আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জামায়াত - শিবিরের পৈশাচিক বর্বরতার ক্ষতচিহ্ন ওদের শরীরজুড়ে

আল্লাহ মহান, যাহা বলিব সত্য বলিব।

নির্মম, ভয়ানক, নৃশংস_ সব বিশেষণকেই হার মানায় পৈশাচিক এ বর্বরতা। কারও হাত, কারও পায়ের রগ কেটে ফেলা হয়েছে। বুকে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। বর্বর এ তাণ্ডব থেকে নারীরাও রেহাই পায়নি।

একজনের স্তন কেটে ফেলা হয়েছে। ওই নারীর পেটেও কুপিয়ে আঘাত করা হয়েছে। সোমবার রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্র (পঙ্গু হাসপাতাল) ঘুরে যে দৃশ্য চোখে পড়েছে, তা যে কেনো বিবেকবান মানুষের হৃদয়কেই নাড়া দেবে। সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে জামায়াত-শিবিরের হামলার শিকার নয়জন এ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। গুরুতর আহত এই নয় রোগী জানালেন তাদের আকুতি ও অভিযোগ।

তুলে ধরলেন নিজেদের আবেদনও। আর চিকিৎসকরা
জানালেন, আহত এই নয় রোগীর কারোরই শতভাগ সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা নেই। স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম সমকালকে বলেন, জামায়াত-শিবিরের হামলার শিকার প্রত্যেকের সুচিকিৎসার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সরকার তাদের চিকিৎসা ব্যয় বহন করবে বলেও জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। অবশ্য আহত অনেকেই বলেছেন, তাদের খোঁজই নিচ্ছে না কেউ।


জালাল ও সাদ্দামের খোঁজ নেয়নি কেউ :শিবির ক্যাডারদের বর্বর হামলার বর্ণনা দিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের দফতর সম্পাদক জালাল আহমেদ_ 'কুত্তার বাচ্চা, কোথায় যাস? তোরেই তো খুঁজছি। ' এই বলে একজন শার্টের কলার চেপে ধরল। আরেকজন হাতুড়ি দিয়ে মাথার ওপর তিন-চারটা আঘাত করল। সিএনজি থেকে নামিয়ে চাপাতি দিয়ে উপর্যুপরি আঘাত করে। কয়েকটা আঘাত হাত দিয়ে ঠেকানোর চেষ্টা করি।

একপর্যায়ে দৌড়ে পালানোরও চেষ্টা করি। কিন্তু পেছন থেকে আমাকে ওরা ধরে ফেলে। তারপর চারজনে ধরে আমাকে মাটিতে শুইয়ে দিয়ে দুই হাত ও পায়ের রগ কেটে ফেলে। চায়নিজ কুড়াল ও চাপাতি দিয়ে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় কোপাতে থাকে। নিস্তেজ হয়ে পড়লে ওরা আমাকে ফেলে চলে যায়।

এর পর আর কিছুই মনে নেই আমার।
গত বছরের ১১ ডিসেম্বর সিলেটের নাইওরপুল পয়েন্ট এলাকায় জালালের ওপর এ হামলা চালানো হয়। ওই দিন বিকেলে সিলেটের বাসা থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরছিলেন তিনি। বাসা থেকে সিএনজিতে করে বাসস্ট্যান্ডের উদ্দেশে রওনা দিলে নাইওরপুল পয়েন্টে তিনি জামায়াত-শিবির ক্যাডারদের হামলার শিকার হন। নিজ দলের নেতাদের ওপর ক্ষোভের কথা জানালেন রাজধানীর পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন জালাল।

তিনি বলেন, হামলার দেড় মাসেও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ কেউ আমাকে একটু দেখতে আসেনি। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি একবার এসেছিলেন। এখন ফোন করলেও ধরেন না। তিনি বলেন, 'সংগঠন করতে গিয়ে হামলার শিকার হলাম, অথচ সহকর্মীরাই কেউ এখন আমার খোঁজ নেয় না। ' জালালের শরীরজুড়ে অন্তত ২৫-৩০টি ক্ষতচিহ্ন দেখা যায়।


জালালের পাশের শয্যায় ভর্তি আছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শরিফুল ইসলাম সাদ্দাম। তিনি গত ৮ অক্টোবর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটসংলগ্ন বিনোদপুর বাজার এলাকায় শিবিরের বর্বর হামলার শিকার হন। তারা তিন বন্ধু ইজিবাইকে করে হলে ফিরছিলেন। হঠাৎ করে ১৫-২০ শিবির ক্যাডার মুখোশ পরে তাদের ওপর হামলা করে। একজন পালিয়ে যায়।

