আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

৭৩২টি গ্লানিময় দিবস ধরে আর্তনাদ করছি: সহব্লগার হত্যার বিচার চাই

বিচ্যুত যৌবনে জোছনা আমায় করেছে উম্মাদ



বিচারের জন্য আহাজারি ৭৩২ টি দিন ধরে

.... সাগর রুনি হত্যার আজ ১১৩ তম দিন। আমরা অন্ধকারে এখনো।

.... সাগর রুনি হত্যার আজ ৩৪১ তম দিন। আমরা অন্ধকারে এখনো



.... সাগর রুনি হত্যার আজ ৬৮৭ তম দিন। আমরা অন্ধকারে এখনো।



সামু ব্লগ এভাবেই দিন গুনে চলছে। আমরাও সামুতে এভাবেই দিন গুনছি। ক্যালেন্ডারে বাকীর পাতায় আরো একটা হতাশার গ্লানিময় দিন জমা হয়। এভাবে আরো একটি সপ্তাহ, আরো একটি মাস আরো একটি বছর। আমাদের ধুসর স্মৃতিপটে বেদনার কোদাল চলছে ৭৩২ টি দিন ধরে।

আজো সেই ব্যানারটি গ্লানি আর হতাশার প্রতীক হয়ে ঝুলছে প্রথম পাতায়।

আমি প্রায় প্রতিদিনই ব্লগে আসি। কারন আমার ঠিকানা এই ব্লগ। কিন্তু যখনই আমি এই প্রিয় ব্লগটাতে লগিন করি তখনি একটা হোঁচট খাই। মনে হয় কেউ একজন আমার বিবেকের শেকড়ে লাত্থি দিলো।

সেই অপমানজনক লাত্থি বা উস্টাগুলো শব্দের গাঁথুনিতে বসানো একটি বাক্যের নিনাদ মাত্র। বলে আজ ৪৭০ তম দিন, আজ ৫২২ তম দিন। কিন্তু এই বাক্যটির তীব্র খোঁচা আর তার থেকেও তীব্রতর আঘাতে আমি আহত হই। আমি লজ্জিত হই। আমি নতজানু হয়ে ইশ্বরের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি।

আমার এই লজ্জা একান্ত আমার। এই লজ্জা প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করছে আমার বিবেকের সাথে। বিবেক হেরে যায়, হায় আমার বিবেক হেরে যায় আমার লজ্জার কাছে, বিবেক হেরে যায় আমাদের সমাজের শদন্ত, লোভী, নীচ আর শঠদের কাছে । তবুও এই লজ্জাবনত মস্তক একটু একটু করে তুলে তাকিয়ে দেখি দুটি হাস্যোজ্জল চেহারা তাকিয়ে রয়েছে আমার দিকে।



যেনো একজোড়া কবুতর

আমি তাদের এই অমলিন হাসির আড়ালে দেখি রক্তমাখা একজোড়া সাদা কবুতরের বেঁচে থাকার আকুতি।

ঘন্টা কয়েক পরে ভোরের আলো দেখার জন্য তীব্র চাপা আর্তনাদ। নিশ্চয় সেদিনের সেই ঠান্ডা মাথার খুনি কাছে অনেক মিনতি করেছিলেন আমার ভাই সাগর, আমার বোন রুনি। শিশু সন্তান মেঘের কথা ভেবে নিশ্চয় বেঁচে থাকার জন্য ছটফট করছিলো সাগর-রুনি। আহা মানুষের কি পাষন্ড হৃদয়। কি ভয়ানক পশুবৃত্তি নিয়ে সেদিন ঝাঁপিয়ে পরেছিলো ঘাতক এই নিরস্ত্র, নিরীহ দম্পতির উপর।

নিরপরাধ মানুষ গুলোর উপর। হ্যা আমি মানুষ বলছি। সাগর রুনির সবচেয়ে বড় পরিচয় মানুষ। মানুষের উপর বড় কিছু এ পৃথিবীতে নাই। তাই আজ হত্যাকান্ডের ৭৩২ তম দিন পরেও আমাদের মন কাঁদে, আমাদের মন বিষন্ন হয় সাগর রুনিদের জন্য।

