আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এবার বেডরুমে প্রবীণ সাংবাদিক হত্যা

একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রবীণ ফটোসাংবাদিক আফতাব আহমদ (৭৮) খুন হয়েছেন। গতকাল সকালে রাজধানীর পশ্চিম রামপুরা ওয়াপদা রোডের ৬৩ নম্বর বাড়ির তৃতীয়তলার নিজ বেডরুম থেকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। খ্যাতিমান এই গণমাধ্যম কর্মীর মৃত্যুর খবরে গোটা মিডিয়ায় শোকের ছায়া নেমে আসে। সাংবাদিকরা ছুটে যান তার বাসভবনে।

খবর শুনে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় র্যাব-পুলিশসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। নিহত আফতাব আহমদ 'দৈনিক ইত্তেফাক' পত্রিকার সাবেক প্রধান ফটোসাংবাদিক ছিলেন। এদিকে, হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহত আফতাব আহমদের গাড়িচালক হুমায়ুন কবিরকে সন্দেহ করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও নিহতের স্বজনরা। ঘটনার পর থেকেই তার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি), র্যাব ও পুলিশের একাধিক টিম তদন্তে কাজ করছে।

বাসার গৃহপরিচারিকা নাসিমা বেগমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে পুলিশ।

ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মারুফ হাসান জানান, শ্বাসরোধে আফতাব আহমদকে খুন করা হয়েছে বলে তারা নিশ্চিত হয়েছেন। তবে গাড়িচালক হুমায়ুন কবির ও রংমিস্ত্রির কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছে না।

গতকাল সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির সামনে গণমাধ্যম কর্মীসহ অসংখ্য মানুষের ভিড়। র্যাব-পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা চারতলা বাড়িটি ঘিরে রেখেছে।

সিঁড়ি দিয়ে তৃতীয়তলায় উঠতেই প্রথমে চোখে পড়ে একটি অতিথি কক্ষ। সোফাসেট ও টি-টেবিলের সঙ্গে একটি আলমারি। আলমারিতেই সারি সারি করে সাজানো পেশাগত জীবনের স্বীকৃতিস্বরূপ পাওয়া আফতাব আহমদের অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা। অতিথি কক্ষের পাশের কক্ষেই থাকতেন আফতাব আহমদ। ওই বেডরুমের মেঝেতেই গলায় চাদর পেঁচানো এবং সোয়েটার দিয়ে মুখ বাঁধা অবস্থায় আফতাব আহমদের নিথর দেহ পড়েছিল।

খাটের ওপরের অংশে ছিল রক্তের দাগ। হয়তো ঘাতকদের হাত থেকে বাঁচতে প্রাণপণ চেষ্টার একপর্যায়ে খাট থেকে মেঝেতে পড়ে যান। আলমারির তালা খোলা ও জিনিসপত্র এলোমেলো অবস্থায় দেখা গেছে। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের ক্রাইম সিন ইউনিটের সদস্যরা বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করে কক্ষটি সিলগালা করে দিয়েছে। ওই ফ্লোরেরই একটি কক্ষে থাকেন ভাড়াটিয়া ইকরামুল হক।

আত্দীয়-স্বজনদের সঙ্গে হাউমাউ করে কাঁদছিলেন নিহতের একমাত্র মেয়ে আফরোজা আহমদ বর্ণা। বাবার এমন মৃত্যুর খবর শোনার পর থেকে কিছুক্ষণ পর পরই জ্ঞান হারাচ্ছেন তিনি। স্বজন ও প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১০ সালে আফতাব আহমদের স্ত্রী মারা যান। একমাত্র ছেলে মনোয়ার হোসেন সাগর পরিবার নিয়ে যশোরে থাকেন। মেয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিয়ান আফরোজা আহমদ বর্ণা গাজীপুরে স্বামীর সঙ্গে থাকেন।

