আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিপন্ন জামায়াত, মরিয়া জামায়াত

বাংলা আমার দেশ শেষ জমানায় কিছু প্রতারক সৃষ্টি হবে। তারা ধর্মের নামে দুনিয়া শিকার করবে। তারা মানুষের নিকট নিজেদের সাধুতা প্রকাশ ও মানুষকে প্রভাবিত করার জন্য ভেড়ার চামড়ার পোষাক পড়বে (মানুষের কল্যাণকারী সাজবে)। তাদের রসনা হবে চিনির চেয়ে মিষ্টি। কিন্তু তাদের হৃদয় হবে নেকড়ের হৃদয়ের মতো হিংস্র।

(তিরমিজী) যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ঘোষণা আসার পরপরই দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে কিছু হাস্যকর প্রলাপ শোনা যাচ্ছে। আর তা শোনা যাচ্ছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নামে রাজনৈতিক দলটির তরফে। দেশে কোনো যুদ্ধাপরাধী নেই জাতীয় কমেডি সংলাপের পাশাপাশি দাবি করা হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পর এই ইস্যুটা বাতিলের খাতায় নাম লিখিয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের নামে আসলে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমন ও পীড়নের ষড়যন্ত্র করছে সরকার। সেই প্রতিপক্ষ হচ্ছে জামায়াত।

এবং প্রতিবেশী ভারতের চক্রান্তে এর নেতাদের যুদ্ধাপরাধী বানিয়ে দেশে ইসলামী আন্দোলনকে ধ্বংস করার নীলনকশা বাস্তবায়ন করতে চাইছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। এ ধরণের অপপ্রচার নিয়ে শুধু দেশের মধ্যেই নয়, আন্তর্জাতিকভাবেই সক্রিয় হয়ে উঠেছে তারা। সর্বশেষটি ব্রিটেনের হাউজ অব লর্ডসে। সেখানে একটি সেমিনারের মাধ্যমে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ নিয়ে যুদ্ধপরাধীদের বিচারের জন্য নির্ধারিত আইনটির সমালোচনা করেছে তারা। এর আগে একই কাজ তারা করেছিলো ওয়াশিংটন ডিসিতেও।

জামায়াতের এই বিপন্ন বোধ, সুবাদেই মরিয়াপনা অহেতুক নয়। তবে বরাবরের মতোই সত্যকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে রাজনৈতিক ফায়দা লোটা এবং সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা তারা চালিয়ে যাচ্ছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবি কখনোই রাজনৈতিক কোনো দাবি ছিলো না। এটি একটি নাগরিক আন্দোলন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বুকে লালন করা স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিকদের দাবি।

একদফা সেই দাবিতে সামিল একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে সব হারানো শহীদের স্বজনেরা, ছেলে হারা মা, লড়াই মাঝে কমরেডের লাশ পাশে রেখে রক্ত ভেজা আঙ্গুল ট্রিগারে চেপে শোককে ক্রোধে পরিণত করা মুক্তিযোদ্ধা, সম্ভ্রম হারানো বীরাঙ্গনা, নৃশংস হত্যার শিকার বুদ্ধিজীবিদের সন্তানেরা। জেনারেল নিয়াজীর পিছনে জামাত নেতা আবদুল কাদের মোল্লা আল-বদর গঠনের অন্যতম উদ্যোক্তা জামাত নেতা মুহাম্মদ কামারুজ্জামান আওয়ামী লীগের সম্পৃক্ততা এই ইস্যুতে নেহাতই সমর্থনসূচক। যে পদ্ধতিতে যুদ্ধাপরাধীদের সত্যিকার বিচার সম্ভব, তার জন্য উদ্যোগী হতে হয় সরকারকে। গত সাধারণ নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের নাগরিকদের আওয়ামী লীগ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলো তাদের সরকার গঠন করতে দেওয়া হলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করবে। নতুন প্রজন্মের অকুন্ঠ সমর্থন নিয়ে নির্বাচনে ভুমিধ্বস বিজয় পেয়েছে তারা।

