আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গোত্রপিতার হেমন্ত/গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ

ভোরের জলাশয়ে ডুবে থাকা /আত্মপ্রবঞ্চক রোদের কফিন নিয়ে এসেছি /আমার পাঁচ ফুট আট ইঞ্চি দেহের /শেষকৃত্যে চিৎকার করে আবৃত্তি করি /'ঈশ্বর একাকী তাই বিষাদ্গ্রস্থময় /আমি কেন বিষন্ন হবনা' গোত্রপিতার হেমন্ত গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ ১৯৮২ সালে সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী অনুবাদ - অদিতি ফাল্গূনী প্রকাশনী - সন্দেশ মুল্য - ১৫০ টাকা। কথা সাহিত্য বলতে আমরা পাঠকরা সাহিত্যের যে শাখার সাথে পরিচিত তা মূলত সহজবোধ্য গদ্য রীতির সাথেই আমাদের পরিচয় করে দেয়। উপন্যাসের উপজীব্য কিছু চরিত্রের গৎ বাঁধা কিছু বাস্তব অবাস্তব কর্মকান্ড কিংবা মনস্তাত্বিক বর্ণনায় এসে পরিসমাপ্তি ঘটে একটি সার্থক যবনিকাপাতের। ম াঝে মাঝে কিছু লেখকের লেখাতে বৈচিত্রের দেখা মেলে চরিত্র চিত্রণে কল্পচিত্রের ব্যবহারে। আছে কিংবা নেই এই দ্বিধাতেই পাঠকের মনে সৃষ্ট মোহের সঠিক ব্যাবহারের মাধ্যমে আরেক বিভ্রান্তির জন্ম দিয়ে বক্তব্যের শেষ রেশটুকু পর্যন্ত সেটাকে টেনে নিয়ে যাওয়ার যে মুন্সিয়ানা তা খুব কম লেখকের মাঝেই পাওয়া যায়।

আমি বলতে চাচ্ছি আপনারা কি এমন উপন্যাস পড়েছেন যার প্রতিটি বাক্যের শরীর এক একটি প্রতিকী কবিতার খন্ডাংশ! মার্কেজের এই উপন্যাসটি আপনার মনে লালন করা প্রচলিত গদ্য রীতির মূলে কুঠারাঘাত করতে বাধ্য। ভাষারীতির দিক থেকে বলা যায় একজন সুরিয়ালিস্ট কবির সুদীর্ঘ মনস্তাত্বিক ভ্রমনের অভিজ্ঞতালব্ধ মোহাচ্ছন্নতা পাঠকের মনে পরিচালনায় গদ্যরীতির আশ্রয়। শুন্য উপমা (empty metaphore) ব্যাবহার, শব্দ কিংবা বাক্যের ব্যাতিচার, প্রতিধবনিপুর্ণ বক্তব্য পাঠকের হৃদয়ে এক অদ্ভুত প্রতারণাময় আবেগের সুত্রপাত ঘটায় যা পুর্বাপর সকল অভিজ্ঞতা থেকে ভিন্ন। এবার উপন্যাসে বিবৃত গল্প বিষয়ে কিছু কথা বলি, সেখানেও অপেক্ষা করছে পাঠকের জন্য আরেক অনন্য উপাখ্যান। এই বিষয়ে অনুবাদকের ভুমিকার কিছু চুম্বক অংশ আমি শেয়ার করছি- " দীর্ঘ যত বাক্যবন্ধ ও স্বল্প সংলাপে লেখা এ গ্রন্থটি একটি অনির্দিষ্ট ক্যারিবীয় রাষ্ট্রের প্রেক্ষাপটে লেখা।

