আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দিল্লীর ধর্ষিত তরুণী: তাঁর এই চলে যাওয়া, ধর্ষকদরে নপুংসক করে দেওয়ার দাবি এবং আমার অপরাধবোধ...!!!

আমি নির্বাক হয়ে গেলে তোমার পতন অনিবার্য ! তাঁর এই চলে যাওয়া মানে চিরদিনের প্রস্থান নয়, সমগ্র ভারতসহ উপমহাদেশে একটা নাড়া দিয়েছে নারীর নিরাপত্তায়... বেঁচে থাকার নিদারুন এই চেষ্টার পর তার এমন চলে যাওয়া সত্যিই আমাদের অপরাধী করে দেয়। সহজেই মেনে নিতে কষ্ট হয়, ভয়ঙ্কর ও নিমর্ম এমন নির্যাতনের পরও মেয়েটি বেঁচে থাকার জন্য তীব্র লড়াই করেছিল। কিন্তু জীবনের কাছে যেন সে পরাজিত হয়ে গেল। এটা সত্যি যে, এমন অবস্থায় অনেকেই বাঁচতে চায় না। তীব্র অপমানবোধে এমন অনেকেই বরং মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে নেয়, স্বেচ্ছায়।

এমনটা আমরা ভারত কিংবা বাংলাদেশে অনেক দেখেছি, দেখছি। এদিক থেকে দিল্লীর মেডিকেল ছাত্রী সবার থেকে আলাদা। সে বাঁচতে চেয়েছিল নিজে, বাঁচাতে চেয়েছিল আরো অনেক তরুণীকে, যারা সমাজের ঘৃণ্য নরপশুদের লালসার শিকার হয় প্রতিনিয়ত, ঘরে কিংবা বাইরে, হাটে-ঘাটে বা রাস্তায়। দিল্লীর এই তরুণীটিকে দেশটির সরকার বীর হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। তার মৃত্যুকে ‘বীরোচিত মৃত্যু’র আখ্যা দেওয়া হয়েছে।

অথচ চিকিৎসাধীন অবস্থায় বলা হচ্ছিল ধীরে ধীরে মেয়েটির অবস্থাুর উন্নতি হচ্ছে। তাহলে কি এসব ফাঁকা বুলি ছিল। এসব কি কেবল ভারত সরকারের ভিত নড়িয়ে দেওয়া আন্দোলন দমন করার জন্যই বলা হচ্ছিল। কেন মেয়েটিকে এতদিন পর বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হলো? কেন আরো আগেই আরো বেশি উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হলো না? এসব প্রশ্ন এখন সহজেই সামনে এসে যায়। গত ১৬ ডিসেম্বর দিন শেষে রাত গভীর হওয়ার আগেই ছেলে বন্ধুকে নিয়ে সিনেমা দেখে বাাড়ি ফেরার পথে ছয় নরপশুর নির্মম লালসার স্বীকার হয় তরুণীটি, সঙ্গে তার বন্ধুটিও।

একথা এখন আর কারো অজানা নেই। তারপর থেকে মেয়েটির বেঁচে থাকার তীব্র আকাঙ্খা, দিল্লীর প্রতিটি সংবেদনশীল মানুষকে তীব্র নাড়া দিয়েছে। তাই এমন অনেকেই যারা কোনো গণ্ডগোল দেখে পাশ কাটিয়ে চলে যান, তারা আর বিবেকের তাড়নায় পাশ কাটাতে পারেন নি। রাস্তায় নেমে এসেছিলেন। ধর্ষকদের মৃত্যুদণ্ড চেয়েছেন।

দিল্লীসহ সর্ব ভারতে নারীর সর্বাগ্র নিরাপত্তার জোর দাবি উঠেছে। সাধারণ মানুষের ফুঁসে ওঠা স্বতর্স্ফূত বিক্ষোভে ভারতের ক্ষমতাসীন সরকারের ভীত নড়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। সরকার বিক্ষোভ দমনে চাতুরতার আশ্রয় নিয়েছে। একদিকে সোনিয়া গাণি¬ী, রাহুল গান্ধী বিক্ষোভকারীদের সমর্থন দিয়েছেন। আরেক দিকে সরকারের পেটোয়া বাহিনী নির্বিচারে পিটিয়েছে বিক্ষোভকারীদের।

অনেকেই ক্ষুব্ধ হয়ে বলছিলেন, ধর্ষকের বিচার চাইতে গিয়ে এ যেন পুলিশের হাতেই আবার ধর্ষিত হওয়া। নির্মমতার শিকার মেয়েটি আমাদের ছেড়ে চলে গেছে ভারতের দেশী-বিদেশী গণমাধ্যমের বদৌলতে বিক্ষোভকারীদের অনেক ছবি দেখেছি। একটি প্ল্যাকার্ডে লেখাটা ছিল এমন, ‘পুলিশ তোমার গ্যাস বোমা বন্ধ কর। গ্যাস-বোমা দিয়ে আমাদের অশ্র“ ঝরানোর দরকার নেই। আমাদের চোখ এমনিতেই অশ্র“সিক্ত।

’ আসলেই আমাদের আজ চোখ আজ আরো বেশি অশ্র“সিক্ত হয়ে উঠেছে। কিন্তু এই অশ্র“কেই আমাদের শক্তি করে তুলতে হবে। এইসব ঘাতক-ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জন্য জোর আন্দোলন করতে হবে। শুধু ভারত নয়, পৃথিবীর প্রতিটি দেশ নারীর বসবাসের জন্য নিরাপদ করতে হবে। দিল্লীর যে তরুণীটি আজ আমাদের চোখে অশ্র“ ঝড়িয়ে চির দিনের জন্য জীবনের ওপারে চলে গেল, সে হয়তো আমার রক্তের সম্পর্কিত কেউ নয়।

কিন্তু আমরা একই রঙের রক্ত মাংসের মানুষ, হতে পারত সে আমার বোন। আমার সে বোনের জন্য কি আমাদের কোনো কিছুই করার ছিল না? না আমরা কিছুই করতে পারিনি। সে কি কেবল ভারতীয় বলে। দেশ বিভাগের আগে আমাদের পূর্বপুরুষরা তো একই দেশের সন্তান ছিলেন। একজন তরুণীর ধর্ষিত হওয়ার মতো পৈশাচিক ঘটনা আমাদের হƒদয়ে কোনো নাড়া দেয়নি।

ফেসবুক কিংবা ব্লগগুলোতে টুকরো টুকরো কিছু প্রতিক্রিয়া এসেছে, তেমন জোরালো নয় কিন্তু। এমন নয় যে আমাদের এই সোনার বাংলাদেশে এরকম ঘটনা ঘটেনা কখনো। সামনে যে ঘটবে না তাও কি নিশ্চিত করে বলতে পারি। আমরা কি নিশ্চিত যে আমাদের এই দেশে আমাদের মা-বোনদের সম্ভ্রমে আঘাত হানবে না কোনো নরপশু। তবে কি আমরা অপেক্ষা করব এমন একটি ঘটনার পুনরাবৃত্তির? না, তা নয়।

তাই আমাদেরও জোর দাবি তোলা উচিত ধর্ষকদের নপুংসক করে দেওয়া। প্রতিবাদ করতে গিয়ে পুলিশের নির্মম পিটুনীর শিকারও হতে হয়েছে...  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.