আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাঙালী হিসেবে কেবল গর্ব নয়, চাই প্রমিত বাংলার ব্যবহার

ধন্যবাদ আবার আসবেন , আর যাবার সময় দয়া করে দরজাটা ভিড়িয়ে দিয়ে যাবেন, বর্তমান যুগের বেহায়া রঙিন আলো আমার সহ্য হয় না .....

'' আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো
একুশে ফেব্রুয়ারী ..
আমি কি ভুলিতে পারি .......''

না আমরা এখনো ভুলতে পারিনি তবে পথে আছি। যে ভাবে বাংলা-ইংরেজী আর তার সাথে আঞ্চলিক ভাষার মিশ্রণ ঘটিয়ে নিত্য নতুন সংকর জাতের তথাকথিত বাংলা আমরা বলে যাচ্ছি তাতে করে অদূর ভবিষ্যতে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম কোন ভাষায় যে আত্মবক্তব্য ব্যক্ত করবে তা নিয়ে রীতিমতো শংকিত। আত্মমর্যাদা রক্ষার নিমিত্তে প্রায়ই ভুলে যাই যে ইংরেজীও বাংলার মতোই একটা ভাষা বই আর কিছু নয় । পার্থক্য এটুকু যে ইংরেজী ভাষাটা ইংরেজরা সুকৌশলে বল খাটিয়ে অন্যের উপর চাপিয়ে দিয়েছে। যদিও বিশ্বের অনেক উন্নত দেশ ইংরেজী ভাষাকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে নিজের ভাষাকেই প্রাধান্য দিয়েছে।

এবং তারা এ নিয়ে গর্ব করে। আমরা অনুন্নত জাতি একথা বলার অপেক্ষা রাখেনা। তবে আমাদেরকে অনুন্নত রাখার জন্য এই ইংরেজ জাতিগুলোই দায়ী। দু'শ বছরের ব্রিটিশ শোষণ , অত:পর পাকিদের আগ্রাসন আর এখন পার্শ্ববর্তী এক-পাক্ষিক বন্ধু রাষ্ট্রের পরোক্ষ নিপীড়ন - আর কত। ইবনে বতুতা যদি আজোবধি বেঁচে থাকত এবং দ্বিতীয়বারের মত বাংলাদেশ ভ্রমনে আসত তাহলে নির্ঘাত হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তখুনি মারা যেত।



মুক্তি যুদ্ধের পূর্ববর্তী সময়ে অনেকে বাংলাকে হিন্দুয়ানী ভাষা বলে অবজ্ঞা করত. আর ইদানিংকালে বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলার অজুহাত দেখিয়ে ইংরেজীকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে বাংলাকে অবজ্ঞা করা হয়। নিজ দেশ, নিজ ভাষা এবং নিজ সংস্কৃতির প্রতি যে আমাদের কতটা দরদ তা নিজেদের দিকে একবার তাকালেই বুঝা যায়। আমরা তো এখন নিজেদের দিকে তাকাতেই ভুলে গেছি। সর্বদা অন্যের দিকে তাকিয়ে থাকি এবং অনুকরণ করি। এ সময়ের শহুরে তরুণরা ঈদের পবিত্র আনন্দে ততটা আনন্দিত হয়না যতটা ইংরেজী নতুনবর্ষ উদযাপনের রাত্তিরে অনুভব করে।

নবান্ন উৎসব বৃহৎ যে কি তা তো বোধ করি সবাই ভুলে গেছে। এখন আমদানি হয়েছে ভালবাসা দিবস, বন্ধু দিবস হাবিজাবি নানা দিবস। হাসি পায় ভালবাসা দিবসের আদিখ্যেতা দেখে। আর তার উপর এবারের নতুন সংযোজন ভালোবাসা হীনদের ভালবাসা পাবার দাবিতে মিছিল। ভবিষ্যতে আর কি কি যে আসবে তা ভেবে ভেবে শিহরিত হই।

তবে যে সংস্কৃতি অসভ্য হতে শেখায় তা তো আর সংস্কৃতি থাকে না, এটাকে বলা হয় অপসংস্কৃতি । আর যে আপন সংস্কৃতি বিসর্জন দিয়ে পরের সংস্কৃতি পালনে ব্যাকুল হয় তার না কুল থাকে না তরী। কাঁটা চামচ দিয়ে ভাত খেলে আর কষে ইংরেজীতে দুটো গালি দিতে পারলেই সভ্য হওয়া যায় না। অনেক সুযোগ সন্ধানীকে দেখেছি পালক লাগিয়ে ময়ূর হতে। কিন্তু গান গাওয়ার সময় কা কা ছাড়া আর কিছুই বের হয়না।

দিন বদল হবে , সমাজে পরিবর্তন আসবে তা ঠিক আছে কিন্তু মূল কে ভুলে যাওয়া কেন? যে ভাষার জন্য ভাষা আন্দোলন, প্রাণ বিসর্জন তা ধীরে ধীরে ম্লান হবে কেন ? কেনই বা একটু বাংলা সাহিত্য অধ্যয়ন করতে গেলে আমাদের বুক কাঁপে ? সময় , বড় ভুল সময়ে আবির্ভাব হয়েছি এই ধরায়। নজরুল সঙ্গীত, রবীন্দ্র সঙ্গীত শুনলে লোকে বলে এগুলো তো বুড়োদের গান, এগুলো কেন শুনেন ? তারা তো জানে না যে পরিমাণ মধু বাংলা সাহিত্যের ভান্ডারে সঞ্চিত আছে তা এক জনমে শেষ হবার নয়। জীবন জীবিকার তাগিদে হয়তো অনেক সময় অনেক কিছুর সাথে সমঝোতা করতে হয় , অনেক কিছু ছাড় দিতে হয় কিন্তু তাই বলে একে বারে বাদ দেওয়া চলবে না। নিজের সম্মান নিজেকেই রক্ষা করতে হবে নতুবা অন্যে ঘরে এসে সম্মান দিয়ে যাবে না। এবারের সুখবর এই যে দেরিতে হলেও বাংলাদেশের সর্বত্র বাংলাভাষার প্রয়োগ নিশ্চিত করার আদেশ জারি হয়েছে।

এখন কতটা মানা হবে সেটাই দেখার বিষয়।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.