আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দুষ্টি মেয়ের মিষ্টি ভালবাসা

আজ ও নিজের মাঝে অসাধারণের ছাপ খুঁজে বেড়াই কিন্তু প্রতিবারই নিজেকে খুব সাধারনরুপে আবিষ্কার করি । মন্দ কি ভালই তো আছি । ভার্সিটি থেকে এসে মাত্র ঘরে ঢুকলাম সাথে সাথেই আম্মার ফোন। সব কথার সার কথা হচ্ছে আমাকে পরশু জরুরি ভিত্তিতে বাসায় যেতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলো কে করুনা করতেই নাকি আমাকে এই জরুরি তলব! বলছি বলছি…অন্য কিছু ভাবার কোনই কারণ নেই।

আমাদের এলাকায় ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ শুরু হয়েছে। বুঝতেই পারছেন কত ব্যস্ততা!!! যাই হোক পাগলীটাকে কিভাবে এই খবর জানাব তাই ভাবছি। শিউর একটা তুলকালাম কান্ড বাঁধিয়ে ফেলবে। সেই রকম ভাবে প্রস্তুত হয়েই ফোন টা হাতে নিলামঃ -হ্যালো…কই থাক তুমি?ফোন অফ ছিল কেন? -হৃদিতার লগে ফুচকা খাইতেছিলাম। কেন কোন দরকার ছিল? -দেখ একদম ফাইজলামি করবা না।

ঢং রাইখা এখন কি বলতে ফোন দিছ তাই বল। -আরে এত চ্যাতো কেন?না মানে ক্লাসে ছিলাম। আর পরশু আমাকে বাসায় যাইতে হবে। আম্মা এইমাত্র জানাইলো। -মানে কি!!!!তুমি না ওই দিন মাত্র বাসা থেকে আসলা!!!তুই যেমনে পারস তেমনে চল।

আমার সাথে দেখা করার কোন দরকার নাই। ভাল থাক। কারণ শোনার কোন প্রয়োজনবোধ না করেই ওপাশ থেকে লাইনটা কেটে দিল। জানতাম এমন একটা কিছুই হবে। কেন যে এখন এইসব বলতে গেলাম!মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেল।

ভাবতে ভাবতেই মনে পরে গেল কাল সুমাইয়ার জন্মদিন!!!ওকে নিয়ে আগামী দুইদিন আমার ঘোরার কথা। এমনিতেই ভার্সিটির পেরার জন্য বেশ কদিন যাবৎ একদমই সময় দিতে পারছি না। ধুর মেয়েটার সাথে এমন করা একদমই উচিত হয়নি। সাথে সাথেই কল দিলাম। নাহ…ও পাশ থেকে বজ্জাত নারী কণ্ঠ শুনতে পেলাম"আপনার ডায়ালকৃত নাম্বারটি এই মুহুর্তে বন্ধ আছে!"একটু পরেই ফেসবুকে লগইন করলাম।

পাগলীটা আজ অনলাইনে ও আসে নাই!যত সময় গড়াচ্ছে ততই অস্থিরতা বাড়্ছে। উইশ করার জন্য ১২ টা ১ মিনিটে আবারো কল দিলাম কিন্তু এবারও হতাশ হতে হল। শেষে কোন উপায় না পেয়ে দুইটা মেসেজ পাঠালাম আর ফেবুতে ওর ওয়ালে উইশ করার পাশাপাশি সারেন্ডার করে ইনবক্সে লম্বা একটা অপরাধ স্বীকারনামা পাঠিয়ে দিলাম। তারপর বিরতি দিয়ে বার বার চেষ্টা করেও কোন লাভ হয় নি। এপাশ ওপাশ করতে করতে কখন যে ক্লান্ত চোখ দুটি ঘুমের সাগরে ডুব দেয় বুঝতেই পারি নি।

ঘুম ভাংতেই ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি সকাল ৯ টা!সাথে সাথে ফোনটা চেক করলাম কোন মিস কল-মেসেজ কিছুই নেই। ভিতরটা মোচড় দিয়ে উঠে যখন দেখলাম রাতের পাঠানো মেসেজ গুলো ডিলেভার্ড হয় নাই!আগেতো কখনো এমন হয়নি। অজানা এক আশঙ্খায় হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে। আর দেরী না করে বন্ধু আবিরকে নিয়ে বেরিয়ে পরলাম। ফার্মগেট পৌছে আদনান(লাভ গুরু)কে ফোন দিলাম।

ওদের সাথে সব শেয়ার করলাম। চা খাচ্ছিলাম হটাৎ একটা বীপ শুনে হাতে ফোনটার দিকে তাকিয়ে দেখি মেসেজ গুলো ডিলেভার্ড হয়েছে। মনে কিছুটা হলেও স্বস্থি ফিরে আসে। কল দিলে ধরবে না জানি। তাই ঝামেলায় গেলাম না।

এখন কি গিফ্ִট কেনা যায় তাই ভাবছি যেহেতু আগের দিন মঙ্গলবার হওয়ায় বড়সড় একটা বাঁশ খাইছি। আর সময় নষ্ট না করে তিনজন চলে গেলাম বসুন্ধরা সিটিতে। মাস শেষের দিকে পকেটে তাই আয়্লা আর নার্গিস আপাদের তান্ডব চলছে। অবশেষে অনেক ঘোরাঘুরির পরও যখন কিছু মিল করতে না পেরে হতাশ হয়ে ফিরার পথ ধরব ভাবছি তখনই চোখ গেল একটা মগের দিকে। কার্টুনের লিপ আঁকা একটা অন্যটাকে কিস করছে।

