আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ধর্মের অপবিত্র স্পর্শেই কোন কিছুর সাম্প্রদায়িক হয়ে ওঠা

.......অতঃপর মৃত্যুর প্রতীক্ষা

'সাম্প্রদায়িক' শিক্ষানীতির সাথে পরিচয় জাফর ইকবাল স্যারের কলামে। প্রথম থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত যার যার ধর্ম, তাকে তার ধর্ম শিক্ষা দেবার আপাত নিরাপরাধ বিষয়ে একটা পাল্টা যুক্তি চলে আসে। এত অল্প বয়সে ছাত্রের মাথায় ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে, "তুমি মুসলিম তুমি ইসলাম পড় এবং তোমার সহপাঠী হিন্দু বলে হিন্দু ধর্ম শিক্ষা পড়ছে। " কোমলমতি শিশুদের ধর্ম দিয়ে মানুষের মাঝে বৈষম্য, বিভেদ চিহ্নিত করাটা বা শেখানোর রীতিটা 'সাম্প্রদায়িক' ।

ধর্মের অপবিত্র ছোঁয়ায় শুধু শিক্ষা নয়, বস্তু জগতের যেকোন কিছুই সাম্প্রদায়িক হয়ে ওঠে।

ধরুন ওআইসি'র তহবিলে চলা গাজীপুরের আই ইউটি শুধু মুসলিম ছাত্রদের প্রবেশাধিকার দেয়। নটরডেম কলেজের ছাত্রাবাসে স্থান পেতে হলে খ্রিস্টান হতে হয়, ইত্যাদি। অর্থাৎ ধর্মের এমন অস্তিত্ব বিপজ্জনক, আপত্তিকর । ধর্মকে হতে হবে সার্বজনীন। ধর্মকে গ্রহণযোগ্য হতে হলে তাকে সেক্যুলার ব্যবস্থাপনার সহায়ক ও সমর্থক হতে হবে।

গান, শিল্প, ভাস্কর্য তথা সকল বৈশ্বিক সৌন্দর্যের একান্ত ও উদার অনুশীলনকারী ।

আমি নিজেকে বার বার প্রশ্ন করি, ধর্মের সীমারেখাটা কতটুকু থাকবে, যাতে করে 'সাম্প্রদায়িক, মৌলবাদী' ইত্যকার বিব্রতকর গালমন্দ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। কারণ যারা গালি দিচ্ছেন, তারা ধর্মের এই বাড়তি উপস্থিতিকে শুধু অপছন্দই করছেন না, নিজেদেরকে অসুবিধাজনক অবস্থায় দেখতে পাচ্ছেন । কাজেই মানুষকে অসুবিধাজনক অবস্থায় না ফেলার ব্রত নিয়েই মানবিকভাবে ধর্মকে তার অস্তিত্ব গুটিয়ে নিতে হবে যতটা সম্ভব।

অথবা অন্যভাবেও এর সমাধান হতে পারি? জানিনা।

যদি কুরবানি ঈদে হিন্দু বাবা-মা সন্তানকে ঘর থেকে বের হতে মানা করে, বা পুজোতে মুসলিম বাবা-মা পুজোর প্রসাদ খেতে নিষেধ করে --সেটাও কি সাম্প্রদায়িক ভাবধারা থেকে উৎসারিত ? কুরবানির নামে গরু হত্যার বিষয়টা ভীষণ অস্বস্তির সাথেই নেন হিন্দুরা সেটা জানি। তারা বিব্রত ও মানসিকভাবে অসুস্থও বোধ করেন।

সমাজে এক ধর্মের উপস্থিতি অন্য ধর্মকে খাটো করে, বা সংখ্যাগুরুদের ধর্মাচার সংখ্যালঘুদের মানসিক কষ্টের কারণ হয়--অভিযোগ গুলো গুরুতর । যে ধর্মের কাজ ছিল শান্তি-সৌহাদ্য বিতরণ, সেই ধর্মের উপস্থিতি হয়ে যাচ্ছে সাম্প্রদায়িকতার কারণ। তার সমাধান হতে পারে ধার্মিকদের ধর্ম করতে হবে মনে মনে, ধর্মকে একটা স্রেফ সামাজিক উৎসব বলে মেনে নিয়ে ।

ধর্ম যখনই কঠোর বিশ্বাসের জায়গায় দাড়িয়ে পালিত হচ্ছে, তখনই তা সাম্প্রদায়িক গালি খাচ্ছে।

অর্থাৎ পুরোপুরি অসাম্প্রদায়িক পরিবেশ নিশ্চিত করতে চাইলে ধর্ম কীভাবে পালন করতে হবে এ বিষয়ে সমাজের হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান-মুসলিম সকলকে এক মত হতে হবে। অর্থাৎ সবাই মিলে ধর্মের একটা গ্রহণযোগ্য অসাম্প্রদায়িক কাঠামো গঠন করবে --যেটা গণতান্ত্রিকভাবে সব ধর্মের মানুষ মেনে চলতে বাধ্য থাকবে।

কোন ধর্মের স্বতন্ত্র্য অস্তিত্ব, স্বতন্ত্র ব্যাখ্যা-প্রবৃদ্ধি-চাহিদা-লক্ষ্য-চেতনা-পরিব্যপ্তিকে সাম্প্রদায়িক জ্ঞান করে সেটাকে রুখে দাড়িতে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা এখন সচেতনভাবেই চলে । আগরবাতি-গোলাপজল-টুপি-পাঞ্জাবি-আতর বদ্ধ গন্ডি ছেড়ে সেই 'পবিত্র' ধর্ম সমাজে প্রকাশিত হয়ে 'অপবিত্র, সাম্প্রদায়িক' হয়ে ধরা দিক এটা কোন 'সত্যিকারের' ধার্মিক চাইতে পারেনা।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.