আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ক্ষুদ্র পরিসরে বিশালতার সন্ধান: কিছু অগুছালো কথামালা



নদীর বসন্ত শেষে খাঁ খাঁ করে মাটি,যৌবন শেষে বার্ধক্য আসে, প্রকৃতির বসন্ত শেষে শরতের মলিনতা আসে এবং জীবনের পরিণাম হয় মৃত্যু। অথাৎ সময় বদলায়, পরিস্থিতি পাল্টায়। এটা ঠিক যে, পৃথিবীতে স্রষ্টার ইচ্ছার পরিপন্থী কোন কাজ হয় না কিন্তু তাঁর সন্তুষ্টির পরিপন্থী কাজ ঠিকই হয়। পরকালিন জীবনে বিশ্বাসীদের চিরস্থায়ী সাফল্যের আন্তরিক চিন্তা ও প্রচেষ্টা থাকলে বৈষয়িক স্বার্থ লাভের আকাংখা ও ক্ষণস্থায়ী স্বার্থ পূজা অসম্ভব।

এখন প্রশ্ন হল অত্যাধিক সুখ কিংবা অত্যাধিক দুঃখ কোনটা মানুষকে তার প্রকৃত স্ব্ত্ত্বায় ফিরিয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে বেশি কাযকর? আমার মনে হয় দুটোই।

অতিসুখেও মানুষের পাশবিক প্রবৃত্তি জাগ্রত হয় আবার অতিদু:খেও পশুত্ব জেগে ওঠে। অথাৎ মধ্যম পন্থাই বেশি কল্যাণকর; সুস্থ স্বাভাবিক পরিবেশ ছাড়া কাংখিত বিকাশ অসম্ভব। আসলে বাইরের জগতের দ্বারা প্রভিাবিত হয়ে নয় নিজের ভিতর থেকে ভাল মানুষ হওয়ার চেষ্টা করা উচিত।

ভাল মানুষই একটি ভাল পরিবার গঠন করতে পারে, সুখী মানুষই অন্যকে সুখী করতে পারে, ভাল নেতাই ভাল সংগঠন গড়তে পারে, ভাল কমীই কাজকে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে পারে। কোন রোগী আরেকজনকে সুস্থ করতে সেবা দিতে পারে না, কোন দুবল আরেকজনকে সবল করে গড়তে পারে না, কোন মূখের পক্ষে সম্ভব নয় আরেকজনকে জ্ঞানী করে গড়ে তোলা।

তারপরও জগৎ সংসারে পরস্পরকে আকড়ে ধরে,নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে,স্বপ্ন সুখের নীড় গড়ে মানুষ।

অনেকে আছেন যারা পড়াশুনায় ভাল, মেধাবী হিসাবে সকলের কাছে সুপরিচিত কিন্তু কমজীবনে যেয়ে বেশি অর্থ উপার্জন করতে পারেন না। আবার অনেকে আছেন যারা ছাত্র হিসাবে ভাল ছিলেন না,পরীক্ষায় ভালভাবে উত্তীণও হতে পারেনি অথচ কমজীবনে যেয়ে সাফল্যের স্বণশিখরে আরোহন করেছেন। ডিগ্রীতে ফেল করেও বিদেশে একযুগের বেশি কাটিয়েছেন, মাসে ২লাখ টাকা করে কামিয়েছেন আমার এক পরিচিতজন অথচ বাংলাদেশে ভাল সাবজেক্টে ভাল প্রতিষ্ঠানে সবোচ্চ শিক্ষা নিয়েও অথনৈতিকভাবে অস্বচ্ছল জীবন যাপন করেন অনেকে। আরেকজন সম্পকে মামা হন যিনি মাদরাসা বোডের দাখিল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ফেল করেছিলেন, পরে লিবিয়া যান।

সেখান থেকে ইটালী। জানিনা কি কাজ করেন। তবে এলাকার অন্যতম ধনাঢ্য ব্যক্তি হিসাবে আবিভূত হযেছেন। এটাও ঠিক যে, সফলতা মানে বেশি অর্থ উপার্জন করা বুঝায় না, সফলতা হচ্ছে আপনার জীবন,আপনার পরিবার, আপনার বন্ধুবান্ধব।

