আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ধুমা বের করে দিসে ধুম থ্রী!

দিলের দরজা ২৪/৭ খুইলা রাখি মাছি বসে মানুষ বসে না। মানুষ খালি উড়াল পারে! এক দিন আমি ও দিমু উড়াল, নিজের পায়ে নিজে মাইরা কুড়াল...


ধুমা বের করে দিসে ধুম থ্রী! রাত ১১ - ২ টা লেট লেট শো। ডিসেম্বরের ২৫ তারিখ বড় দিনের এক মাত্র ট্রিট বিগ বাজেট হিন্দি ফ্রেঞ্চাইজ ধুম থ্রী। গত দুই দিন যাবত ফেইস বুকে পরিচিত অপরিচিতরা ফালতু ফালতু বলে স্টেটাস দিচ্ছিল দেখে। কাল রাতে বসে বসে চোরাই পথে কিছুটা দেখে যা বোঝার বোঝা হয়ে গিয়ে ছিল।

ছবি দেখার আগ্রহ হারিয়ে গিয়ে ছিল। সাতটার শো'র টিকেট সোল্ড আউট ছিল। ভাবলাম আমির খানের মত পিকি অভিনেতা কেনইবা ছবিটা করেছেন হলে গিয়ে পুরো ছবিটা না দেখলে বোঝা যাবে না। মেয়েদের বলি, বাবা ছবিটা নাকি বেশী ভালো হয় নাই। ছোটটা ফট করে পাল্টা প্রস্তাব দেয়, তাহলে চলো ক্যাচিং ফায়ার দেখি! হাঙ্গার গেইম্স এর সেকেন্ড পার্ট, ওটা আমাদের দেখার লিস্টিতে আছে তাই বলে আজকে দেখতে ইচ্ছে হলো না।




অনেকে মনেকরেন সিনেমার প্রথম পাঁচ মিনিটের মধ্যে দর্শককে এমন কিছু দেখাতে হবে যা দেখে দর্শক বাকী দেড় দুই ঘন্টা হলে বসে থাকবার আগ্রহ পাবে। নয়তো সেই ছবির অসুবিধা আছে। এই থিওরী তথাকথিত বানিজ্যিক ছবির ব্যাপারেই মনে হয় প্রযোজ্য বেশী। আমি এই সবে তেমন ধার ধারি না। সিনেমা ভালোলাগার নানা কারন আছে।

আমার কখন কিসে সিনেমা ভালো লাগে মাঝে মাঝে আমি নিজেও বলতে পারি না! অনেক সময়ই দেখেছি যেই সব ছবি দেখে আমার হয়তো ভালো লাগে অনেককেই দেখি সেই একই ছবি দেখে গালাগালি করছে। এমনো হয়েছে আমি যে ছবি দেখে ভাবতে চেষ্টা করি অন্নান্যরা সেই ছবি দেখে বিরক্তি প্রকাশ করেন। এসব আমার অতীত অভিজ্ঞতা।


যাই হউক, বড় পর্দায় ভিজ্যুয়াল ইফেক্ট আর সাউন্ডের কেরামতি উপভোগেরও একটা মজা আছে। সেই মজাটুকু(যা চোরাই ডিভিডি আর ছোট পর্দায় কল্পনাও করা সম্ভব নয়।

) পাওয়া গেলেই বা মন্দ কী! বলিউডের সিনেমার একটা বড় দর্শক হল নন রেসিডেন্ট সাউথ এশিয়ানরা। সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে থাকা এই দর্শকদের কাছে ব্যাবসা করতে তাই বলিউড ভারতের বাইরে দুনিয়ার নানান দেশে তাদের সিনেমার গল্প বলে। সেইরকম এবারকার ধুম থ্রীর লোকেশন শিকাগো শহরে। ভারতীয়দের আমেরিকায় হিন্দি সিনেমা বানানোর শখ বহু আগে থেকেই। আজকাল সেটার পরিপূর্ন চর্চা চলছে।

হলিউডের সুপার টেকনিক্যাল স্কিল আর ভারতীয় স্টাইলের স্ক্রীন প্লে এ দু'য়ে মিলিয়ে আরেকটি বলিউড হলিউড একশন থ্রীলার মিউজিক্যাল বায়েস্কোপ হল ধুম থ্রী।


মুক্তির তিন দিনে যে সিনেমা ১০০ কোটি রুপির ব্যাবসা করে সে ছবির ভালো/মন্দ নিয়ে আমার না ভাবলেও চলবে। যে কারনে সিনেমা দেখে এসেই এই লেখা লিখতে বসা সেটাই বরং অল্প কথায় সারি। ছোটবেলায় সিনেমায় নায়ক নায়িকার ডাবল রোল প্রথম কবে কোন সিনেমায় দেখে ছিলাম একদম মনে নেই। বাংলাদেশের একটা ছবি ছিল কে আসল কে নকল।