আরেকজনের দুই পায়ে গুলি করে। আর সাদ্দামকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে গুরুতর জখম করে ফেলে রাখা হয়। তার বাম হাত ও ডান পায়ের রগ কেটে দেওয়া হয়। সাদ্দামের শরীরে অন্তত ১৪টি গুরুতর জখম করে শিবির ক্যাডাররা। প্রথমে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার চিকিৎসা চলে।

এরপর ঢাকার বক্ষব্যাধি হাসপাতাল এবং সর্বশেষ পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছাত্রলীগের এই নেতা। সাদ্দামও ক্ষোভ প্রকাশ করলেন সংগঠনের নেতাদের ওপর। তিনি বলেন, 'তিন মাসের বেশি সময় ধরে হামলার ক্ষত নিয়ে হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে ছুটেছি। কিন্তু আজ পর্যন্ত সংগঠনের কেউ এক নজরের জন্যও আমাকে দেখতে আসেনি। কোনো টাকা-পয়সা তো চাইনি।

তার পরও কেউ একবারের জন্য একটু খোঁজ নিল না। '
প্রধানমন্ত্রীর দেখা চান ইউপি সদস্য নূরজাহান :জামায়াত-শিবির ক্যাডারদের বর্বরতার শিকার চাঁপাইনবাবগঞ্জের মোবারকপুর ইউপি সদস্য নূরজাহার বেগম। কানসাটে গোলাম রাব্বানীর বাসায় বৈঠক শেষে নিজ বাসায় ফেরার পথে যাত্রীবাহী বাস থেকে নামিয়ে ১০-১২ শিবির ক্যাডার তার ওপর পৈশাচিক হামলা চালায়। কেটে দেওয়া তার দুই হাত ও দুই পায়ের রগ। কিরিচ দিয়ে আঘাত করা হয় তার স্তন ও পেটে।

গুরুতর অসুস্থ নূরজাহানও পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তিনি বলেন, নাশকতায় জড়িত থাকার অভিযোগে বিএনপি-জামায়াতের কয়েকজন কর্মীকে গ্রেফতারের পর চেয়ারম্যান তৌহিদুর রহমান আমাকে ফোন করে হুমকি দেন। তার দলের আর কোনো কর্মীকে গ্রেফতার করা হলে আমার হাত-পায়ের রগ কেটে ফেলার হুমকিও দেন চেয়ারম্যান। তার হুমকির দুই দিন পরই আমার ওপর হামলা করা হয়।
নূরজাহান বলেন, 'দলের কাছে কোনো সাহায্য-সহযোগিতা চাই না।

আওয়ামী লীগের কর্মী হিসেবে আমার কোনো চাওয়া নেই। শুধু একটাই চাওয়া, একবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চাই। প্রধানমন্ত্রী যেন আমাকে দেখতে আসেন। তার দেখা পেলে আমি মরে গেলেও আর কোনো দুঃখ থাকবে না। '
শুধু দাঁড়িয়েই দেখল পুলিশ :পুলিশের উপস্থিতিতেই কানসাটের নতুন ব্রিজসংলগ্ন উত্তর এলাকায় গত ২৯ ডিসেম্বর চাঁপাইনবাবগঞ্জের শাহবাজপুর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হকের ওপর হামলা করে জামায়াত-শিবিরের ক্যাডাররা।

মোজাম্মেলের বাম হাত ও ডান পায়ের রগ কেটে দেয় শিবির ক্যাডাররা। মোজাম্মেল জানান, ঘটনার দিন গোলাম রাব্বানীর বাসায় দলীয় নেতাদের একটি বৈঠক হয়। ওই বৈঠক চলাকালীন খবর আসে, জামায়াত-শিবির ক্যাডাররা সংগঠিত হয়ে গোলাম রাব্বানীর বাসায় আক্রমণ করবে। তাৎক্ষণিক ওসিকে ফোন করে পুলিশের সহযোগিতা চাওয়া হয়। পুলিশ পাহারায় আমিসহ আরও চারজন বাসার উদ্দেশে রওনা দিই।