অথ ছাড়া খুব বেশি সামাজিক মানুষ হয়ে ওঠা বতমান সময়ে কিছুটা কঠিন।

অথ ব্যয় না করে কারো প্রতি স্নেহ-শ্রদ্ধা-ভালবাসা প্রদশন অনেকক্ষেত্রে দু:সাধ্য হয়ে পড়ে। কারো উপকার করে খোটা দেয়াটা কাউকে উপহার প্রদান করে ফিরিয়ে নেয়ার মতই অভদ্রতা। সে যেই হোক উপহার দিয়ে ফেরত নিলে সেটা সম্পকের জন্যে খুব বেশি কল্যাণপ্রদ হয়না। অবশ্য উপহার পাওয়ার পর কোন এক উপলক্ষে উপহার দেওয়াটা সৌজন্য বিশেষ। উপহার হচ্ছে শুভেচ্ছার বহি:প্রকাশ এবং এর ফলে অপরের সাথে সু-সম্পর্ক গড়ে উঠে।

প্রতিবেশীকে মাঝে মধ্যে খেতে আমন্ত্রন জানানো এবং খাবার পাঠানো,সুসম্পর্ক বজায় রাখাটাও দায়িত্বের অন্তভুক্ত। এসবক্ষেত্রে অথনৈতিক স্বচ্ছলতাটা জরুরী।

নারী ঘরের বাইরে কমক্ষেত্রে প্রবেশ করতে পারেন যদি বাড়ি এবং পরিবারের দায়িত্ব পালনে অসুবিধা সৃষ্টি না হয়, স্বামী রাজি হয়,পুরুষদের সাথে মেলামেশা করতে না হয়। নারী যে গৃহিণী,সন্তান লালন পালনের মহান দায়িত্ব তার উপর অপিত- এটা তাকে ভুলে গেলে চলবে না। মেজবানের স্ত্রী সঠিক পোশাকে আবৃত হয়ে মেহমানদের আপ্যায়ন করতে পারে।

যদি কোন বন্ধু বা আত্মীয় দেখা সাক্ষাৎ করতে নাও আসে তারপরও সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ার অংশ হিসাবে তার সাথে মোলাকাত নিজে উদ্যোগী হয়ে করবে। সাক্ষাৎকালে হাস্যমুখে কথা বলা,সম্ভাষণ জানাতে আগ্রহী হওয়া,পুরুষ পুরুষের সাথে এবং নারী নারীর সাথে করমর্দন করা-পারস্পরিক উচুঁ ধারণা তৈরিতে সহায়ক। মেহমান আসলে খুশি না হয়ে বিরক্ত হওয়াটা অক্ষমতা, অসামাজিকতা্।

ভদ্রতার সাথে অন্যের কথা শুনা, অন্যকে কথা বলার মাঝে বাঁধা না দেয়া,অন্যদের সাথে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক ব্যাপার নিয়ে আলোচনা না করে একজনের মধ্যে সীমিত রাখাই শ্রেয়। কোন ব্যক্তিত্বসম্পন্ন রুচিবান মানুষ তৃতীয় কোন ব্যক্তির খারাপ দিক বলবেনা,অন্যকে বলার অনুমতি দেবে না তথা শুনবেনা।

অন্য লোকদের সম্পর্কে উল্টাপাল্টা বক্তব্য শুনলে দায়িত্ব হচ্ছে কথিত ব্যক্তির স্বপক্ষে বক্তব্য রাখা। কাউকে অতটা সম্মান জানানোর দরকার নেই যতটা সে পাবার যোগ্য নয়।

অন্যের কাছ থেকে কষ্টকর আচরণ পেলেও কারো প্রতি অভিশাপ দেওয়া শোভনীয় নয়। কোন কাজের জন্য কাউকে দোষারোপ করার ব্যপারে নমনীয় হতে হবে এবং অন্য লোকের সামনে তা না করাই ভাল। অতি আবেগী না হয়ে ধৈযের সাথে যৌক্তিক আচরণ করতে হবে।

বলার মত কিছু না থাকলে চুপচাপ থাকা ভাল কিন্তু এমন গুমরা মুখ করা যাবে না যাতে মানুষ বিরক্ত হয়। অহেতুক হাসার মতই অহেতুক কাঁদাটা পাগলামী। হাসি বা কান্না কোনটাই অবস্থা পরিবতন বা পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ ঘটাতে পারেনা।

ব্যক্তিগত চরিত্রের নেতিবাচক বৈশিষ্ট হচ্ছে,ক্ষুব্ধতা বা ক্রোধ প্রকাশ করা। কোন পরিচিতজনের সাথে বিরোধ থাকলেও তিন দিনের বেশি কথা না বলা ও এড়িয়ে যাওয়া ধম দ্বারা সমথিত নয়।

