আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জালিয়াতির ফ্যাক্স বার্তার ছবি দিয়ে জামায়াতী অপপ্রচা...

আসুন আমরা সবাই মিলে প্রতিবাদ জানাই সকল অনিয়মের

বিএনপির আশীর্বাদ নিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ ও হত্যাযজ্ঞ চালিয়েও নির্বাচন ঠেকাতে ব্যর্থ জামায়াত-শিবির এবার মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে ভারতের বিরুদ্ধে জনগণকে ক্ষেপিয়ে তোলার অপকৌশল নিয়েছে। আবার শিবিরের নিজস্ব ওয়েবপেজ ‘বাঁশের কেল্লা’র মাধ্যমেই বিকৃত তথ্য ও ছবি জালিয়াতির মাধ্যমে ‘সাতক্ষীরার অভিযানে ভারতীয় সেনাবাহিনী’ শিরোনামে গুজব ছড়িয়ে অস্থিরতার নক্সা কষেছে জামায়াতীরা। দীর্ঘ একমাস ধরে বাঁশের কেল্লার মাধ্যমে এ মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর পর এখন কাগজপত্র ও ছবি জালিয়াতি করে নিজস্ব সকল অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও পেজে গুজব ছড়াচ্ছে। বিভ্রান্তি তৈরির অপচেষ্টা চলছে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও। এসব তথ্যকে সম্পূর্ণ অসত্য ও বানোয়াট অভিহিত করে এ ধরনের অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য সবাইকে অনুরোধ জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

বৃহস্পতিবার মন্ত্রণালয় স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছে, যে খবর প্রচার করা হচ্ছে তা সম্পূর্ণরূপে ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। প্রচার করা তথ্যসমূহের সঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, অন্য কোন মন্ত্রণালয়ের অথবা বিদেশে বাংলাদেশের কোন দূতাবাসের কোন ধরনের সম্পৃক্ততা নেই।
বৃহস্পতিবার মন্ত্রণালয়ের বহির্প্রচার অনুবিভাগের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট ফেসবুকসহ ইন্টারনেটে ‘বাংলাদেশে ভারতীয় বাহিনীর উপস্থিতি’ সংক্রান্ত তথ্য প্রচার করা হচ্ছে যা সম্পূর্ণ অসত্য এবং বানোয়াট। এতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং দিল্লীর বাংলাদেশ হাইকমিশনের মধ্যকার কিছু কাল্পনিক যোগাযোগ উদ্ধৃত করা হয়েছে, যা সম্পূর্ণরূপে ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এমতাবস্থায়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জানাচ্ছে যে, উপরোল্লিখিত তথ্যসমূহের সঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অথবা অন্য কোন মন্ত্রণালয়ের অথবা বিদেশে বাংলাদেশের কোন দূতাবাসের কোন ধরনের সম্পৃক্ততা নেই।

এ ধরনের অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হতে সকলকে অনুরোধ করা যাচ্ছে। জামায়াত-শিবিরের নিজস্ব কর্মকা- ও তথ্য প্রমাণ ঘেঁটে জানা গেছে, সাতক্ষীরায় আওয়ামী লীগ ও সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়সহ প্রগতিশীল জনগোষ্ঠীর ওপর জামায়াত-শিবিরের বর্বরতার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান শুরুর পর থেকেই প্রায় এক মাস ধরে বাঁশের কেল্লার মাধ্যমে ভারতবিরোধী মিথ্য ও উস্কানিমূলক তথ্য প্রচার করছে শিবির। তবে সাতক্ষীরাসহ দেশজুড়ে জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে জনরোধ তীব্র আকার ধারণ করায় এ নিয়ে কেউ এতদিন মাথা ঘামায়নি। এর মধ্যে নির্বাচনও শেষ হয়ে যাওয়ায় কোণঠাসা হয়ে পড়ে স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি। একদিকে নির্বাচন ঠেকাতে ব্যর্থ অন্যদিকে সাধারণ মানুষের সহায়তায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে সাতক্ষীরায় কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরে আসে।

দেশজুড়ে স্বাধীনতাবিরোধীদের বিরুদ্ধে জেগে উঠছে মানুষ। ঠিক এমন অবস্থায় গত দুদিন ধরে বাঁশের কেল্লার সঙ্গে শিবির পরিচালিত সকল অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও পেজে একই গুজব ছড়ানো হচ্ছে। অপকর্ম করতে গিয়ে প্রচার করা হচ্ছে, ‘সাতক্ষীরার অভিযানে ভারতীয় সেনাবাহিনী’ ছিল। আরও বলা হচ্ছে, মতিঝিলের হেফাজতের বিরুদ্ধে অভিযানেও ছিল ভারতীয় সেনা। ’ ছবি জালিয়াতি করে উস্কানিমূলক তথ্য ছড়ানো নিজস্ব ওয়েবপেজ ও অনলাইন নিউজ পেপারের মাধ্যমে।