মেঘের জন্য।



মেঘ নিশ্চয় বড় হবে, অনেক বড়

মেঘের একটা ছবি দেখেছিলেম বাবা-মায়ের কবরের পাশে বিষন্ন হৃদয়ে বসে বসে কাঁদছে। আমি বিশ্বাস করি ছোট্ট মেঘের অশ্রুতে যে কষ্ট লুকিয়ে আছে তা আকাশ সমান নীল বেদনার চেয়ে অনেক বেশী। যে ছবিটা প্রতিদিন আমি ব্লগের পাতায় দেখি সেই হাস্যোজ্জল ছবিটির পেছনে আমি আরো একটি ছবি দেখি, সেই ছবিটি হচ্ছে মেঘের ছবি। দেখি শিশু মেঘ মলিন মুখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।

তার সেই মলিন চেহারায় প্রতিশোধের কোন ছাপ নেই। প্রতিশোধ কি জিনিস তা হয়তো সে এখনো বুঝেই না। মেঘ যেন তার নামকে সার্থক করতে পৃথিবিতে এসেছে। মেঘের আকাশ জুড়ে মেঘ। সারক্ষন মেঘেরই খেলা।

কিন্তু একদিন এই মেঘ নিশ্চয় বড় হবে। তার মাথার উপর থেকে সব মেঘ দূর হবে।



মন্ত্রী আসেন, মন্ত্রী যান- আমাদের জন্য শুধুই আশ্বাস

যেভাবে আমরা দিন গুজার করছি তাতে মনে হচ্ছে সাগর রুনি হত্যার বিচার আমরা কোনদিন পাবো ন। ইতোমধ্যে সাগরের মা এই আশা ছেড়ে দিয়েছেন। তদন্তের কি অগ্রগতি, কতদূর অগ্রগতি তার কোন আপডেট আমাদের কাছে নেই।

ইতোমধ্যে বাংলাদেশে দুই স্বরাস্ট্রমন্ত্রী বিদায় হয়ে তৃতীয় জন চলে এসেছেন। একের পর এক আশ্বাস পাচ্ছি। কিন্তু খুনি ধরাতো দূরের কথা ডিএনএ টেস্ট রিপোর্টই শেষ হয়নি গত দু বছরে। তাই বলা চলে তদন্ত কার্যত ব্যার্থ। এখানে প্রশ্ন থেকে যায় কেন একটা খুনের রহস্য উদঘাটন দু বছরেও শেষ হয়না।

সরকার অনেক কিছুই তড়িৎ গতিতে করতে পারেন, করছেন, ভবিষ্যতেও করবেন। কিন্তু দেশের এক সাংবাদিক দম্পত্তি হত্যার তদন্ত নিয়ে যে টাল বাহানা চলছে তাতে সরকার সদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন উঠে। গত দুবছরে এই জঘন্য হত্যাকান্ড নিয়ে আমাদের তিন স্বরাস্ট্র মন্ত্রীর বক্তব্য শুনলেই সহজেই অনুমেয় যে তার আসলে জাতী, নিহতের পরিবার ও এতিম শিশু সন্তানের সাথে এক ধরনের তামাশা করছেন। সাহারা খাতুন বলেছিলেন ৪৮ ঘন্টার মধ্যে খুনিদের গ্রেফতার করবেন। কিন্তু সেই ৪৮ ঘন্টা যে কবে শেষ হবে তা আল্লাহ মালুম।



