আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জামায়াতের হরতাল ফ্লপ



দশ ট্রাক অস্ত্র মামলায় মতিউর রহমান নিজামীকে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার প্রতিবাদে জামায়াত-শিবিরের ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতাল দেশব্যাপী প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। স্বাধীনতা বিরোধী এ চক্রের ডাকা বৃহস্পতিবারের হরতালে জনগণ সাড়া না দেয়ায় সারাদেশে জনজীবন ছিল স্বাভাবিক। হরতাল ডেকে মাঠে ছিল না জামায়াত-শিবির। দেখা গেছে নামকাওয়াস্তে হরতালের চেহারা। দু’একটি স্থানে আগুন দেয়া, ঝটিকা মিছিলেই শেষ জামায়াতের হরতাল।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর নজরদারিতে অপচেষ্টা করেও কোথাও বড় ধরনের নাশকতা করতে পারেনি তারা। রাজধানীসহ বিভাগীয় শহরের যান চলাচলও ছিল স্বাভাবিক। রাজপথে পরিবহন এমনকি স্বাভাবিকভাবেই চলাচল করেছে প্রাইভেটকার। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ওপর কিছুটা প্রভাব পড়লেও খোলা ছিল অধিকাংশ মার্কেট। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে জামায়াতের কর্মসূচী প্রত্যাখ্যান করে হরতাল বিরোধী মিছিল সমাবেশ করেছে আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনগুলো।


২০০৪ সালে চট্টগ্রমের সিইউএফএল জেটিঘাটে দেশের সবচেয়ে বড় অস্ত্রের চালান আটকের ঘটনায় সম্পৃক্ততার দায়ে তখনকার জোট সরকারের শিল্পমন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামী এবং তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বিএনপি নেতা লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ১৪ আসামিকে ৩০ জানুয়ারি ফাঁসির আদেশ দেয় চট্টগ্রামের একটি আদালত। আমির নিজামীর ফাঁসির আদেশ প্রত্যাখ্যান করে প্রথমে সোমবার হরতাল দেয় জামায়াত। পরে তা পিছিয়ে বৃহস্পতিবার আহ্বান করা হয়। জামায়াতের সূত্রগুলো বলছে, স্রেফ ‘প্রেস্টিজিয়াস’ কারণে হরতাল দিয়েছে দলটি। গত বৃহস্পতিবার ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় রায়ের পর জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে ১৯ দলের হয়ে হরতালের চেষ্টা করা হয়েছিল।

রায়ের প্রতিবাদে ১৯ দলীয় জোট থেকে কর্মসূচী বের করে নেয়ার চিন্তা-ভাবনা হলেও জোটপ্রধান বিএনপি সাড়া দেয়নি, অনীহা দেখায় শরিকরাও। ফলে, জোটগত কর্মসূচী না দেয়ায় দলটির আমির-প্রশ্নে যে কোনও কর্মসূচী দেয়ার বিষয়টি জামায়াতের কাছে প্রেস্টিজিয়াস ইস্যু হয়ে দাঁড়ায়। ফল হিসেবে, এককভাবেই কর্মসূচী দেয় দলটি। ১৯ দলীয় জোটের শরিক খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় এক নেতা বলেন, আইনের বিরুদ্ধে হরতাল দিয়ে কী হবে। ১০ ট্রাক মামলার আইনী লড়াই এখনও বাকি আছে।

তাছাড়া জোটের আন্দোলন তো একটি দলের চাহিদাকেন্দ্রীক হবে না। বৃহস্পতিবার হরতাল ডেকে জামায়াত-শিবিরকর্মীরা মাঠে না থাকায় কারণেই জনজীবন স্বাভাবিক ছিল বলে মনে করছেন অনেক সাধারণ মানুষ। এ ছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতারও প্রশংসা করেছেন তাঁরা। এ বারের হরতালে সকালেই প্রচুর যানবাহন চলাচল শুরু হয়। ঢাকার আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালগুলো থেকে অনেক দূরপাল্লার বাসও ছেড়ে যায়।

স্বাভাবিক ছিল ঢাকার সঙ্গে আশপাশের সকল জেলার যোগাযোগ। বন্ধ রাখা হয়নি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। রাজধানীর শাহবাগ, ফার্মগেট, বিজয় সরণি, নাবিস্কো, মহাখালী, বনানী, গুলশান, বারিধারা ও বাড্ডা ঘুরে দেখা গেছে, পাবলিক পরিবহনের চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। বিআরটিসি বাসের পাশাপাশি বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী ব্যক্তিমালিকানাধীন বাসের ভিড়ও ছিল চোখে পড়ার মতো। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সরকারী-বেসরকারী সবপ্রতিষ্ঠান খোলা রয়েছে।