এ নিয়ে ইতোমধ্যেই আলোচনা চলছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। তবে তথ্য বিকৃতি করে গুজব ছড়ানোয় জালিয়াতিও ধরা পড়ছে সহজেই। সাতক্ষীরায় ছড়িয়ে পড়া সহিংসতা মোকাবেলায় যৌথবাহিনীর সঙ্গে অভিযানে ভারতীয় বাহিনী অংশ নিয়েছিল বলে বুধবার ও বৃহস্পতিবার গুজব ছড়ায় শিবিরের দুটি ওয়েবসাইটে। যার একটি ‘বিডিটুমোরো’ অন্যটি ‘নিউজ ইভেন্ট২৪. কম। ’ নিউজে প্রমাণ হিসেবে ছবি ও কাগজপত্র জালিয়াতি করে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ভারতের বাংলাদেশী দূতাবাস থেকে ‘ফাঁস হওয়া’ হিসেবে কয়েকটি ফ্যাক্স বার্তা যুক্ত করে গোষ্ঠীটি।

তবে ওয়েব পোর্টাল যেসব ফ্যাক্স বার্তার ইমেজ ব্যবহার করেছে তার কোন সূত্রও উল্লেখ করেনি।
প্রচার করা কাগজপত্রে বলা হয়, ২০১৩ নবেম্বরের ৭ তারিখে ইস্যু করা চিঠি পাঠিয়েছেন তৌফিক ইসলাম শাতিল। তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র এ্যাসিস্টেন্ট সেক্রেটারি। গুজব ছড়ানো হয়, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে সাতক্ষীরার গণআন্দোলন দমাতে সরকার ভারতীয় বাহিনীকে অপারেশনে নামিয়েছিল। এ অপারেশন পরিচালিত হয়েছিল যৌথবাহিনীর সহায়তায়।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অনুমতি সাপেক্ষে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দিল্লীর কাছে এ সেনা সহায়তা চেয়ে চিঠি দেয়। এরই আলোকে গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে থেকে সাতক্ষীরায় ভারতীয় সেনাবাহিনীর সহায়তায় অভিযান পরিচালিত হয়। সাতক্ষীরার পাঁচটি উপজেলায় পরিচালিত এ অভিযানে স্থানীয় জনগণের ওপর ব্যাপক জুলুম-নির্যাতন চালানো হয় বলেও উস্কানি দেয়ার চেষ্টা চালায় শিবির। স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত-শিবিরের জালিয়াতির ঘটনা সহজেই পরিষ্কার হয়ে উঠেছে। জানা গেছে, ডকুমেন্টস যা বিএনপি-জামায়াতের পক্ষ থেকে ছড়ানো হচ্ছে তা যে মিথ্যা তার দৃশ্যমান প্রমাণ পাওয়া গেছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বিষয়ে ভারতের সঙ্গে কাজ করে কেবল দক্ষিণ এশিয়া অনুবিভাগ। অথচ গুজব ছড়ানোর সময় উল্লেখ করা হয়েছে ইস্ট এশিয়া এ্যান্ড প্যাসিফিক অনুবিভাগের নাম, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এমন কোন বিষয় থাকলেও তা হতো অতি গোপনীয়, আর তা কখনই ফ্যাক্স আকারে পাঠানো হতো না। অতি গোপনীয় বার্তা প্রেরণের জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিশেষ প্রেরণ পদ্ধতি আছে যাকে সাইফার কোডিং বলে। সাইফার কোডিং বার্তা কখনও মূলপত্রের সঙ্গে যায় না।

বার্তা অন্য কোন বার্তার সংলগ্নি হিসেবে থাকে, যা ডিসাইফার করতে হয়। এখানে বার্তা অনেকটা উন্মুক্ত আর গোপনীয় বা গুরুত্বপূর্ণ বার্তার পাতার ওপরে ডানে তা ট্যাগ করা থাকে। ঠিক সেখানে দেখানো হয়েছে পাতার নম্বর, যা কোন ফরমেটেই গ্রহণযোগ্য নয়। এভাবেই শেষ নয়, সাতক্ষীরায় যৌথবাহিনীর অভিযান সম্পর্কিত পোস্টটি সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং বানোয়াট, একই সঙ্গে খুব অদক্ষ এক আনাড়ি হাতে এই প্রোপাগান্ডা তৈরি করা হয়েছে তাও ধরা পড়েছে। জানা গেছে, পররাষ্ট্র দফতরে গোপন কোন তথ্য এই “ঈষধংংরভরবফ” মেইল ব্যবহার করা হয় না।