এমন হবারতো কথা ছিলোনা

কেন আমরা একটা বিচারের জন্য কাঁদছি। আমাদের কি এই বিচার চাওয়ার জন্য মিছিল, মিটিং কর্মসূচী দেয়ার কথা? আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের উদ্দেশ্য কি এই ছিলো যে স্বাধীন বাংলাদেশে এভাবেই মানুষ খুন হবে আর সেই বিচারের বানী নিরবে নিভৃতে কাঁদবে? কখনোই না, একটা সুখী সমৃদ্ধশালী শান্তির নীড় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেই সেদিন দেশের সেরা সন্তানেরা ঝাঁপিয়ে পরেছিলেন। কিন্তু আজ এই দেশ ক্রমান্বয়ে দূবৃত্তদের হাতে চলে যাচ্ছে। একটি স্বাধীন গনতান্ত্রিক দেশে এমনটা কাম্য হতে পারেনা। প্রথম কথাই হলো এমন একটা হত্যাকান্ড কেন ঘটবে? আর ঘটেই থাকে যদি তাহলে খুনীদের ধরা হচ্ছে না কেনো? তাহলে কি আমরা খুব সহজেই উপসংহারে যেতে পারিনা? আমরা কি সহজেই বলতে পারি যে, সরকার ব্যার্থ।

অথবা সরকারের সদিচ্ছা নেই। আমরা এমনটি ভাবতে চাইনা। এই দেশটা অনেক রক্ত, অনেক লাশ, অনেক অশ্রু আর ঘামের বিনিময়ে পেয়েছি। এই দেশকে লুটেরা, খুনী আর দুবৃত্তদের হাতে যেতে দিতে পারিনা। এভাবে নিশ্চয় আমারদেশের এক খ্যাতিমান সাংবাদিক দম্পত্তির লাশের উপর দিয়ে গনতন্ত্র, স্বধীন বিচার ব্যবস্থা, আইন শৃংখলা পরিস্তিতির উন্নতি, নিরপেক্ষ নির্বাচন ইত্যাদি বিষয়ক বিলাসীতা চলতে পারেনা।

যতদিন এই মানুষ দুজনের হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও বিচারের আওতায় আনতে পারবেন না ততোদিন আমাদের জন্য থাকবে মানবাধিকার ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ধিক্কার।

তিনি ছিলেন আমাদের সহব্লগার

সাগর সরোয়ার শুধু একজন সাংবাদিকই ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন ব্লগার। এই সামুতেই আমরা একসাথে ব্লগিং করেছি। আমি, আপনি, সাগর সরোয়ার মিলে এই ব্লগটাকে গড়ে তুলেছি। তাই আমি শুধু মানুষ হত্যাই নয়, সাংবাদিক হত্যাই নয়, আমার সহ ব্লগার হত্যার বিচার চাই।

আমি সুষ্ঠূ বিচারে দোষীদের উপযুক্ত শাস্তির মাধ্যমে প্রতিশোধ চাই। আমরা যারা একই সময়ে সাগর সরোয়ারের সাথে ব্লগিং করেছি তাদের কাছে আমার মিনতি থাকবে। আপনাদের অনেকই সমাজের অনেক উপরে হয়তো উঠবেন, অনেক ক্ষমতাও হয়তো পাবেন, সেদিন যেনো একটি বারের জন্য হলেও আপনার এক কালের সহ ব্লগার সাগরের কথা ভেবে মৃতের লাল ফিতেবন্ধ ফাইলে একটু হাত বুলিয়ে নেবেন। আমার বিশ্বাস এভাবে কেবল ব্লগাররাই এই নৃসংশ হত্যার বিচারে ভুমিকা রেখে সত্যিকারের প্রতিশোধ নিতে পারবে। আগেই বলেছি মেঘ একদিন বড় হবে।

নিশ্চয় সে অনেক বড় হবে। মেঘে ঢাকা আকাশটাকে ফর্সা করে নিজ আলোয় আলোকিত হবে, চারপাশ আলোকিত করবে। সেদিন মেঘকে যেনো বাবার কবরের পাশে গিয়ে কাঁদতে না হয় সেই প্রার্থনা করি। মেঘের কানে কানে শুধু একটা কথাই বলবো, এই হত্যাকান্ডের প্রতিশোধ আমরা নেবোই।



[ সাগর-রুনি'র আজ দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী।

২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারী খুব ভোরে এই সাংবাদিক দম্পত্তিকে হাত-পা বেঁধে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। তাদের একমাত্র শিশু সন্তান মেঘ এর জন্য আফুরান ভালোবাসা ও মমতা থাকলো। ]

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।