শিশুদের প্রতিষ্ঠান হওয়ায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে হরতালের প্রভাব পড়লেও অধিকাংশ মাধ্যমিক স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়, এমনকি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়েও কার্যক্রম চলেছে। হরতালের সমর্থনে সকালে রাজধানীর মগবাজারে জামায়াত এবং খিলগাঁও, জুরাইন, হাজারীবাগ ও ধানম-ি এলাকায় ঝটিকা মিছিল করেছে ছাত্রশিবির। পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সতর্ক থাকায় হরতাল ডেকেও সক্রিয়ভাবে মাঠে নামতে পারেনি জামায়াত-শিবির। হরতালকে ঘিরে রাজধানীতে নেয়া হয়েছিল কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে অতিরিক্ত পুলিশ ও র‌্যাব মোতায়েন করা হয়।

কোথাও কোথাও জলকামানও প্রস্তুত রাখা হয়।
স্টাফ রিপোর্টার রাজশাহী থেকে জানিয়েছেন, হরতাল শুরুর আগে বুধবার রাত ৯টার দিকে রাজশাহীতে মাছবাহী ট্রাকে আগুন দিয়ে ব্যাপক আতঙ্ক সৃষ্টি করে জামায়াত-শিবির। শুরুর পর বৃহস্পতিবার বিভিন্নস্থানে চোরাগোপ্তা হামলা ও নাশকতার চেষ্টা চালানো হয়েছে। পিকেটিংয়ের নামে নগরীর কয়েকটি স্থানে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও সড়কে পেট্রোল ঢেলে আগুন দেয় শিবিরকর্মীরা। এ নিয়ে কয়েক দফায় জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে ধাওয়া পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে পুলিশের।

সকাল ৯টার দিকে শিবিরকর্মীরা নগরীর ডিঙ্গাডোবা এলাকায় পিকেটিং করে। এ সময় তারা রাস্তায় ইট ভেঙ্গে আতঙ্ক সৃষ্টির চেষ্টা করে।
রাজধানীতে হরতাল বিরোধী সমাবেশ ও মিছিল ॥ হরতাল প্রত্যাখ্যান করে হরতালবিরোধী মিছিল ও সমাবেশ করেছেন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা হরতালবিরোধী মিছিল করে। জামায়াত-শিবির যাতে কোনভাবেই নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে না পারে সে লক্ষ্যে সকাল থেকেই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান নেয়।

বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে এসে অবস্থান নেয়। এ সময়ে তাঁরা দলীয় কার্যালয়ের সামনে বিভিন্ন সেøাগান দিতে থাকে এবং খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। দলীয় কার্যালয়ের সামনে জামায়াতের হরতালের প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে আওয়ামী সমর্থক জোট। সংগঠনের আহ্বায়ক আব্দুল হক সবুজের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং দুর্যোগ ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুুরী মায়া বীরবিক্রম, খাদ্যমন্ত্রী এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মুকুল চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
মানববন্ধনে মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষার এ হরতাল জনগণ ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে।

সারাদেশের সব স্থানে বাস-ট্রেনসহ সব ধরনের যানবাহান চলাচল করছে। এ সময় কামরুল ইসলাম বলেন, দেশের বিরুদ্ধে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ষড়যন্ত্র করছেন। তাই আমাদের সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। তিনি বলেন, জামায়াতের হরতাল মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে সব স্থানে দোকান খোলা আছে। রাস্তায় বাসসহ সব ধরনের যানবাহন চলছে।

জামায়াত-শিবিরের অনৈতিক হরতালের প্রতিবাদে আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ নগরীতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে। মিছিলটি বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে শুরু হয়ে গুলিস্তান, জিপিও, পল্টন মোড় হয়ে দলীয় কার্যালয়ের সামনে এসে শেষ হয়। সেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি এ্যাডভোকেট মোল্লা মোঃ আবু কাওছার ও সাধারণ সম্পাদক পংকজ দেবনাথ মিছিলে নেতৃত্ব দেন।
জামায়াতের ডাকা হরতালের প্রতিবাদে ‘জামায়াত শিবিরের হরতালের প্রতিবাদে সমাবেশ, মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল’ করেছে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট। রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি শুরু করে নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।

সমাবেশে আওয়ামী লীগ নেতা এ্যাডভোকেট বলরাম পোদ্দারের সভাপতিত্বে সমাবেশে পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান, স্বাধীনতা শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ শাহজাহান আলম সাজু, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক অরুন সরকার রানা প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। বেলা সাড়ে ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ঢাকা বিভাগ শ্রমিক লীগ জামায়াতের হরতালের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে। সংগঠনের সভাপতি মোঃ নুরুল ইসলামের সভাপতিত্বে এ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিভাগ শ্রমিক লীগের সহসভাপতি আর এ জামান, এম এ কাশেম, সাধারণ সম্পাদক ইনসুর আলী প্রমুখ। বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আওয়ামী যুবলীগ হরতালবিরোধী সমাবেশের আয়োজন করে। সমাবেশে যুবলীগের নেতারা বক্তব্য রাখেন।

এ ছাড়াও হরতালবিরোধী মিছিল করেছে ছাত্রলীগ, আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা লীগ, আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্মলীগ, ওলামা লীগসহ অন্যান্য সংগঠন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.