সোজা এগিয়ে গেলাম ওইটার দিকে। সাথে আদনান আর আবীরও চিৎকার করে উঠ্লো "ডান মাম্মা!"ব্যাস হয়ে গেল। তারপর অনেক প্ল্যান করে আদনান কে দিয়ে ফোন দেয়ালামঃ -মামী কই তুমি?একটু আল-রাজীতে আসতে পারবা? -কেন কি হইছে??? -আর বইলো না। হৃদয় হঠাৎ মাথা ঘুরে পইড়া গেছে। তোমার সাথেই নাকি দেখা করতে বের হইছিল।

-বল কি!!!আমিতো ক্লাসে। তুমি প্লিজ ওকে তোমাদের বাসায় নিয়ে যাও আর কিছু খাওয়াও। আমি বের হয়েই ফোন দিচ্ছি। -ঠিক আছে। রাখলাম।

ছোট একটা বিজয়ের হাসি দিয়ে এবার তিন জনেই পাশের "বেকার্স বে" তে ঢুকে সুমাইয়ার প্রিয় চকলেট কেকের অর্ডার করলাম। কিন্তু ঝামেলায় পরতে হয় মোম নিয়ে। ওইরকম স্পেশাল সাইজের মোমগুলা আশেপাশের একটা দোকানেও নাই। কি আর করা দ্বিতীয় দফা ঘাম ঝরাতে হল। কেকের দোকানটায় বসে হাঁপাচ্ছি আর তিনজনে কোক খাচ্ছি এমন সময় সুমাইয়ার ফোনঃ -কোথায় তোমরা?হৃদয় কোথায়?ওর অবস্থা কেমন? -আস্তে এত অস্থির হইয়ো না।

তোমার জামাই এখন একটু ভাল। কিন্তু তোমার সাথে দেখা করটে চায়। -এই শরীর নিয়ে আসতে হবে না। ওকে বল আমি রাগ করি নাই। -ধুরু…ফুটওভার ব্রীজের নিচে দাড়াও আমি আসছি।

বাসা দূরে না। দেখা করে যাও। সাথে সাথেই আদনান আবীরকে নিয়ে বেরিয়ে পরল। এর কিছুক্ষণ পরেই আদনান আর আবীরকে প্রবেশ করতে দেখলাম। পিছনে কৌতুহলী দৃষ্টি নিয়ে সুমাইয়াও এদিকেই আসছে।

হঠাৎ আমাকে দেখে ভূত দেখার মত চমকে উঠে। মুখ দিয়ে কোন কথাই বের হচ্ছে না। চুপচাপ আমার পাশে এসে বসল। একটু পরেই কেকনিয়ে আসতে দেখে আমার চশমিশ চোখ ছানা বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে রইল। ব্যাগ থেকে রেপিং করা বক্সটা বের করে ওর দিকে এগিয়ে দিলাম।

রীতিমত একটা যুদ্ধ জয়ের পর বক্স খোলে নিজের অজান্তেই পাগলীটা হি হি করে হেসে উঠে কিন্তু পরক্ষণেই একটা ভেংচি দিয়ে নিজেকে সামলে নেয়। মুগ্ধ দর্শকের ভূমিকায় উপভোগ করছিলাম তার চোখের কোণে জমে থাকা অভিমান আর ভালবাসার অদ্ভুত খেলা। ঘোর কাটে আদনান আর আবীরের কাশির ইঙ্গিতে। এবার কেক কাটার পালা। মোম নেভানোর সাথে সাথেই বেজে উঠে জন্মদিনের সুর।

নাহ আমরা কেউ গাইছি না। কৌতুহলবশে সুমাইয়া মোমটা হাতে নিতেই সাউন্ড আরো বেড়ে গেল। আর ধরে রাখতে না পেরে দোকানের মামাসহ সবাই হেসে ফেললাম। কিছু বুঝে উঠার আগেই বুকের উপর এলোপাথারী কতগুলো কিলঘুষি পরল। বরফ পুরোপুরি গলতে বেশি সময় লাগে না।

মাঝখানে কেক খাওয়াতে গিয়ে নাক মুখ লেপ্টে দেয়ার প্রতিবাদে আরেক দফা মাইর হজম করতে হল। তারপরের সময়টা এক রকম স্বপ্নের মতই কেটে যায়,সুমাইয়া আমাদের বসুন্ধরায় খাওয়ায়। জীবনের খাতায় যোগ হয় আরো কতগুলো সুন্দর মুহুর্ত… [বিঃদ্রঃগল্পের বিষয়বস্তু লেখকের কতগুলো বাস্তব অনুভূতিরই বহিঃ প্রকাশ মাত্র। কোন প্রকার কাল্পনিকতাকে প্রাধান্য দেয়া হয়নি। যা না বললেই নয়,পুরো গল্পটি মোবাইলে তোলা আর ফিনিশিং টানতে সত্যি অনেক কষ্ট হয়েছে যেহেতু একটি রিয়েল লাইফ স্টোরী।

তবুও চেষ্টা করেছি। ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। ধৈর্য সহকারে পড়ার জন্য সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ। ভাল থাকবেন। ]  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।