আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাংলার তরু-লতা-গুল্ম-২৬ : স্বর্ণলতা / আলোকলতা


আমাদের গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে সীমান্তরেখা ইছামতী। নদীর গতিপথকে অনুসরণ করে সাপের মত হেলেদুলে বয়ে গেছে প্রশ্বস্ত মেঠো পথ। দু’পাশে সোনালি, শিরিষ আর বাবলা ঝোপের আচ্ছাদন। ছোট ছোট বাবলা গাছের মাথায় যেন কাঁচা সোনার প্রলেপ দেয়া। গ্রিষ্মের হাহাকার ম্লান করে ঝিকিয়ে ওঠে সেই সোনার প্রলেপ।

চোখ ধাঁধিয়ে দেয়। প্রশান্তি দেয় মনকে। কিন্তু প্রদ্বীপের নীচের যেমন অন্ধকারের রাজত্ব, প্রকৃতির সেই সুবর্ণ প্রলেপের নীচেয় গুমরে মরে প্রকৃতির কন্যারা।

হ্যাঁ, পাঠক সোনার প্রলেপ বলতে আমি স্বর্ণলতা বা আলোক লতাকে বুঝিয়েছি। গ্রিষ্মের আগুন ঝরা দুপুরে গনগনে সূর্যালোক থেকে সবটুকু রং শুষে নিয়ে যেন স্বর্ণলতা নিজের গায়ে মাখে।

স্বর্ণলতার এই সুবর্ণ রূপকে কাঁচা সোনা ছাড়া আর কার সাথেই তুলনা করবেন?

স্বর্ণলতা লতা জাতীয় বহুর্ষজীবি উদ্ভিত। পরজীবি। অন্য উদ্ভিদের গায়েই এর বসবাস। জীবন-ধারণের জন্যও নির্ভর করতে হয় অন্য উদ্ভিদের ওপর। বাংলার প্রায় সর্বোত্র এদের দেখা মেলে।

সারা বছরই দেখা যায়। তবে গ্রীষ্ম কালে এদের সৌন্দর্য্যরে শতভাগ প্রস্ফুটন ঘটে।
স্বর্ণলতা আর দশটা পরজীবি উদ্ভিদের চেয়ে আলাদা। আলাদা আর দশটা লতার চেয়েও। স্বর্ণলতার পাতা-ফল হয় না।

তবে শাখা প্রশাখা গজায় অবিশ্বাস্য দ্রুততায় অবিশ্বাস্য সংখ্যায়।

বলার অপেক্ষা রাখে না, স্বর্ণলতা রং সোনালি। লতা বা শাখা-প্রশাখা অত্যান্ত নরম ও রসালো। মসৃণ। খুবই চিকন।

লতার বেড় ২-৩ মিলিটার হয় মাত্র।

আগেই বলেছি, স্বর্ণলতায় ফল পাতা হয় না। তবে ফুল হয়। লতার গায়ে ২-৩ ইঞ্চি দূরে দূরে গিঁট থাকে। সেই গিঁট থেকে স্বর্ণলতার ফুল বের হয়।

খুব ছোট ছোট। কলসাকৃতির। ফুলের রং সাদা, কলসের মাঝখানে হলুদ রঙের কিশোর থাকে।

প্রতিটা গিঁট থেকে একটা করে পুষ্প মঞ্জরি বের হয়। মঞ্জরি বহুপষ্পক।

বহু দিন হয় স্বর্ণলতার ফুল দেখিনি, আর কখনো দেখার সোভাগ্য হবে কিনা তাও নিশ্চয় করে বলতে পারব না। তবে সচলদের যে ফুলের ছবিটা দেখাতে পারলাম তার কৃতিত্ব আমার নয়। প্রথম আলো ব্লগে নিশাচর নামে এক ভদ্রলোক এসো ফুলের রাজ্যে নামে একটা সিরিজ লিখছেন সেখান থেকেই পেলাম ফুলের ছবি তিনটি।

স্বর্ণলতার ফল বা বীজ হয় না তাই এদের বংশবৃদ্ধি ঘটে অঙ্গজ প্রজননের মাধ্যমে। আমার কাছে পাথরকুচি আর লজ্জাবতীর মত স্বর্ণলতাও আশ্চর্য উদ্ভিদ।

সেটা এর বংশবিস্তার পদ্ধতির কারণেই। কোনো গাছের মাথা থেকে স্বর্ণলতার একটু অংশ ছিঁড়ে অন্য কোনো গাছের মাথায় ফেলে দিলেই কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই সেই গাছের জেঁকে বসে স্বর্ণলতা।
সাধারণত রাখাল আর শিশু-কিশোরদের মাধ্যমেই স্বর্ণলতার বংশ বিস্তার ছড়িয়ে পড়ে দূর দূরান্তে। এক গাছ থেকে স্বর্ণলতা ছিঁড়ে ছড়িয়ে দেয় দূর-দূরান্তের কোনো ঝোপ কিংবা গাছের ওপর। ওরা এটাকে মজার খেলা হিসেবেই নেয়।

ছোটবেলায় আমিও খেলেছি এই মজার খেলা।
ঠিক শিকড় বলতে যা বোঝায় স্বর্ণলতার তেমন শিকড় থাকে না। তবে এক গাছ থেকে আরেক গাছে ফেলার পর এর গায়ে একধরনের তন্তু গজায়। সেই তন্তুই আঠার মত গেথে দেয় আক্রান্ত গাছের গায়ে। স্বর্ণলতা যে গাছের মাথায় নিজের আধিপত্য বিস্তার করে সেই গাছের ওপরই খাদ্যনির্ভর হয়ে বেঁচে থাকে।

পোষক গাছ থেকে রস শোষণ করে জীবন ধারণ করে। স্বররণলতার খাদ্য যোগাতে গিয়ে ধীওে ধীওে মৃত্যুর পথে এগিয়ে যায় আক্রান্ত গাছ। আশ্রয়দাতাকে তীলে তীলে শেষ কওে দেয় বলে এর ইংরেজি নাম Devis Hair বা শয়তানের চুল।
স্বর্ণলতা বা আলোকলতার বৈজ্ঞানিক নাম : Cuscuta Reflexa

সোর্স: http://www.sachalayatan.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.