আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ধাক্কা সামলে উঠেছে রপ্তানি

নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে রপ্তানিতে গত সাত মাসে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৫ শতাংশেরও বেশি। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে তিন শতাংশ বেশি।

রপ্তানির প্রধান খাত তৈরি পোশাক খাতে নতুন বাজার সৃষ্টির পাশাপাশি সরকার, মালিক ও শ্রমিক- এই তিন পক্ষের সম্মিলিত চেষ্টার কারণে প্রবৃদ্ধি রক্ষা করা গেছে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা।

রোববার রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো-ইপিবি প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০১৩-১৪ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) গত বছরের একই সময়ের চেয়ে রপ্তানি আয় বেড়েছে ১৫ দশমিক ০৮ শতাংশ।

এ সময়ে তৈরি পোশাক খাতের উভেন পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ১৭ দশমিক ৩২ শতাংশ।

আর নিট পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ১৮ দশমিক ১৩ শতাংশ।

প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রক্ষার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি বার বার বলেছি, আমরা যে সস্তা দামে পোশাক রপ্তানি করি সে দরে পৃথিবীর কেউ রপ্তানি করতে পারবে না। সে কারণেই যতো সমস্যাই আসুক না কেনো আমাদের রপ্তানি বাড়বেই।

“প্রতি বছরই আমরা সেটা দেখতে পারছি। ২০০৪-৫ সালের ৫ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি এখন প্রায় ৩০ বিলিয়ন ডলার।

সস্তা শ্রমের অবদান এটি। ”

এছাড়া হরতাল-অবরোধের ক্ষতি পুষিয়ে দিতে সরকারের কিছু পদক্ষেপ এ খাতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে বলে মনে করেন ফরাসউদ্দিন।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক জায়েদ বখত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রানা প্লাজা, তাজরিন, টানা হরতাল-অবরোধে এক সময় মনে হয়েছিল আমাদের রপ্তানি খাতে বড় ধরনের ধস নামবে। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে- সেটা আর হবে না।

“সরকার-গার্মেন্টস মালিক-শ্রমিক সবাই সম্মিলিতভাবে উদ্যোগ নেওয়ায় ধাক্কা সামাল দেয়া গেছে” মন্তব্য করে তিনি বলেন, “সরকার সঠিক সময়ে এ খাতের শ্রমিকদের জন্য একটি নতুন বেতন কাঠামো দিয়েছে।

ইডিএফ ফান্ডের পরিমাণ বাড়িয়ে এর সুদের হার কমিয়েছে। টিটির মাধ্যমে (টেলিফোনিক ট্রান্সফার) রপ্তানির ক্ষেত্রেও ৫ শতাংশ নগদ সহায়তা ঘোষণা করা হয়েছে।

“এছাড়া রপ্তানির ক্ষেত্রে উৎসে কর কমানোরও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ”

রপ্তানিকারকদের দাবির পরিপেক্ষিতে সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলের (ইডিএফ) পরিমাণ ৮০ কোটি ডলার থেকে বাড়িয়ে ১ বিলিয়ন (একশ কোটি) ডলার করা হয়েছে। একইসঙ্গে এ তহবিল থেকে নেয়া ঋণের সুদের হার কমানো হয়েছে দশমিক ৫০ শতাংশ।

রপ্তানি খাতের উৎসে কর দশমিক ৮০ শতাংশ থেকে কমিয়ে শুন্য দশমিক ৩০ শতাংশে নামিয়ে আনার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে বলে অর্থমন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

নতুন নতুন বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানি শুরু হওয়ায় সামগ্রিক রপ্তানি বাড়ছে বলে মনে করেন নিট পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিকেএমইএ সভাপতি সেলিম ওসমান।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “জাপান, রাশিয়া, মালয়শিয়াসহ নতুন নতুন বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানি শুরু হওয়ায় রপ্তানি আয়ে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

“এক্ষেত্রে সরকারেরও কৃতিত্ব আছে। সরকার আমেরিকা ও ইউরোপ ছাড়া নতুন বাজারে পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে ২ শতাংশ প্রণোদনা দিচ্ছে।

তিনি বলেন, “এ কথা ঠিক যে, রানা প্লাজা ও তাজরীনের ঘটনা আমাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করেছে। ক্রেতাদের  কাছে নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয় আমাদের। এরপরও সব কিছু উপেক্ষা করে ১৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি খুবই ভালো বলে আমি মনে করি।

“মাঝে অর্ডার কমে গিয়েছিল। আমরা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।

কিন্তু এখন আর সেটা নেই। আগের মতই অর্ডার আসছে। ”

ইপিবি’র রপ্তানি আয়ের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে এক হাজার ৭৪৪ কোটি ডলার আয় হয়েছে। গত বছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল এক হাজার ৫১৫ কোটি ডলার।

এ সময়ে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেড়েছে প্রায় ৩ দশমিক ০৪ শতাংশ।

এই সাত মাসে উভেন পোশাক রপ্তানি থেকে সবচেয়ে বেশি আয় হয়েছে। এই সময়ে এ খাত থেকে ৭১৮ কোটি ডলার আয় হয়েছে।

যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১৭ দশমিক ৩২ শতাংশ বেশি।

২০১২-১৩ অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি সময়ে উভেন পোশাক থেকে ৬১২ কোটি ডলার আয় হয়েছিল।

এ সময়ে ‍নিট পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ৭০০ কোটি ডলার।

গত অর্থবছরের একই সময়ে আয় হয়েছিল ৫৯২ কোটি ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৮ দশমিক ১৩ শতাংশ।

নিট পোশাক রপ্তানিতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেড়েছে ৯ শতাংশ। উভেনে বেড়েছে ৩ শতাংশ।

ইপিবি’র তথ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ জানুয়ারি মাসে আয় হয়েছে ২৭৫ কোটি ৩৮ লাখ ডলার।

গত বছরের একই মাসে আয় হয়েছিল ২৫৫ কোটি ৪৩ লাখ ডলার।

এ হিসাবে ২০১৪ সালের প্রথম মাস জানুয়ারিতে গত বছরের জানুয়ারির চেয়ে রপ্তানি আয় বেড়েছে প্রায় ৮ শতাংশ।

আর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেড়েছে ৩ শতাংশ। অন্যান্য খাতের মধ্যে জুলাই-জানুয়ারি সময়ে হিমায়িত মাছ রপ্তানি বেড়েছে ২৬ শতাংশ।

কৃষিজাত পণ্য রপ্তানি বেড়েছে ৫ দশমিক ৩৪ শতাংশ।

কাঁচা চামড়া রপ্তানি বেড়েছে ৪৫ দশমিক ৩৮ শতাংশ। চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি বেড়েছে ৪৭ শতাংশ।

ওষুধ রপ্তানি বেড়েছে ২৩ দশমিক ৪৩ শতাংশ।

সিরামিক সামগ্রি রপ্তানি বেড়েছে ৩১ দশমিক ২১ শতাংশ। তবে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি কমেছে ২১ দশমিক ২৪ শতাংশ।


সোর্স: http://bangla.bdnews24.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।