আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পিচ্চিগল্পঃ না দেখা, বা দেখা

আমার লেখা জুড়ে আমার ভালবাসা ছাড়া আর কিছু নেই।

- কি কর?
- এইতো গল্প লিখি।
- গল্প লিখ? তুমি? তুমি আবার গল্প লিখতে পারো নাকি?
- না, ঠিক পারি না। তবে চেষ্টা করতেছি।
- এই ভুত কে ঢুকালো মাথায়?
- তেমন কেউ না।

আমি নিজে থেকেই চেষ্টা করতেছি।
- আচ্ছা দেখাও কি লিখছ।
- গত ৩ দিন ধরে লিখতেছি।
- আচ্ছা বুঝলাম, পড়ে শুনাও।
- একটি টি শার্ট, তাহার উপর সোয়েটার, তাহার উপর আরও একটি টি শার্ট।

পায়ে মুজো। দুটি কম্বল শরীরের উপর। এবং কোলবালিশ কেচকি মারিয়া, পায়ের মাঝে রাখার পরও, শীত অনুভব করিতেছি।


চুপ করে গল্প শুনছে নিধি। কিন্তু হঠাৎ করেই থেমে গেল আশিক।

নিধি মুখে বিরক্তি ফুটিয়ে বলল, কি হল? থামলে কেন?
- এতোটুকুই লিখলাম।
- তিন দিনে এতোটুকু?
- হ্যাঁ। আসলে গল্প লেখা খুবই কঠিন কাজ। ভেবে ভেবে বের করতে হয়, কি লিখব। চিন্তার গভীরে যেতে হয়।

অনেক চিন্তার পর এই লিখলাম।
- তা এটা কি ধরনের গল্প?
- এই ধর, রোমান্টিক, রহস্য, বিরহ সব থাকবে।
- ভাষা সাধু কেন?
-হয়ে গেছে। লিখতে বসলে ভাষা কিভাবে যেন সাধু হয়ে যায়।
- আহা, কি কথা।

কেচকি কি জিনিস?
- আছে এক জিনিস। তুমি বুঝবা না।
- তাই?
- হ্যাঁ। জানো, গত তিনদিন ঘুমাই না। ২ দিন গেল, গল্পে কি লিখবো ভাবতে।

আর একদিনে এই লিখলাম।
- কি বল? এসব করতে কে বলছে?
- কেউ বলে নি। কিন্তু আমি তোমার কাছে একটু স্পেশাল হতে চাই। আমার ভিতর স্পেশাল কিছুই নেই। আমার খুব কষ্ট হয়।

আমি তোমাকে অবাক করে দেবার মত, কিছুই করতে পারি না কখনও।


আশিক,মাথা নিচু করে বসে আছে। হাতের ভিতরে নিজের লেখা, গল্পটার শুরু মুচড়ে মুচড়ে বলের মত বানিয়ে ফেলছে। চোখটা কারণ ছাড়াই ভিজে আসছে। মনে মনে খুব করে চায়, নিধিকে চমকে দেবার মত কিছু করতে পারত।

মাঝে মাঝে বেসুরো গলায় গান শুনায়। নিধি মুগ্ধ হয়ে শুনে। তবু আশিক জানে, মুগ্ধ করার মত কিছু আশিক গায় না। অনেক বড় বড় কবিতা , রাত জেগে মুখস্থ করে, নিধিকে শুনায়। ঠিক আবৃতি না।

আশিক তা পারে না। তাই নিধির মুগ্ধতাও আসে না, আশিক জানে। নিধি ভালবেসে মুগ্ধ হবার অভিনয় করে। একটু খুশি করতে চায়, আশিককে।
নিধি আলতো করে আশিকের হাত ধরল।

আশিকের নিচু মাথা, উপরে উঠিয়ে তাকাল। চোখগুলো এখনও ছলছল করছে। নিধি নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে, আশিকের চোখের দিকে তাকাল।
- আমি কখনও বলছি তোমাকে, যে আমাকে অবাক করে দাও। চমকে দাও।

স্পেশাল কিছু কর?
- না বল নি। তবুও আমার তো ইচ্ছে করে। তোমাকে ভালবেসে কিছু করতে।
- কত কিছুই তো কর। দেখো, যদি শিল্পী হত, শুধু গান শুনাত।

যদি আবৃতি পারত তবে শুধু কবিতা শুনাত। যদি লেখক হত তবে শুধু গল্প শুনাত। আর তুমি আমাকে সবগুলোই দিচ্ছ। হোক, একটু আবল তাবোল। তাতে কি? অন্য কারও ভাল লাগার তো দরকার নেই।

আমার এসব কত ভাল লাগে তুমি জানো? এসবে যে তোমার ভালবাসা আছে। এই ভালবাসাই তো আমি চাই। গান ছুঁয়ে ভালবাসা, ঐ কবিতা ছুঁয়ে ভালবাসা, ৩ দিন ধরে এক পাতা জুড়ে ভালবাসা। আর এই হাত ছুঁয়ে ভালবাসা।


আশিক অপলকে তাকিয়ে আছে নিধির দিকে।

দু চোখের জল, নাকের পাশ বেয়ে পড়ছে। এই জল আনন্দের না কষ্টের আশিক জানেনা। নিধি হাতটা আর একটু জোরে চেপে বলল, হইছে, আর বাবুদের মত কাঁদতে হবে না। বুড়ো গাধা। এখন একটা গান শুনাও।

নূপুর গানটা। এই গানটা তোমার গলায় অনেক সুন্দর লাগে।
- এখন?
- হ্যাঁ এখন।
- হাসবা না কিন্তু।
- হিহি।

না, হাসব না বাসব। ভালবাসব। গান শুনাও।


আশিক গান গেয়ে শুনায়। এক পায়ে নূপুর গানটা।

নিধি আশিকের চোখের দিকে তাকিয়ে, হাত ধরে শুনে। আশিকের এই প্রথম মনে হচ্ছে, মুগ্ধতা আনতে পেরেছে। নিধি সত্যি মুগ্ধ হয়ে শুনছে। সবার কাছে যা, ভালবাসার মানুষের কাছে তা হয় না। কিছু অগোছালো ভাবনায়, এলোমেলো সুরে, শব্দে, ভালবাসায় মুগ্ধতা আসে।

শুধু হৃদয় থেকে এই সুর শব্দে ভালবাসা থাকতে হয়।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।