

আমাদের সভ্যতা যদিও সুপ্রাচীন তবে পশ্চাদপদ,যা আমাদের নারীকে কোনদিন দেয়নি তার সম্মান যা তার প্রাপ্য। তারই ধারাবাহিকতায় সৃষ্টি হয়েছে নারীর উপর বিভিন্ন ধরনের অত্যাচার এবং নির্যাতন। ধর্ষণ থেকে এসিড নিক্ষেপ, ইভটিজিং থেকে বেধরক প্রহার এসবই আসলে একটি বিষবৃক্ষের বিভিন্ন প্রশাখা এবং সেই বিষবৃক্ষের নাম হল নারী নির্যাতন। "পারিবারিক নির্যাতনের" বিষয়ে বিভিন্ন সময়য়ে লিখায় আমি বলেছি এটি অদৃশ্য এক অত্যাচার। বিভিন্ন রকম নারী নির্যাতন বর্তমানে চালু আছে আমাদের সমাজে তবেসেগুলু আমাদের কাছে মুলত দৃশ্যত কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে এমন একধরনের নারীনির্যাতন আমাদের উচু সমাজ দেয়ালের পিছনে ঘটে চলছে প্রতি মুহূর্তে যা যদিও দৃশ্যত নয় কিন্তু এর পরিমান ব্যাপক ভয়াবহ।

জি হ্যা আমি কথা বলছি নারী নির্যাতনের সবচাইতে হীন এবং সর্বাধিক সঙ্ঘঠিত অধ্যায়টির কথা যার নাম “ পারিবারিক নির্যাতন” UNHCR 2011 জুন সংখ্যার হিসাব অনুযায়ী নারীর প্রতি অত্যাচার ( VIOLENCE AGAINST WOMEN ) এবং বিশেষভাবে পারিবারিক নির্যাতন ( DOMESTIC VIOLENCE ) এর মধ্যে বাংলাদেশ দ্বিতীয়তম বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এখানে শতকরা ৬৫% পুরুষ মনে করেন যে বউ পিটানোর মাঝে কোন রকম অন্যায় নেই। ৩৮ ভাগ মানুষ এটাই জানেননা যে আসলে পারিবারিক নির্যাতন জিনিসটা কি!! আর এখনো ৬০ভাগ মানুষ এর ভাবনা হল বাঙ্গালী নারী অবশ্যই বাঙ্গালী পুরুষদের কঠোর অনুশাসনে চলবে এতেই তাদের কল্যাণ। আমাদের বাঙ্গালী জাতির ইতিহাস প্রায় ২০০০ হাজার বছর পুরনো যা কিনা ইংরেজদের বহু আগের,তবুও আমরা পিছিয়ে আছি কেননা আমরা সবসময়ই অর্ধেক হারে এগিয়ে যাবার প্রয়াস ছিল নারীদেরকে পিছনে ফেলেই। তবে ভুল বুঝে এখন আমরা শোধরানোর চেষ্টাও করছি যা আমাদের এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে প্রতিযোগিতামুলক এই বিশ্বে।

কিন্তু সেই পসচাদপতা এখনো আমাদের কুরে কুরে খাচ্ছে। কেননা আমাদের নারীর প্রতি যেই দৃষ্টিভঙ্গি সেটিতো পরিবর্তিত হচ্ছেনা। নারী নির্যাতন হচ্ছে প্রতি মুহূর্তে যেগুলি আমরা দেখতে পাচ্ছি যেমন উপরে উল্লেখিতগুলি কিন্তু বড় সমস্যা হল গিয়ে পারিবারিক নির্যাতনের ক্ষেত্রে সবচাইতে বড় যেই ধরনটি সেটি সঙ্ঘঠিত হয় সম্পূর্ণভাবে পর্দার আড়ালেই। দেখা যায় সমাজের সব শ্রেনীর মানুষ উচু থেকে নিচু ,শিক্ষিত থেকে অশিক্ষিত সব নারীরাই এই অত্যাচার এর সম্মুক্ষীন কেউ কেউ হয়ত সাহস করে বলেন কিন্তু অর্ধেকের বেশি নারী সেটা বলতে পারেননা সম্মানের ভয়ে ,নিজের পিতা মাতার মুখের দিকে তাকিয়ে , নিজের সন্তানাদির ভবিত্সতের কথা ভেবে এবং নিজের অনিশ্চিত ভবিত্সতের কথা ভেবে । আসুন একটু দেখি কেন এমন হচ্ছে ।