কিন্তু কানসাটসংলগ্ন নতুন ব্রিজের সামনে পেঁৗছালে এক-দেড়শ' জামায়াত-শিবির ক্যাডার আমাদের ওপর সশস্ত্র হামলা করে। আমাদের পাহারা দেওয়া পুলিশ সদস্যরা নির্বিকার ছিলেন। হামলা প্রতিরোধে তারা কোনো ব্যবস্থাই নেননি। আমরা মার খেলাম আর পুলিশ দাঁড়িয়ে দেখল।
কথা বলার সুযোগটাও দেয়নি :৫ জানুয়ারি নির্বাচনের দিন সকাল ৬টার দিকে মোটরসাইকেল নিয়ে শেরপুরের পোড়াগর ১ নম্বর ওয়ার্ড ভোটকেন্দ্রে রওনা দিই।

ভোটকেন্দ্রের কাছাকাছি পেঁৗছালে হঠাৎ করে ১০-১২ জন আমার ওপর সশস্ত্র হামলা করে। কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে তারা এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। আমি দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করেছিলাম। একপর্যায়ে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে তারা আমার দুই পা ও হাতের রগ কেটে ফেলে। অজ্ঞান হয়ে পড়লে তারা চলে যায়।

এমন করেই জামায়াত-শিবিরের নারকীর হামলার বর্ণনা দিলেন শেরপুর জেলার পোড়াগর ১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি বিল্লাল হোসেন। তিনি বলেন, ভোটারদের মধ্যে ভীতি সৃষ্টি করতেই জামায়াত-শিবির ক্যাডাররা আমার ওপর হামলা করে। হামলার এক মাস আগে তারা আমার একটি ফার্নিচারের দোকান পুড়িয়ে দেয়। তিনি অভিযোগ করেন, হামলাকারী বাদল, জাকির, হুমায়ুনসহ কয়েকজনকে আমি চিনতে পেরেছি। তাদের বিরুদ্ধে মামলা করার পরও পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি।


হামলার শিকার মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের চারজন :রাজনৈতিক বিরোধের সঙ্গে জমিজমা নিয়ে মন-কষাকষির জের ধরে গাজীপুরে এক মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের চারজন নারীর ওপর হামলা চালায় জামায়াত-শিবিরের ক্যাডাররা। মুক্তিযোদ্ধা শামসুদ্দিন ঢালীর স্ত্রী নূরজাহান বেগম ও তার তিন মেয়ে শামসুন নাহার শাহীন, মাসতুরা জাহান তুহিন ও কানন জাহান রুবি_ চারজনের কারও হাতের, কারও পায়ের রগ কেটে দেওয়া হয়েছে। শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন। নূরহাজান বেগম জানান, ১৬ জানুয়ারি দুপুর ১টার দিকে দেলোয়ার, আরফান ও মনার নেতৃত্বে ১০-১২ বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মী তাদের বাড়িতে আসে। দেলোয়ারের মোবাইল থেকে বড় মেয়ে শামসুন নাহার শাহীনকে ফোন করে জানানো হয়, জমি নিয়ে বিরোধ মীমাংসার জন্য তারা শাহীনদের বাড়িতে এসেছে।

ফোন পাওয়ার ১০ মিনিট পর শাহীন বাড়িতে পেঁৗছালে প্রথমেই তার ওপর হামলা চালায় জামায়াত-বিএনপির কর্মীরা। একে একে মাসহ দুই বোনের ওপরও হামলা করে তারা। তাদের প্রত্যেকের শরীরের ১৫-২০টি স্থানে ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে। নূরজাহান বেগমের দুই পায়ের রগ কেটে ফেলা হয়েছে। বড় মেয়ে শাহীনের চার হাত-পায়ের রগ, মেজ মেয়ে তুহিনের দুই পায়ের রগ এবং ছোট মেয়ে রুবির পায়ের রগ কেটে ফেলা হয়েছে।

একই পরিবারের এই চার নারীও এখন পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। শরীরে অসহ্য যন্ত্রণা নিয়ে কাতরাচ্ছেন তারা।
পরিচালক যা বলেন :জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের (পঙ্গু হাসপাতাল) পরিচালক অধ্যাপক ডা. হামিদুল হক খন্দকার সমকালকে বলেন, আহত রোগীদের প্রত্যেকের অবস্থা গুরুতর। সুস্থ হলেও তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। তবে তাদের সুস্থ করে তুলতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সর্বাত্মক চেষ্টা করছে বলে জানান তিনি।

সুত্র
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.