আর তারপর সেই অঙ্গীকার ও দায়বদ্ধতা থেকেই বিশেষ আদালত গঠনের মাধ্যমে একাত্তরের মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধগুলোর বিচারে উদ্যোগী হয়েছেন শেখ হাসিনা ও তার সরকার। এখানে না বললেই নয় যে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ’৯৩ সালের শুরুতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে গঠিত জাতীয় সমন্বয় কমিটির প্রথম বৈঠকে শপথ করেছিলেন- বুকের শেষ বিন্দু রক্ত দিয়ে হলেও বাংলার মাটিতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করে ছাড়বেন। ’৯৬ সালে যখন প্রথমবারের মতো ক্ষমতা পেলেন তখন তার দল এই বিচারের ব্যাপারে কোনো আগ্রহ দেখায়নি এই যুক্তিতে যে তা তাদের নির্বাচনী ম্যানিফেস্টোর অন্তর্ভূক্ত ছিল না। তাই মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজনৈতিক নেতৃত্ব দেওয়া আওয়ামী লীগের এই উদ্যোগে সংশ্লিষ্ঠতা নেহাতই কাকতালীয় এবং রাজনৈতিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ঠ, তবে ঐতিহাসিক কারণেই গ্রহণযোগ্য। ফিরে আসা যাক মূল প্রসঙ্গে।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে স্বাধীনতা বিরোধী জামায়াতে ইসলামীর পূনর্বাসনের শুরু থেকেই দলটি কখনোই তাদের অতীতের কুকীর্তির জন্য ক্ষমা চায়নি, লজ্জিতও হয়নি। বরং নানা ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের অর্জন ও চেতনাকে ভুলুন্ঠিত করতে চেয়েছে। রাজনৈতিক মিত্র জাতীয়তাবাদী দলকে প্রভাবিত করে পাঠ্যবইয়ের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করেছে, কৌশলে মুছে ফেলার চেষ্টা করেছে তাদের সব অপকীর্তি। ‘৯১তে জনগণের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে একটা বড় ধাক্কা দেয় তারা পাকিস্তানের নাগরিক গোলাম আযমকে দলের আমির ঘোষণা দিয়ে। এই পর্যায়ে এসেই নাগরিক প্রতিরোধের জন্ম।

শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে গোটা বাংলাদেশ ফুঁসে ওঠে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে। তারই ধারাবাহিকতায় আজ এতদিন পর, নির্দিষ্ট করে বললে ৩৯ বছর পর স্বাধীন বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর রাজনৈতিক ও সামরিক সহযোগীদের বিচারের আয়োজন শুরু হয়েছে। টিক্কা খানের সঙ্গে মিটিংয়ে গোলাম আযম এই সহযোগীদের তালিকায় জামাতের বর্তমান শীর্ষ নেতৃত্বের সকলেই অভিযুক্ত। এই অভিযোগ কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নয়, বরং ঐতিহাসিক তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতেই উঠেছে। বিচারের নামে ইসলামকে ধ্বংস করা হচ্ছে বলে যে ধোয়া তারা তুলেছে, ধর্মান্ধতার একই চাদরে মুখ ঢেকেই একাত্তরে তারা পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর সহযোগীর ভূমিকায় নেমেছিলো।

পবিত্র ইসলামের ধ্বজা উড়িয়েই তারা হত্যা-ধর্ষণ-লুন্ঠনে যোগ দিয়েছে বাঙালী জাতীয়তাবাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধ মুক্তিকামী ও স্বাধীনতাপন্থী বাঙালীদের বিরুদ্ধে। আজ এতদিন পরেও চাইলেই সে অতীত মুছে ফেলা সম্ভব নয়। কারণ সেসব দুঃস্মৃতি বুকে নিয়ে, সেসব অপকীর্তির দগদগে ঘা নিয়ে এখনও জীবিত আছেন অনেকেই। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে তারাই নিতে যাচ্ছেন স্বাক্ষীর ভূমিকা। বদর দিবসে আল-বদরদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিচ্ছে মুজাহিদ এখানে প্রশ্ন উঠতেই পারে স্বাধীনতাবিরোধী ভূমিকায় জামায়াত কি একাই ছিলো? অন্যভাবে বললে তারাই কেনো দলগতভাবে অভিযুক্ত।