কিছু কারণতো নারীরা নিজে থেকেই সৃষ্ঠি করেন যা উপরে উল্লেখ করলাম যেসব কারণে সে প্রতিরোধ করতে পারেনা এবং সমাজ থেকেও সাহায্য নিতে চায় না । এই সভ্যতা কখনই নারীদেরকে পুরুষের সমানত দুরে থাক আসে পাশেও আসতে দেয়নি । কেননা তারা সবসময় চেয়েছে যে নারী হয়ে থাকুক তার দাসী তবে সেটা শুধুমাত্র তার মা ব্যতিত অন্য আর সব নারী। কেননা একটু খেয়াল করলেই দেখবেন আমাদের সভ্যতা আমাদেরকে শিখিয়েছে যে মাতাকে সম্মান কর, কখনো কিন্তু বলেনি নারীকে সম্মান কর। দেখুন বলেই দেয়া হচ্ছে শুধুমাত্র একজন নারীই আছে এই জগত সংসারে যাকে আমায় সম্মান করতে হবে সুতরাং আমরা তাই করি ।

না এখানে আমাদের “মা” কে সম্মানের যেই বিসয়তি সেটিতে কোন সন্দেহ নেই কিন্তু কথা হল যাকে আমি নির্যাতন করছি সেও তো “মা” ,তারও তো সন্তান আছে কিংবা হবে। তাহলে বিচারটা কি সঠিক করছি ? এখানটায় আরও কিছু বিষয় আছে যেগুলিকে আমরা আমাদের কিছু অদ্ভুত আচরণ দিয়ে মাথায় তুলি এবং আমি সেই অদ্ভুত আচরণটির নামকরনে শব্দ শঙ্কটে ভুগছি মুলত। সেটি হল একটা ভুল ধারণা আছে যে পুরুসত্ব জাহির করতে গিয়ে আমরা মাঝে মাঝে আমাদের স্ত্রীদের উপর আক্রমন করে বসি কিন্তু ধারনাটা সম্পূর্ণ ভুল। কেন দেখুন ধরুন অফিসের বস নারী সবাবতই তার উপর মেজাজ খারাপ হলে কিন্তু আপনি তাকে মারবেন না কেননা সে আপনার চেয়ে উচু অবস্থানে রয়েছেন । কিন্তু আপনি মারবেন তাকেই যাকে আপনি ভাবেন আপনার চেয়ে নিচু অবস্থানের দিক থেকে তাই না ? দেখুন একজন পুরুষ নানা জায়গায় নানা বিপত্তির মাঝে দিয়ে আসে অনেক সমস্যার মধ্যে দিয়ে তার দিন অতিবাহিত হয় কিন্তু সে একটিবারের জন্যও কাউকে মারলনা কিন্তু মারলো কাকে তার স্ত্রীকে যাকে সে তার চেয়ে ছোট ভাবে ।

চিন্তা করুন একজন নারীর কথা যে প্রতিদিন মার খাচ্ছে তার স্বামীর কাছে কোনো না কোনো কারণে, সেটা হতে পারে তরকারিতে লবন বেশি থেকে শুরে করে কলারে ময়লা পর্যন্ত । এমনকি তাদেরকে পেটানো চারিত্রিক বিভিন্ন দোষারোপ করে ,মানে এক কথায় বলা যায় পেটানোর উছিলা প্রয়োজন এবং এই ঘটনা যে হচ্ছে আপনার পাশের রুমটিতে বা ফ্ল্যটটিতে হলেও সেটা আপনি বুঝতে পারবেন না অনেকটা নিরবেই ঘটে যায় ঘটনাগুলু। একটি মেয়ে বিয়ে করে স্বামীর বাড়ি যায় এবং সেখানে যদি তাকে সইতে হয় এরুপ অবস্থা তাহলে কি রইল তার জীবনে? ঘটনার অভিশাপ বা সিকুয়েলটা দেখুন , অনেক সময় এর সাক্ষী হিসেবে থাকে সন্তানরা এবং তাদের উপরেও এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া পরে । যেমন ছেলে হলে সেও তার ভিতরেও এরকম একটা পুরুশাসিত মনোভাব তৈরী হয় সেও হয়ে উঠে দানব, মানব না হয়ে আর মেয়েরা তাদের মায়েদের মত হয়ে উঠে ভিতু এবং শাসিত হওয়ার মনোভাব নিয়ে যা পরবর্তীকালে তাকেও একই পথে ধাবিত করে । এখন আসুন যখন সেই নারীরা যখন সাহায্য চায় তখন কি হয় ? প্রথমেই যখন মেয়েটি তার পরিবারে জানায় তারা তখনি বলে "মুখে কলপ দাও মান সম্মানের দোহাই দেয় " ।

