পৃথিবী নামক রঙ্গমঞ্চে আমরা সবাই প্রতিনিয়ত অভিনয় করে যাচ্ছি। যার অভিনয় যত ভালো হচ্ছে, সে তত সেরা হচ্ছে। আজ একটা ঘটনা আপনাদের বলব। এই ঘটনাটি লিখতে গিয়ে বারবার শরীরের লোম দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। সালের ঘটনা।
তখন ক্লাশ সিক্সে পড়ি নোয়াখালী জেলার চাটখিল থানার ভীমপুর হাই স্কুলে। তারিখ কিংবা মাস মনে নেই। তবে দিনটি ছিল বর্ষার কোন এক বৃহস্পতিবার।
বৃহস্পতিবার হওয়ার কারনে স্কুল টিপিন পিরিয়ডে ছুটি হয়ে যায়। আমি, আমার মামাতো ভাই নাহিন এবং আমাদের ক্লাশের একটা ছেলে যে আমাদের প্রতিবেশী নাম রিয়াদ।
আমরা একসাথে বাড়ি যাবার জন্য রওনা দিই। নাহিন ভাই আমার থেকে তিন বছরের বড় এবং একই স্কুলের নমব শ্রেনীর ছাএ ছিল। স্কুল থেকে আমাদের বাড়ি ১.৫ কিমি দূরে এবং আমারা হেঁটে সবসময় যাওয়া আসা করতাম।
প্রতিদিনের মত ঐদিনও যাচ্ছিলাম। বষার দুপুর।
গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছিল। অধেক পথ যাওয়ার পর একটা কবরস্থান পড়ত। ঐ কবরস্থানে অনেক পুরোনো গাছ ও বেশকিছু বাঁশঝাড় ছিল যা একতা ভৌতিক পরিবেশ তৈরি করার জন্য যথেস্ট ছিল। ঐ কবরস্থানের পাশে মাঝে মাঝে অনেক প্যারানরমাল ঘটনা ঘটত। ঐদিন আমরা যখন আসছিলাম তখন ছিল মধ্যদুপুর।
সময় আনুমানিক দুইটা। যখন ঐ কবরস্থানের কাছে আসলাম তখন খুব ভয় ভয় লাগছিল। এই বুজি কিছু একটা ঘটবে। হলও তাই !
কিছু বুজে উঠার আগেই নাহিন ভাইয়ার ব্যবহার পালটে যেতে থাকে। বিকৃত মুখভঙ্গি করে আমদেরকে ভ্যাংছি দিতে থাকে।
আমরা খুব দ্রুত হেটে কবরস্থান পার করি। সেই সাথে নাহিন ভাই পার হলেও একটু সামনে গিয়ে উনি উনার ছাতা ভেঙ্গে ফেলে। আর তার কিছুক্ষন পর বইয়ের ব্যাগ ফেলে দেয়। যাইহোক আমরা নাহিন ভাইয়ার ছাতা এবং ব্যাগ নিয়ে উনার পিঁছন পিঁছন হাঁটতে থাকি। আর নাহিন ভাই তখন ঘোঁঙাতে ঘোঁঙাতে হাঁটতে থাকে।
কিছুদূর হাঁটার পর একটা চাররাস্তার মোড় পড়ে। ঐকানে বেশকিছু দোকান আছে এবং মোড়ের কাছে আশার সাথে সাথেই ভাইয়ার ব্যবহার খুব স্বাভাবিক হয়ে যায়।
আর আমরা মনে করেছিলাম, নাহিন ভাই বুজি এতক্ষন আমাদের সাথে মজা করেছিলেন। হয়ত প্রাকটিক্যাল জোক। নাহিন ভাই রিয়াদকে দিয়ে দোকান থেকে তিনটা কলা আনায়।
এরপর আমাদেরকেও একটা করে কলা দেয়। রিয়াদের ভয় তখনও কাটেনি। তাই সে অনেক ঘুরে অন্য রাস্তা দিয়ে বাড়ি যেতে চায়, যাতে আমাদের সাথে যেতে না হয়। রিয়াদ চলে যাওয়ার ঠিক পূবমূহুতে নাহিন ভাই তাকে দেয়া কলাটি নেয়ে নেন। এরপর আমারটাও নিয়ে নেন।
আর বলেন তার অনেক ক্ষূধা লেগেছে, উনি খাবেন।
এরপর আমি আর নাহিন ভাই হাঁটতে শুরু করি। দোকানগুলো পার হয়ে একটু সামনে আসতেই নাহিন ভাই কলার খোসা না ফেলেই খাওয়া শুরু করেন। আমি খুব অবাক হয়ে যাই এবং এরকম ব্যাবহারের কারন জানতে চাই। তার উত্তরে উনি উনার মূখ থেকে থুথুর মত করে আমার মূখের দিকে কলাগুলো মারেন।