ইতিহাস ঘেটেই উত্তরটা নিষ্পত্তির প্রয়োজন মানছি। একাত্তরে সময় ধর্মরক্ষার নামে যারা মুক্তিযুদ্ধের বিপরীতে দাঁড়িয়েছিলো তাদের তালিকায় জামায়াত ছাড়া আরও ছিলো ঐতিহ্য ভেঙ্গে তিন টুকরো হওয়া মুসলিম লীগ (কাউন্সিল,কনভেনশন ও কাইয়ুম), নেজামে ইসলাম ও পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক পার্টি পিডিপি। সত্তরের সেই ঐতিহাসিক নির্বাচনে জনগনের আস্থা অর্জনে ব্যর্থ এসব দলের ভরাডুবি হয়েছিলো। রাজনৈতিক অস্তিত্বের সঙ্কটে পড়া এসব দলের মধ্যে মুসলিম লীগ কোনো আসন পায়নি, জামায়াত ও নেজামে ইসলামীর একজন করে প্রার্থী জয়লাভ করেছিলো, আর পিডিপির দুজন। ২৮৮ আসনজয়ী আওয়ামী লীগকে যখন জাতীয় শত্রু ঘোষণা দিয়ে নির্মূলের অভিযানে নামে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী, তখন এই দলগুলো নিজেদের ভাবমূর্তি উদ্ধার ও পায়ের তলায় জমিন শক্ত করার প্রয়াস নেয় তাদের সহযোগী হয়ে।

এর বাইরে হাফেজ্জী হুজুরের খেলাফত আন্দোলন, মওলানা ফরিদ আহমদের পাকিস্তান শান্তি কল্যাণ পরিষদ ও মওলানা আবদুল মান্নানের মোদাচ্ছারিন নামে সাইনবোর্ড সর্বস্ব কিছু সংগঠন ছিলো যা নিতান্তই ব্যক্তিকেন্দ্রিক। দৈনিক সংগ্রামে নিজামী ও মুজাহিদের লেখা প্রবন্ধ এই সহযোগিতারও প্রকারভেদ ছিলো। টিক্কা খান ও নিয়াজীর বাহিনীর নির্বিচার গণহত্যার প্রতি নির্লজ্জ সমর্থনে সবাই ছিলো একাট্টা। এই সর্বদলীয় ঐক্যের আরেকটি প্রকাশ ছিলো শান্তি কমিটি। সেনাবাহিনীকে রাজনৈতিক সমর্থন ও সন্ত্রস্ত জনগণকে আরো সন্ত্রস্ত করতে তাদের মুখপাত্রর ভূমিকায় ছিলো এই শান্তি কমিটি।

এই পর্যায়ে এসে নিজেদের অন্যদের চেয়ে আলাদা করে চেনাতে উদ্যোগী হয় জামায়াত। অধিকতর পাকিস্তানপ্রেমী হিসেবে দেখাতেই তারা সিদ্ধান্ত নেয় সামরিক সহযোগীতার। মে মাসে মওলানা ইউসুফের নেতৃত্বে জামায়াতের ৯৬ জন কর্মী নিয়ে গঠিত হয় রাজাকার বাহিনী। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান রীতিমতো অধ্যাদেশ জারি করে এই রাজাকার বাহিনীকে আধা-সামরিক মর্যাদা দান করেন। এই রাজাকার বাহিনীর কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয় জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘের (বর্তমানে ইসলামী ছাত্র শিবির) জেলা, মহকুমা ও শহরভিত্তিক সভাপতিদের।

