আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কিশোরগঞ্জে সোনালী ব্যাংকের সাড়ে ১৬ কোটি টাকা লুট

সুড়ঙ্গ কেটে সোনালী ব্যাংকের ১৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা লুটে নিয়েছে দুর্বৃত্তরা। কিশোরগঞ্জের সোনালী ব্যাংকের প্রধান শাখায় ফিল্মি কায়দায় দুঃসাহসিক এ টাকা লুটের ঘটনাটি ঘটে। গতকাল দুপুরে ভল্টরুম খোলার পর টাকা লুটের বিষয়টি জানাজানি হয়। পুলিশ ও অন্যান্য সূত্র জানায়, ব্যাংকের পূর্বপাশের একটি বাড়ি থেকে মাটির নিচ দিয়ে ব্যাংক পর্যন্ত দীর্ঘ ২৫ ফুট লম্বা সুড়ঙ্গ পথ তৈরি করা হয়। দুর্বৃত্তরা সুড়ঙ্গ দিয়ে ব্যাংকের ভেতরের ভল্টরুমে প্রবেশ করে।

রুমের টেবিলের ওপর রাখা ১৬ কোটি ৪০ লাখ টাকাভর্তি ছালার ব্যাগ নিয়ে পালিয়ে যায়। সংশ্লিষ্টরা বলছে, বিগত ২০ বছরের ইতিহাসে দেশে এমন বিরাট অংকের টাকা লুটের ঘটনা ঘটেনি।

ব্যাংকের নিরাপত্তার জন্য নিচতলায় রয়েছে পুলিশ ব্যারাক। এত পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে কীভাবে টাকা লুট হলো- এ নিয়ে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনার পর ব্যারাকের আট পুলিশকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

ঘটনার পর পুলিশ ও র্যাব ব্যাংকটি ঘিরে রাখে। ঢাকা থেকে সিআইডির বিশেষজ্ঞ দল কিশোরগঞ্জে গেছে। ব্যাংকের পদস্থ কর্মকর্তারাও পরিদর্শন করেছে ঘটনাস্থল। সংবাদ ছড়িয়ে পড়ায় সাধারণ গ্রাহকদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির কারণে ব্যাংক ছিল বন্ধ।

দুই দিনের যে কোনো একদিন এ চুরির ঘটনা ঘটতে পারে বলে পুলিশের ধারণা।

ব্যাংকের সিনিয়র কর্মকর্তা (ক্যাশ) মহসিনুল হক বলেন, ব্যাংকে অন্তত আড়াইশ কোটি টাকা রয়েছে। ভল্টরুমের টাকা রাখার স্থানে পেঁৗছতে পারেনি দুর্বৃত্তরা। শুধু টেবিলের ওপর রাখা টাকাগুলোই লুট করে নিয়ে যায়।

কিশোরগঞ্জ শহরের ঈশাখাঁ সড়কে সোনালী ব্যাংক কিশোরগঞ্জ শাখাটি অবস্থিত।

যে বাসার ভেতর থেকে সুড়ঙ্গটি কাটা হয়েছে, সেই বাসাটির মালিক ছিলেন বিশিষ্ট ভাষাসৈনিক আমিনুল হক। তার মৃত্যুর পর এ বাসায় তাদের পরিবারের কেউ থাকেন না। বাসা ও পাশের দোকান ভাড়া দেওয়া রয়েছে। আমিনুল হকের দুই ছেলে ও তিন মেয়ের মধ্যে দুই ছেলে ও এক মেয়ে লন্ডনে থাকেন। আর দুই মেয়ের মধ্যে ডাক্তার ফেরদৌস মহল রুনি ও শিক্ষিকা মীনা আক্তার থাকেন ঢাকায়।

তারাই মাঝে মাঝে বাসায় এসে ভাড়াটিয়াদের কাছ থেকে ভাড়ার টাকা নিয়ে চলে যান। বাসার ভাড়াটিয়াদের মধ্যে কেউ এর সঙ্গে জড়িত বলে পুলিশ ধারণা করছে। একজন মানুষ ঢোকা যায়- এমনভাবেই সুড়ঙ্গটি কাটা হয়েছে। ব্যাংকের ভল্ট থেকে সুড়ঙ্গটি লম্বা প্রায় ২৫ ফুটের মতো। পুলিশসহ সংশ্লিষ্টদের ধারণা, বেশ কিছু দিন ধরে পুরো ব্যাংক এলাকাটি সম্পর্কে ধারণা নিয়ে দুর্বৃত্তরা এ কাজটি করেছে।

শুক্র ও শনিবার ব্যাংক বন্ধ থাকায় এর যে কোনো সময় সুড়ঙ্গটি কেটে টাকা লুটের ঘটনাটি ঘটেছে বলে ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ধারণা করছেন। যে বাসা থেকে সুড়ঙ্গটি কাটা হয়েছে, ঘটনার পর থেকে সে বাসার ভাড়াটিয়াকে পাওয়া যাচ্ছে না। স্থানীয়রা জানান, এ বাসায় মোট ১১ জন ভাড়াটিয়া রয়েছেন। তাদের মধ্যে সোহেল নামে এক ভাড়াটিয়া প্রায় দুই বছর আগে বাসাটি ভাড়া নিয়ে বসবাস করছিলেন। তার কক্ষ থেকেই সুড়ঙ্গটি কাটা হয়েছে।

কিন্তু এ ঘটনার পর থেকে তার কোনো সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না। ব্যাংক ম্যানেজার হুমায়ুন কবীর ভূঁইয়া জানান, ব্যাংকের দুই ক্যাশ অফিসার মহসিনুল হক ও হাসান আহমেদ মঈন তাদের দুজনের কাছে ভল্টের চাবি থাকে। দুপুরে ভল্ট খুলে টাকা আনতে গিয়ে এ অবস্থা দেখতে পান তারা।

ব্যাংকের পাশের বাড়ির বাসিন্দা মার্জিয়া আক্তার জানান, ব্যাংক-সংলগ্ন এবি ফার্নিচারের পেছনের একটি ছোট কক্ষ ভাড়া নিয়ে বসবাস করত সোহেল নামের এক ব্যক্তি। তার কক্ষ থেকেই সুড়ঙ্গ করে ব্যাংকের ভল্টে প্রবেশ করা হয়।

ওই বাড়ির মালিক ঢাকায় থাকেন। ঘটনার পর থেকে সোহেল পলাতক রয়েছে। তিনি বলেন, রাতে ওই রুমে কয়েক দিন ধরে শব্দ শোনা যেত। কিশোরগঞ্জ পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন খান জানান, ঘটনাটি দুঃসাহসিক। এ ঘটনার সঙ্গে একটি চক্র জড়িত থাকতে পারে।

বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর গ্রাহক ও সাধারণ মানুষের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল মালেক জানান, ভাড়াটিয়া পলাতক রয়েছে। তবে তার কোনো ঠিকানা পুলিশ জানতে পারেনি বলে তিনি জানান।

 

 



অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.