আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিশ্বসাহিত্যের অন্যতম সেরা ছোটগল্প লেখক আন্তন পাভলোভিচ চেখভের ১৫৪তম জন্মদিনে শুভেচ্ছা

আমি সত্য জানতে চাই

রুশ চিকিৎসক, ছোটগল্পকার এবং নাট্যকার আন্তন পাভলোভিচ চেখভ। আন্তন চেখভ নামে যিনি সমাাধিক পরিচিত। আন্তন চেখভকে বিশ্বসাহিত্যের অন্যতম সেরা ছোটগল্প লেখক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ১৮৮০ থেকে ১৯০৩ সালের মধ্যে তিনি সর্বমোট ৬০০টি সাহিত্যকর্ম রচনা ও প্রকাশ করেন। তাঁর ছোটগল্পগুলো লেখক, সমালোচক সমাজে প্রভূত সমাদর অর্জন করেছে।

নাট্যকার হিসেবে পেশাজীবনে চেখভ চারটি ক্ল্যাসিক রচনা করেন। শুরুতে নাট্যকার হিসেবে তিনি আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিতি পান থ্রি সিস্টারস, দ্য সীগাল এবং দ্য চেরি অরচার্ড এই তিনটি নাটকের মাধ্যমে। সেই সময়ে সাহিত্য জগতের কীর্তিমান ব্যক্তিদের মধ্যে চেখভ ছিলেন দ্বিতীয়। তলস্তয়ের পরপরই ছিল তাঁর অবস্থান। সবচেয়ে বেশি সংখ্যক নাটক মঞ্চস্থ হয়েছে এমন নাট্যকারদের মাঝে শেকসপিয়র ও ইবসেনের পাশাপাশি চেখভের নামও উল্লেখ করা হয়।

আজ এই নাট্যকারের ১৫৪তম জন্মদিন। ১৮৬০সালের আজকের দিনে তিনি রাশিয়ার তাগানরোগ শহরে জন্ম গ্রহণ করেন। ছোটগল্প লেখক আন্তন পাভলোভিচ চেখভের জন্মদিনে ফুলেল শুভেচ্ছা।

(১৮৬০ সালে আন্তন চেখভ এই বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন)
আন্তন পাভলোভিচ চেখভ ২৯শে জানুয়ারী ১৮৬০ সালে দক্ষিণ রাশিয়ার তাগানরোগ শহরে এক সওদাগরের পরিবারে জন্মগ্রহন করেন। চেখভের পিতা, পাভেল জেগোরোভিচ চেখভ ছিলেন ভোরোনেজ প্রদেশের একজন প্রাক্তন ভূমিদাস কৃষক।

পাভেল চেখভের ছয় সন্তানের মধ্যে আন্তন চেখভ ছিলেন তৃতীয়। চেখভের পিতা চেখভকে ও তাঁর এক ভাই নিকোলাইকে গ্রিক স্কুলে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু স্কুলটি চলছিল অসফলভাবে এবং দুই বছর পরেই এটি পরিণত হয় তাগানরোগ শরীরচর্চা কেন্দ্রে, আর এখন একে বলা হয় “চেখভ জিমনেসিয়াম”।

(উনিশ শতকের শেষভাগে তাগানরোগ চেখভ জিমনেসিয়াম। )
স্কুলে চেখভের কৃতিত্ব ছিল গড়পড়তা মানের।

প্রথমে তিনি গ্রীক পদ্ধতির স্কুল শেষ করেন, তার পর রুশ ধারার স্কুলে পড়াশোনা শুরু করেন এবং একই সঙ্গে বাবার দোকানে কাজ করা শুরু করেন। ১৮৭৬ সালে বাবার ব্যবসায় ক্ষতি হয় ও তিনি সপরিবারে মস্কো চলে যান। চেখভ এর পর তিন বছর তাগানরোগে ছিলেন। মস্কো এসে তিনি অনতিবিলম্বে মস্কো বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিত্সা বিদ্যার শাখায় যোগ দেন। এই সময়ে সাহিত্যিক কাজকর্ম থেকেই তাঁর প্রধান আয় হত।

১৮৮৪ সালে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ সাঙ্গ করে মস্কোর উপকন্ঠে ডাক্তারী করা শুরু করেন। একই সঙ্গে চালু রাখেন সাহিত্য চর্চা। তিনি বলতেনঃ " ডাক্তারী হল আমার বৈধ স্ত্রী আর সাহিত্য হল অবৈধ প্রেম"

(১৯৮২ সালে ভাই নিকোলাই এর সাথে চেখভ (বামে))
১৮৯০ সালের শুরুতে বাস্তবেই রাশিয়ার সবচেয়ে প্রিয় লেখক হয়ে ওঠেন আন্তন পাভলোভিচ চেখভ। তাঁর নামের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গি ভাবে জুড়ে গিয়েছিল "জীবন মুখী" লেখকের উপাধি। যিনি সমাজের সমস্যার কথা বলেন. ১৮৯০ সালে চেখভ সাখালিন দ্বীপের নির্বাসিত দের শিবির পরিদর্শনে গিয়েছিলেন, সেখানে তিন মাস সময়ের মধ্যে আন্তন পাভলোভিচ ডাক্তার, সমাজ বিদ ও গবেষকের কাজ করে এখানের অসংখ্য বন্দীর কথা লিপিবদ্ধ করেন।