কাহিনীর মূল নায়ক এক গোত্র পিতা এবং একটি রাষ্ট্রের এক নায়ক যিনি দেশটি শাসন করছেন ২০০ বছর ধরে। কে এই গোত্রপিতা বা একনায়ক? ক্যারিবীয় সাগরের উপকূলে এক দরিদ্র দেশের পাহাড়ি এলাকার এক যাযাবর পাখিওয়ালী বেনদিসিয়ো আলভারাদোর গর্ভের বিবাহ বহির্ভুত অবৈধ সন্তান যিনি কখনো স্কুলে যেতে পারেননি পয়সার অভাবে তিনিই কালক্রমে হয়ে উঠেন সেই দেশের একনায়ক। রাষ্ট্রের শাসনভার নেবার সময়েই এক রেড ইন্ডিয়ান ভবিষ্যদ্বগণনাকারীণী তাকে বলেছিলেন ১০৭ হতে ২৩২ বছর পর্যন্ত তিনি বাঁচবেন। তাই হয়। জেনারেল অনন্তকাল অবধি বেঁচে চলেন আর শাসনকাজ অব্যাহত রাখেন।

তিনি অসুখের নিরাময়কারী, ভূমিকম্প, বন্যা ও মহামারীর সংশোধনকর্তা আর তার হাত থেকেই রাষ্ট্রের যত অন্ধ, খোঁড়া ও কুষ্ঠরোগীরা সুস্থ হবার জন্য লবণ নেয়। তার হারেমে এক হাজার উপপত্নী, জেনারেলের ঔরসে তাদের সাড়ে সাতমাস বয়সী দেখতে বামুন সন্তানদের নিয়ে বাস করে যেহেতু জেনারেলের কোন সন্তানই স্বাভাবিক মানব সন্তানের চেহারা ও বৃদ্ধি নিয়ে জন্মায় না। " এই ধরনের বিশ্বাস, অবিশ্বাস আর কালো সঙ্ঘাতময় একটি সুদীর্ঘ প্রেক্ষাপটে এগিয়ে চলে উপন্যাসের মসৃণ শরীর। সত্যিকার বলতে সংলাপ বিবর্জিত আবহে একটি উপন্যাসের চরিত্র গুলোর মাঝে প্রাণ দান করা আমার কাছে ম্যাজিক্যাল মনে হয়েছে। এবার আসি অনুবাদের ব্যাপারে, যেহেতু একটি বিদেশী উপন্যাস যতই ভালো হোকনা কেন শুধুমাত্র প্রাঞ্জল অনুবাদের অভাবে সেটি একটি বস্তাপঁচা কাগজের স্তুপে পরিণত হতে পারে।

এখানে একটু বলে রাখা ভালো হবে যে মূল গ্রন্থটি স্প্যানিশ ভাষায় রচিত। মূল স্প্যানিশ থেকে ১৯৭৬ সালে অনুবাদ করেন গ্রেগোরি রাবাসা ' দ্য অটাম অফ দ্য প্যাট্রিয়ার্ক ' নামে, সেখান থেকে বাংলায় অনূদিত হয় বর্তমান প্রজন্মের সম্ভাবনাময় একজন সাহিত্যক ও কবি অদিতি ফাল্গূনীর হাত ধরে। উপন্যাসটি যেহেতু স্প্যানিশ ভাষার তাই লেখকের মূল বক্তব্যকে ঠিক রেখে বাংলাতে অনুবাদের ব্যাপারটা কি পরিমাণ কষ্টসাধ্য এবং দীর্ঘ গবেষণার দাবী রাখে সেটা বলা বাহুল্য। শুধুমাত্র এটা বলবো পুরো উপন্যাসটি পড়তে আমার একবারও মনে হয়নি আমি একটি অনূদীত গ্রন্থ পাঠ করছি। সেটা সম্ভব হয়েছে লেখিকার সহজাত কাব্য প্রতিভার কারণে।

তাই ১৯২ পৃষ্ঠার এই বইটি একজন পাঠককে শুধুমাত্র মন্ত্রমুগ্ধ করেই রাখবেনা তাকে আলোড়িত করবে বহুদিন পর্যন্ত। পরিশেষে এটাই বলবো সাহিত্যের কালো জাদুতে যদি মোহাচ্ছন্ন হতে চান তাহলে আজই সংগ্রহ করে পড়ে ফেলুন 'গোত্রপিতার হেমন্ত' । (স্বল্প পরিসরে কিছু বুক রিভিউ করবো যে লেখা গুলো আমাকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে বহুদিন ধরে, তার মধ্যে প্রথমটি বন্ধুদের সাথে শেয়ার করলাম ) ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ৩৮ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.