আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে রূপগঞ্জের জামদানি

রাজধানীর উপকণ্ঠে শীতলক্ষ্যা নদীর পাড়ের বাতাসে আছে অবাক জাদু। সেই জাদুর পরশেই তৈরি হচ্ছে বিশ্বমাতানো জামদানি শাড়ি। এ শাড়ি তৈরিতে শীতলক্ষ্যার পানি, আবহাওয়া ও জলবায়ুর অদ্ভুত রসায়নেই বিস্ময়কর শাড়ি তৈরির উপকরণ আছে। এখানকার রোদের তেজে সুতায় আসে আলাদা ঔজ্জ্বল্য, যা পৃথিবীর আর কোথাও পাওয়া যায় না। আবহাওয়া এখানে তাঁতিদের মাঝে তৈরি করেছে উদ্দীপনা ও কর্মস্পৃহা।

শীতলক্ষ্যাপাড়ের ফিনফিনে মসলিন আজ ইতিহাস। আর রূপগঞ্জের জামদানি সেই ঐতিহ্য ও ইতিহাসকে ফের অটুট করেছে। ফলে বিশ্বে স্বতন্ত্র মহিমায় সমুজ্জ্বল অভিজাত তাঁতবস্ত্র এই জামদানি শাড়ি। এ শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছে এ দেশের সংস্কৃতি ও কৃষ্টি। বিশ্ববিখ্যাত অনন্য মসলিন শাড়ির সংস্করণ অধুনা জামদানি শাড়ি।

এ জামদানি রপ্তানি হচ্ছে সৌদি আরব, কানাডা, ভারত, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশে। বর্তমানে ভারত, কানাডা, পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশে প্রতি বছর বসে জামদানি মেলা। মেলার প্রধান আকর্ষণ ঢাকাইয়া জামদানি শাড়ি। নারীর সৌন্দর্যসুধাকে বিমোহিত করে তুলতে জামদানির অপরিহার্যতা বিশেষ স্মরণীয়। জামদানি নিয়ে উচ্চারিত হয়েছে চিরঞ্জীব পঙ্ক্তিমালা।

তবে মুক্তবাজার অর্থনীতি, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, সিদ্ধান্ত প্রদানে সরকারের দীর্ঘসূত্রতায় জামদানির অগ্রযাত্রায় কিছুটা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। জামদানি পল্লীতে প্রকৃত জামদানি তাঁতিদের মধ্যে প্লট হস্তান্তর না করা ও ব্যাংক ঋণের অপ্রতুলতার কারণে জামদানি শিল্প বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বর্তমানে নানা কারণে জামদানি শিল্পীদের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। ১৯৭৫ সালে এখানে প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার জামদানি তাঁতি ছিল। জামদানি তাঁতশিল্প ব্যবসায়ী সূত্র জানায়, ৬০ হাজার লোক এ শিল্পের ওপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত।

বাদশাহি আমলে জামদানি পরতেন রাজা-বাদশাহ কিংবা জমিদার পরিবারের নারীরা। আর এখন পরেন ধনী ও অভিজাত রমণীরা। জামদানি পরিধানকারী এ রমণীরা অনেকেই জানেন না তাদের পরিধেয় সেই শাড়িটির ভাঁজে ভাঁজে রয়েছে কত দুঃখ, বেদনা আর বঞ্চনার ইতিহাস। একেকটি শাড়ির পেছনে লুকিয়ে রয়েছে একেকজন তাঁতির জীবন্ত ইতিহাস। প্রতিটি সুতার ফাঁকে ফাঁকে রয়েছে তাদের ঘাম।

যারা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে শাড়িগুলো তৈরি করেন তাদের মা-বোন-বউদের ভাগ্যে একচিলতে সস্তা শাড়িও জোটে না। তারা দিনের পর দিন স্বপ্ন দেখেন এই তাঁতশিল্প একদিন সমৃদ্ধ হবে। তাদের নিত্যদিনের অভাব-অনটন দূর হবে। সুখী জীবনের প্রত্যাশার প্রহর আর শেষ হয় না তাদের। স্বপ্ন আর বাস্তবের মাঝে বিরাট ফারাক।

এদের স্বপ্ন যেন স্বপ্নই থেকে যাবে। স্বপ্ন মরার যন্ত্রণায় তাঁতিরা আজ দিশাহারা। আশি বছরের জামদানি শিল্পী রহমত আলী। জামদানি তৈরি করতে করতে জীবনটাই পার করে দিলেন। রহমত আলী বলেন, 'অহন আর জামদানি কারিগররা ভালো নাই।

হগল সমস্যা জামদানি কারিগরগো। ' তাঁতশিল্পী চম্পা আনোয়ারা। তারা জামদানি তৈরি করলেও নিজেরা জামদানি পরতে পারেননি। শিল্পী চম্পা আনোয়ারা বলেন, 'কাপড় বুইন্নাই গেলাম, পরবার পারলাম না। ' জামদানি শিল্পী নুরুল হক ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, 'শোরুম থেকে লোকজন জামদানি কেনে অনেক দামে।

অথচ জামদানি পল্লীতে এসব জামদানি আরও কম দামে কিনতে পারবে। ' ২০১২ সালে বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তান, ভারত ও কানাডায় জামদানি শাড়ি রপ্তানি করে আয় হয়েছে প্রায় ৩০ কোটি টাকা। এ ছাড়া গত বছর আগস্ট পর্যন্ত ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, সৌদি আরব ও ব্রিটেনসহ বিভিন্ন দেশে জামদানি শাড়ি রপ্তানি হয়েছে প্রায় ৪২ কোটি টাকার। এ রপ্তানির সঙ্গে জড়িত রূপগঞ্জের জামদানি শাড়ির ব্যবসায়ীরা। বর্তমানে পাকিস্তান, ভারত, কানাডা ও ইউরোপে বসে প্রতি বছর জামদানি মেলা।

মেলার প্রধান আকর্ষণ ঢাকাইয়া জামদানি শাড়ি। জামদানি শাড়ি বিক্রিকে কেন্দ্র করে শীতলক্ষ্যার পাশে ডেমরায় ও নোয়াপাড়া জামদানি পল্লীতে গড়ে উঠেছে জামদানির আড়ত। এ আড়তগুলোয় জামদানি শাড়ি বেচাকেনা চলে ভোররাতে শুরু হয়ে সকাল ৮টা পর্যন্ত। প্রতি শুক্রবার বসে এমন ধরনের আড়ত। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন আসেন জামদানি শাড়ি কিনতে।

 

 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।