নিজে স্বার্থপর হয়ে অন্যের কথা না ভেবে নিজস্ব প্রয়োজন ও কল্যানের প্রতি প্রধানত চিন্তাভাবনা করা ও আগ্রহী হওয়া সংকীণ মানসিকতা। মুখে আন্তরিকতা ও দরদ দেখানো হাস্যকর বা অথহীন হয়ে পড়ে কমে যদি আন্তরিকতার প্রমান না দেয়া যায়।

কাউকে কোন আস্থার আসনে বসানো হলে, সেই আস্থা অক্ষুন্ন রাখতে সবোচ্চ চেষ্টা করা দরকার। অপরের সৎ চিন্তাকে মূল্য দেয়া উচিত। যে যার সাথে সংশ্লিষ্ট নয় তার সাথে সে ব্যাপারে কথা বলা অনথক সময় ক্ষেপন।

আগে যার সাথে ঝগড়া হয়েছে তাকেও নিজে উদ্যোগী হয়ে সম্ভাষণ জানিয়ে আন্তরিকতা প্রদর্শন করতে পারা বিশাল উদারতা। খোদা যা দিয়েছেন তা নিয়েই সন্তুষ্ট ও পরিতৃপ্ত থাকাতেই মানসিক প্রশান্তির নিশ্চয়তা। তুচ্ছ বিষয় ছেড়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মনোনিবেশ করাতেই মঙ্গল। যে দুর্ব্যবহার করেছে তাকেও ক্ষমা করে দিতে পারলে অনেক সময়ই সে ঘনিষ্ট বন্ধু হয়ে পড়ে।

কথা বলা একটি গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ এবং সামাজিক সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।

কথাবার্তার সময় অমায়িক মৌখিক অভিব্যক্তি অত্যন্ত গুরুত্বপূণ এবং তা অন্যের প্রতি ব্যক্তির কর্তব্যের অংশ হিসেবে গণ্য। গৃহে স্ত্রী অবশ্যই তার স্বামীর সামনে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন, সৌন্দয্ময়ী ও সুবাসিত থাকার চেষ্টা করবে। জীবনসঙ্গী নির্বাচনে সম্পদ, মান-সম্মান, সুউচ্চ পদমর্যাদা এবং চাকুরি বা অন্য কোন পার্থিব সুবিধা একামাত্র কারণ হিসেবে বিবেচনা করা যথেষ্ট নয়।

সমাঝোতা প্রতিষ্ঠা ও ভূল বুঝাবুঝি নিরসনে পারস্পরিক সম্মানবোধ ও ত্যাগের মনোভাব গুরুত্বপূণ। পিতামাতা ও স্ত্রীর সঙ্গে কোন ব্যক্তির সম্পর্ক কারো বিনিময়ে হতে পারে না।

একজনকে অপরজনের বিনিময়ে ত্যাগ করা যায় না। এক্ষেত্রে সমাঝোতা ও সমন্বয়ের পরিবেশ রচনা করতে হবে। পিতামাতা সন্তানের সাথে দুর্ব্যবহার করলেও সন্তানের উচিত তাদেরকে শ্রদ্ধা ও সদ্ব্যবহার করা। সন্তানদের কর্তব্য হচ্ছে কোন প্রকার আদেশ নিষেধ ছাড়াই পিতামাতাকে সহায়তা করা।

যে স্বামী স্ত্রীর কাছে উত্তম ও সহানুভূতিশীল সেই উত্তম স্বামী এটা যেমন সত্য স্বামীকে সন্তুষ্ট রাখতে সক্ষম স্ত্রীও উত্তম এটাও তেমনি সত্য।

পারস্পরিক প্রয়োজন পূরণ করা অন্যতম কর্তব্য। নবী (স.) বলেছেন, সেই স্ত্রীই সর্বোত্তম, যাকে দেখলে স্বামীর মন আনন্দে ভরে যায়। স্বামীর সাথে স্ত্রীর সম্পর্ক হবে কঠোরতা ব্যতিত দৃঢ়তা এবং দুর্বলতা ব্যতিত নমনীয়তার ভারসাম্যের মাধ্যমে। উত্তম স্ত্রী বিশ্বের সর্বোত্তম উপহার হিসেবে বিবেচিত। অধিকাংশ স্বামী তাদের প্রতি স্ত্রীর যত্ন নেয়াকে ভালবাসার বহি:প্রকাশ হিসেবে গণ্য করেন।

স্বামীর ঘনিষ্ট আত্মীয় স্বজনের প্রতি সম্মান দেখানো এবং তাদের সঙ্গে সহৃদয় ব্যবহার করা মূলত স্বামীর প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের শামিল। মনের সংকীর্ণতা নিয়ে কেউ মহত্তর কোন লক্ষ্যে নিবেদিত হতে পারেন না।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.