আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মালোপাড়ায় আলো

যশোরের অভয়নগর উপজেলার চাপাতলা একটি গ্রামের নাম। ভৈরব নদের তীরে সে গ্রামের একটি পাড়া মালোপাড়া। যেখানে ১২৬টি পরিবারে ৭০০ থেকে ৮০০ জেলে সম্প্রদায়ের বাস। অধিকাংশই হিন্দু। তবে বেশ কয়েকটি মুসলমান পরিবারও রয়েছে। শিক্ষাদীক্ষায় পিছিয়ে থাকা মালোপাড়ার প্রায় সবাই মাছ ধরা ও মাছের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। স্বাধীনতার পর থেকেই এ পাড়ায় কোনো দিন সাম্প্রদায়িক হামলা হয়নি। কিন্তু ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর সহিংস হামলা চালায় জামায়াত-শিবিরের সশস্ত্র ক্যাডাররা। ক্ষতিগ্রস্ত হয় ৫১টি পরিবার। নিঃস্ব হয়ে যায় বেশ কয়েকটি পরিবার। হামলার ঘটনার পর থেকেই সরকার সার্বিক সহযোগিতা দিয়ে আসছিল। তাদের ক্ষত এখনো শুকায়নি। তবে গতকাল থেকে কিছুটা হলেও মনের ক্ষত নিবৃত্ত হয়েছে। কারণ এই পশ্চাৎপদ অজপাড়ায় কোনো দিন এমপি, মন্ত্রী আসেননি। সেই পাড়ায় গতকাল গিয়েছিলেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বেলা ২টা ৪০ মিনিটে মালোপাড়া গ্রামে পেঁৗছান। সেখানে হিন্দু সম্প্রদায়ের রীতি অনুযায়ী উলুধ্বনির মাধ্যমে জাতির জনকের কন্যাকে স্বাগত জানান তারা। প্রথমে প্রধানমন্ত্রী স্থানীয় নেতাদের কথা শোনেন। পরে তাদের উদ্দেশে ভাষণ দেন। এ সময় স্থানীয় বাসিন্দা শেখরকুমার চন্দ্র বর্মণ সেদিনের ভয়াবহতার বর্ণনা দেন। তিনি বলেন, আমাদের শরীরের ক্ষত না শুকালেও মনের ক্ষত এখন নিবৃত্ত হয়েছে। আমরা টাকা-পয়সা, কম্বল, শাড়ি চাই না। স্থায়ী নিরাপত্তা চাই। এখানে একটি পুলিশ ফাঁড়ি, একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও একটি বড় মন্দির ঘর চাই। এটা জাতির জনকের কন্যার কাছে আমাদের চাওয়া। এরপর জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর দাস রতন বলেন, মনের ক্ষত শুকিয়ে আমরা এখন অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাই। এ জন্য এ হামলার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই, যাতে এ পরিণত দেখে আর কেউ এমন হামলা করার সাহস না পায়। জেলা প্রশাসক মোস্তাফিজুর রহমান সেদিনের বর্ণনা তুলে ধরেন। এর জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আপনারা ভাববেন না এ মাটি আপনাদের নয়। আপনারা এ এলাকা ছেড়ে যাওয়ার কথা ভাববেন না। এ মাটিতে মনের জোর নিয়ে থাকবেন। অধিকার নিয়ে বাঁচবেন। তিনি বলেন, দেশের মানুষের নিরাপত্তার জন্য যত কঠোর হওয়া দরকার, সরকার তা হবে। প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে মালোপাড়ার বাসিন্দাদের জন্য গতকাল ছিল আনন্দের দিন। কুপি বাতিই যে পাড়ায় একমাত্র ভরসা ছিল সেখানে এখন বিদ্যুতের আলো জ্বলছে। স্বাধীনতার ৪৩ বছরেও যেখানে বিদ্যুৎ পেঁৗছেনি, সেখানে আজ আলোর ঝলকানি। ১২৬টি ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে। রাতারাতি কাদামাটির রাস্তা পাকা হয়ে গেছে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.