আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নীলকুঠির ধ্বংসাবশেষ?

ঘটনাস্থল পাবনার ঈশ্বরদীর লক্ষ্মীকুণ্ডা ইউনিয়নের নুরুল্লাপুর গ্রাম। খায়রুল ইসলাম নামে এক ব্যবসায়ীর জমিতে গত কয়েকদিন ধরে চলছে পুকুর খননের কাজ। এরই ফাঁকে যখন প্রাচীন এক অবকাঠামোর ধ্বংসাবশেষ আর সুড়ঙ্গ মুখ বেরিয়ে এলো, দলে দলে ছুটে এলো এলাকার তরুণ যুবারা।
খবর পেয়ে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে পাবনার জেলা প্রশাসকও ছুটে এলেন। পুকুরের জায়গায় খোড়াখুড়ি থামাতে বললেন।

তবে এ কীসের সুড়ঙ্গ, কোনো পুরার্কীর্তির অংশ কিনা- এসব প্রশ্নে কোনো অনুমানের মধ্যে গেলেন না তারা।   
জেলা প্রশাসক কাজী আশরাফ উদ্দিন বললেন, “পরীক্ষা নিরীক্ষা ছাড়া নিশ্চিত কিছু বলা যাচ্ছে না। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের রাজশাহীর আঞ্চলিক দপ্তরে যোগাযোগ করা হয়েছে। তারাই এখন দেখেশুনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। ”
অবশ্য স্থানীয় প্রবীণদের ধারণা, ব্রিটিশ আমলের এক নীলকুঠির ধ্বংসাবশেষই তাদের সামনে উন্মোচিত হচ্ছে।


লক্ষীকুণ্ডা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনিসুল হক মোল্লা বলেন, “আমরা ছোট বেলা থেকেই লোকমুখে শুনেছি ওখানে নীলকুঠি ছিল। কক বর্ন নামে এক বিদেশি ছিলেন ওই নীলকুঠির মালিক। তার হাতেই ছিল এ এলাকার নীল চাষের নিয়ন্ত্রণ। ”
 
 


জমির মালিক খায়রুল ইসলাম জানান, তারা এই জমির মালিক দুই পুরুষ ধরে। বহু বছর আগে তার বাবা এই জমি কেনেন।

পুকুর কাটার জন্য মোটামুটি ২০ ফুট খোড়ার পর সোমবার মাটির নিচ থেকে ইট বেরিয়ে আসতে শুরু করে।
এরপর শ্রমিকরা সেখানে পুরনো আমলের কাঠের বিম আর ইটের তৈরি সুড়ঙ্গমুখ দেখতে পেলে মুহূর্তের মধ্যে খবর ছড়িয়ে পড়ে পুরো এলাকায়।
খায়রুল জানান, হঠাৎ করেই পাকা সুড়ঙ্গমুখ আর চওড়া দেয়াল দেখতে পেয়ে ভয় আর উত্তেজনায় কাজ বন্ধ করে দেয় শ্রমিকরা। ঘটনাস্থলে বাড়তে থাকে উৎসাহীদের ভিড়। এক পর্যায়ে কয়েকজন যুবক টর্চ হাতে সুড়ঙ্গেও ঢুকে পড়ে।


“ওরা বলছে, প্রায় ২৫ ফুট ভেতরে গিয়ে সুড়ঙ্গের দুটি শাখা দুই দিকে চলে গেছে। তার একটা আবার কিছুদূর এগিয়ে বন্ধ হয়ে গেছে। তাই দেখে আর সাহস না করে ফিরে এসেছে তারা। ”
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান এম আবদুল আলীম জানান, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের সাবেক সহকারী পরিচালক মো. খালেকুজ্জামানের লেখা ‘বৃহত্তর পাবনা জেলার প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ প্রতিবেদন’ বইয়ে এক সময় নুরুল্লাহপুরে একটি নীলকুঠি ছিল বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
 
 


বইটির বিবরণ অনুযায়ী, ঈশ্বরদী থেকে প্রায় ১২.৮৩ কিলোমটার দক্ষিণ এবং লক্ষ্মীকুণ্ডা ইউনিয়ন অফিস থেকে প্রায় ৪.৮০ কিলোমিটার উত্তরে পদ্মা নদীর কাছে নুরুল্লাহপুর গ্রামে একটি কুঠির ধ্বংসাবশেষ ছিল।

তবে পরে সেখানে নতুন জনবসতি গড়ে ওঠে।
১৮ শতকের দ্বিতীয় ভাগে নীলবিদ্রোহের সময় ওই কুঠি ভেঙে দেয়া হয় বলে আবদুল আলীম জানান। আর বর্তমানে পদ্মা নদী থেকে ওই এলাকার দূরত্ব দুই কিলোমিটারের কিছু বেশি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানোয়ার হোসেন সোমবার দুপুরে ঘটনাস্থল ঘুরে দেখে পুকুর খোড়া বন্ধের নির্দেশ দেন। আর সব কিছু দেখে রাখার দায়িত্ব দেন পুলিশকে।


বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “এ বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি প্রতিবেদন তৈরি করে জেলা প্রশাসকের কাছে দেয়া হবে। পরে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। ”

সোর্স: http://bangla.bdnews24.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।