এই ইউসুফকে ইয়াহিয়া পুরষ্কৃত করেন মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে এসে গঠিত মালেক মন্ত্রীসভায়। আগস্টে জামালপুরে আরেকটি খুনে বাহিনীর জন্ম দেয় জামায়াত। এদের নাম আল-বদর। পোস্টে দুটো ভিডিও ফুটেজে প্রমাণ রয়েছে কিভাবে জামাতের বর্তমান শীর্ষ নেতৃত্ব এই খুনে বাহিনীর সার্বিক তত্ববধানের পাশাপাশি এই হত্যাযজ্ঞে অংশ নিয়েছে। স্বরূপ উন্মোচিত হয়েছে কামারুজ্জামানের মতো খুনেদের, মুজাহিদ ও নিজামীদের মিথ্যাচারের মুখে লাথি দিয়ে সব স্বীকার করেছে বদর ক্যাম্পের গেট কিপার মোহন মুন্সি।

আল-বদর তাদের নৃশংসতার সবচেয়ে বড় প্রমাণটি রাখে স্বাধীনতার মাত্র দুদিন আগে দেশসেরা বুদ্ধিজীবিদের নির্মমভাবে হত্যার মাধ্যমে। পাকিস্তানী সেনাদের এই সহযোগী বাহিনীদের বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন ১৯৭৩ এর ধারায় সুস্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে। বর্তমানে জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী সেসময় নিখিল পাকিস্তান ইসলামী ছাত্রসংঘের সভাপতি ছিলেন আর সেক্রেটারী জেনারেল আলী আহসান মুজাহিদ ছিলেন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র সংঘের প্রধান। জামায়াতের মুখপাত্র দৈনিক সংগ্রামের পরতে পরতে ছড়িয়ে আছে তাদের এসব কীর্তিকলাপ ও বক্তব্যের নানা নমূনা। তাই মুখে তারা যতই অস্বীকার করার চেষ্টা করুন, লাভ নেই।

হত্যা-ধর্ষণ-লুন্ঠনে সহযোগের প্রমাণ তারা মুছে ফেলতে পারবেন না। স্বাধীনতার পর ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়। সুবাদেই রাজনীতি করার অধিকার হারায় জামায়াত, মুসলিম লীগ, পিডিপি, নেজামে ইসলামীসহ অন্যরা। গোলাম আযম হারান নাগরিকত্ব, ফেরার হয়ে যান তার দলের অন্যরা। কেউ কেউ ধরা পড়ে, জেল খাটে।

এদের অন্যতম শহীদুল্লাহ কায়সারের অপহরণকারী জামাতের দপ্তর সম্পাদক আবদুল খালেক মজুমদার। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধূ শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর ফের রাজনৈতিকভাবে পুনর্বাসিত হয় জামায়াত। তারপর থেকেই নিজেদের অধিষ্টানের জন্য মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে নানা অপপ্রচার শুরু করে তারা। কলঙ্কিত করতে থাকে স্বাধীনতা যুদ্ধে মহান ভূমিকা রাখা বিভিন্ন ব্যক্তিত্ব ও মুক্তিযোদ্ধাদের। একই সময় তাদের দোসর অন্য ইসলামী দলগুলোও রাজনীতির লাইসেন্স ফিরে পেয়েছিলো।

কিন্তু তাদের কেউ যোগ দিয়েছে জাতীয়তাবাদী দলে, কেউ জাতীয় পার্টিতে। মোটের উপর মুসলিম লীগ বা নেজামে ইসলামী স্রেফ সাইনবোর্ড সর্বস্ব দল হয়ে এক পর্যায়ে হারিয়ে গেছে দৃশ্যপট থেকে। কিন্তু জামায়াতে ইসলামী গুছিয়ে শুরু করেছে। শুরুতে আব্বাস আলী খান ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক এলায়েন্সের নামে তাদের সংঘবদ্ধ করে। তারপর জামায়াত নিজেদের নামেই ফের রাজনীতি শুরু করে, সেই একই মুখগুলো নিয়েই।

