আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কথাচ্ছলে মহাভারত - ৫১




ভীমের বিষপানঃ

মুনি বলেন, অন্তপুরে কুন্তীদেবী পঞ্চপান্ডবদের নিয়ে বাস করলেন।
কৌরব–পান্ডব মিলে পঞ্চোত্তর শত ভাই। তারা বেদ-শাস্ত্র অধ্যয়ন করেন। বালকদের যত ক্রীড়া সংসারে আছে সব তারা মহানন্দে খেলেন।
ক্রীড়ারসে শ্রেষ্ঠ হন এই পঞ্চ সহোদর।

তাদের মধ্যে আবার শ্রেষ্ঠ হলেন বৃকোদর ভীম। মহাবলবন্ত ভীম যেন যম। তার মত শক্তিশালী আর কোন ভাই নয়। পবনের মত দৌড়ায়, সিংহের মত হাঁক ছাড়ে, হাতির মত আস্ফালন করে, মেঘের মত ডাকে। যে দিক দিয়ে ভীম বেগে ধায় দশ-বিশ জন তার ভুজাস্ফালনে মাটিতে গড়াগড়ি যায়।

ক্রোধে সবাই তাকে একসাথে চেপে ধরে। অবহেলায় বৃকোদর শরীর ঝাঁকায়। ফলে কিছু মাটিতে পড়ে অচেতন হয়ে পরে, কিছুর পিঠে, গায়ে, নাকে রক্ত ঝরে। ভীম দু’হাতে সবাইকে ধরে চক্রাকারে ঘোরায় আর বালকরা পরিত্রাহি চিৎকার করে প্রাণের ভয়ে। মৃতকল্প প্রায় হলে ভীম তাকে ছারে।


জলের মধ্যে বালকরা খেললে ভীম একবারে দশজনকে ধরে জলের ভিতর ডুবে দুই কোলে চেপে ধরে, দুর্বল করে তবেই ছাড়ে। এসব কারণে কেউ ভীমের কাছে যায় না। ভীমকে জলে দেখলে সবাই তীরে অবস্থান করে।

ফলের সন্ধানে সবাই গাছে উঠলে, ভীম নিচে দাঁড়িয়ে পা দিয়ে গাছে আঘাত করে। তার চরণের ঘায়ে বৃক্ষ থরথর্‌ করে কাঁপে, ফলের সাথে ভাইরাও টুপ্‌টাপ্‌ ঝরে পরে।

এভাবে দেখা যায় বালককালেই ভীম মহাপরাক্রম। তার কাছে তাই কোন বালক যায় না, তাকে যম সম ভয় পায়। ভীমের মনে কোনও হিংসে ছিল না, তবু সে বালকসুলভ প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য কৌরবদের অপ্রিয় হল।


দুর্যোধন এসব দেখে খুব চিন্তিত হল। বালক বয়সেই ভীম এত পরাক্রমী, বয়স বারলে এ আরো শক্তিশালী হয়ে উঠবে।

ভীম তার জন্য মঙ্গলময় নয়-এসব ভেবে দুর্যোধন বিচার করতে বসলো মুক্তির উপায়। ভীমকে মারতে পারলেই সব তার হাতে। বাকি চার ভাইকে বন্ধি করে রাখলেই হবে। তবেই সে নিষ্কন্টক হয়ে রাজ্য শাসন করতে পারবে। যে বয়সে মানুষ হিংসা অহঙ্কার বোঝে না, সে কালেই দুর্যোধন এসব চিন্তা করতে থাকে।



বিচার বিবেচনা করে দুর্যোধন অনুচরদের ডেকে গঙ্গাতীরে প্রমাণকোটি-যেখানে গহনকানন সেই বিচিত্রস্থলে উদকক্রীড়ন নামে এক আবাস নির্মাণের নির্দেশ দেয়। সুন্দর ঘর স্থানে স্থানে নির্মাণ করে তাতে চর্ব-চোষ্য-লেহ্য-পেয় রথে পুরে সকল গৃহের মধ্যে পূর্ণ করতে নির্দেশ দেয়। আজ্ঞামাত্র অনুচররা নির্দেশ পালন করে। তারপর দুর্যোধন সকল ভ্রাতাদের ডেকে বলে আজ গঙ্গাজলে সবাই চল জলক্রীড়া করতে যাই। খাদ্য বস্তুরও অভাব নেই, সবই মজুত।

শুনে যুধিষ্ঠিরও রাজি হয়। এভাবে পঞ্চোত্তর শতভাই একত্র হয়ে রথ, গজ, অশ্বযানে আরোহন করে। প্রমাণকোটিতে দুর্যোধন সকলকে নিয়ে চললো। অতি মনোহর বিচিত্র কানন –প্রমাণকোটি। সকলে সেখানে আহারে বসলো।

নানান খাদ্যসামগ্রী দেখে বালকরা আনন্দিত হলো। একে অপরকে আনন্দে খাওয়াতে লাগলো।
এসময় ক্রূর দুর্যোধন দুষ্ট কালকূট বিষ খাবারের সাথে মিশিয়ে ভীমকে খাইয়ে দিল। কেউ কিছু বুঝতে পারলো না। দুর্যোধন অতি আনন্দিত হল।

ভীম মহানন্দে অনেক আহার করলো। খাওয়ার পর সবাই আনন্দে জলক্রীড়া করতে নামলো। গঙ্গায় নেমে সবাই আনন্দে একে অপরকে জলে ফেলতে থাকে।
এদিকে জলের ভিতর ভীম ক্রমে হীনবল হয়ে পরে। ক্রীড়ায় শ্রান্ত বালকদল পুনরায় প্রমাণকোটিতে ফিরে আসে।

দিব্যবস্ত্র, অলঙ্কারাদি পরিধান করে, আহার গ্রহণ করে সকলে রত্নময় পালঙ্কে শয়ন করল।

এদিকে বিষে জারিত ভীম অচেতন হয়ে পরল। সবাই নিদ্রা গেলেও দুর্যোধন জেগেছিল। অচেতন ভীমকে দুর্যোধন দ্রুত বেঁধে ফেললো। হাত-পা বেঁধে তাকে গঙ্গায় ফেলে দিল।


.....................................
উৎসর্গ: সকল ব্লগার বন্ধুকে
......................................
আগের পর্ব:

কথাচ্ছলে মহাভারত - ৫০
Click This Link
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।