আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

স্যুটকেস সমাচার



আমি ঘোরতর সংসারি একজন মানুষ। সংসারে থাকার নিরন্তর প্রচেষ্টাই আমাকে মাঝে মাঝে সংসারের বাইরে ঠেলে দেয়। শুক্রবারের কথাই ধরা যাক। বাংসারেতে কয়েকদিন ফুরফুরে মেজাজে কাটিয়ে বঊ বাচ্চার সাথে বাসায় ঢুকলাম। কাকা চাচীর ( থাইল্যান্ডে এক কাকার বাসায় ঊঠেছি) যত্নের শেষ নেই।

আমাদের নাস্তা খাইয়ে চাচী রওনা হলেন তাঁর এক শিক্ষকের ফিউনারেলে। সিডনি শেল্ডনের উইন্ড মিলস অব দ্য গডস নিয় আমি আধ শোয়া হলাম বিছানায়।
বড় মেয়ে বললো, বাবা আমাদের স্যুটকেস?
-মাকে জিগ্যেস কর।
বউ উকি দিলো মেয়ের পেছন থেকে, ‘তুমি স্যুটকেস নামাওনি?’
আমি অবাক। কেন তোমরা না আমার আগে নামলা গাড়ি থেকে?
-হ্যা সে জন্যেই তো স্যুটকেস তুমি নামাবা, আর পেছনে রাখছিলাও তো তুমি।

বুঝলাম ড্রাইভারের সাথে কথা বলতে বলতে স্যুটকেস ছাড়াই নেমে গিয়েছি। নিজের উপর নিজেই রেগে গেলাম। বাড়িতে আমি সংখ্যা লঘু। জানি ফোঁস করলেই শেষ, তার পরেও ক্ষীণ গলায় আত্মপক্ষ সমর্থনের চেষ্টা করে বললাম ‘তোমরা তিন তিন জন মানুষ আমাকে মনে করিয়ে দিবানা?’ সাথে সাথে ত্রিমুখী আক্রমণের মাঝে পড়লাম। ছোট মেয়ে বলল, তোমার তো কোন কিছুই মনে থাকে না।

বড় মেয়ে বলল বাবা য়ু আর গেটিং ওল্ড। বউ বলল, সবই আমার দোষ। বিপদ দেখে কাকাকে জানালাম। গড়ির নম্বর মনে আছে কীনা, সহ নানান কথা জানতে চাইলেন কাকা। আমি নানা ভাবে না, না বলে গেলাম।

উনি হতাশ হয়ে বললেন তোমার চাচী আসুক তিনি যেহেতু এদেশের মানুষ, কিছু একটা বুদ্ধি বের করে ফেলবেন। আমি বললাম এই কথা চাচীকে জানাবার দরকার নেই। মেয়েদের বললাম তোমরা জামা কাপড় বদলাচ্ছো না কেন? উত্তর দিল তাদের মা, জামা কাপড় তো সব স্যুট কেসে। সবার মন খারাপ দেখে দু’টি কাগজ মেয়েদের সামনে রেখে একটি ধরতে বললাম। বড় মেয়ে একটি কাগজ ধরলে বললাম,লটারি করে দেখলাম, সোমবারের আগেই পাওয়া যাবে স্যুটকেস।


পরদিন আমাদের সুপানপুরি যাবার ক্কথা। সকালে চাচী একটি টিশার্ট নিয়ে হাজির হলেন। বললেন ওখানে অনেক গরম। এই টা পাতলা আছে এইটা পরে যেও। একটু পরে দেখি তিনি আমাদের সবাইকেই নানান ছুতায় জামা কাপড় দিয়েছেন।

ব্রেক ফার্স্ট টেবিলে কাকার দিকে তাকালে তিনি বললেন আমি কিছু বলিনি, পান (পান চাচীর রাধুনী) বলে দিয়েছে, পরে তোমার চাচী পুলিশের মাধ্যমে সকল ট্যাক্িস কোমাপানিকে রেডিও মেসেজ দিয়েছেন।
আমি বললাম, চেষ্টা করতে তো ক্ষতি নেই। রাতের বেলা মেয়েরা বলল, বাবা তোমার লটারিটা মনে হয় সত্যি নয়। আর মাত্র একদিন আছে। কেউ তো ফোনও করলো না।

বললাম এখনও তো একদিন বাকী। আমার মন বললো মেয়েদের সাথে এ ধরণের ধাপ্পাবাজি ঠিক নয়।

আজ বাজারে বেরিয়েছিলাম, শূন্য স্থান্ পুরণের লক্ষে। কাপড় জামা শেষ স্যুটকেসের দরদাম করছি তখন খবর এলো স্যুট কেসটা ফেরত পাওয়া গেছে। বুঝলাম চাচীর ম্যজিকে কাজ হয়েছে।

দুই মেয়ে লাফিয়ে ঊঠলো, বাবা বলেছিলো না সোমবারের আগেই পাওয়া যাবে! আমার প্রতি ওদের আস্থা দেখে চোখ ভিজে এলো। ওদের সাথে আর মিথ্যা বলা যাবে না।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।