আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চরম জনবল সংকটে র‌্যাব

চরম জনবল সংকটে ভুগছে এলিট ফোর্স র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। এক বছর ধরে অনেকটা জোড়াতালি দিয়েই চলছে র্যাবের কার্যক্রম। সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা অনুযায়ী দুটি ব্যাটালিয়ন সৃষ্টির মাধ্যমে র্যাবের বলয় বৃদ্ধি পেলেও বাড়েনি জনবল কাঠামো। উল্টো সাংগঠনিক কাঠামো অনুযায়ী র‌্যাবের জনবল ১১ হাজার ১০৩ জন থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে রয়েছে মাত্র ৮ হাজার ৯৫৫ জন। সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ ও আনসার বাহিনীর প্রায় ৮০০ কর্মকর্তা থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে র্যাবে কর্মরত মাত্র ২৩ শতাংশ অফিসার।

র্যাবের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি বার বার অবহিত করা হলেও কোনো সুরাহা না হওয়ায় হতাশায় ভুগছেন র্যাব কর্মকর্তারা।

তবে পুলিশ মহাপরিদর্শক হাসান মাহমুদ খন্দকার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, র্যাবে জনবল সংকট একটা আপেক্ষিক ব্যাপার মাত্র। জনবল পূরণ করার জন্য কিছু প্রশাসনিক আনুষ্ঠানিকতার প্রয়োজন। এটা খুব শীঘ্রই সম্পন্ন হবে। আমার জানা মতে, পুলিশসহ অন্যান্য বাহিনী র্যাবের ব্যাপারে অত্যন্ত আন্তরিক।

খুব শীঘ্রই জনবল সংকট দূর হয়ে যাবে বলে জানান তিনি।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, র্যাব গঠনের সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি আদেশে [স্মারক নম্বর-স্বঃমঃ, পু-৩/পদ-১৭/২০০৩ (অংশ-২)/৫৮৪, তারিখ : ১৯.০১.২০০৪] র্যাবের সৃষ্ট পদগুলো পূরণে বিভিন্ন বিভাগ, বাহিনী এবং সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য নির্দিষ্ট কোটার বিধান করা হয়। এর মধ্যে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ থেকে শতকরা ৪৪ ভাগ, পুলিশ বাহিনী থেকে ৪৪ ভাগ, বিডিআর থেকে (বর্তমানে বিজিবি) ৬ ভাগ, আনসার-ভিডিপি থেকে ৪ ভাগ, কোস্টগার্ড থেকে ১ ভাগ এবং সিভিল প্রশাসন থেকে ১ ভাগ জনবল নেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়। অর্গানোগ্রাম অনুসারে র্যাবের মোট জনবল থাকার কথা ১১ হাজার ১০৩ জন। তবে বর্তমানে র্যাবের মোট জনবল ৮ হাজার ৯৫৫ জন।

র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল জিয়াউল আহসান জানান, দীর্ঘদিন ধরেই জনবল সংকটে রয়েছে র্যাব। বিষয়টি বার বার কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হলেও এর কোনো সমাধান হচ্ছে না। এভাবে চলতে থাকলে অফিসাররাও উৎসাহ হারিয়ে ফেলবেন। র্যাবের সাফল্যের মাত্রাও কমে আসবে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, র‌্যাবে সেনাবাহিনীর ৩৬৯ জন অফিসার থাকার কথা।

তবে বর্তমানে র্যাবে কর্মরত রয়েছেন মাত্র ৮৬ জন। স্বল্পতা রয়েছে ২৮৩ জন অফিসারের। নৌবাহিনীর ৫৬ জন অফিসারের মধ্যে রয়েছেন মাত্র ১৩ জন। স্বল্পতা রয়েছে ৪৩ জনের। বিমানবাহিনীর ৫৫ জন অফিসারের মধ্যে র্যাবে কর্মরত মাত্র ১৩ জন।

স্বল্পতা ৪২ জনের। পুলিশের ২৬৮ জন অফিসারের মধ্যে র‌্যাব কর্মরত মাত্র ১৩৮ জন। স্বল্পতা রয়েছে ১৩০ জন কর্মকর্তার। আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ২৩ জন অফিসারের মধ্যে মাত্র ৪ জন কর্মরত। স্বল্পতা রয়েছে ১৯ জন।

এ ছাড়া সৈনিক থেকে ডিএডি পদমর্যাদার র্যাব সদস্যের মধ্যে বর্তমানে সেনাবাহিনীর ১৫৫৭ জন, নৌবাহিনীর ২৯৬ জন, বিমান বাহিনীর ১৯৩ জন, পুলিশের ৮২৪ জনের ঘাটতি রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা বলেছেন, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সেনাবাহিনী থেকে অল্পসংখ্যক অফিসারকে র্যাবে পদায়ন দেওয়া হলেও নির্বাচনের পরপরই তাদের স্ব স্ব বাহিনীতে ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

এদিকে একাধিক সূত্রে জানা গেছে, পরিদর্শক ও উপ-পরিদর্শক পদমর্যাদার সদস্যরা পদোন্নতির সিঁড়ি হিসেবে র্যাবকে বেছে নিচ্ছেন। তবে পদোন্নতি পাওয়ার পরপরই তারা আর র্যাবে থাকতে চান না। ওপর মহলের তদবিরের মাধ্যমে তারা আবার স্ব স্ব বাহিনীতে ফিরে যান।

র্যাব পুনরায় হয়ে পড়ে শূন্য গোয়াল। রাজধানীর সায়েদাবাদ ধলপুরে অবস্থিত র্যাব-১০ সদর দফতরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে ওই ব্যাটালিয়নে ছয়জন উপ-পরিচালক (মেজর পদমর্যাদার) থাকার কথা থাকলেও কার্যত রয়েছেন তিনজন। এই তিনজনকে দিয়েই চলছে উপ-অধিনায়ক, তিনটি ফাইটিং কোম্পানি, একটি বিশেষায়িত কোম্পানি ও প্রশাসনিক উইংয়ের কার্যক্রম। ৩৬ জন জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক ও সহকারী পরিচালকের বিপরীতে বর্তমানে কর্মরত মাত্র ১০ জন। সৈনিক থেকে অধিনায়ক পর্যন্ত সর্বমোট ৬৮৮ জন জনবলের বিপরীতে ওই ব্যাটালিয়নে কর্মরত মাত্র ৫০০ জন।

কেবল র্যাব-১০ নয়, রাজধানীর বাইরের ব্যাটালিয়নগুলোর জনবলের চিত্র আরও করুণ বলে জানা গেছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে র্যাব-১০ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল খন্দকার গোলাম সারোয়ার জানান, এই ব্যাটালিয়নে ৩-৪ জন অফিসারের কাজ করছেন একেকজন অফিসার। এটা সত্যিই অমানবিক। কর্তৃপক্ষের উচিত এ বিষয়ে বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া। নইলে মানসম্পন্ন কাজ, সর্বোপরি সফলতার হারও কমে যাবে।

 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।