দিতীয়ত পুলিশ স্টেসনে তাদের মামলা নিতে চায় না বলে কয়ে বুঝিয়ে দেয যে এমন হয় সব পরিবারেই তুমি যাও সহ্য করে নাও। তৃতীয়ত শাস্থি কিংবা মামলার জন্য ওই নারী আদালত প্রাঙ্গনে যায় তখন তাকে বলা হয় " তিন মাস থাকুন ,দেখুন, তার পর সিদ্ধান্ত নিন " এরপর আছে আরো নানা বিপত্তি । আরে যেই মানুষটার কাছে গেলে আমার জীবনের উপর হুমকি আসতে পারে তার সাথে আপনি আমাকে থাকতে বলছেন তিন মাস!!!! হাউ পেথেটিক !! এই যেই চিত্রটি সেটা বেশি হয় মিডেল ক্লাস পরিবারে বেশি কারণ আমাদের কাছে একটাই জিনিস বেশি মূল্যবান মনেকরি তাহলো "মান "। সমস্যার প্রতিবাদ বেশি করে নিন্মবিত্তরা যাদের হারানোর কিছুই নেই ,তারা কিন্তু এই অত্যাচার সহ্য করছে না বরং জামাই মারলে উল্টা চিল্লাবে ওই মহিলা "কেন মারলি হারামজাদা ?" একই জিনিস হয় উচ্চবিত্তের ক্ষেত্রেও শুধু ডায়লগ পরিবর্তন হয় " মাই ল ইয়ার উইল টক টু ইউ " . এটাই হওয়া উচিত কমপক্ষে আর কিছু না পারেন অন্তত চিল্লাতেতো পারবেন যে "আমাকে মারে " অন্তত এতটুকু করতে পারলেও হত কিন্তু মান ইজ্জত এর ভয়ে তাও করতে পারে না ওই নারীরা সময় এসেছে প্রতিকারের ওই অবলাদের বল দান করার । সরকারের উচিত এই বিষয়ক একটি সেল খোলা প্রতিটি পুলিশ স্টেশনে ।

যেখানে মহিলা পুলিশ থাকবেন দায়িত্বে কেননা অনেক সময় পুলিশ অফিসররা মামলা নেন না বুঝিয়ে সুঝিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেন কেননা শেষ পর্যন্ত তারাও এই সমাজেরই একজন পুরুষ । ২৪ ঘন্টার কল সেন্টার চালু করা যেখানে কল করা মাত্র সাহায্যের জন্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে পাওয়া যায় । যাপক জনসচেতনতা চালু করা যাতে করে মহিলারা বোঝেন যে অপরাধী তারা নন ওই পুরুষরা যারা তাদেরকে অত্যাচার করছে সুতরাং লজ্জা পেতে হলে তারা পাবে আপনি না। আল্লাহ তায়ালা জীবন একবার দেন এই জীবনকে ভালবাসতে হবে । আমাদের ধর্মে বলা হয় নারীকে উত্তম স্থান প্রদানের কথা কিন্তু তার কোনো ছিটে ফোটাও নেই আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় ।

ভালবাসুন আপনার জীবনকে, না মেনে নিয়ে কোনো অন্যায় . লিখার ফেইসবুক লিঙ্ক  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৩ বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।