নাসিমা নামে একজন গৃহপরিচারিকা। চার বছর ধরে তার রান্নার কাজ করছিলেন। তারা জানান, গত ১ ডিসেম্বর নিয়োগ পাওয়া হুমায়ুন একই সঙ্গে বাসার তত্ত্বাবধায়কের কাজও করতেন। এর আগে গৃহপরিচারিকা নাসিমার ছেলে নাজমুল তার গাড়ি চালাতেন। নাজমুলই গাড়িচালক হুমায়ুনকে এনে দিয়েছিলেন।

গৃহপরিচারিকা নাসিমা জানান, প্রতিদিনের মতো সকাল ৮টায় তিনি বাসায় আসেন। কিন্তু বাইরের দরজায় তালা দেখতে পেয়ে তিনি কলিংবেল চেপেও কোনো সাড়া না পেয়ে ভাড়াটিয়া ইকরামুল হককে বিষয়টি জানান। ইকরামুল ও নাসিমা রান্নাঘরের একটি জানালা দিয়ে শয়নকক্ষের মেঝেতে আফতাবকে পড়ে থাকতে দেখে পুলিশ ও নিহতের মেয়ে আফরোজা বেগম বর্ণাকে খবর দেন। নাসিমা জানান, প্রতিদিন সকাল ৯টার মধ্যে গাড়িচালক হুমায়ুন বাসায় আসেন। কিন্তু গতকাল ঘটনার পর বাসায় আসেননি।

এমনকি তার মোবাইল ফোনটিও বন্ধ পাওয়া যায়। গত কয়েকদিন ধরে একজন মিস্ত্রি বাড়ির রংয়ের কাজ করছিলেন। হত্যাকাণ্ডের পর থেকে মিস্ত্রিও আসেনি।

গত ২৩ ডিসেম্বর ছিল আফতাব আহমদের জন্মদিন। নিঃসঙ্গ জীবনে নিভৃতেই জন্মদিন পালন করেছিলেন তিনি।

এবার শারীরিক অসুস্থতার কারণে জন্মদিন ভুলেই গিয়েছিলেন। তবে একমাত্র মেয়ের পাঠানো খাবার পেয়ে তার জন্মদিনের কথা মনে পড়ে বলে মেয়ে বর্ণা জানান। কাঁদতে কাঁদতে বর্ণা জানান, ছেলের অসুস্থতার কারণে ঢাকায় আসতে পারেননি। তবে স্বামী ফারুক আহমদকে দিয়ে চিকেন ফ্রাই ও রুটি পাঠিয়েছিলেন বাবার জন্য। খাবার খেয়েই বাবা আমাকে ফোন করে বলেছিলেন 'মা গো এবারের জন্মদিন তো ভুলেই গিয়েছিলাম।

কয়েকদিনের মধ্যেই চিকিৎসার জন্য আব্বার ভারতে যাওয়ার কথা ছিল।

নিহতের দীর্ঘদিনের বন্ধু প্রবীণ ফটোসাংবাদিক আলহাজ মো. জহিরুল হক জানান, টাকার জন্যই আফতাবকে খুন করা হয়েছে। কারণ তিনি (আফতাব) সবসময় বাসায় নগদ টাকা রাখতেন। সম্প্রতি আফতাব 'স্বাধীনতা সংগ্রামে বাঙালি' নামে একটি বই লিখে ১৫ লাখ টাকা রয়্যালিটি পান। এ ছাড়া গোপীবাগের রামকৃষ্ণ মিশন রোডে একটি ফ্ল্যাট বিক্রির টাকাও তার কাছে ছিল।

খুনিরা হয়তো কোনোভাবে এ বিষয়টি জানতে পেরেছিল। ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. শফিউজ্জামান গতকাল সন্ধ্যা ৭টায় জানান, নিহত আফতাবকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। তার শরীরে আঘাতের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, আজ আজিমপুর কবরস্থানে মায়ের কবরের পাশে আফতাব আহমদকে দাফন করা হবে। প্রসঙ্গত, গত ৩১ আগস্ট পশ্চিম রামপুরার ওয়াপদা রোডের নিজ বাসায় খুন হন পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত সুপার ফজলুল করীম খান।

 

 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.