আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ড্রাঙ্ক ফর ডেমোক্রেসি

ট্রুথ নট সেইড টুডে, কুড টার্ন টু আ লাই টুমোরো

শহীদ নুর হোসেন নিশ্চয়ই মাতাল ছিলেন, নইলে কি এমন গণতন্ত্রের জন্য কেউ শহীদ হয়? ৯০ এর গণঅভ্যুত্থান যে জেনারেলকে সরিয়ে তার স্বৈরচারিতার অবসান ঘটিয়ে গণতন্ত্রের অভিযাত্রা বা মার্চ ফর ডেমোক্রেসি শুরু করে তা কি আজকে রাষ্ট্রযন্ত্রের বালিবোঝাই ট্রাকে আটকে নেই? সেই জেনারেলকে পাশে পেতেই গণতন্ত্রের মানসকন্যা সিয়েমেইচে জরুরি চিকিত্সা দিয়ে জোর করে একতরফা নির্বাচনে আনছেন। ওয়েট, এই মানসকন্যাই কি এর আগে দুবার আপনার কাছে ভোটাধিকার রক্ষার আন্দোলনের সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় যান নাই? ৯৫-৯৬এর রক্তক্ষয়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আন্দোলন আর ২০০৬-২০০৭ এর ২২জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনবাতিলের আন্দোলন করে আজকে তিনিই একতরফা নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে ডাকছেন। শেখ জয় পত্রিকায় কলাম লিখে বলছেন 'এটা সত্য যে দল বা প্রার্থীর ক্ষেত্রে খুব বেশি বাছাইয়ের সুযোগ পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু এর চেয়ে বড় কতগুলো বাছাইয়ের সিদ্ধান্ত নিতে হবে আপনাদের। আপনারা কি যে কোনো মূল্যে গণতন্ত্রের পাশে দাঁড়াবেন, নাকি দাঁড়াবেন না?' মানে আবার গণতন্ত্রে মাতাল হবার ডাক দিচ্ছেন।

যেন আরেকবার কোনভাবে একতরফা নির্বাচন করে টিকে থাকা যায়। একটিবারও বললেন না দুর্নীতি দমন কমিশনকে খোজা করে শত শত একর জমির মালিক হওয়া আওয়ামী লীগের মন্ত্রী এমপিদের কথা। আশ্চর্যের কথা উনি সংবিধান থেকে একপা/চুল না সরে একথা কইতে পারছেন। বরং ভোটাধিকার প্রয়োগের দাবিটিই সংবিধানের বাইরে যেতে নির্দেশ করছে। সংবিধানের একি হাল করা হয়েছে!

হ্যা, সাংবিধানিক বৈধতাই হরহামেশা দেয়া হয়েছে একতরফা নির্বাচনকে, ক্ষমতা আকড়ে মাতাল গণতন্ত্রে আসক্ত হবার জিহাদকে।

আজকে যারা মার্চ ফর ডেমোক্রেসি করবার ঘোষণা দিচ্ছেন তারাই ৯৬সালে এমন একটি নির্বাচন করে ৩০০আসনে জয়ী হয়েছিলেন। বেগম খালেদাই কৌশলে এরশাদের নমিনেশন বাতিল করে ২০০৭ সালে সংবিধানকে কায়দা করে ইয়াজউদ্দিন সাহেবকে দিয়ে ২২জানুয়ারি একতরফা নির্বাচন করিয়ে নেবার কোশেশ করেছিলেন। এটাই গণতন্ত্রের মাতাল অভিযাত্রার ইতিহাস। এবং আমাদের কোন গণতান্ত্রিক ইন্স্টিটিউশন এই মাতাল অভিযাত্রাকে চ্যালেঞ্জ করতে পারে নি, সামনের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকেও তারা সংবিধানরক্ষার বলেই চালিয়ে দিতে চাচ্ছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে একবারই একতরফা নির্বাচন ঠেকানো গিয়েছিল সেটি ২০০৭ সালের ১১জানুয়ারী যা ১/১১ নামে লোকসমাজে উল্লেখিত হয়. সেদিন কোন কোর্ট, নির্বাচন কমিশন বা রাষ্ট্রপতি একতরফা নির্বাচন থামায় নি।

থামিয়েছে ব্যারাক থেকে আসা মইন ইউ আহমেদের অগণতান্ত্রিক বন্দুক। তো আমরা এমন একটা গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা জারি রেখেছি যেখানে রাষ্ট্রের কোন ইন্স্টিটিউশন চেক এন্ড ব্যালেন্স করতে পারে না...বরং একতরফা নির্বাচনকেই বৈধতা দেয় সংবিধান।

বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার যে ১১তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কথা বলছে, সেটি পিঠ বাচানোর কৌশল। ইচ্ছে করলেই ৩জানুয়ারি জাতির উদ্দেশে ভাষণে শেখ হাসিনা ঘোষণা দিতে পারতেন দেশের জনগণ সর্বদলীয় নাকি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক চায় তা গণভোটে যাচাই করা হবে। তিনি তা না করে আরো কিছুদিন ক্ষমতায় থাকার সুযোগ নিলেন।

এই একই প্রক্রিয়ায় দেড় মাস ক্ষমতায় ছিলেন খালেদা জিয়া ১৯৯৬ সালে। উনিও নির্বাচন করে ৩০০আসনে জয়ী না হয়ে গণভোট দিয়েই যাচাই করতে পারতেন। সবাই জানি এই গণভোটের রায় এখন এবং তখন কি হবে। কারণ বাংলাদেশের মানুষ এখনো শান্তি চায়, আগেও শান্তিই চাইতো। শেখ মুজিবর রহমান ৭মার্চে বলেছিলেন 'বাংলার মানুষ অধিকার চায়'।

আজকে তারই কন্যা দুইবার মানুষের ভোটাধিকার রক্ষার আন্দোলন করে নিজেই সুযোগবুঝে সেই অধিকার হরণ করে একতরফা নির্বাচন দিলেন।

এখন প্রশ্নটি দাড়াচ্ছে, হোয়াট ওয়েন্ট রং? ৯০ থেকে আমরা যে গণতন্ত্রের অভিযাত্রা জারি রেখেছি সেখানে নিশ্চয়ই কোন গলদ থেকে গেছে যা আমাদের বারবার ব্যর্থ করছে। কেন বারবার ভোটাধিকার রক্ষার আন্দোলন করতে হচ্ছে, কেন লংকায় যাকেই পাঠানো হচ্ছে সেই রাবণে পরিণত হচ্ছেন? বলা হয়ে থাকে জনগণ ভোটের দিনে সঠিক জায়গায় সিল দিয়ে থাকেন এবং স্বৈরাচারী সরকারের উচিত শিক্ষা দেন। জনগণের উপর আস্থা তাই স্বৈরাচারী সরকার রাখতে পারে না। সমস্যা হচ্ছে জনগনের উপর আস্থা খোদ বিরোধীদলও রাখতে পারে না।

নির্বাচনী বছর আসলেই দুই দলের ছোটাছুটি শুরু হয় বিদেশী এম্বাসির দিকে। ভারত-আমেরিকা-ইউ আমাদের মনিবে পরিণত হয়েছে। শোনা যায় তলেতলে অনেক দেশবিরোধী চুক্তিও দুই দল এইসময় করে বা করার আশ্বাস দেয় বিদেশী মনিবের মন যোগাতে। উইকিলিক্স মারফত জানতে পারি শেখ হাসিনাও আমেরিকান কোম্পানির কাজ পায়ে দেওয়ার বিনিময়ে মার্কিনদের পাশে পাবার কৌশল নিয়েছিলেন। আর এবার দেখা গেল সর্বদলীয় (আদতে আওয়ামী লীগের) সরকার গঠনের দিনেই আমেরিকার সাথে টিক্ফা চুক্তি হয়ে গেল যেখানে বিরোধীদল স্পষ্টভাবেই চুক্তির পক্ষে মতদান করলো।

যেন দুই দলের আপষরফা করার সার্ভিস চার্জ দিলো নিশা দেশাইকে। দেশের স্বার্থ কম্প্রমাইজ করতে দুই দলের এমন মতৈক্য মানুষ চায় না, তারা চায় বিরোধীদল বিরোধিতা করুক সরকারের সব ভুলকাজের, ভুলচুক্তির। কিন্তু দেখলাম তারা গেল সাড়ে চার বছরে একদিনও হরতাল-অবরোধ-মার্চ-মিছিল-মঞ্চ কিছুই করে নি। লীগ সরকার সংবিধান পরিবর্তন করে তত্ত্বাবধায়ক বাতিল করে দিলেও তখন জোরদার আন্দোলন গড়ে তুলতে পারে নাই, সংসদে এর তীব্র প্রতিবাদও দেখা যায় নাই। তারা অপেক্ষা করেছে কবে সরকার অজনপ্রিয় হবে, ৫বছর শেষ করবে সেই দিনের অপেক্ষায়।

এই নেতিবাচক ভোট নিয়েই দুই দল ব্রুট মেজরিটি পেয়েছে একবার করে।

এরমানে আমরা এমন কোন গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান গড়তে পারি নাই যা নিরপেক্ষ আচরণ করবে। বিএনপি আমলে দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়ে বিদেশী চাপের মুখে দুদক প্রতিষ্ঠা করলেও তত্ত্বাবধায়ক আসবার আগপর্যন্ত সেটি বিএনপির দুর্নীতি করতে পারে নাই। হাসিনা দুদককে খোজা করতে এর আইনেই এমন পরিবরর্তন এনেছে যা সাংসদদের দুদকের নাগালের বাইরে যাখুশি তাই করবার সুযোগ দেয়। সে সুযোগ অহর্নিশ কাজে লাগাতে কসুর করেনি আওয়ামী লীগের এমপিরা।