শুধু আল-বদর ঘাতকদের ইসলামী ছাত্র সংঘ নাম পাল্টে ফেলে ইসলামী ছাত্র শিবির হয়ে যায়। আর তাদের নেতৃত্ব হাল ধরে জামায়াতের। যুদ্বাপরাধীদের বিচারের কাঠগড়ায় এখন যদি দল বেধে তাদেরকে উঠতেই হয়, সেই দায় নিশ্চয়ই তাদের। সরকারের নয়। ’৯২তে বিচারের দাবিতে আন্দোলনের শুরুতেও শহীদ জননী জাহানারা ইমামকে জাহান্নামের ইমামে বলে উপহাস করেছে তারা।

কবি শামসুর রাহমান ও হুমায়ুন আজাদের মতো বুদ্ধিজীবিদের মুরতাদ বলে ফতোয়া দিয়েছে। এ সরকার ক্ষমতা নেয়ার পরও তাদের পিঠ বাচানোর ষড়যন্ত্র থেমে থাকেনি। পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় সেনাবাহিনীকে ক্ষমতা নিতে উস্কানী, পার্বত্য চট্টগ্রামে অস্থিরতা সৃষ্টি, মাদ্রাসা ছাত্রদের উস্কানী এরকম বিভিন্ন ঘটনায় সম্পৃক্ত হয়ে তারা তাদের কূটচাল জারি রেখেছে। পাশাপাশি নিজেদের গণমাধ্যম ব্যবহার করে বিভ্রান্তিমূলক অপপ্রচারও থেমে নেই। জামায়াতের স্বরূপ উন্মোচনের জন্য বেশী কিছুর প্রয়োজন নেই।

২০০৮ সালে তারা কথিত মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশের নামে এক ভন্ডামীর আয়োজন করে। সেখানে এই পরিহাসের প্রতিবাদে ফুঁসে ওঠেন একজন বৃদ্ধ মুক্তিযোদ্ধা শেখ মোহাম্মদ আলী আমান। টিভি ক্যামেরার সামনে সরাসরি প্রচারিত হয় তার প্রতিবাদ। তিনি বলেন –এই যুদ্ধাপরাধীদের ফাসিতে ঝুলিয়ে বিচার করা উচিত। এরপর জামাতের নেতা-কর্মীরা লাথি মেরে তাকে সেই সাজানো সম্মেলন থেকে বের করে দেয়।

সেই লাথির দৃশ্যও ক্যামেরাবন্দী হয়। আর বার্তাটা পৌছে যায় সারা দেশে। জামায়াতের হাতে মুক্তিযোদ্ধার নিগ্রহ হওয়া নতুন কিছু নয়, এবং তাদের হাতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও অর্জন এক বিন্দুও নিরাপদ নয়। অথচ তাদের অস্বীকার ও মিথ্যার রাজনীতি তারা চালিয়ে যাচ্ছে। যুদ্ধাপরাধের বিচার শুধু তাদের নির্মমতার বিচারই নয়।

ইতিহাসে তাদের অবস্থানটা নির্ধারণ করে দেওয়া। আমাদের ইতিহাসের সঠিক বিনির্মাণের জন্যই এটা জরুরী। কিন্তু সরকার আসলে কিসের অপেক্ষায়? জনগন যেখানে সবুজ সংকেত দিয়ে রেখেছে ভোটের মাধ্যমে সেখানে কি কারণে তারা সময় পার করছেন? কেনো নিজের পায়ে কুড়োল মারছে আওয়ামী লীগ? নাকি লুটপাট আর ধান্দাবাজিতে চোখমুখ আধার আমাদের মন্ত্রী মিনিস্টারদের। আর প্রধানমন্ত্রী এসব দেখেও দেখছেন না। ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিন মাননীয়রা।

সব লুটে সীমানা পেরিয়ে গেলেই আসান নেই, জনগন আর যাই হোক তাদের আবেগ নিয়ে প্রতারণা কখনও ক্ষমা করে না। কৃতজ্ঞতা : একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির আলোচনা অনুষ্ঠান ও বিভিন্ন বই থেকে সংগ্রহিত।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.