আমার হাতে ছাতা থাকায় ছাতা দিয়ে নিজেকে রক্ষা করি।
আশেপাসে কোন বাড়ি না থাকায় আমি খুব ভ্য় পেয়ে যাই। রাস্তা দিয়ে কোন গাড়ি গেলে আমি তাদের সাহায্যর জন্য চেস্টা করলেও কেউ আমাকে সাহায্য করেনি। যার কারনে আমি আরো ভয় পেয়ে যাই। আমি যখন গাড়ির মানুষগুলোর দৃস্টি আকষনের চেস্টা করতাম, নাহিন ভাই তখন রাস্তার পাশের খালের পাশে নেমে যেত এবং আমাকে ভ্যাংচি দিয়ে ভয় দেখাত।
একটু হাটার পর একটা ব্রিজ পড়ল। সেই ব্রিজটি ছিল আরও ভয়ংকর। আজ থেকে প্রায় আশি বছর আগে ঐ ব্রিজের নিচে একজন মানুষকে জবাই হত্যা করা হয়েছিল। সেথেকে ঐ ব্রিজের নাম “রনখোলা পুল” এবং ওখানে নানারকম ভয়ঙ্গকর ঘটনা ঘটত। এলাকার মানুষজন অমবস্যার গভীররাত কিংবা মধ্যদুপুরে প্রায় দশ বারো থেকে ফিট লাম্বা সাদা কাপড় পরা কিজানি দেখতো।
নির্জন রাস্তা। ভয়ঙ্গকর ব্রিজ। ব্রিজের আশেপাশে ছিল বেশকিছু তালগাছ সহ অনেকগুলো পুরনো গাছ।
ব্রিজে উঠামাএ নাহিন ভাই আমার গলা চেপে ধরল। এমনিতেই ছিলাম ভয়ে অস্থির তার উপর এ পরিস্থিতে আরো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।
সেই সাথে উনার বিকৃত মূখভঙ্গি। ধীরে ধীরে আমার শ্বাষ নিতে সমস্যা শুরু হল। ব্রিজের রেলিঙ্গের একটা পাশ ছিল ভাঙ্গা। তো নাহিন ভাই আমাকে ঐ রেলিং এর জায়গা দিয়ে একহাতে সম্পূন শূন্য করে ব্রিজের বাহিরের অংশে নিয়ে গেল। এরপর আবার নিয়ে এলেন ব্রিজের উপর।
কিছুক্ষনের জন্য আমাকে ব্রিজের উপর ছেড়ে দিয়েছিলেন। আর আমি বুকভরে নিশ্বাস নিতে থাকি। আমার ভাগ্য ভালো উনি আমকে ফেলে দেননি। ফেলে দিলে আমি হয়ত আমার কখনোই এই পৃথীবির আলোর মূখ দেখতাম না। ব্রিজের ঠিক নিচেই ছিল মাছ ধরার জন্য পুতে রাখা ছিল বেশকিছু কুঞ্চি।
হঠাৎ আবার কিছু বুজে উঠার আগেই নাহিন ভাই আমাকে আবার আগের মত শূন্যে তুলে ব্রিজের বাহিরে নিয়ে যায় এবং নিশ্বাস নিতে কস্ট হওয়া শুরু করলে আবার ব্রিজের উপর নিয়ে আসে। এবার আমি অল্প একটু নিশ্বাস নিয়েই নাহিন ভাইয়াকে শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে জোরে একটা ধাক্কা দিয়ে জোরে বাড়ির দিকে একটা দৌড় দিই।
কিছুদূর আসার পর পিছনে ফিরে শুধু একবার তাকিয়েছিলাম। দেখলাম ভাইয়া খুব স্বাভাবিকভাবে আমাকে হাত ইশারা করে ডাকছেন। আমাদের বাসা আর নানুর বাসা পশাপাশি ছিল বলে, আমি আমাদের বাসায় যাওয়ার আগে নানুর বাসায় গিয়ে সবাইকে ব্যপারটা জানাই।
সবাই আমকে তৎখনাৎ আগুনের পাশে বসায়। আর আমার বড় মামা মানে নাহিন ভাইয়ার আব্বু নাহিন ভাইয়াকে গিয়ে ঐ ব্রিজের উপর থেকে নিয়ে আশে কয়েকজন লোকের সাহায্যে। এরপর আমাদের এলাকার এক ব্যাক্তি যিনি বিভিন্ন প্যারানরমাল কেইস সমাধান ও ব্লাক ম্যজিক করে থাকেন, উনি এসে ভাইয়াকে একটা তাবিজ দেন। এরপর থেকে নাহিন ভাইয়ার কোন সমস্যা না হলেও উনি খুব ভয় পেতেন।
লেখকঃ সাংবাদিক ও ছোটগল্পকার
ই-মেইল: ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।