বিচারব্যবস্থাও প্রধানমন্ত্রীর আঙ্গুলি হেলনের অপেক্ষায় কাজ করেছে। হাইকোর্ট থেকে কোন নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ করা হয় নি। আমরা ৩০০জন এমপি নির্বাচনে এতই মশগুল ছিলাম যে খেয়াল করিনি এরমধ্যে একজন প্রধানমন্ত্রী হবেন যায় শক্তি, ক্ষমতা, দাপট সীমাহীন। এই এবসলিউট পাওয়ারের বলেই সে যা খুশি তাই করার ও এবসলিউট করাপশনের সাথী হবার সুযোগ পায়। আমরা ভোটাধিকার প্রয়োগের সময় এটা খেয়াল করি না, একজন স্বৈরাচার বিদায় করার সময় আমরা আরেকজন নির্বাচিত করি যে নিজের দলে তিন দশকের বেশি সময় দলপ্রধান।

আমরা সেই স্বৈরাচারকেই নির্বাচিত করতে ভোটের দিন আনন্দ পাই যে আর কারো সাথে তার ক্ষমতা শেয়ার করতে প্রস্তুত না। দলপ্রধানপদটি যে ছাড়তে চায় না তিন দশকে সে কি করে সরকারপ্রধান পদ ছাড়বে মাত্র পাচ বছরে? ছাড়বার মানসিকতাই তার নাই, নিজের দলের মধ্যেই নেই। বেগম খালেদা বা হাসিনা দুজনই দুই-তিনবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। তাদের কেন আবার নির্বাচিত করতেই হবে? যেন তারা ক্ষমতায় গিয়ে আরেকটি একতরফা নির্বাচন দিয়ে গ্যাট হয়ে আমৃত্যু ক্ষমতা ধরে রাখতে পারেন সেজন্য? এই ব্যবস্থাটি ভাঙ্গতে হবে। একভোটে জয়লাভের সিস্টেম থেকে বেরিয়ে এসে ভোট পার্সেন্টেজের ভিত্তিতে আসন বন্টন করলে ব্রুট মেজরিটির পথ রুদ্ধ হবে... সবসময় সংসদে শক্তিশালী বিরোধীদল পাওয়া যাবে।

স্বাধীন নির্বাচন কমিশন ও দুদকের জন্য সবাইকে সমঝোতায় আনতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা হ্রাসের জন্য দুইদলের কাছেই সম্মতি আদায় করতে হবে।

অনেক দূরের কথা হয়ে যাচ্ছে। আসছে ৫জানুয়ারি নির্বাচন নিয়ে দুটি কথা। এই নির্বাচনটি প্রতিহত করতে হবে যেন আগামীতে কেউ একতরফা নির্বাচন না করতে পারে।

এই নির্বাচনের সাথে যুদ্ধাপরাধীর বিচারের কোন যোগসূত্র কি? বিএনপি ক্ষমতায় আসলে কি করবে, জামাতের রাজাকারদের ছেড়ে দিবে কিনা, গোলাম আযম মুক্ত হবে কিনা সেই প্রশ্নের আগে বুঝতে হবে- যুদ্ধাপরাধীর বিচারে যে অগ্রগতি হয়েছে তা অব্যাহত রাখা আগামী সরকারের দ্বায়িত্ত্ব। সেই আগামী সরকারকে হতে হবে লেজিটিমেট সরকার। অবৈধ একতরফা নির্বাচনে যেতা সরকার দিয়ে যুদ্ধাপরাধীর বিচার করে বরং সমস্ত অর্জনকে ধুলায় মেশানো হবে। ৭০এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়ী হলেও তাদের ক্ষমতা নিতে দেয় নি পাকিস্তানিরা আর তাদের সমর্র্থক জামাত। ছলেবলে কৌশলে, সামরিক শক্তি ব্যবহার করে ক্ষমতায় থাকালে সেটা জামাত-রাজাকারদের মত কাজ বলেই মনে হবে।

তাই যেকোন বিচারেই ৫জানুয়ারি নির্বাচন প্রতিহত করতে হবে... মাতাল গণতন্ত্র না, বুঝদার গণতন্ত্র কায়েম করতে হবে।

একতরফা নির্বাচনে যারা ভোট দিবে তাদের বালতি বালতি পানি মারুন, থুতু দিন....
একতরফা নির্বাচনকে ঘৃণা করুণ। তাহলেই নির্বাচনের নাম টালবাহানা, ৫বছর পরপর নির্বাচনী বছরে সাধারণ মানুষের দূর্ভোগ বন্ধ হবে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.