অথচ জালিয়াতি করে তাই লেখা হয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অনেক গোপন বিষয় থাকলে সেখানে অবশ্যই বাংলায় ‘অতি গোপনীয়’ অথবা ইংরেজীতে “ঞড়ঢ় ঝবপৎবঃ” লেখা থাকে একইভাবে পররাষ্ট্র দফতরের মেইলেও “ঞড়ঢ় ঝবপৎবঃ” লেখা থাকে। সুতরাং এটি একটি বানানো মেইল তা প্রমাণিত। যেসব আইডি মেইল আদান-প্রদানে ব্যবহার করা হয়েছে তাও সম্পূর্ণ বানানো। এই নামের কোন আইডি পররাষ্ট্র দফতরের “ওহভড়” তে নেই।

ঔবংংড়ৎব এঙঈ নামে কোন ধরনের কোন পদ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতেই নেই। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র এ্যাসিস্টেন্ট সেক্রেটারি তৌফিক ইসলাম শাতিল এ ধরনের বিষয় পুরোটাকেই মিথ্যা বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, আমিও কয়েক জনের কাছে খবরটি শুনে খতিয়ে দেখেছি। তবে এগুলো সবই ভিত্তিহীন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ ধরনের সিল ও ফাইল নম্বর ব্যবহার করে না।

চিঠির ধরনের সঙ্গেও কোন মিল নেই। জানা গেছে, কয়েক শিবির ক্যাডার মিলে নিউজ ইভেন্ট নামে একটি অনলাইন পত্রিকাটি চালু করে। জামায়াতী ওই অনলাইন পত্রিকাটিতে প্রিন্টাস লাইনে গেলে শুধু কয়েকটি ইমেইল ঠিকানা রয়েছে। এ সাইটের সম্পাদক হিসেবে কে রয়েছে বা কারা সাইটটি পরিচালনা করছে তাদেরও কোন পরিচয় উল্লেখ করা হয়নি নিউজ ইভেন্টের প্রিন্টার্স লাইনে। শুরু থেকেই এ ওয়েবসাইটটি সরকারবিরোধী প্রচারণার উদ্দেশ্যে করা।

শুরুতে ওয়েবসাইটটি পাঠকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে আন্তর্জাতিক চমকপ্রদ খবরসহ বিভিন্ন অশ্লীল খবর প্রকাশ করতে থাকে। পরে তারা সাধারণ খবরগুলো অন্যান্য অনলাইন পত্রিকা থেকে কপি করতে থাকে যা কপিরাইট আইনেও অপরাধ। এ সাইটে শিবির ক্যাডারদের পরিচালিত ফেসবুক পেজ বাঁশের কেল্লায় প্রকাশ করা সব বানোয়াট খবর ফলাওভাবে প্রচার করে সাধারণ পাঠকদের বিভ্রান্ত করে। ইতোমধ্যে নিউজ ইভেন্ট জামায়াত-শিবিরপন্থীদের আস্থাভাজনও হয়ে উঠেছে। এখানে প্রকাশিত সরকারবিরোধী খবরগুলো জামায়াত-শিবিরপন্থীরা ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছে।

বিভিন্ন জামায়াতী প্রতিষ্ঠান এই নিউজ ইভেন্টসহ বিভিন্ন জামায়াতী ওয়েবসাইটে নগদ অর্থ ও বিজ্ঞাপন দিয়ে খরচ বহন করে। জামায়াতী আরও একটি ওয়েবসাইট বিডিটুডেতে প্রকাশিত খবরগুলো আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জামায়াত নেতাদের অন্যতম আইনজীবী এ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম তাঁর নিজের ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে শেয়ার করেন। শিবির বাঁশের কেল্লায় যেসব উস্কানিমূলক অপপ্রচার চালায় তার একই সঙ্গে দেয়া হয় এসব অনলাইনে।
মূলত, যুদ্ধাপরাধীর বিচার শুরুর পর থেকেই বিকৃত এমনকি ঔদ্ধত্যপূর্ণ তথ্য অনলাইনে ছড়িয়ে দেশ-বিদেশে মহান মুক্তিযুদ্ধ ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে কাজ করছে দলগতভাবে যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত দল জামায়াত-শিবির। বিশ্বব্যাপী অনলাইনে ‘যুদ্ধাপরাধী’ এবং তাদের সংগঠনের পক্ষে সাফাই গেয়ে সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মকে বিভ্রান্ত করার কৌশল নিয়েছে জামায়াত-শিবির ও তার আর্থিক সহায়তাপুষ্ট দেশী-বিদেশী চক্র।

রাজনৈতিক ও আইনগতভাবে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার মোকাবেলা করতে না পেরে ইন্টারনেটকে আশ্রয় করে সাইবার জগত রীতিমতো দখলে নিয়েছে এরা। জামায়াাত-শিবিরের অঙ্গ ও আর্থিক সহায়তাপুষ্ট বিভিন্ন সংগঠন এখন প্রযুক্তি ব্যবহার করে ফেসবুক, ইউটিউব, ব্লগ, টুইটারসহ বিভিন্ন ওয়েবসাইটে বিরামহীন মিথ্যা তথ্য প্রচার করে যাচ্ছে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।