আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিডিআর বিদ্রোহ নিয়ে সিএনএন পরিকল্পনা আইএসআইয়ের, বাস্তবায়নে সাকা চৌধুরী



ঢাকা: বিডিআর বিদ্রোহের সময় পিলখানা হত্যা মামলায় পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই জড়িত বলে যুক্তরাষ্ট্রের টেলিভিশন সিএনএনের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক খবরে দাবি করা হয়েছে। ভারত সরকারের সচিবালয় সাউথ ব্লকের বরাত দিয়ে এই তথ্য প্রকাশ করেছে সিএনএন।
আইএসআই শেখ হাসিনার মধ্যপন্থী মতাদর্শিক অবস্থানের কারণে শঙ্কিত হয়েই এই পরিকল্পনার আদেশ দেয় বলেও প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘রক্তক্ষয়ী এই ষড়যন্ত্রের খেসারত ঢাকাকে বেশ ভালোভাবেই দিতে হয়েছে। অন্যদিকে তৎকালীন মাত্র দুই মাস মেয়াদ অতিক্রান্ত শেখ হাসিনার সরকারের স্থিতিশীলতার জন্য যা ছিল এক বিশাল চ্যালেঞ্জ।



পিলখানা হত্যাকাণ্ডে বাংলাদেশ রাইফেলসের (বিডিআর) উচ্চপদস্থ ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ ৭০ জন নিহত হন । ২৫ ফেব্রুয়ারি বিডিআরের একদল সদস্য তাদের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের লাইন করে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করে। হত্যাকাণ্ডটি এতই বর্বর ছিল যে, শুধু উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদেরই নয় তাদের পরিবারের সদস্যদেরও হত্যা করে ম্যানহোলের মধ্যে স্তুপ করে রাখা হয়েছিল। এর বাইরে গণকবরও দেয়া হয়েছিল অনকে লাশ।

সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী জড়িত: বিডিআর বিদ্রোহের পরিকল্পনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী জড়িত ছিলেন বলেও সিএনএনের প্রতিবেদনে জানানো হয়।

এতে বলা হয়, ‘ভারত এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা সংস্থার কাছে এই ঘটনায় প্রভাবশালী বিএনপি নেতা এবং আইএসআইয়ের চর সালাইদ্দিন কাদের চৌধুরীর জড়িত থাকার প্রমাণ আছে’। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই বিএনপি নেতাকে প্রতিবেদনে এই অঞ্চলের অপরাধ জগতের সাথে ওতপ্রতোভাবে জড়িত।

বাংলাদেশে সালাউদ্দিন চৌধুরী একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ঘনিষ্ঠ সহযোগিদের মধ্যে একজন বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। ২০০৪ সালে চট্টগ্রামে দশট্রাক অস্ত্র চোরাচালান ঘটনার সঙ্গেও তিনি জড়িত বলে অভিযোগ আছে। যদিও তিনি এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

ভারতে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালানোর উদ্দেশ্যে অবৈধভাবে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র চোরাচালান হচ্ছিল বলেও প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিডিআরের সদস্যদের মধ্যে নানা বিষয়ে ক্ষোভকে কাজে লাগিয়ে পিলখানা হত্যা ঘটানো হয়। এর পাশাপাশি সেনাবাহিনীতেও পাকিস্তানপন্থী কর্মকর্তারা অভ্যুত্থানের চেষ্টা করেছিলেন। এই পরিকল্পনা এতটাই সূচারু ছিল যে, কোনো গোয়েন্দা সংস্থা তা ধরতে পারেননি। এই ঘটনায় সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী বিডিআরের সাবেক মহাপরিচালক ফজলুর রহমানকেও ব্যবহার করেন।



ফজলুর রহমানকে সালাইদ্দিন কাদের চৌধুরী ৪০ কোটি টাকা দেন বলেও প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। আর ফজলুর রহমান সে সময় বিডিআরের চারজন উপসহকারী পরিচালককে পাঁচ কোটি কারা করে দেন। আর চারশজন সিপাইকে দেয়া হয় পাঁচ লাখ টাকা করে। কেউ কেউ ৫০ লাখ টাকা করে পেয়েছেন বলেও গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঘটনা চলাকালে বাংলাদেশকে নিয়ে ভারত সরকারে উদ্বেগ বাড়তে থাকে।

২৮ ফেব্রুয়ারি ভারত শেখ হাসিনাকে নিরাপদে সরিয়ে নেয়ার প্রস্তুতিও নেয়। ভারতের সে সময়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী (বর্তমান রাষ্ট্রপতি) প্রণব মুখার্জি শেখ হাসিনার সাথে যোগাযোগ রেখেছেন।

পাকিস্তানি চরের ফোনে আঁড়ি পেতে তথ্য উদ্ধার: সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকায় পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা সাজ্জাদ রসুলের সাথে টেলিফোন কলে আঁড়ি পেতে তার সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পেয়েছে গোয়েন্দারা। এই কর্মকর্তার সাথে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর যোগাযোগ ছিল।

গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, ওই পাকিস্তানি কর্মকর্তা ঢাকার গুলশান এলাকা থেকে গোটা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছেন এবং পাকিস্তানকে সব জানিয়েছেন।

২৫ ফেব্রুয়ারি বেলা সাড়ে ১২টায় সাজ্জাদ রসুল আইএসআইয়ের সদরদপ্তরে ফোন করে সে সময় বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিডিআরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদকে হত্যার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যখন বাংলাদেশ সরকার এবং সেনা কর্মকর্তা কিছুই জানতে পারেননি, তখন পাকিস্তানী প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা কীভাবে ভেতরের সব ঘটনাপ্রবাহ জানলেন, তা একটি বড় প্রশ্ন’। ওই সময় জামায়াতে ইসলামীর বেশ কজন শীর্ষস্থানীয় নেতাও ফোনে দুবাই, লন্ডন এবং ইসলামাবাদে আইএসআইয়ের চরদের সাথে ঘটনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন বলেও প্রতিবেদনে বলা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের আমলের তুলনায় শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার মধ্যপন্থী। ধর্মীয় উগ্রবাদ এবং জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার অবস্থান কঠোর।

এই সরকার টিকে থাকলে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর এ দেশীয় দোসরদের বিচারের ভয়ও পাকিস্তানি গোয়েন্দাদের মধ্যে ছিল। গোটা বিদ্রোহে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার আসামি জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদও নানা সহযোগিতা করেছেন বলেও প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারত নীতি এবং অন্যান্য অবস্থানের কারণে শেখ হাসিনা সরকারকে নিয়ে পাকিস্তান উদ্বিগ্ন ছিল। এ জন্যই পথের কাটা দূর করার চেষ্টা করেছে আইএসআই।
Click This Link
 


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.