ছোট বেলায় দেখা, সম্ভবত ওই ছবিতে রাজ্জাকের ডাবল রোল ছিল। আর আমাদের ছোটবেলার ডাবল রোলের আরেক বিখ্যাত ছবি নায়ক জাভেদ অভিনীত নিশান। ভারতীয় সিনেমা গোরা অর কালা'র নকল। নারায়নগঞ্জের মেট্রো হলে এক ঈদে মুক্তি পাবার কথা ছিল এস এম শফির অর্ধকোটি টাকা ব্যয় করা বিগ বাজেটের ছবি বে-দ্বীন। জানি না কোন এক জটিলতায় সেবার আর ছবিটি মুক্তি পায়নি।

ঈদের দিন হলে গিয়ে দেখি মুক্তি পেয়েছে পোষাকী ছবি শীষনাগ। ঈদের দিনে মডার্ন একশন সিনেমা দেখার মুডে কিশোর মন বড় কষ্টে রাজি হলো দেখতে পোষাকী ছবি শীষনাগ। তলোয়ার ফাইট আর সাপের সিনেমা কে দেখে ছাতামাথা! হিরো ওয়াসিমের ডাবল পার্ট ডাবল একশন, টিকেট ব্লাকারদের এমন কথায় শেষমেষ দেখে ছিলাম সেই দিন শীষ নাগ। ডাবল রোল ছবি গুলি আগ্রহ নিয়ে দেখতাম এটা দেখার জন্য যে ছবির দুই চরিত্র কখন মুখোমুখি হবে সেই দৃশ্য দেখবার জন্য। ডাবল রোল সিনেমার টেকনিক দেখতে দেখতে জানা ছিল কখন কোন শট দেখাবে! কখন ক্লোজআপ আর কখন ওভার দি শোল্ডার হবে এক দম বোঝা যেত।

খেয়াল করে মজা পেতাম ডাবল রোলের এক্টর এর চোখের এঙ্গেল রিএকশন ইত্যাদি রিভার্স শটের সাথে কতটুকু মিলে এই সব ফলো করে। তো শীষনাগ ছবির ডাবল রোলের ব্যাপারটা ছিল ভীষন আনাড়ির মত করা, শেষ দৃশ্যে যখন দুই ওয়াসিম দুই নায়িকাকে নিয়ে পাশাপাশি দাড়িয়ে হাত নেড়ে বিদায় নেয় সে এক হাস্যকর সমাপ্তি। পর্দার অর্ধেকে একজন আর এক জনকে হাত উঠিয়ে নাড়তে গেলে হাতই অর্ধেক ক্রপ্ড হয়ে যায়। সেই ছোট বয়সে সিনেমার পরিচালককে বকতে বকতে হল থেকে আমরা বের হই। কি সিনেমা বানাইছে ব্যাটা ডাবল পার্ট ও দেখাইতে পারে না!


ধুম, আর ধুম টু সিনেমা দুইটা বেমালুম ভুলে গেছি।

আজ সিনেমা শেষ করে বাড়ী ফেরার পথে মীরা/ গল্প এদের জিজ্ঞেস করে মনে করে নিলাম দুইটা ছবিরই শেষটা। প্রথম ধুম এর শেষটাতো খুবই সারপ্রাইজিং ছিল, মজার! দ্বিতীয়টির ও শেষটা মজার। এবারে ধুম থ্রী চিত্রনাট্যে তেমন কোন চমক দেখতে পাওয়া গেল না। বিরতির আগ পর্য্যন্ত খুব সাদামাটা, আর বিরতির পর যাকিছু ছিল তা কেবল চলচ্চিত্র নির্মাণের কারিগরি উৎকর্ষতা দেখে চমকিত হবার অনুভূতি। আমির খানের ডাবল এক্টিং আর চলচ্চিত্রে সেটাকে উপস্থাপন করবার অসাধারন কারিগরি দেখে মুগ্ধ হয়েছি।

এই মুগ্ধতা বড় পর্দার দর্শকদের ক্ষেত্রে বহু গুন হবারই কথা। স্বপ্নকে পুনরনির্মাণ করার কোন উৎকর্ষতায় পৌছে গেছে সিনেমা শিল্প তা এই ছবির দ্বৈত চরিত্রের চিত্রায়ন পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন দেখে সেটা উপলব্ধি করা যায়! সব শেষে বলি, হিন্দি বাজারী ছবি গুলোতে আইটেম এর নামে যে অশ্লীলতা চলে তা অরেক মাত্রায় এই ছবিতে দেখা গেল। এই ছবির প্রায় সব গুলিই নাচ গানই আজাইরা। আর ক্যাটরিনা কাইফকে এই ছবিতে সার্কাসের উছিলায় নুড বার এর মতো করে নাচানো হয়েছে। ব্রডওয়েতে চলা মিউজিক্যাল শো গুলি দেখলে আর যাই হোক নুড বারের নাচের মত মনে হয় না।



যাই হোক, এই ছবি যেনো বাংলাদেশের নায়ক অনন্ত জলিল না দেখেন। দেখলে বাংলা সিনেমার দর্শকদের খবর আছে!



(December 26, 2013 at 4:59am)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.