জন গণনার কাজ করে প্রায় দশ হাজার লোকের হিসাব করেন।

(মেলিখোভো, এখন একটি জাদুঘর)
১৮৯২ সালে চেখভ মস্কোর উপকন্ঠে মেলিখোভো বলে একটি গ্রামের জমিদারী কিনে নেন এবং সেখানে তাঁর সামাজিক কাজকর্ম শুরু করেন। এখানে তিনি নিজের খরচে ডাক্তার খানা, চাষীদের ছেলেমেয়েদের জন্য তিনটি স্কুল খোলেন ও একটি পোস্ট অফিস ও টেলিগ্রাফের জন্য সুপারিশ করে তা বহাল করতে সক্ষম হয়েছিলেন। এই সময়েই তিনি তাঁর বিখ্যাত রচনাঃ
১। ছয় নম্বর ওয়ার্ড, ২।

খোলসের মানুষ, ৩। ইওনীচ, ৪। রাস্প বেরী ও ৫। গ্রামের ইতিকথা নামে ধারাবাহিক লেখা শেষ করেন। সাথে তিন বছর নামের উপন্যাস এবং ১।

চাইকা (গাঙচিল), ও ২। ইভান খুড়ো (চাচা ভানিয়া) নামের নাটক লেখেন।


(১৯০১ সালে মধুচন্দ্রিমায় চেখভ এবং ওলগা)
১৮৯৭ সালে চেখভের যক্ষা রোগ বেড়ে যায়, আর তিনি হেমন্ত ও শীত কাল নিতসে ও প্যারিসে কাটিয়ে ১৮৯৮ সালের সেপ্টেম্বরে কৃষ্ণ সাগর তীরের ইয়ালতা শহরে ফিরে আসেন। সেখানে স্বাস্থ্য বজায় রেখে চেখভের পক্ষে যতটা সম্ভব হয়েছিল, ততটাই তিনি সমাজ সেবা করতে থাকেন। ১৯০১ সালের মে মাসে আন্তন পাভলোভিচ ও মস্কো আর্ট থিয়েটারের অভিনেত্রী ওলগা ক্নিপ্পের বিয়ে করেন।

এই সময়ে চেখভের স্বাস্থ্য খুবই খারাপ হয়ে গিয়েছিল। ১৯০৪ সালে তাঁর লেখা আরও একটি নাটকের মঞ্চাভিনয়ের ব্যবস্থা হয়ঃ সে বিখ্যাত নাটকের নাম মঞ্জরী আমের মঞ্জরী (চেরি ফলের বাগান)। এই নাটকটি চেখভের লেখা শেষ শিল্প কর্ম। মৃত্যুর কয়েকমাস আগে চেখভ লেখক ইভান বুনিনকে বলেছিলেন যে তাঁর ধারণা লোকে তাঁর লেখা আর সাত বছর পড়বে। বুনিনের প্রশ্ন ছিল, "সাত কেন?" "ঠিক আছে, সাড়ে সাত", চেখভের জবাব।

"মন্দ নয়। আমি বেঁচে আছি আর বছর ছয়েক। "


(তোমস্ক শহরে চেখভের প্রতিমূর্তি)
১৯০১ সাল থেকেই যক্ষা রোগ তাঁকে কাবু করে ফেলেছিল। ১৯০৪ সালের ১৫ই জুলাই রাতে তাঁর খুব খারাপ লাগতে থাকে, দেখতে আসা ডাক্তারকে তিনি শান্ত গলায় আত্ম বিশ্বাসের সঙ্গে বলেনঃ "আমি মারা যাচ্ছি"। তার পর আস্তে ধীরে শ্যাম্পেন ঢেলে খেয়ে শুয়ে পড়েন ও তাঁর দেহাবসান হয়।

মস্কোর নভোদেভিচি কবর খানায় চেখভ কে কবর দেওয়া হয়। বিনয়ী ও নিরহঙ্কার চেখভ তাঁর মরণোত্তর খ্যাতির এই ব্যাপ্তির কথা কল্পনাও করতে পারেননি। যে বছর তিনি মৃত্যুবরণ করেন, সে বছরে দ্য চেরি অরচার্ডের বিপুল সংবর্ধনা এ কথাই প্রকাশ করে যে রুশ জনগণের মনের কতটা উচ্চাসনে তিনি স্থান করে নিয়েছেন।

বিশ্বসাহিত্যের অন্যতম সেরা ছোটগল্প লেখক আন্তন পাভলোভিচ চেখভের আজ জন্মদিন। আজ তাঁর ১৫৪তম জন্মদিন।

ছোটগল্প লেখক ও নাট্যকার আন্তন পাভলোভিচ চেখভের জন্মদিনে ফুলেল শুভেচ্ছা।
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।